Wednesday 19 February 2020

কখন ছিল মান্ধাতার আমল?


ওপার বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনি ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ পড়ছি, সেখানে এক জায়গায় ‘মান্ধাতার আমল’ প্রবাদের প্রয়োগ পেলাম। পুরনো কোনো পদ্ধতি, বিষয় বা কথা হলেই আমরা বলি- মান্ধাতার আমলের জিনিস। হঠাৎ প্রশ্নটা মাথায় এলো- মান্ধাতা আসলে কে? তার শাসনামল কোন সময়ে ছিল? কেনই-বা তার আমল ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য?
বিষ্ণুপুরাণে মান্ধাতার কাহিনি পাওয়া যায়। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের রাজা। উল্লেখ্য এই বংশে মান্ধাতার বহুকাল পরে পৌরাণিক দেবতা রামের জন্ম। এ বিষয়ে কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’-এ বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। সুধীরচন্দ্র সরকার লিখিত পৌরাণিক অভিধান থেকে জানা যায়, মান্ধাতা হলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। মান্ধাতার জন্মগ্রহণের ঘটনা বেশ অদ্ভুত! মাতৃগর্ভে নয়, পিতৃগর্ভে জন্মেছিলেন তিনি। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, যুবনাশ্বর সন্তান ছিল না। অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সবই বিফল। অবশেষে তিনি মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা শুরু করলেন। দীর্ঘ সাধনায় তৃপ্ত হলেন মুনিরা। তারা সবাই মিলে যুবনাশ্বর জন্য যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ শেষ হতে হতে মাঝরাত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত জল বেদিতে রেখে গেলেন তারা। এই কলসির জল যুবনাশ্বর স্ত্রী পান করলেই তিনি গর্ভবর্তী হবেন।
কিন্তু বিধিবাম! রাতে তীব্র তেষ্টা পেলে যুবনাশ্বর পান করেন সেই জল। সকালে মুনিরা ঘোষণা দিলেন- জল যেহেতু যুবনাশ্বর পান করেছে, সুতরাং তার গর্ভেই জন্মাবে সন্তান। অবশ্য মুনিরা নারীর গর্ভধারনের কষ্ট থেকে যুবনাশ্বরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে যুবনাশ্বরের পেটের বাম দিক চিড়ে মান্ধাতাকে বের করা হয়। অর্থাৎ মান্ধাতা হলেন প্রথম সিজারিয়ান শিশু। দেবরাজ ইন্দ্রের আশীর্বাদে মাত্র ১২ দিনে তিনি পূর্ণতা পেলেন ১২ বছর বয়সী বালকের মতো। কিছুদিন পরেই তিনি পড়াশোনা এবং অস্ত্রবিদ্যায় অতুলনীয় হলেন।
মান্ধাতা সিংহাসনে বসেই পৃথিবী জয়ে বের হলেন। একসময় যুদ্ধ করে পৃথিবী জয়ও করলেন। পৃথিবী যিনি জয় করেছেন তিনি কি আর স্বর্গজয় বাদ রাখবেন? সুতরাং মান্ধাতা চললেন স্বর্গ জয় করতে। কিন্তু ইন্দ্র জানালেন- পুরো পৃথিবী জয় শেষ হয়নি। লবনাসুর মান্ধাতার অধীনতা মেনে নেয়নি এখনো। সুতরাং মান্ধাতা ফিরে চললেন লবনাসুরকে পরাস্ত করতে। কিন্তু এই যুদ্ধই তার শেষ যুদ্ধ হয়েছিল। মান্ধাতা লবনাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।
হিন্দুধর্ম মতে মহাকাল সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি- এই চার যুগে বিভক্ত। এদের মধ্যে সত্য যুগকে শ্রেষ্ঠ যুগ বলা হয়। সে যুগে পাপ ছিল না। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সে যুগের রাজা ছিলেন মান্ধাতা। সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সময় ছিল যথাক্রমে ১৭,২৮,০০০ বছর, ১২,৯৬,০০০ বছর এবং ৮,৬৪,০০০ বছর। আমরা যে পাপের যুগে (কলি কাল) বাস করছি তার দৈর্ঘ্য ৪,৩২,০০০ বছর। সব মিলিয়ে রাজা মান্ধাতা কম করে হলেও এখন থেকে প্রায় ৩৫ লাখ বছর আগে রাজকার্য পরিচালনা করেছেন। সুতরাং ‘মান্ধাতার আমল’ মানে যে, অনেক বছরের পুরনো কিছু হবে তা বলাবাহুল্য। এ কারণেই আমরা অনেক পুরনো কিছু বুঝাতে গিয়ে মান্ধাতার আমলের উল্লেখ করি।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মান্ধাতা মিথোলজিক্যাল চরিত্র।

Sunday 2 February 2020

ঘ্রান



অফিসের কাজ সেরে বেরুতে জাহাংগীরের আজ বেশ দেরী হলো, প্রায় রাত টা। অন্যদিন টায় সে বেরিয়ে পড়ে। মতিঝিলে তার অফিস থেকে বেরিয়ে রিক্সায় ক্মলাপুর ষ্টেশন, সেখান থেকে ট্রেন ধরে এয়ারপোর্ট আবার বাসে হাউজ বিল্ডিং। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় তার বাসা। বাস থেকে নেমে ১০ মিনিটের রাস্তা, জাহাংগীর হেটেই চলে যায়।  সেদিন অফিস থেকে বেরুতে লেট হলো, যথারীতি রাস্তার জ্যামের কারণে কমলাপুর ষ্টশনে পৌছতে প্রায় ৮টা ২০ হয়ে গেলো।।  ষ্টশনে ঢুকে ৮টা ২০ এর ট্রেনটা মিস করে গেছে বুঝতে আর দেরী হলো না।  হাতে থাকা আই ফোনে পরের ট্রেনের টাইমটা দেখে নিলো ৮টা ৫৬ তে একটা কমিউটার আছে।। সামনে একটা বই এর দোকানে গিয়ে দু একটা ম্যাগাজিন ঘাটতে লাগলো,আজ ষ্টশনে পরিচিত কোন মুখের দেখা সে পাবে না।  হাতে এখনও বেশ কিছুটা সময় আছে, সেটা দেখে জাহাংগীর ষ্টেশনের বাহিরে এসে দাঁড়ালো। একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলো। সর্বনাশ; ১৭ টা মিস কল।।  নিশ্চয়ই মাসুমা ফোন করেছে।  মাসুমা জাহাংগীরের বিবাবিত স্ত্রী।  জাহাংগীর দেখলো দুটি আননোন নাম্বার, একটা ইকবালের, একটা বিল্লালের বাকীগুলো মাসুমার ফোন।  কাজের সময় ফোনটা সাইলেন্ট করা হয়েছিলো, পরে আর খেয়াল নেই।    চটপট মাসুমাকে ফোন করলো। ফোন ধরেই মাসুমা রাগে ফেটে পড়লো, সমস্ত কাজের কথা শুনে একটু শান্ত হলো।  জাহাংগীর এও জানালো যে আজ   ফিরতে একটু দেরী হবে  কারণ একটা ট্রেন সে ফেল করেছে 

ফোন রেখে পাশের চায়ের দোকানে এককাপ চা খেলো তারপর আরেকটা সিগারেট।  আনমনে জাহাংগীর খেয়াল করেনি যে, ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে।  হন্তদন্ত করে ছুটে গেলো, কিন্তু সত্যিই হয়তো ভাগ্য আজ জাহাংগীরের সহায় নয়।  নিজের উপর বড্ড রাগ হচ্ছিলো।  কি করে মিস হয়ে গেলো ট্রেনটা।  ঘড়ির কাটা তখন ৯টা ১৫ ছুঁইছুঁই করছে, পরের ট্রেন ৯টা ৪৮ এ।  এবার সে ষ্টেশন থেকে নড়বে না বলে পণ করলো। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে তার, ষ্টশনে ঝালমুড়ি বিক্রি হচ্ছিলো।  ১০ টাকার ঝালমুড়ি কিনে নিলো।  হঠাৎ তার মনে পড়লো পাপড়ির কথা।  সে ঝালমুড়ি খুব পছন্দ করতো।  ফুচকা, ঝালমুড়ি, ছোলাভাজা এগুলো ছিলো তার প্রিয় খাবার।  মেয়েটি ছিলো ঠিক জাহাংগীরের বিপরিত। জাহাংগীর একটু সৌখিন, এইসব খাওয়াদাওয়া সে পছন্দ করে না।  একটু সেজেগুজে থাকা, সবসময়নিজের দর বাড়িয়ে রাখা এই চরিত্রের অধিকারী জাহাংগীর।  পাপড়ি ছিলো ছেলে মানুষ, সাজগোজ অত মেইনটেন করা ওর পোষতো না, তবে জাহাংগীরের কথা খুব মেনে চলতো।  পাপড়ি ছিলো জাহাংগীরের প্রাক্তন প্রেমিকা।  জাহাংগীরের বয়স প্রায় ৩৫  ১৯ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে বলা যায় পাপড়িকে। ওদের পরিচয় হয় পাপড়ির এক বান্ধবীর বোনের বিয়েতে।  জাহাংগীরের পাড়ার এক বড়ভাইয়ের সাথে পাপড়ির বান্ধবীর বোনের বিয়ে হয়েছে।  বাসর রাতে জেগেছিলো পাপড়ি।  জাহাংগীরও সেখানে ছিলো।   খুব চঞ্চল একটি মেয়ে। ভারী মিষ্টি দেখতে, জাহাংগীরও বেশ সুপুরুষ।    দৈহিক গঠন দেখলে বোঝা যায় না জাহাংগীরের বয়স কত।।  সেই বিয়ে থেকেই ওদের আলাপ, তারপর ফোনে গল্প; দেখা সাক্ষাত সবই হয়।  প্রেমের প্রস্তাব জাহাংগীরই দেয়, পাপড়ি রাজি হয় নাই প্রথমে   পাপড়ি জানতো জাহাংগীরকে তার বাড়ি থেকে কখনোই মেনে নেবে না কারণ জাহাংগীর ছিলো পাপড়ির চেয়ে অনেক বড়।  তবুও প্রথম যৌবনের অনুভুতি; একটা অদম্য ভালোলাগা পাপড়ি নিজেকে আটকাতে পারেনি।।   জাহাংগীর আর তার মা এই তাদের সংসার। এক বোন আছে তাও বিয়ে হয়ে গেছে। জাহাংগীরের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে তবুও বিয়ে করেনি। একটাই কারণ বসে খুব চুজি মানুষ খুঁতখুঁতে মানুষ বলে মনের মানুষ এখনো খুঁজে পায় নি। তবে পাপড়িকে দেখে তার মনে হয়েছিলো ইয়েস, হি মেড হিজ চয়েজ। জাহাংগীরের মাও পাপড়িকে বউমা বলা শুরু করে দিয়েছিলো।  জাহাংগীর বিয়ের জন্য পাপড়িকে বলতে থাকে, পাপড়ি বাড়িতে জানাতে ভয় পায়।  তবে জাহাংগীরের জোড়াজুরিতে বাড়িতে জানাতে বাধ্য হয়।  হঠাত ট্রেনের হুইসেল যা নং প্লাটফর্ম থেকে ৯টা ৪৮ এর ট্রেনটাও ছেড়ে গেলো। জাহাংগীর রিতিমত রেগে যায়। বাহ, কি হচ্ছে আজ তার সাথে।  যে চ্যাপ্টারটা জীবন থেকে মুছে গেছে তা নিয়ে ভাববার কোন মানেই হয় না।  বেশ বিরক্তি ভরে নিজেকে নিজে তিরস্কার করলো।  পরের ট্রেন রাত ১০টা ২০ এ। এটা না ধরতে পারলে আজ যেতে খুব কষ্টই হবে।  এবের আর কোন ভুল না, সময় মত ট্রেনটা ছাড়লেও বেশ ভিড়।  তবে ঠেলে ঠুলে উঠেই পড়লো।  কোনরকমে জানালার পাশে একটু দাড়ানোর যায়গা পেলো।  কাধের ব্যাগটা বাংকারে তুলে দিয়ে একটু রিলাক্স করে দাড়ালো।  মাছুমা আবার ফোন করেছে। এবার ফোনটা রিসিভ না করে একটা মেসেজ দিলো। ট্রেনে ভিড়, কথা বলতে পারবো না।  চারদিকে লোকজনের ক্যাচক্যাচ জাহাংগীরের একটুকুও পোষাচ্ছে না। পকেট থেকে হেডফোনটা বের করে কানে গুজলো, চোখ বন্ধ করে গান শুনতে লাগলো  একটু ঠেলাগুতো খেলেও তার খুব একটা প্রোবলেম হচ্ছে না।   ১০ মিনিট এভাবেই যাচ্ছিলো।  হঠাত জাহাংগীরের নাকে একটা অদ্ভুত মিষ্টি সুঘ্রান আসছে।  খুব পরিচিত ঘ্রানটা   কিছুক্ষন আগেও ষ্টশনে বসে সে এই ঘ্রানটা একবার দুবার পেয়েছে, তবে কেয়ার করেনি।  তবে এখনও এই চলন্ত ট্রেনে আবার সেই ঘ্রানটা।  তবে কি সেই সুগন্ধির অধিকারী ব্যক্তি একই ট্রেনে একই কামরায় উঠেছে? ভাবতে ভাবতে জাহাংগীরের সেই ঘ্রানের কথাটা স্পষ্ট মনে পড়ল।

৩১ মে প্রথম পাপড়ির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো জাহাংগীর।   দেখেছিলো পাপড়িকে একটা গোলাপী চুড়িদার পড়ে একগোছা রজনীগন্ধা দাঁড়িয়েছিলো।  দূর থেকে জাহাংগীর মেয়েটিকে প্রায় ৫ মিনিট দেখেছিলো, মিষ্টি লাগছিলো দেখতে।  সেই বিয়ের দিন এরকম সাঝে দেখা হয়েছিলো, তবে আজ ওকে বেশ মিষ্টি লাগছে। তারপর যখন পাপড়ি কাছে আসে, একটা মিষ্টি পারফিউমের ঘ্রান পেয়েছিলো রাতুল ওর শরীর থেকে।   সেই ঘ্রান আজও জাহাংগীরের নাকে লেগে আছে।   পাপড়িকে বুকে টেনে নিয়ে জাহাংগীর বলেছিলো, “এত মিষ্টি তুমি?” এত মিষ্টি ঘ্রান তোমার শরীর ভরে আছে যে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমি বার বার তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।   এই পারফিউমটা ছিলো ওর খুব প্রিয়- পাপড়ি মাথা নীচু করে বলেছিল।।

 পাপড়ির শরীরে সেদিন শিহরণ খেলে গিয়েছিলো এবং জাহাংগীর তা অনুভব করেছিলো।  লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলো পাপড়ির দুটি গাল।
হ্যাঁ ঠিক সেই ঘ্রান।।

তবে কি পাপড়ি আছে এই ট্রে  জাহাংগীরের বুকের মাঝে একটা ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে হৃদ স্পন্দন  এখনই বন্ধ হয়ে যাবে।।  তেজগাঁ ষ্টেশনের পর ট্রেনটা ফাকা হয়েছে ।।  জাহাংগীরের ঘাম ছূটছে, ভালো করে ট্রেনের কামরাটা একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।।  নাহ, কোথাও পাপড়ি নেই, কিন্তু ঘ্রানটা?  সে নিজের মনেই বলে উঠলো, আরে এইরকম পারফিউম আরো মানুষে ব্যবহার করতে পারে এতে এত ভাবনার কী আছে।।
আজ হঠাৎ পাপড়ির চিন্তাটা কেন মাথায় ভর করলো কে জানে? মনে হচ্ছে পাপড়ির মুখটা চোখের সামনে ভাষছে।  অন্ধকারে জানালার বাহিরে চেয়ে রইলো।  মনে হলো এক গভীর জঙ্গলের মাঝ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে।ঘ্রানটা আরো বেশী নাকে লাগছে।

১৫ মিনিট পর এয়ারপোর্ট ষ্টশনে ট্রেনটা ঢুকলো।।  মোবাইলে তাকিয়ে দেখলো ১১.৫০  বেশ দেরী হয়ে গেছে, শীতের রাত বলে ষ্টেশন চত্তরটাও বেশ ফাঁকা। প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে দেখলো প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় কটা নেড়ি কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে।  জাহাংগীরকে দেখে কাছে এসে লেজ নাড়তে লাগলো।  প্লাটফর্মে রাত্রীযাপন করা কিছু মানুষ এক কোনে আগুন জ্বালিয়ে হাতপা সেকছে।  জাহাংগীর এগিয়ে চললো কাঁধে ব্যাগটা ভালো করে ঝুলিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে হাটা শুরু করলো  আজ আর পান খাওয়া হলো না রো ষ্টেশনে নেমে ফজলুর দোকান থেকিএ একটা পান মুখে দিয়ে বাড়ির দিকে যায়, আজ শুধু সিগারেট দিয়ে কাজ চালাতে হবে।  মনে হচ্ছে না রাত ১২ টা বাজে। এমন শুনশান নিরবতা যেনো মাঝরাত মনে হচ্ছে।  শীতের রাত, মানুষজন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরে ঢুকে যায়।   হাটতে হাটতে হঠাত জাহাংগীরের মনে হলো একটা ঠান্ডা হাওয়া ওকে ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেলো।   আবার সেই মিষ্টি কিন্তু মাতাল করা ঘ্রানটা নাকে আসলো তার।  এমনিতেই জাহাংগীর খুব সাহসী মানুষ, তবুও ওর সারা শরীরে একটা কাটা দিয়ে গেলো।  পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো সারা রাস্তা জুড়ে কেউ নেই।  মানুষ তো দুরের কথা, একটা কুকুরও নেই।   জাহাংগীর আবার হাটা ধরলো, কিছুদুর হাটার পরে সে অনুভব করলো সেই মিষ্টি ঘ্রানটা সে খুব কাছ থেকে পাচ্ছে।   মনে হচ্ছে ওর পাশে ঠিক ওর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে অদৃশ্য ঘ্রানের অস্তিত্বটা হেটে চলেছে।   এখন সত্যিই জাহাংগীরের একটু ভয় লাগছে জেন সে নিজেও জানে না।  একসময় এই পরিচিত ঘ্রানটা তার মনে সুখের সঞ্চার করতো তবে আজ সেটা শিহরন জাগাচ্ছে।  আরো বেশী অবাক হচ্ছে, ঘ্রানটা তার নাকে যতটা দূর ভাবে আসছে, কিন্তু ঘ্রানটার উৎস সে ঠাহর করতে পারছে না।  আর এই বিষয়টাই তাকে আরো বেশী আতংকিত করছে। 

জাহাংগীরের মনে হচ্ছে সে মাতালের মত টলে পড়ছে, তার মাথা যেন ভার হয়ে আসছে, সারা শরীর যেন অবস হয়ে আসছে...সে অনেক চেষ্টা করেও এগিয়ে যেতে পারছে নাকিছু একটা শক্তি যেন তাকে টেনে রেখে দিয়েছে। আর সেই মাতাল করা ঘ্রানটা তাকে আরো বেশী আবেশে ভাষিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।  আর কিছুদুর এগুলেই তার বাড়ি, কিন্তু সে যেন ফ্রিজ হয়ে গেছেহঠাত তার ফোন বেজে উঠলো।  মনে হলো এক নিমিষে কেউ যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।  মাসুমা ফোন করেছে, কাপা কাপা হাতে ফোনটা ধরে সে বললো, আমি প্রায় চলে এসেছি বাসার কাছে; এই বলেই ফোনটা রেখে সে দ্রুত হাটা শুরু করলো।
মাসুমা রাতে না খেয়ে বসে ছিলো, কিন্তু জাহাংগীর না খেয়ে শুয়ে পড়লো; বললো ওর শরীরটা ভালো না।   সারাদিনের ক্লান্ত শরীর, বিছানায় শুয়েও তার ঘুম আসলো না।   মাসুমা কিছুক্ষন বকবক করে ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু জাহাংগীরের চোখে ঘুম নাই।

পাপড়ি সেদিন ফোন ধরে খুব জেদেছিলো, জাহাংগীর প্লীজ আমাকে ছেড়ে যেওনা কি অপরাধ আমার না, জাহাঙ্গীর ওর কোন কথা শোনেনি। খুব কঠিন ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো কোনদিন আমার সাথে আর যোগাযোগ করবে না।  পাপড়ি জাহাংগীরের মাকেও ফোন করেছিলো কিন্তু সেও পাপড়ির ফোন ধরে নি।  পাপড়ি বুঝতে পেরেছিলো সে প্রতারিত হয়েছে এখন শত অনুনয় বিনয় করেও কোন কাজ হবে না।

বারবার ফোর্স করার পর পাপড়ি জাহাংগীরের কথা বাড়িতে জানিয়েছিলো কিন্তু ঠিক তাই হলো যা পাপড়ি ভেবেছিলো।   পাপড়ির বাবা-মা একেবারে না করে দিয়েছিলো।  পাপড়ি ভেঙ্গে পড়েছিলো মা বলেছিলো এগুলো বয়সের মায়া।  ভুল ভাংলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে, এই সম্পর্ক থেকে তুই সরে আয়।  কিন্তু পাপড়ি বোঝে নি... সে বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে জাহাংগীরের সাথে ছিল।  অগত্য মেয়ের জিদের কাছে মাথে নিচু করে পাপড়ির মা বাবা জাহাংগীরের বাড়ির লোকজনদের ডেকে পাঠায়।

মাসুমা উঠে গেছে। জাহাংগীর বেলকনীতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল।  মাসুমা এসে বললো, কিগো- ঘুমাও নি? জাহাংগীর বললো- না; ঘুম আসছে না। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়।  মাসুমা জাহাংগীরকে রিলাক্স করার জন্য জড়িয়ে ধরতে গেলে জাহাংগীর ওকে ঠেলে সরিয়ে দেয় একটা বিরক্তি ভরা ব্যাবহার নিয়ে। মাসুমা একটু অবাক হয়.........

পরদিন সকালে জাহাংগীরের ঘুম ভাংতে দেরী হয়। যথারীতি সে খাবার না খেইয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।  মাছুমা অনেক জোড়াজুড়ি করে, কিন্তু তার বদলে শুনতে হয় মুখ ঝামটা। 

সঠিক সময়ে ষ্টেশনে পৌছেই সে এক কাপ চা খায়  আজ তার কেন যেন অফিসে যেতে ভালো লাগছে না।  প্রতিদিনের টা ৩৫ এর ট্রেনটা সে ধরে কিন্তু আজ সে বেমালুম ট্রেনটা ছেড়ে দিলো।   একবার ভাবলো বাড়ি ফিরে যাবে। তারপর ভাবল, সেই বাড়িতে ফিরে গিয়েও সেই হাজার প্রশ্নের জবাব দাও। সে উলটো পথের একটা ট্রেনে উঠে গেল।  জয়দেবপুরে নেমে বেশ উদাস ভঙ্গীতে হেটে হেটে ষ্টেশন পার হয়ে একটা চায়ের দোকানের সামনে বসলো; এক কাপ চা শেষ করে আবার হাটতে শুরু করলো  সে নিজেও জানেনা সে কোথায় যাচ্ছে  হাটতে হাটতে সে একটা নির্জন যায়গাতে চলে আসলো  শাহজালাল বিমান বন্দরের উত্তর পাশটা বেশ নির্জন রকটা কাঠাল চাপার গাছ আছে, তার আশে পাশে আগাছার জংগল  আর তার পাশে একটা চাতাল  সে আনমনে সেই চাতালের উপরে গিয়ে বসে দূরে বিমান উঠানামা করছে  বাবা রকম প্রাণীর ডাকও শুনতে পাচ্ছে  জাহাংগীরের মনটা ভরে গেলো………… ফোনটা বেজে উঠলো, স্ক্রিনে ভেসে উঠলো বুলবুল ভাইয়ের নাম  অফিস থেকে ফোন…… কেন যাই নি, কি বিত্তান্ত আর ভালো লাগে না  জাহাংগীর ফোনটা কেটে সুইচ অফ করে দিলো  বেশ কিছু সময় বসে থাকার পর জাহাংগীর অনুভব করলো সেই ঘ্রাণটা সে আবার পাচ্ছে  সে জানতো এবার সে ঘ্রাণের উৎস উদঘাটন করতে ব্যার্থ হবে তাই সে উদাস ভাবে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো  হঠাৎ সব ভুল ভেঙ্গে পিছন থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠে কে যেন ডেকে উঠলো জাহাংগীর............সে এবার একটু চমকে উঠে, পিছন ফিরে দেখে এক মুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাপড়ি।  হ্যা, সেই পাপড়ি। আজ প্রায় দুই বছর পর তাকে দেখলো।  জাহাংগীর একটু থতমত খেয়ে দাড়াতে যাবে; অমনি পাপড়ি ওর কাঁধে হাত রেখে ইসারায় বলে বসতে। তারপর ওর পাশে পাপড়ি নিজেই বসে পড়লো।  জাহাংগীর ভাবতেই পারেনি এভাবে পাপড়ির সাথে দেখা হবে।  জাহাংগীর বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষন বসে থাকলো। এবার নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে পাপড়ি বললো, কেমন আছো জাহাংগীর।  সে এক লাস্যময়ী মায়াবী চাহনি জাহাংগীরের মাথার মধ্যে যেনো নেশা চাপিয়ে দিলো।  হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলো।  জাহাংগীর কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?  পাপড়ি সেই মন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো তুমি ভালো থাকলে আমি কি করে ভালো থাকি বল”?? জাহাংগীর তার কথার কোন আগা মাথা খুজে পেলো না।  সে নফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পাপড়ির দিকে    জাহাংগীর কিছুক্ষনের জন্য সবকিছু ভুলে গেছিলো তারপর একটু ভেবে নিয়ে তুমি এইখানে?............ পাপড়ি বললো খালা বাড়ি এসেছিলাম  হ্যা জাহাংগীর একটু লজ্জা বোধ করে বললো, আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমার খালা বাড়ি এখানে   পাপড়ি বাকা চোখে জাহাংগীরের দিকে সেই মায়াভরা চোখে তাকিয়ে বললো, এটা তো সামান্য বিষয় জাহাংগীর  তুমি তো আমাকেই ভুলে গেছ, আর আমার খালা বাড়ি তো অনেক দুরের কথা জাহাংগীর একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো, না না, তেমন কিছু না্  আসলে এইভাবে তোমাকে দেখবো আশা করি নাই  এবার পাপড়ি হাসিতে ফেটে পড়লোতারপর বললো আমাদের চাওয়া পাওয়ার বাইরেও তো অনেক কিছুই ঘটে যায়, তাই না জাহাংগীর?

এভাবে কথায় কথায় প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে জাহাংগীর খেয়ালই করেনি  মোবাইলে সময়টা দেখে জাহাংগীর বললোআচ্ছা অনেক দেরী হয়ে গেছে, আজ আমাকে উঠতে হবে  পাপড়ি সেই লাস্যময়ী নজরে একবার তাকিয়ে ফিজ্জাস করলো, কেন জাহাংগীর? বাড়িতে বউ অপেক্ষা করছে বুঝি?? জাহাংগীর এবার সত্যি সত্যিই খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেলো……… কিছুক্ষন নিরব থেকে সে বললো, তুমি খালা বাড়ি ফিরবে না? পাপড়ি বললো হুম ফিরবো  জাহাংগীর বললো, চলো তবে একসাথে যাওয়া যাক  পাপড়ি একটু মুচকি হেসে বললো যদি মাঝপথে আবার ছেড়ে চলে যাও? তোমার তো অভ্যাস আছে  এবার জাহাংগীরের মাথা যেন ও মাটির সাথে মিশে যেতে চাইল সে মাথা নিচু করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকল  পাপড়ি এবার হেসে বললো, তুমি যাও- আমি আরো কিছুক্ষন এখানে থাকবো, তারপর চলে যাবো।।  জাহাংগীর তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো তারপর পাপড়ি বললো তুমি এসো জাহাংগীর এবার সে কাধে অফিস ব্যাগটা ভালো করে ঝুলিয়ে হাটা শুরু করলো আকাশে চাঁদ উঠেছে কাচা রাস্তা দিয়ে উঠে সে ষ্টেশনের পথ ধরলো  যেতে যেতে হঠাৎ জাহাংগীরের মনে পড়লো , হ্যা- এইতো সেই যায়গা... যেখানে পাপড়ির সাথে প্রথম দেখা করতে এসেছিলো একা। জাহাংগীরের মনে একটা চাপা অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগলো।  মেয়েটির সাথে খুব বড় অন্যায় করে সে, আর একবার ক্ষমাও চায়নি।   আজ জাহাংগীর বিয়ে করে সংসার করছে কিন্তু পাপড়ি আজও তার ভালোবাসা বুকে আগলে পড়ে আছে।  জাহাংগীর গলায় ব্যাথা অনুভব করলো, কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসতে গেলো।
রাতে বাড়ি ফিরে সে কারো সাথে কোন কথা বলে নি।  রাতে কোন রকম খাবার মুখে গুজে শুয়ে পড়েছে  মাছুমা একটু রেগে আছে বইকি আজ মাছুমার রাগ ভাংগানোর কোন ইচ্ছে তার নেই  বিছানায় শুয়ে জাহাংগীরের শুধু পাপড়ির কথা মনে পড়তে লাগলো   সেই মায়াবী চোখ, সেই নেশা ধরানো হাসি কিছুই পালটায় নি  সব একই আছে  হ্যা, পাপড়ি আজও জাহাংগীরকে একই ভাবে ভালোবাসে………… সেই গায়ের ঘ্রান, যা জাহাংগীরের ঘুম কেড়ে নিয়েছে 

জাহাংগীরের মা, বোন, ভগ্নিপতি দেখতে গিয়েছিলো পাপড়িকে নিজেদের সামর্থ মত অতিথি আপ্যায়ন করেছিলো পাপড়ির বাবা মা  জাহাংগীর পাপড়িদের বাড়ি থেকে বেরুবার সময় ঠিক করে নিয়েছিলো, না কোন ভাবেই সে পাপড়িকে বিয়ে করতে পারবে না আর যাই হোক, সে তার অফিসের চাপরাশির মেয়েকে সে নিজের বউ বানাবে না  হ্যা, জাহাংগীরের অফিসের চাপরাশি সুন্দর বাবুর মেয়ে পাপড়ি জাহাংগীর যদি আগে সে কথা জানতো, সে পাপড়ির সাথে কোন রকম সম্পর্কে জড়াতো না  তার বড্ড ভুল হয়ে গেছে জাহাংগীর এই সিদ্ধান্তের আগুনে তার মা, বোন, ভগ্নিপতি তাদের আশায় ঘি ঢাললেন  পরদিন পাপড়ি অনেকবার ফোন করেছিলো তকে জাহাংগীর ফোন ধরেনি  এর মর্ম পাপড়ি না বুঝলেও পাপড়ির বাবা মা ঠিকই বুঝেছিলো  তারপর জাহাংগীর যখন জানিয়ে দিলো, একজন চাপরাশির মেয়েকে সে কোনভাবেই বউ বানাতে পারবে না তখন পাপড়ি হাতে পায়ে ধরার মত করে একবার দেখা করতে চেয়েছিল তার সাথে, কিন্তু জাহাংগীর স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল সে আর কোনদিন তার সাথে দেখা করবে না   আর পাপড়িও যেন তার সাথে যেন কোনদিন যোগাযোগ না করে

না, পাপড়ি আর কোনদিন তাকে ফোন করেনি

জাহাংগীরের চোখ ভিজে আসে। সামাজিক কিছু ঠুনকো দম্ভে সে একটি মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করে দিল?

আজও জাহাংগীরের অফিসে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।  বার বার মনে হচ্ছে একবার যাই সেই বেরিবাধের উপরে; আজ হয়তো পাপড়ির দেখা আবারও পাবো।  আজ তার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো, এই ভেবে জাহাংগীর আবার রওনা দিলো সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।   আজ সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো কিন্তু কারো দেখা নেই।   এবার বিকেল নামছে, শীতের দিন তাই ঝুপ করে সন্ধ্যাও নেমে পড়বে।  জাহাংগীর বুঝলো আজ আর পাপড়ি আসবে না।  হয়তো সে খালা বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে গেছে কিংবা সে হয়তো আজ খালা বাড়ি থেকে বের হয় নাই।  ভাবতে ভাবতে জাহাংগীর যখন উঠতে যাবে; হঠাৎ তার নাকে সেই পরিচিত ঘ্রানটা ঠেকল।  নিজের অজান্তেই জাহাংগীরের মুখে একটা মৃদু হাসি খেলে গেলো।  হ্যা, তার প্রেয়সী এসেছে।  ঘার ঘুরিয়ে দেখলো, বিকালের পড়ন্ত আলোতে আজ পাপড়িকে অসাধারন সুন্দরী লাগছে।  সেই মায়াবী হাসি দিয়ে পাপড়ি জাহাংগীরের পাশে এসে বসল।   জাহাংগীর বোকার মত পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে দেখে পাপড়ি একটু মুচকি হেসে জিজ্ঞাস করল, অমন করে কি দেখছো জাহাংগীর?  জাহাংগীর একটু লজ্জা পেয়ে বলল, না মানে আজ তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।  সেই বাকা চোখে পাপড়ি আবার  তাকাল আর মৃদু হেসে বলল, তাই বুঝি? দেখো যেনহ আবার প্রেমে পড়ে না যাও।   জাহাংগীর মনে মনে বললো, প্রেমে তো সেই কবেই পড়েছি, শুধু নিজের মুর্খামির জন্য তোমাকে হারিয়েছি  মনের কথা মনেই চাপা পড়ে গেলশুধু তার মুখে একটা হাসির ঝলক দেখা গেল, সেটাতে অপরাধ বোধ মাখা ছিলো।   বেশ কিছুটাআ সময় নিস্তব্ধ, তারপর জাহাংগীর বলল- পাপড়ি এখন কি করছো? পাপড়ি উদাস ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, কিছু না।  জাহাংগীর একটু সংকোচ নিয়ে জিজ্জাস করল “ কাউকে ভালবাস” ।  পাপড়ি তার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে উত্তর দিল হুম, বাসিতো- খুব ভালবাসি।।  তাকে নিশ্চয়ই বিয়ে করবে?  এবার পাপড়ি হাসিতে ফেটে পড়ে বলল, আমাদের দেশে এখনও মেয়েদের দুইটি বিয়ে করার অনুমোদন হয় নি।  জাহাংগীর অবাক হয়ে বলল, মানে…….।।  পাপড়ি হেসে বলল, সে বিবাহিতা।।   আমি কি করে তাকে বিয়ে করব মশাই। জাহাংগীরের বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল…… সে ডুবন্ত সুর্যের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেল…… পাপড়ির দুই চোখ ভিজে আছে।  জাহাংগীর এবার পাপড়ির হাত ধরে কাপা কাপা গলায় বলল, পাপড়ি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমি জানি , আমি তোমার সাথে যে অন্যায় করেছি; তার কোন ক্ষমা নাই।  তবুও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দাও।  পাপড়ি জাহাংগীরের হাত থেকে নিজের হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ক্ষমা সে তো আমি করতে পারবো না তোমাকে। তোমার জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। এটা জেনেও তুমি ক্ষমা চাও কোন মুখে?  তুমি আজ স্ত্রী নিয়ে ঘর করছ আর আমিদেখ আমাকে।  আমি কোথায় এসে দাড়িয়েছি।   জাহাংগীর মাথা নীচু করে বসে রইল। লজ্জায় তার মাথা তোলার শক্তি হারিয়ে গেল।   তারপর অনেকটা শক্তি যোগার করে ব্জাহাংগীর বলল, তুমি আমাকে ভুলে যাও পাপড়ি। তুমি নতুন করে জীবন শুরু কর।   এবারও পাপড়ি আকাশের দিকে মুখ তুলে বলল, তোমার মত সত্যি যদি আমার মন হতএতদিনে হয়তোবা আমি অন্য কারো সাথে ঘর বেধে ফেল্পতাম।  যাক জাহাংগীর, তুমি যে আমাকে ভুলে নিজে জীবনে এতটা এগিয়ে গেছো, সেখানে কি আমি ক্ষমা করলাম বা না করলাম তাতে কিছু এসে যায়??  না, আমি যে রাতে ঘুমাতে পারি না পাপড়ি। আমার এই অপরাধ বোধ আমাকে কুরে কুরে খায়। জাহাংগীর খুব উদবিঘ্ন হয়ে কথাগুলো বলে উঠল।  এবার পাপড়ি একটু বিদ্রুপের সুরে হেসে বলল, তাই বুঝি তুমি আমার কাছে ঘুম খুজতে এসেছো??  নতুন বউ এর শরীরের উষ্ণতায় তার শরীরের গন্ধে যে তোমার সুখের ঘুম  আসার কথা জাহাংগীর!!  জাহাংগীর এবার নির্লজ্জের মত বলল, না পাপড়ি, তোমার শরীরের ঘ্রানের কাছে সব কিছু ফিকে মনে হয়।  আজও তোমাকে পেতে ইচ্ছে করেআজও তোমার শরীরের ঘ্রান আমাকে মাতাল করে।  আমি তোমার টানে বারবার ফিরে আসতে চাই। সেটা কি তুমি আমার চোখে দেখতে পাও না?? পাপড়ি এবার শুধু একটু মৃদু হাসল।  জান জাহাংগীর, যেদিন তোমার বিয়ে ছিল আমি খালার বাড়িতে ছিলাম। তোমাকে একবার ফোনও করেছিলাম, তবে ব্যাস্ততার জন্য হয়ত বুঝতে পারনি কে ফোন করেছে। হাহার জাছ থেকে জেনেছিলাম তোমার বিয়ের কথা। আসলে আমার বাবা তোমাদের অফিসের চাপরাশি ছিলো কিনবাবা বলেছিলো তুমি নাকি অফিসের সবাইকে খুব ঘটা করে দাওয়াত করেছিলে তোমার বিয়েতে।  সেটা হয়ত তোমার অফিসের ঐ চাপরাশি সুন্দর বাবুকে দেখিয়ে , তাই না???  জাহাংগীর অপরাধীর মত, না না পাপড়ি; এটা ভুল।   কিন্তু মনে মনে জাহাংগীর জানে সে, সেটাই করেছিল।   জাহাংগীর চেয়েছিল, পাপড়ি আর তার বাবাকে অপমান করতে।    

সেদিন সারারাত আমি বালিশে মুখ গুজে কেঁদেছিলাম...না, তুমি জানতেও পারনি।   কি করে জানবে তুমি বল?  তখন তুমি নতুন মানুষের প্রেমে দিবা রাত্র স্বপ্নে মগ্ন।  আমি তখন কে?  সে রাতে মা এসে পাশে শুয়েছিল।  মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছুল, কাদিস না মা, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।  জানো জাহাংগীর, সেদিন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল, পারিনি শুধু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে।  কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দেখো, তোমার বিয়ের ছয় দিন আগে আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।  আমি খুব একা হয়ে গেছিলাম।  মনে হচ্ছিল একবার তোমার বুকে মাথা রেখে যদি কাদতে পারতাম......কিন্তু কোথায় তুমি?? খুব মন খারাপ ছিলো বলে বাবা আমাকে খালার বাড়ি পাঠিয়ে দিল।  এই তো একটাই আত্মীয় ছিল আমাদের।  খালার বাড়িতে এসে তোমার কথা আরো বেশী মনে পড়তে লাগল।।   আমি রোজ বিকাল বেলা এইখানে আসতাম।

মনে পড়ে? এইখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। পাপড়ির চোখে তখন অশ্রু বাধ মানছে না।  জাহাংগীরের চোখও ভিজে এলো। পাপড়ি বলে চলল, যেদিন তোমার বিয়ে সেদিন আমি কিছুতেই বাড়িতে থাকতে পারছিলাম না।  যদি মা থাকত, তবে আমি পারতাম তার বুকে মাথা গুজে কাদতে।  তবে দেখো, আমার মা টাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। বিকাল বেলা এখানে এসে বসে থাকলাম। তুমি নিষেধ করেছিলে তাই তোমাকে ফোন করতে পারছিলাম না।   তারপর যখন সন্ধ্যা সাতটা, আর পারিনি তোমাকে ফোন না করে থাকতে।   তুমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো করছিলে, আমি একটি কথাও বলতে পারিনাই।  বুঝছিলাম তুমি বর সেজে কারো গলায় মালা দিতে যাচ্ছো।  তোমার এখন খুব ব্যাস্ততা, তখন আকাশের দিকে বারবার তাকিয়ে বলেছিলাম, আল্লাহ আমাকে তুলে নাও, এই বলে পাপড়ি থামল।  জাহাংগীরের চোখটাও ভিজে আছে।  পাপড়ি বলল, জাহাংগীর অনেক রাত হলো, এবার বাড়ি যাও।  জাহাংগীর মন্ত্র মুগ্ধের মত পাপড়ির দিকে তাকিয়ে রইল।  জাহাংগীর বলল, সত্যিই পাপড়ি আমার পাপের কোন ক্ষমা নাই।   তুমি আমাকে ক্ষমা করতে না পারলে শাস্তি তো দিতে পার।  যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেবো।  পাপড়ি বলল, আচ্ছা যদি বলি বউকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসো, পারবে?? জাহাংগীর মাথা নীচু করে চুপ করে থাকল।  পাপড়ি বেশ তীখন সুরে বলে উঠল জাহাংগীর তুমি সেদিনও মেরুদন্ডহীন ছিলে আজও তাই আছ।  তুমে আমার ভালবাসা তো দূর, আমার শাস্তির যোগ্যও না।

অনেক রাত অবধি বাড়িতে না ফিরে আসায় জাহাংগীরের খোজ পড়ে যায়। থানা পুলিশও হয়। কিন্তু পর দিন সকাল বেলা জাহাংগীরের অচৈতন্য দেহটা উদ্ধার করে সেই চাতালটার উপর থেকে।  তারপর বাড়ির লোকজনদের খবর দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।   সেদিন থেকেই জাহাংগীরের আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান আসার পর থেকে জাহাংগীর শুধু পাপড়ির কথা বলে আর মিষ্টি ঘ্রানটা পায়। 

পাপড়ির কথা জাহাংগীরের মুখে শুনে জানা যায় আজ থেকে নয় মাস আগে জাহাংগীরের বিয়ের পরের দিন পাপড়ির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তুরাগ নদী থেকে।  ময়না তদন্তে এটাও জানা যায়, পাপড়িকে শুধু হত্যা করা হয়নি, তাকে হত্যার পুর্বে ধর্ষনও করা হয়েছিল।   অনুমান করা যায় সে তারে পাপড়ি মনের কষ্ট চাপা রাখতে না পেরে বেরীবাধের উপরে এসে জাহাংগীরকে ফোন করে।  তখন সে কিছু অসাধু লোকের খপ্পরে পরে...এবং তারা এমন নির্মম ঘটনা ঘটায়।  

সেদিনের পর জাহাংগীর আর কোনদিন সেই বেরিবাধের উপরে যায় নি।  কিন্তু পাপড়ি প্রতিদিনই জাহাংগীরের সাথে দেখা করতে আসে। ঘন্টার পর ঘন্টা জাহাংগীরের সাথে গল্প করে।  জাহাংগীরও সেই পাপড়িতে মেতে আছে।  জাহাংগীর এখন প্রতিদিন মাঝ রাতে সেই ঘ্রানটা পেয়ে জেগে উঠে।   বুঝতে পারে পাপড়ি এসেছে।   আজ জাহাংগীরের জীবনে ঐ ঘ্রানটাই একমাত্র সত্যি আর বাকী সব মিথ্যে।  জাহাংগীর এখন পাবনার হেমায়েতপুরে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে সে ভয়ানক কিছু সক পেয়ে তার ভমানষিক ভারসম্য হারিয়েছে।






অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...