Wednesday 19 February 2020

কখন ছিল মান্ধাতার আমল?


ওপার বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনি ‘পায়ের তলায় সর্ষে’ পড়ছি, সেখানে এক জায়গায় ‘মান্ধাতার আমল’ প্রবাদের প্রয়োগ পেলাম। পুরনো কোনো পদ্ধতি, বিষয় বা কথা হলেই আমরা বলি- মান্ধাতার আমলের জিনিস। হঠাৎ প্রশ্নটা মাথায় এলো- মান্ধাতা আসলে কে? তার শাসনামল কোন সময়ে ছিল? কেনই-বা তার আমল ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য?
বিষ্ণুপুরাণে মান্ধাতার কাহিনি পাওয়া যায়। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের রাজা। উল্লেখ্য এই বংশে মান্ধাতার বহুকাল পরে পৌরাণিক দেবতা রামের জন্ম। এ বিষয়ে কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’-এ বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। সুধীরচন্দ্র সরকার লিখিত পৌরাণিক অভিধান থেকে জানা যায়, মান্ধাতা হলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। মান্ধাতার জন্মগ্রহণের ঘটনা বেশ অদ্ভুত! মাতৃগর্ভে নয়, পিতৃগর্ভে জন্মেছিলেন তিনি। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, যুবনাশ্বর সন্তান ছিল না। অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সবই বিফল। অবশেষে তিনি মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা শুরু করলেন। দীর্ঘ সাধনায় তৃপ্ত হলেন মুনিরা। তারা সবাই মিলে যুবনাশ্বর জন্য যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ শেষ হতে হতে মাঝরাত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত জল বেদিতে রেখে গেলেন তারা। এই কলসির জল যুবনাশ্বর স্ত্রী পান করলেই তিনি গর্ভবর্তী হবেন।
কিন্তু বিধিবাম! রাতে তীব্র তেষ্টা পেলে যুবনাশ্বর পান করেন সেই জল। সকালে মুনিরা ঘোষণা দিলেন- জল যেহেতু যুবনাশ্বর পান করেছে, সুতরাং তার গর্ভেই জন্মাবে সন্তান। অবশ্য মুনিরা নারীর গর্ভধারনের কষ্ট থেকে যুবনাশ্বরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে যুবনাশ্বরের পেটের বাম দিক চিড়ে মান্ধাতাকে বের করা হয়। অর্থাৎ মান্ধাতা হলেন প্রথম সিজারিয়ান শিশু। দেবরাজ ইন্দ্রের আশীর্বাদে মাত্র ১২ দিনে তিনি পূর্ণতা পেলেন ১২ বছর বয়সী বালকের মতো। কিছুদিন পরেই তিনি পড়াশোনা এবং অস্ত্রবিদ্যায় অতুলনীয় হলেন।
মান্ধাতা সিংহাসনে বসেই পৃথিবী জয়ে বের হলেন। একসময় যুদ্ধ করে পৃথিবী জয়ও করলেন। পৃথিবী যিনি জয় করেছেন তিনি কি আর স্বর্গজয় বাদ রাখবেন? সুতরাং মান্ধাতা চললেন স্বর্গ জয় করতে। কিন্তু ইন্দ্র জানালেন- পুরো পৃথিবী জয় শেষ হয়নি। লবনাসুর মান্ধাতার অধীনতা মেনে নেয়নি এখনো। সুতরাং মান্ধাতা ফিরে চললেন লবনাসুরকে পরাস্ত করতে। কিন্তু এই যুদ্ধই তার শেষ যুদ্ধ হয়েছিল। মান্ধাতা লবনাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন।
হিন্দুধর্ম মতে মহাকাল সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি- এই চার যুগে বিভক্ত। এদের মধ্যে সত্য যুগকে শ্রেষ্ঠ যুগ বলা হয়। সে যুগে পাপ ছিল না। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। সে যুগের রাজা ছিলেন মান্ধাতা। সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সময় ছিল যথাক্রমে ১৭,২৮,০০০ বছর, ১২,৯৬,০০০ বছর এবং ৮,৬৪,০০০ বছর। আমরা যে পাপের যুগে (কলি কাল) বাস করছি তার দৈর্ঘ্য ৪,৩২,০০০ বছর। সব মিলিয়ে রাজা মান্ধাতা কম করে হলেও এখন থেকে প্রায় ৩৫ লাখ বছর আগে রাজকার্য পরিচালনা করেছেন। সুতরাং ‘মান্ধাতার আমল’ মানে যে, অনেক বছরের পুরনো কিছু হবে তা বলাবাহুল্য। এ কারণেই আমরা অনেক পুরনো কিছু বুঝাতে গিয়ে মান্ধাতার আমলের উল্লেখ করি।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, মান্ধাতা মিথোলজিক্যাল চরিত্র।

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...