আমার মনে হয় না যন্ত্র কখনো নিশ্চিত করে বলতে পারবে, মানুষের মনে এখন কী চলছে। সত্য বলছে নাকি মিথ্যে বলছে। ' লাই ডিটেক্টর' আমাদের একটা সম্ভাবনার আশা দেখালেও মূলত সেটা সমুদ্রের তলদেশ থেকে একটা কয়েন খুঁজে পাবার মতই ভবিষ্যৎবানী।
এই যন্ত্র শরীরের নার্ভ ও রক্ত সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে। কিন্তু মানুষের মন অনেক জটিল। অনেক মানুষ খুব স্বাভাবিক ধীর-স্থিরতার সাথে মিথ্যা বলতে পারে। আবার নার্ভাসনেসের কারণে সত্য বলার সময় বেড়ে যেতে পারে রক্ত সঞ্চালন।
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি সন্দেহে অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে বাগরাম কারাগার আটকে রেখেছিল। সত্য যাচাইয়ের জন্য তারা নানান রকমের মানসিক চাপ প্রয়োগ করত। ঘুমোতে না দেয়া, গোসলের সময় সবার সামনে উলঙ্গ করে দেয়া, একই প্রশ্ন মাসের পর মাস করে যাওয়া; যদি মিথ্যা বলে থাকে তাহলে কোথাও না কোথাও কখনো না কখনো জবাব ভিন্ন আসবে। কখনো কখনো হাত পিঠমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে কারণ ছাড়াই চলত নির্যাতন। একটা পর্যায় বসানো হত ' লাই ডিটেক্টর' যন্ত্রের সামনে। কিন্তু তারা এই যন্ত্রের ফলাফলকে কখনোই নিশ্চিত মনে করত না। এখনো করে না।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, গাছের অনেক উঁচু ডালে যদি একটা ফল থাকে কেউ কেউ হয়ত পাথর ছুড়ে সেটা নেবার চেষ্টা করবে। কেউ কেউ হয়ত দুয়েকবার ব্যর্থ হবার পরেও আরও অনেকবার চেষ্টা করবে। কিন্তু বিজ্ঞানের নিয়ম হল, সে ফলটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শত শত বছর ধরে ঢিল ছুড়েই যাবে। বিজ্ঞান যদি কখনো মানুষের মনের ভেতরে কী চলছে, বলতে শুরু করে দেয় তাহলে পৃথিবীটা অবাসযোগ্য একটা গ্রহ হয়ে উঠবে।
তুমি কী আমাকে অবিশ্বাস কর ? একটু একটু হিংসে কর ? ঘৃণা কর ? চারপাশে ঘুরে বেড়ানো এত এত মানুষের মনের ভেতরে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানি না বলেই তো, সব কিছু এখনো ঠিক আছে। সব সত্য জেনে গেলে এক একটা মানুষ এক একটা মানুষের চোখের দিকে তাকাবে কেমন করে ?
No comments:
Post a Comment