ডিসেম্বরের
কোন এক কাক
ডাকা ভোরে ফেইসবুকে
অলসভাবে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ এক জায়গায় চোখ আটকে যায় রাত্রির। হাসি দেয়া
একটা ছবি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের,,
তাহলে সকালের বিয়ে হচ্ছে। এটা ফেইসবুক থেকে দেখতে হলো
রাত্রির। এমনিতেই গতকাল সারারাত
ঘুম হয়নি রাত্রির,, গতকাল একটা বিশেষ দিন ছিল,, রাত্রি
আর সকালের। সারারাত 'রাত্রি' আশায়
থেকেছে,, হয়তো
'সকাল' একবার
হলেও ফোন দিবে।
ফেইসবুকে ছবি
দেখে রাত্রির মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে,, কি করবে বুঝতে পারছেনা। অনেকবার চোখ ডলে রাত্রি ভাবে,,না
এটা সকালের ছবি নয়। তাহলে সকাল তাকে
জানাত। ভুল আশা,, ভুল ধারণা রাত্রির,, এটা
সকালের ছবিই।
ফ্লাসব্যাক
ছয় বছর আগে,
ক্রিং
ক্রিং ক্রিং,, হ্যালো
কে বলছেন, রাত্রির
ফোনে জিজ্ঞাসা। অপরপ্রান্তে
একটা ছেলে কন্ঠ,,আমি সকাল বলছি। রাত্রির
প্রশ্ন, জি
বলুন, আমি
রাত্রি বলছি।
সকাল,,আমি
আপনার নাম জানি,,আপনার
সাথে কথা বলতে চাই।
রাত্রি,, কেন
আপনি আমার সাথে কথা বলতে চান?
আমি চাইনা।
এইভাবে
সকাল প্রতিদিন রাত্রিকে ফোন দিতে থাকে,,রাত্রি ও একসময় সকালের সাথে কথা
বলার জন্য একটু একটু টান অনুভব করতে থাকে। দিন গড়িয়ে মাস চলে যায়,,একদিন সকাল রাত্রিকে বলে চল
আমরা দেখা করি। রাত্রি প্রথম প্রথম রাজি না হলেও একসময় রাজি হয়। দেখাও হয় দুজনের। ভালো লাগাও
শুরু হয় ।
*****
রাত্রি
আর সকালের কথা চলতে থাকে রাত দিন। রাত্রি সত্যি কথা বলতে পছন্দ করে।সকাল ফোন
দিয়ে রাত্রিকে যা জিজ্ঞেস করে,,
অকপটে রাত্রি সবকিছুই বলে। রাত্রি কিসে কিসে রাগ করে,, কোনটা
পছন্দ করে কোনটা করে না সবই
বলে।
এইদিক থেকে সকাল তার নিজের সম্পর্কে তেমন কিছুই বলে না।
রাত্রির ও অভ্যাস, কারো
বিষয়ে খুব কৌতুহল দেখায় না।
একদিন
সকাল রাত্রিকে জিজ্ঞেস করে,,আচ্ছা
রাত্রি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো,,
আমি শুনেছি মেয়েরা নাকি নতুন আর একজনকে পেয়ে আগের জনকে
ভুলে যায়। রাত্রি কপট
রাগ দেখিয়ে বলে,, মিথ্যা
কথা,, ছেলেরা
নতুন কাউকে পেলে আগেরটাকে ভুলে
যায়। সকাল চুপ করে থাকে।
রাত্রি
একটু রাগী টাইপের এবং রাগটা সে
প্রকাশ ও করে,, ভালোবাসাটা প্রকাশ করে কম। প্রথম প্রথম সকালই
ফোন দিত,, রাত্রি
দিত না।সকাল রাত্রিকে জিজ্ঞেস করত,,আচ্ছা রাত্রি তুমি তো আমাকে ফোন দাও
না? রাত্রি
তখন বলে,, তুমি
দাও বলে আমি দেইনা। তাছাড়া আমি ফোন তোমাকে দেইনা ঠিকই,, মনে করি সারাক্ষন।
রাত্রির
অভ্যাস ছিল কেউ তার ফোন না
ধরলে অথবা ব্যাক না করলে রেগে যাওয়া,, এইটা
সে সকালকে অকপটে বলেছেও। এই
ভয়েই রাত্রি প্রথম প্রথম সকালকে ফোন দিত না। এই নিয়ে
হয়ত সকাল মন খারাপ করত,,কিন্তু
মুখে কিছু বলতনা,, আর
রাত্রি ও বুঝতনা। মাঝে মাঝে দুই একদিন রাত্রি ফোন দিলেও সকাল রিসিভ করতো না বলে
রাত্রি রেগে
যেত,, সকালকে
উল্টা পাল্টা
কথা বলত।
এইভাবেই
দিন গড়াতে থাকে, রাত্রি
আস্তে আস্তে সকালকে
ভালবাসতে থাকে,, সাথে
মান অভিমান ও চলতে থাকে। এইদিক থেকে সকাল ছিল আদর্শ প্রেমিক, রাত্রি
যতই রাগ করে কথা বলত,,সকাল
রাত্রির মান ভাংগাত। মাঝে
মাঝে রাত্রি ফোন ধরা বন্ধ করে দিত। সকাল ফোন দিতেই থাকত যতক্ষণ না রাত্রি
ফোন ধরত। মাঝে মাঝে সকাল রাত্রির বাসার আশেপাশে এসে ম্যাসেজ করতে থাকত,, রাত্রি
একটু আস,, তোমাকে
দেখি। রাত্রি যেত না,, রাগ
করে থাকত।
একবার
সকাল দেশের বাইরে যাবে,,রাত্রি
সকালের সাথে কথা বলে না। সকাল বারবার ফোন দিচ্ছিল,,শেষ পর্যন্ত ম্যাসেজ দেয়,, রাত্রি
আমি "আগামীকাল দেশের বাইরে
যাচ্ছি" তারপরও রাত্রি সকালকে ফোন দেয় না। সকাল
চলে যাওয়ার পর রাত্রির খারাপ
লাগা শুরু হয়। হৃদয়ের মধ্যে কেমন খালি খালি লাগতে থাকে। সেই কষ্ট রাত্রি
কখনও সকালকে বুঝতে দেয়নি। সাতদিন পর সকাল ফিরে এসেই রাত্রিকে ফোন দেয়,,রাত্রি
স্বাভাবিকভাবে কথা বলে,,
সকালকে বুঝতে দেয়নি ওর মনের কথা।
*****
রাত্রি
মাঝে মাঝে সকালের উপর রাগ করলেও প্রকাশ করত না। একদিন সকাল রাত্রিকে বলে,, শোন
রাত্রি মনের মধ্যে কোন কিছু রেখো না,, আমার উপর তোমার কোন রাগ জিদ থাকলে সাথে সাথে বলে
ফেল,,নাহলে
একদিন সেটা বিরাট
আকার ধারণ করবে। রাত্রি ভাবে আসলেই তো। তারপর থেকে রাত্রি রাগ হলে সকালকে
বলত,কেন
সে রাগ করেছে। সকাল এত জ্ঞানী কথা বললেও সে ছিল উল্টা। কখনোই সে তার রাগের কথা
রাত্রিকে বলত না। রাত্রি ও বুঝেনি,,বুঝার কথাও না। কারণ রাত্রি এমনিতেই পেচগোচ
বুঝত না। সরাসরি কথা বলাই পছন্দ করত। রাত্রির ধারণা
ছিল,,রাত্রি
যেমন সরাসরি বলছে, সকাল
ও তাই বলবে। রাত্রির ধারণা ভুল ছিল।
দিন
গড়িয়ে বছর চলে যায়। রাত্রি আবার কয়দিন থেকে সকালের সাথে কথা বলে না। সকাল
অবশ্য প্রতিদিনই ফোন দেয়,
রাত্রি ধরে না। রাত্রি সকালকে একবছর হওয়ার আগেই
বলেছে,,দেখ
সকাল আমি যেটা অপছন্দ করি তুমি সেটা কর।তারচেয়ে আমাদের সম্পর্কটা এখানেই স্টপ করে
দেই, নয়তো
আরও দিন গেলে আমার কষ্ট আরও হবে
তোমাকে ভুলতে। সকাল রাত্রিকে অভয় দিয়ে বলে,তুমি
অযথাই চিন্তা করছ রাত্রি। কিছু
হবে না,,আমরা
একসাথেই থাকব। নারীর মন,,তারপরও
কু চিন্তা মাথায় রয়েই যায়।
আজ
রাত্রি আর সকালের দেখা করার প্রথম দিন। একবছর আগে তারা এইদিনে দেখা করেছিল। রাত্রি
কয়দিন থেকে সকালের সাথে কথা বলেনা। আজ তাই মনে মনে ভাবে রাত্রি, সকালকে
ফোন দিবে,,যদি
সে সাথে সাথে ফোন না দেয়,
তাহলে আর
সম্পর্ক রাখবেনা। এই পরীক্ষায় সকাল পাশ করে ফেলে,,সে
সাথেই সাথেই রাত্রিকে ফোন
দেয়।রাত্রির অনেক ভালো লাগে,
এবং সকালকে ক্ষমা করে দেয়।
*****
রাত্রি
দিন দিনই সকালের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর মায়া অনুভব করতে থাকে। সকালের
আন্তরিকতা,, একাগ্রতা,, ধৈর্য্যশীলতা, রাত্রিকে সকালের
প্রতি ভালোবাসা ও মায়া জন্মাতে বাধ্য করে। সম্পর্কের প্রথম দিকে রাত্রি
সকালকে সিরিয়াসলি না নিলেও,
আস্তে আস্তে ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করে, সকালের
জন্য রাত্রি।
রাত্রির সাথে
সকালের যখন পরিচয় হয়,, তখন
সকাল বিজনেস করত। তাই ওর ইচ্ছামত অফিসে যেত। রাত জেগে রাত্রির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা
বলত। নিয়ম করে সপ্তাহে দুইদিন
দেখা করত, মোট
কথা, অনেক
সময় দিত রাত্রিকে। যার কারণে রাত্রি সকালের প্রতি দূর্বল হতে থাকে। রাত্রি সকালের প্রতি যতই
দুর্বল হচ্ছে সকাল তত দূরে
যাচ্ছে। ফোনে কথা বলা,,
দেখা করা কমিয়ে দিতে থাকে। এতে রাত্রি সব সময়ই সকালের
সাথে খিটিমিটি করতেই থাকে। সকাল নানান অজুহাত দেখাতে থাকে। এতে রাত্রির
আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। রাত্রি ভাবে সকাল তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
একবার
সকাল তিনদিন রাত্রিকে ফোন দেয়না। তখন রাত্রি সকালকে ফোন দেয়। তখন সকাল
ওকে জানায় ওদের পরিবারে একজন হসপিটালে ছিল,, তাই ফোন দিতে পারেনি। রাত্রি
সকালকে বলে,,তুমি
একটা ম্যাসেজ আমাকে দিতে পারতা,তাহলে
আমার টেনশন হত
না। এটা শুনে সকাল খুব রেগে কথা বলে, সকালের কথা শুনে রাত্রি ফোন রেখে দিয়ে,, কান্নায়
ভেংগে পরে। সাথে
সাথেই সকাল আবার ফোন করে রাত্রির কাছে ক্ষমা চায়,,আর বলে, এরকম
আর হবে না। রাত্রি কিছু বলে না,এরপরও
সকাল দুইদিন পরে
ফোন দিয়ে বলে, রাত্রি
সমস্যায় ছিলাম। এখন ফ্রি হইছি,,
দেখা করি
চল।রাত্রি তখন রেগে যায়,, আর উল্টা পাল্টা কথা সকালকে
শুনায়,দেখা
করবেনা সেটাও
বলে। বাট ওই যে, সকালের
একাগ্রতার কাছে রাত্রি হার মানে।
রাত্রি
আর সকাল কোন প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ ছিল না। সকাল মাঝে মাঝে বলত,,সারাজীবন সম্পর্ক থাকবে।
রাত্রি কিছু বলত না। রাত্রির জীবনে একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা ছিল,,সেটা সকালকে রাত্রি প্রথমেই
জানিয়েছে। বাট সকাল তার জীবনে
যে একটা রিলেশনে জরিত আছে সেটা বলেনি। রাত্রিকে সে বলেছিল,, রিলেশনটা ব্রেক
আপ হয়েছে। সম্পর্কের বেশ কিছুদিন পরে রাত্রিকে রিলেশনের কথা বলেছে। রাত্রি
সকালকে অনেকবার বলেছে,,আমাদের
সম্পর্কটা স্টপ করে দাও। কারণ পরে
আমার কষ্ট হবে,, তুমি ওই মেয়েকে বিয়ে করলে।
সকাল রাত্রিকে ছেলে ভুলানো কথা
বলে ভুলিয়ে রাখত। তার জিএফের নানান এটিচুডের কথা
বলত।পেইন দেয় সারাক্ষণ,,
ওর সাথে বিয়ে হবেনা,, ফ্যামিলির কেউ মানবেনা,, নানান
কথা। ব্রেক আপ করার চেষ্টা
করছি অনেক পারছি না,,এইসব
আর কি।
এই
কারণে রাত্রি সব সময়ই হারানোর ভয়ে থাকত সকালকে।
*****
রাত্রির
সাথে সকালের যখন পরিচয় হয়,,
তখন রাত্রি অনেক ছেলেদের সাথেই কথা বলত। এটা রাত্রি সকালকে
বলেছেও। সকাল দেখতও রাত্রি
ফোনে কথা বলছে। রাত্রি বুঝতে পারে,, সকালের
এই বিষয়টা ভালো লাগেনা,
তাই সে
কথা বলা কমাতে কমাতে,, একেবারেই শেষ করে দেয়।
অটোমেটিক্যালি সকালের ফোন রাত্রি
বেশি আশা করত। বাট রাত্রি যত সকালের কাছে যেতে চায়, সকাল তত দূরে থাকে।
এটা রাত্রির মনে হত।
এভাবে
চলে যায় দুইবছর। রাত্রি আর সকালের
প্রথম দেখা হওয়ার দিন। রাত্রি সকালকে উইশ করত এই বলে,,তোমার
জন্য সকাল আমরা
দুই বছর অতিবাহিত করলাম। পুরা ক্রেডিট তোমার। সকাল অবশ্য চুপ করে থাকত, রাত্রি
পরে বুঝেছে সকাল ওর প্রশংসা করা পছন্দ করত না। দোষ দেয়াও পছন্দ করত না। রাত্রি অবশ্য
এই নিয়ে কিছু ভাবে নি। কারণ রাত্রি গভীরভাবে ভাবার মেয়ে ও না। যখন যা মনে
আসে, হুটহাট
বলে দেয়। কে কি ভাবল তা ভাবেনা।সকাল
অনেক সময় মন খারাপ করে রাত্রিকে বলত,রাত্রি তুমি অনেক কষ্ট দিয়ে কথা বল। রাত্রি সকালের
কথা উড়িয়ে দিয়ে বলত,,আমি
এমনই।
এর মধ্যে
রাত্রির বিয়ের কথা চলতে থাকে। রাত্রি একটু স্বাধীনচেতা ছোটবেলা থেকেই।তাই
ও না চাইলে বিয়ে হবে না এটা রাত্রি জানত। রাত্রি সকালের কাছে জানতে চায়, তুমি
কি বল,আমি
কি বিয়ে করব? সকাল
অনেক কিছু ভাবে, তারপর
প্রথম রাজি
হলেও পরে বলে না কইরনা। একবছর পরে কইর। রাত্রি বলে, একবছর পরে তো এই পাত্র
বসে থাকবেনা। আর এটা আমার প্রেমের বিয়ে ও নয়,যে পাত্রকে বলে আমি একবছর
অপেক্ষা করাব।সকাল তখন বলে,
তুমি বিয়ে করবানা।
রাত্রি
সকালের সাথে
মাঝে মাঝে খারাপ আচরণ করলেও ভালোবাসত গভীরভাবে, বুঝতে দিত না। রাত্রি তো
বিয়ে করবেই না সেটা সে নিজেও জানত। তারপর ও সকালের মতামত নিয়ে রাখল।
সম্পর্কের
দুই বছর পর রাত্রি প্রথম সকালের ফোন ধরে না। সকাল একটানা ফোন দিতেই থাকে, ম্যাসেজ
পাঠাতে থাকে। "রাত্রি ফোন ধরছনা কেন? তুমি কি ভালো আছ? " রাত্রি
রিপ্লাইয়ে বলে,আমি
ভালো আছি, তুমি
যাদের জন্য সব সময় ব্যাস্ত
থাক,তাদের
নিয়েই থাক।আমাকে তোমার দরকার নাই।
সকাল
তখন রাত্রিকে ম্যাসেজ
দিয়ে বলে, রাত্রি
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,প্লিজ
ক্ষমা করে দাও,কথা
বল। রাত্রি ইচ্ছা করেই সকালের ফোন ধরতনা। কারণ ফোন ধরলে রাত্রির রাগ
চলে যেত, আর
সকাল একই কাজ বারবার করত। রাত্রির সাথে সকালের ঝগড়া হতো শুধু ফোন না দেয়া নিয়ে।
এরমধ্যে
সকাল বিজনেস ছেড়ে দিয়ে জবে জয়েন
করে। জবে জয়েন করার আগে সকাল নয়দিনের জন্য দেশের বাইরে
যায়। রাত্রি সকালকে বলে,এতদিন
থাকবা,আমার
তো কষ্ট হবে। সকাল বলে,
আমি তোমাকে ফোন দিব। রাত্রির তো কিছু করার নাই মেনে না
নেয়া ছাড়া।
আজ
সকাল রাতের ফ্লাইটে দেশের বাইরে
যাবে। রাত্রির সাথে বিকালে দেখা করে, সকাল যখন চলে যায়,রাত্রির তখন মনে
হয়, বুকের
মধ্য থেকে কি যেন খালি হয়ে গেল। রাত্রি বাসায় চলে আসে,,সকালও বাসায় চলে যায়। রাতে রাত্রি
সকালের ফোনে ফোন দেয়, যেই
ফোন দিয়ে সকাল শুধু রাত্রির
সাথে কথা বলে।ফোনটা বন্ধ পায়।অবশ্য সকাল বলেছে যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে
রেখে যাবে। রাত্রি ঘুমিয়ে পরে,
এক ঘন্টা পর ঘুম ভেংগে দেখে, সকাল এয়ারপোর্ট থেকে ওকে দুইবার
ফোন দিয়েছিল। রাত্রি তো আফসোসে সারাটা রাত ঘুমাতেই পারে নি। এরপর পাঁচদিন পর সকাল রাত্রিকে
ফোন দিয়েছে, আর
এই পাঁচদিন রাত্রি
ওর ফোনে কোন ফোন আসলেই দৌড়ে আসত,,রাতে
যেইকাত হত,সেই
কাতেই ফোনটা নিয়ে
ঘুমাত,,আর
ভাবত সকাল যদি ওকে ফোন দিয়ে না পায়। নয়দিনে সকাল একবারই ফোন দিয়েছিল। অথচ যাবার আগে
কিন্ত বলেছিল, আমি
ফোন দিব তোমাকে।
আশা
আর অপেক্ষা
যে কতটা কষ্টের রাত্রি এই নয়দিনে বুঝতে পারে। সকাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড
করার সাথেই সাথেই রাত্রির ফোন পায়। এতটা অস্থির ছিল রাত্রি, শুধু জানত
কয়টায় আসবে।
*****
সকাল
নতুন চাকুরীতে জয়েন করে,,
প্রথম ছয়মাস সকাল রাত্রির সাথে যোগাযোগ ঠিকমতো
করে। আর বলে,, রাত্রি
শোন বেশীদিন চাকুরী করবো না,, বছর
খানেক করে ছেড়ে দিব। যদিও রাত্রি সকালকে চাকরি নিয়ে কিছুই বলেনি। সকালই
নিজ থেকে বলত। এরপর আস্তে আস্তে নানা ব্যস্ততার অজুহাতে সকাল যোগাযোগ কমিয়ে দিতে থাকে।
সকাল অসুস্থতার অজুহাতে ও রাত্রিকে ফোন দিত না। রাত্রি ব্যপারটা সহজভাবে
নিতে পারে না। আসলে সকাল তখন টেনশনে ভোগত নিজের বিয়ে নিয়ে।
রাত্রির
বড় বোন দেশের বাইরে
থাকত,,সকালের
সাথে পরিচয়ের ছয়মাস পরেই রাত্রিকে ওই দেশে নিয়ে যেতে চায়। এটা শুনে সকাল বলে,,আমার
কপাল খারাপ,যাও
তোমাকে পেলাম,তাও
রাখতে পারবনা।
রাত্রির খুব কষ্ট লাগে,
সে যাওয়া ক্যান্সেল করে দেয়। রাত্রি জীবনে অনেকগুলো
সুজোগ হারিয়েছে সকালের জন্য,
কিন্তু সকাল শেষ সময়ে সেটার কোন মূল্যই দেয়নি।
একটা
সময় সকাল বলত,রাত্রি
তোমার ভয়েস না শুনলে আমার ঘুম
আসে না। সেই সকাল অনেক সময় দিন রাত কোন সময়ই ফোন দিত না। এভাবে ওদের সম্পর্কের
চার বছর কেটে
যায়। সুখের সময় দ্রুত চলে যায়।
প্রথম প্রথম
সকাল রাত্রিকে অনেক বেশী গুরুত্ব দিত। আস্তে আস্তে সেই গুরুত্ব কমতে থাকে।
আর রাত্রি সকালকে প্রথম প্রথম গুরুত্ব খুব একটা দিত না। সময়ের সাথে সাথে
রাত্রির জীবনে সকালের গুরুত্ব বাড়তে থাকে।
রাত্রি
রাগ করলে,সকালই
বারবার ফোন দিত। একবার কি কারণে রাত্রি ফোন ধরেনা দেখে, সকাল এক সপ্তাহ
ফোন দেয়না। এইবার রাত্রিই ফোন দেয় সকালকে।
রাত্রি
বলে,আচ্ছা
সকাল আমি ফোন না দিলে কি তুমি আমাকে আর ফোন দিতানা?
সকাল
বলে,দিতাম।
এইজন্য
রাত্রি যতই রাগ করুক, ভাবত
সকাল ওকে ফোন দিবেই,,যদিও
রেগে গেলে এসব চিন্তা মাথায় থাকত না।
*****
রাত্রির
অভ্যাস,আচার, আচরণ
ছিল কাঁচের মত স্বচ্ছ। আর সকালের
আচরণ ছিল বিপরীত। কিছুই বোঝা যেত না। ওর রাগ কোনদিনই রাত্রি বুঝতে পারে
নাই। রাগ করলেও সে স্বাভাবিক আচরণ করত। রাত্রি বুঝতই না, যে সে রাগ করেছে।
পরিচয়ের
প্রথম থেকে চার বছর পর্যন্ত
রাত্রি সকালকে খুবই মায়াবী মানুষ ভাবত,ওর জিএফ নিয়ে যখন বলত,তখন রাত্রি ভাবত,আহা
এমন ইনোসেন্ট একটা ছেলে সারাজীবন কষ্ট পাবে। রাত্রি মাঝে মাঝে সকালকে বলত,
রাত্রি, সকাল তুমি হার্ড হও,না বলা শিখ। নয়তো সারাজীবন কষ্ট পাবা। অনেক টেনশন করত রাত্রি সকালকে নিয়ে। একটু ও বুঝতে পারে নাই সকালের ভিতরের চরিত্রটাকে।
রাত্রি, সকাল তুমি হার্ড হও,না বলা শিখ। নয়তো সারাজীবন কষ্ট পাবা। অনেক টেনশন করত রাত্রি সকালকে নিয়ে। একটু ও বুঝতে পারে নাই সকালের ভিতরের চরিত্রটাকে।
রাত্রি
নিজেকে দিয়ে সকালকে বিচার করত,আসলে
দুইটা মানুষের চরিত্র দুইরকম,
প্রকাশভংগী দুইরকম হওয়াই স্বাভাবিক। রাত্রি
এর আগে সকালের মত এত গভীর মায়া,
প্রেম কোনকিছুতেই আবদ্ধ হয় নাই। তাই অনেক কিছুই বুঝত না।
অপরদিকে সকাল যেহেতু আগেই রিলেশনে জরিত ছিল, তাই সে ব্যাপারগুলো আগেই
বুঝত।
সকাল
সব সময় একটা খোলশের মধ্যে নিজেকে
আবদ্ধ রাখত। রাত্রি দীর্ঘ চারবছরেও সেই খোলশের ভিতরের
সকালকে দেখতে পায় নাই।
রাত্রির সাথে সকালের ঝগড়া হতোই ফোন দেয়া আর দেখা করা নিয়ে। অন্য কোন বিষয়
নিয়া না। সকাল কখনও রাত্রির সাথে ঝগড়া করত না, রাত্রি অভিযোগ করলে সে ভুল
স্বীকার করে চুপ করে থাকত।
সকালের
সাথে আবারও রাত্রির কথা হয়না,,বেশ
কয়েকদিন। রাত্রির ফোনে একটা সমস্যা
হইছিল,
ফোন আসেও না যায়ও না। এটা রাত্রি বুঝতে পারে নাই, কারণ
রাত্রি ওই ফোনটা দিয়ে শুধু সকালের সাথেই কথা বলত।
একদিন, দুইদিন, তিনদিনও
যখন সকাল রাত্রিকে ফোন দেয় না তখন
রাত্রি সকালকে ফোন দেয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিয়েই বুঝতে
পারে ফোনের সমস্যা। রাত্রির
তখন খুবই খারাপ লাগে, যে
সকালকে ও ভুল বুঝেছে।
*****
রাত্রি
সকালকে ফোন দেয়।রাত্রি জানে,
সকাল ফোন না ধরলেও ব্যাক করে। একদিন অপেক্ষা করে রাত্রি
সকালের ফোনের।
না
সকাল ফোন দেয়না, রাত্রি
কষ্ট পায়। ভাবে ভুল হইছে সকালকে আগে ফোন না দেয়া। তাই সিদ্ধান্ত নেয় সকালের অফিসে যাবে।
অফিসে যেতে যেতে রাত্রি সকালকে
ম্যাসেজ দেয়।
রাত্রি
নির্দিষ্ট জায়গায় দশ মিনিট দ্বাড়িয়ে থাকার পরও সকাল কিছু জানায় না।রাত্রি আবার ম্যাসেজ দেয়,, সকাল
তুমি আসবা,নাকি
চলে যাব
আমি,
সকাল
তখন রাত্রিকে ফোন দিয়ে জানায়,
আমি দূরে আছি অফিসের বাইরে, তুমি বাসায় যাও,আমি
ফোন দিব।
রাত্রি
ফিরে আসে বাসায়, এর
আগেও সকাল রাত্রির সাথে দেখা করে নাই। সকাল যে রাগ করে এইটা করতেছে, এটা
রাত্রি বুঝতে পারে নাই। রাগ করলেও সকাল সুন্দর করে মায়া করে রাত্রিকে বুঝাত
অন্যভাবে,বিভিন্ন
অজুহাত দেখাত। রাত্রি তাই বিশ্বাস
করত।
রাতে
সকাল রাত্রিকে ফোন দেয়,
কুশল বিনিময় করে।
সকাল,আচ্ছা
রাত্রি কেন গিয়েছিলে? ওখানে
কাজ ছিল তোমার?
রাত্রি, না, আমি
তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার ফোন্টা নষ্ট ছিল বুঝি নাই।
সকাল,আমি
তোমাকে ফোন দিতে পারি নাই।
রাত্রি,কেন?
সকাল,পারি
নাই,
রাত্রি
এটা শুনেই মেজাজ খারাপ করে ফেলে,,তারমানে
সকাল ওকে ফোনই দেয় নাই এতদিন।
রাত্রি
খুবই রেগে যায়, সকালকে
নানান কথা বলতে থাকে।
সকাল
ওর কথা না শুনেই লাইন কেটে দেয়।
রাত্রি
আরও রেগে যায়। সকালকে ম্যাসেজ পাঠায়,,তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।
ম্যাসেজ
পাঠিয়েই রাত্রি ফোনটাকে আছাড় দিয়ে ভেংগে ফেলে।
*****
রাত্রি
সাতদিন পর ফোনটাকে ঠিক করে,
চালু করে। রাত্রির রাগ একটু বেশিই ছিল।তাছাড়া গত
কিছুদিন সকালের আচরণে রাত্রি খুবই বিরক্ত ছিল।
রাত্রি
নিশ্চিত ছিল যে সকাল ফোন দিবে। না, একদিন, দুইদিন, একমাস চলে যায়। সকাল আর ফোন
দেয়না।
রাত্রি
আরও রেগে যায়,ভাবে
ওর ধারণাই ঠিক, সকাল
ওকে ভালো বাসে নি। এতদিন সময়
কাটিয়েছে, এখন
বিয়ের সময় হইছে,তাই
নানান তালবাহানায় দূরে চলে যাচ্ছে।
এভাবে
একমাস কেটে যায়। চারবছর আগে যেই দিনটাতে ওদের দেখা হইছিলো, সেই দিনটা আসে। রাত্রি ম্যাসেজ
দেয় সকালকে। সকাল কোন রিপ্লাই দেয় না, ফোন ও দেয় না। রাত্রি দুইমাস পর্যন্ত
সকালকে বিভিন্ন ওকেশনে ম্যাসেজ পাঠায়। বাট সকাল আর ফোন দেয়না।
তিনমাস
পর রাত্রি ফোনটা বন্ধ পায়। অবশ্য রাত্রির কাছে সকালের অন্য নাম্বার ও ছিল। চাইলে
সে ওই নাম্বারে ফোন দিতে পারত।
রাত্রির
রাগ আরও বেড়ে যায়,,ভাবে
সকাল হয়তো বিয়ে করেছে,তাই
ফোন বন্ধ করছে। এভাবে
আরও দুইমাস কেটে যায়। পাঁচমাস পরে রাত্রি সকালকে অফিস আওয়ারে ফোন দেয়, এই
ভেবে যে, যদি
সকাল বিয়ে করে থাকে।
সকাল
রাত্রিকে ফোন দেয় সাথে
সাথেই। যদিও রাত্রির কান্না পাচ্ছিল,, তারপর ও স্বাভাবিক ভাবেই রাত্রি সকালের
সাথে কুশল বিনিময় করে। সকাল বিয়ে করেছে কিনা জানতে চায়।
সকাল
জানায় সে বিয়ে করেনি,,হবে
কিনা তাও জানে না।
এরপর
সকাল রাত্রিকে বলে,এখন
রাখি, অফিস
থেকে বাসায় গিয়ে ফোন দিব। রাত্রি
তাই মেনে নেয়। আর ভাবে, পাঁচ মাসে ও তোমার সময় হয়নি
আমার খোঁজ নেয়ার। অথচ তুমি
তো একসময় বলেছিলে ফোন দিবে।
এরপর
রাত্রি অপেক্ষায় থাকে,সকাল ফোন
দিবে এই আশায়। নাহ সকাল ফোন দেয় না। রাত্রি প্রতিদিন একবার/ দুইবার সকালকে
ফোন দেয়। ম্যাসেজ দেয়। নাহ সকাল ফোন দেয়না।
১৩
দিন পর সকাল ফোন দেয়, স্বাভাবিকভাবে
কথা বলে। রাত্রি ভাবে, সব
ঠিক হয়ে গেছে। আহা রাত্রি ভাবলেই কি সব ঠিক হয়।
সকালের
সাথে রাত্রি যতই রাগ করত,,
একবার কথা বললে আর রাগ পুষে রাখতে পারতনা। রাত্রি, সকালকে
ও সেইরকম ভেবেছিল। আসলে তা নয়,
সকাল মনের ভিতর প্রচন্ড রাগ রেখেও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারত।
যেটা রাত্রির পক্ষে মোটেই সম্ভব
ছিল না।
*****
রাত্রি
নিশ্চিত হয়,সকালের
রাগ নাই। কারণ কথা বলার সময় রাত্রির একটুও মনে হয়নি সকালের ভিতর আর কোন রাগ আছে।
প্রতিদিন
রাত্রি সকালকে আবার ফোন দিতে থাকে, ম্যাসেজ দিতে থাকে, সকাল আর ফোন
দেয়না। রাত্রি চার/পাঁচদিন ফোন দেয় না ম্যাসেজ ও দেয়না। তারপরও সকাল ফোন
দেয় না। রাত্রি প্রতিদিন ফোন না দিলেও মাঝে মাঝে ফোন দিত। রাত্রি আবার প্রচন্ড
রাগ করে,আর
ফোন দেয়া বন্ধ করে দেয়।
একমাস,দুইমাস, তিনমাস
চলে যায়,সকাল
আর ফোন দেয় না। রাত্রিও দেয় না।
তিনমাস
পর হঠাৎ ই রাত্রি রিয়েলাইজ করে,
ও সকালকে বুঝতে ভুল করেছে। সকাল রাত্রির উপর অনেক অভিমান
করেই এই ব্যাবহারটা রাত্রির সাথে করেছে। রাত্রি এই বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজের
ভিতর নিজেই প্রচন্ড কষ্ট পেতে থাকে। ১৫ দিন ভাবতে ভাবতেই পার হয়ে যায়।
এরপর
রাত্রি সকালকে প্রথমে ম্যাসেজ পাঠাতে থাকে,এরপর ফোন দেয়। সকাল ফোন দিবে না, এটা
রাত্রি বুঝে ও বারবার ফোন দেয়,ম্যাসেজ
দিয়ে ক্ষমা চায়।
আসলে
কঠিন মানুষের কঠিনই থাকা উচিৎ,,
নরম হলে অনেক কষ্ট পেতে হয়। সাতদিন ফোন আর ম্যাসেজ
দেয়ার পর সকাল ওকে ফোন দেয়।
রাত্রি নিশ্চিন্ত হয়। রাত্রি সকালের সাথে দেখা করতে চায়। সকাল সময় বের করতে
পারে না। তারপরও রাত্রি সকালের দেখা হয় প্রায় তেরমাস পনের দিন পর। রাত্রির
অনেক ভালো লাগে সকালকে দেখে।
বাট, সকাল
আবার ফোন দেয় না। রাত্রি ফোন দিতেই থাকে। এইবার রাত্রি ওর ভুল স্বীকার সকালের কাছে
অনেকবার করে।
সকাল
একদিন কথা বলে তো ১৫/২০ দিন পার হয়ে যায়, দেখাও করে না, কথা ও বলে না।
রাত্রি অনেক ধৈর্য্য নিয়ে সকালের জন্য অপেক্ষা করে, আর ভাবে, সকালকে
ও তো
অনেক কষ্ট দিছে আগে না বুঝে,তাই
হয়তো ওর রাগ এখনও কমে না।
রাত্রি
সকালকে জিজ্ঞেস করে,যখন
সকাল ওকে ফোন দেয়,
আচ্ছা
সকাল, তুমি
কি রিলেশনটা রাখতে চাও না?
সকাল,
বলে,
তোমার কি মনে হয়?
*****
রাত্রির
একেক সময় মনে হয়, সকাল
সম্পর্কটা চায়না। আবার
পরক্ষনেই মনে হয় চায়। অনেকবার রাগ করে ফোন দেয়না,,আবার কি এক মায়ায় সব ভুলে
আবার ফোন দিতে থাকে,সাথে
ম্যাসেজ।
রাত্রির
অভ্যাস ছিল রেগে গেলেই ম্যাসেজ করত। ম্যাসেজে লিখে দিত,আর ফোন দিব না। বাট আবার সে
ফোন দিত।
এরকম
ম্যাসেজ দিয়ে রাত্রি ছয়/সাতদিন ফোন দেয়না সকালকে। সকালও ফোন দেয় না। একদিন
রাত দুইটার সময় হঠাৎ রাত্রির ফোনে একটা ফোন আসে। রাত্রি ভেবেছিল সকাল ফোন
দিয়েছে। অপরিচিত নাম্বার দেখেও ধরে,,বাট অন্য মানুষের ভয়েছ শুনে রেখে দেয়।
এরপর
রাত্রি সকালের নাম্বারে ফোন দেয়। সকালের নাম্বার ওয়েটিং পায়। প্রথমে রাত্রি ভেবেছিল, সকাল
ওকে হয়তো ফোন দিচ্ছে। রাত্রি একমিনিট ওয়েট করে।
বাট
সকাল ওকে ফোন দেয় না। রাত্রি একমিনিট পরেই সকালকে ফোন দেয়। ফোন বাজতে থাকে সকাল
রিসিভ করেনা। দুইবার ফোন দেয় রাত্রি, সকাল ফোন রিসিভ করেনা। রাত্রি খুবই কষ্ট পায়। রাত্রি
সকালকে ম্যাসেজ করে,
"সকাল
তুমি আমাকে ফোন দিতে পারনা,অথচ রাত দুইটায় তোমার ফোন
ওয়েটিং থাকে "।
ঠিক
আছে, সকাল
তুমি ভালো থাক,আমি
এখন অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে
ঘুমিয়ে পরব। তুমি শান্তিতে থাক,আমি তোমাকে অনেক যন্ত্রণা
দিয়েছি, আর
দিব না।
রাত্রি
অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। সকাল তারপরও রাত্রিকে ফোন দেয় না। রাত্রি
সুস্থ হওয়ার পর আবার সকালের জন্য খারাপ লাগা শুরু হয়। সকালকে ফোন দেয়। আর
ম্যাসেজ ও দেয়।
" সকাল
রাত দুইটায় তোমার
ফোন ওয়েটিং পাইছি বলে, তুমি
কোন মেয়ের সাথে কথা বলেছ,
তা ভাবি নাই। আমার খারাপ লেগেছে, তুমি আমাকে ফোন দাওনি বলে
"।
এরপর
সকাল রাত্রিকে ফোন দেয়,
দেখা করে। রাত্রি আবার আশায় বুক বাঁধে,সবকিছু
ঠিক হয়ে গেছে।
*****
এরপর
সকালের সাথে রাত্রির আগের মত না হলেও যোগাযোগ হতে থাকে। রাত্রি ফোন দিলে, সকাল ফোন
দেয়। এর মধ্যেই সকালের বিয়ের কথা
আগাতে থাকে।
রাত্রি
সকালকে বলে, সকাল
তোমার সমস্যা থাকলে আমাকে সরাসরি
না করে দিও, তোমাকে বিরক্ত করবনা। সকাল রাত্রিকে কিছু বলে
না।
রাত্রির
সমস্যা ছিল, সে
একবার সকালকে ভুল বুঝেছিল,সকালের
ভালোবাসা বুঝতে পারে
নাই, তাই
রাত্রি বার বার ফিরে আসত। কারণ রাত্রি ও একসময় সকালকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। সেটা মনে
রেখেই রাত্রি বারবার সকালকে ফোন দিত।
যাইহোক
রাত্রির ধারণা ছিল,সকালও
একসময় বলেছিল, বিয়ের
পরেও ওদের সম্পর্কটা থাকবে।
যেহেতু রাত্রির ভালোবাসা ছিল চাওয়া পাওয়ার উর্ধে। এই কারণেই রাত্রি ফিরে
এসেছিল।
যদিও
রাত্রি একসময় চাইত না বিয়ের পর সকালের সাথে সম্পর্ক রাখতে,বাট সময়ের ব্যাবধানে সেই
ধারণা পাল্টিয়েছে,, শুধুমাত্র সকালের
প্রতি রাত্রির অগাধ ভালোবাসার কারণে।
তারপরও
রাত্রি ভেবেছে,,সকালের
বিয়ের পর আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবে। কিন্তু রাত্রির ভাবনা আর বাস্তবতা ছিল অন্যরকম।
রাত্রি কখনো চায়নি সকালের ন্যুনতম ক্ষতি হোক ওর কারণে। বাট সকালের মনে ছিল
হয়তো অন্য ধারণা।
যেদিন
সকালের বিয়ের কথা
পাকা হবে,আগের
রাতে রাত্রির সাথে সকালের অনেক কথা হয়, একবারও সকাল বলে নি রাত্রিকে, যে
সে আর ফোন দিবে না। কথা শেষ করে রাত্রি ঘুমাতে পারে না, কারণ যদি সকালের শ্বশুর
বাড়ির পক্ষ বিয়ে মেনে না নেয়( সকাল রাত্রিকে এমনই বুঝিয়েছিল), তাহলে
তো সকাল অনেক কষ্ট পাবে।
*****
একদিন, দুইদিন
করে সাতদিন চলে যায়, সকাল
ফোন দেয়না। রাত্রি
ফোন দিতে থাকে, ম্যাসেজ
দিতে থাকে। অথচ লাস্ট যেদিন কথা হইছিল, সেদিন রাত্রি বারবার সকালকে বলেছে,
সকাল, কি হয় আমাকে জানিও।
গত
একবছর সকাল রাত্রির সাথে এই কাজটাই করেছে,কোন কারণ ছাড়াই দিনের পর দিন ফোন
না দেয়া। রাত্রির ব্যক্তিত্ব ছিল অনেক বেশী । বাট একটা সময় রাত্রি সকালের
ফোন ধরত না। সেটা রিয়েলাইজ করেই রাত্রি সকালকে বারবার ফোন দিত।
রাত্রি
প্রথমে ভাবে,হয়তো
বিয়ে নিয়ে সমস্যা হইছে,
তাই সকাল ফোন দেয় না। একমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও সকাল
ফোন দেয়না।
রাত্রি
অনবরত ফোন দিতে থাকে, ম্যাসেজ
করতে থাকে,কোন
রিপ্লাই নাই। একটা সম্পর্কের
শুরুটা কি ছিল,আর
এখন কি হচ্ছে,এটা
ভেবে রাত্রি দিনের পর দিন কষ্ট
পেতেই থাকে, আর
ভাবে শেষটা দেখেই ছাড়ব।
রাত্রির
সাথে লাস্ট কথা বলার দেরমাস পর সকাল বিয়ে করে,যা রাত্রি ফেইসবুক থেকে
দেখতে পায়।
এই
দেরমাসে সকাল ইচ্ছা করলেই কথা না বলতে পারলেও ম্যাসেজ দিয়েও জানাতে পারত। সকালের
সুখের খবর সবাই জানলেও রাত্রি জানতে পারে নি।
রাত্রি
এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছিল,হয়তো
সকালের বিয়েতে ঝামেলা হচ্ছে,
তাই হয়তো
কথা বলছে না। সকালের কাছে রাত্রির এতটা অবমূল্যায়ন, এটা
রাত্রি ভাবতেই পারে
নি।
গত
একবছর সকাল যা করেছে,, সেটা
রাত্রি ভেবেছে,হয়তো
সকাল আগের রাগ অভিমান রাত্রির সাথে দেখাচ্ছে।
তারপর
ও রাত্রি সকালকে ফোন দেয়। ফোনটা খোলাই পায়। এরপর সকাল যেই কাজটা করে, সেটা
অনেক নিষ্ঠুর, অমানবিক, কষ্টদায়ক
ছিল রাত্রির জন্য।
সকাল যেই
ফোন দিয়ে রাত্রির সাথে কথা বলত,
সেটা দিয়ে অন্য কারো সাথে কথা বলত না। সেই
নাম্বারটা অন্য একজনকে দিয়ে দেয়। রাত্রি ফোন দেয়ার পর, সেই ছেলে রাত্রিকে
জানায়,ওটা
তার নাম্বার।
রাত্রি
ছেলেটাকে বলে,কতদিন
থেকে আপনি
এই নাম্বার চালান? ছেলেটা
বলে,গত
দুইবছর থেকে। রাত্রি রেগে বলে,মিথ্যা বলছেন
কেন? এই
নাম্বারে গত একবছর থেকে আমি আরেকজনের সাথে কথা বলছি।
রাত্রি
আরও রেগে বলে,,নাম্বারটা
বলুন। সে
নাম্বারটা ও অনেক ঠেকে ঠেকে বলে।
রাত্রির যা বুঝার বুঝছে। ফোনটা রেখে রাত্রি কান্নায়
ভেংগে পরে। নিজেকে অনেক ছোট
মনে হতে থাকে।
No comments:
Post a Comment