কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতির নাম হামিদুর রহমান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা আছে কিন্তু ভাস্কর নভেরা আহমেদের নাম কোথাও লেখা নেই, অথছ নভেরা আহমেদ'ই মুল পরিকল্পনায় ছিলেন।
শহীদ মিনার তৈরির এক ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান শহীদ মিনারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রধান স্থপতি ছিলেন একজন ইংরেজ। নাম তার লেকলেন। তিনি বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলনের সিম্বল; বাঙালি স্থপতির করা উচিত। স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে শহীদ মিনারের নকশার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নকশা করতে রাজি হননি। এ সময় শিল্পী হামিদুর রহমানের তৎপরতায় তিনি ও ভাস্কর নভেরা আহমেদ মিলে একটা নকশা করেছিলেন। অবশ্য শহীদ মিনারের মূল নকশাটি নভেরা আহমেদের করা। কিন্তু নভেরা আহমেদের নাম কোথাও লেখা নাই, সেই কারনেই নভেরা আহমেদ অভিমানে দেশ থেকে চলে গেছেন ফ্রান্সে, এবং তাঁর বাঁকিটা জীবন প্যারিসে কাটিয়েছেন, ২০১৫ সালের ৫ মে তিনি প্যারিসের উত্তরে এক ছোট্ট শহর ভাল দ্য'ও তে মৃত্যুবরণ করেন ও সেখানেই সমাধীস্থ হন।
এই প্রসঙ্গে রুপান্তর পত্রিকা থেকে, বাঁকিটা এখানে প্রকাশ করলাম:
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা ১৯৫৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে পাস করা হয়। সেই সময় শহীদ মিনারের মূল নকশায় একটি অংশে লেখা ছিল ‘শহীদ মেমোরিয়াল : কম্পোজার হামিদুর রহমান মুর্যালিস্ট ইন কোলাবরেশন উইথ নভেরা আহমেদ স্কাল্পটর।’ এখানে নভেরাকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আনা ইসলামের বইটিতে ২০১৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাস্কর নভেরা আহমেদ শহীদ মিনার প্রসঙ্গে বলেছেন ‘... আমি আমার আইডিয়ার কথা বলেছি। কী করতে হবে বলেছি। ... অনেক কাজ একা করতে হবে বলে হামিদকে বলি সাহায্যের জন্য। ... সে আমার কথা অনুসরণ করত। ... কারণ আইডিয়া আমার। সে বুঝত না আমি কী চাচ্ছি, সম্পূর্ণভাবে কী চাচ্ছি। তাই আমি যখন যা করতে বলতাম, তখন তাই করত।’ ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইটিতে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাবিদ যে নভেরা আহমেদ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যদিও বহুদিন ধরে এ স্বীকৃতি নানাভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নানাভাবে হয়েছে বিকৃত। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখন সময় এসেছে শহীদ মিনারের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার, সংরক্ষণ করার।
নভেরা আহমেদ কে? তিনি কি শুধু বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর? জীবনের একটা পর্যায় প্যারিসে অতিবাহিত করলেও যিনি কখনো বাংলাদেশের পাসপোর্ট ত্যাগ করেননি? সাদামাটা জীবন এবং ‘সরলতা’ ও ‘ন্যূনতমতা’ যার সৃষ্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য? বাংলাদেশের সুন্দরবনে (ক্যাটালগে উল্লিখিত) ২৯ মার্চ ১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া নভেরা আহমেদ শিল্পবিষয়ক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন লন্ডন ও ফ্লোরেন্সে। ১৯৫৭ সালে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাকার হিসেবে যুক্ত হলেও নভেরার মূল নকশা আজ পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হয় তার ‘ইনার গেজ’ শীর্ষক প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে প্রকাশিত ক্যাটালগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পচর্চায় এ প্রদর্শনীকে ছোটখাটো বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন। নভেরার সেসব সৃষ্টিকে তিনি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন শিল্পের নতুন ঐতিহ্যের সঙ্গে। দেশের প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী করে সেখানেই থেমে থাকেননি নভেরা। শাস্ত্রীয় নৃত্য শিখতে গিয়েছেন ভারতে। এশিয়ার নানা দেশে ভ্রমণ করেছেন। অর্জন করছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বুদ্ধের দর্শনে হয়েছেন সমৃদ্ধ। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের ভগ্নাংশ দিয়ে ভাস্কর্য গড়ে থাইল্যান্ডে করেছেন প্রদর্শনী। ১৯৭১ সাল থেকে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্যারিসে গ্রেগোয়ার সালঁ দ্য এক্সপোজিশিয়ঁ গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় নভেরার রেট্রোসপেকটিভ (১৯৬৯-২০১৪) প্রদর্শনী। নভেরা আহমেদের জীবনের নানাদিক, শিল্পকর্মের গভীর বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক আলোচনা ছড়িয়ে আছে কথাসাহিত্যিক আনা ইসলামের ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইতে। সঙ্গে রয়েছে নভেরার জীবন ও শিল্পকর্মের কালক্রমিক বিবরণ। নভেরা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আনা ইসলাম বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই, যে রয় মনে আমার মনে’ এই নিবিড় দর্শন ও ঐশ্বরিক বিশ্বাস ভাস্কর নভেরাকে বোঝার এক অন্যতম সূত্র। নিঃসন্দেহে এ বই নভেরা সম্পর্কে আমাদের জানার জগৎকে আরও প্রসারিত করে তুলবে।
নভেরার অনন্য সৃষ্টিশীল প্রয়াস ‘শহীদ মিনার’কে ঘিরে বাঙালির চেতনা জেগে উঠেছে বারবার। যদিও ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনারের সূচনা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া একটি মিনার নির্মাণ করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পরই এ মিনার ভেঙে দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অবশ্য শুধু ঢাকায় নয়, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার পর থেকে দেশের নানা স্থানে এমনসব শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল। ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের আগপর্যন্ত আমরা নানা আকারের শহীদ মিনারের ছবি দেখি বিভিন্ন বইপত্রে। কিন্তু ১৯৫৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে শত-সহস্র শহীদ মিনার। ১৯৫৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও সাময়িক স্থগিত থাকার পর ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর আবার শহীদ মিনারের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং আশির দশকের শুরুতে বর্তমান শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হয়। তবে উল্লেখ করার বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকা শহীদ মিনারের সংখ্যা কত? কারা কোন সময় কোন পরিস্থিতিতে দেশের নানা স্থানে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করছেন তার কোনো তথ্য কোথাও সংরক্ষিত হয়নি। এরই মধ্যেই বাঙালি যেখানে গেছে সেখানেই গড়ে তুলেছে এমন শহীদ মিনার। নিজেদের চিনতে ও চেনাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি।
সুত্র: আশফাকুর রহমান, দেশ রুপান্তর
শহীদ মিনার তৈরির এক ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান শহীদ মিনারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রধান স্থপতি ছিলেন একজন ইংরেজ। নাম তার লেকলেন। তিনি বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলনের সিম্বল; বাঙালি স্থপতির করা উচিত। স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে শহীদ মিনারের নকশার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নকশা করতে রাজি হননি। এ সময় শিল্পী হামিদুর রহমানের তৎপরতায় তিনি ও ভাস্কর নভেরা আহমেদ মিলে একটা নকশা করেছিলেন। অবশ্য শহীদ মিনারের মূল নকশাটি নভেরা আহমেদের করা। কিন্তু নভেরা আহমেদের নাম কোথাও লেখা নাই, সেই কারনেই নভেরা আহমেদ অভিমানে দেশ থেকে চলে গেছেন ফ্রান্সে, এবং তাঁর বাঁকিটা জীবন প্যারিসে কাটিয়েছেন, ২০১৫ সালের ৫ মে তিনি প্যারিসের উত্তরে এক ছোট্ট শহর ভাল দ্য'ও তে মৃত্যুবরণ করেন ও সেখানেই সমাধীস্থ হন।
এই প্রসঙ্গে রুপান্তর পত্রিকা থেকে, বাঁকিটা এখানে প্রকাশ করলাম:
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা ১৯৫৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে পাস করা হয়। সেই সময় শহীদ মিনারের মূল নকশায় একটি অংশে লেখা ছিল ‘শহীদ মেমোরিয়াল : কম্পোজার হামিদুর রহমান মুর্যালিস্ট ইন কোলাবরেশন উইথ নভেরা আহমেদ স্কাল্পটর।’ এখানে নভেরাকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আনা ইসলামের বইটিতে ২০১৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাস্কর নভেরা আহমেদ শহীদ মিনার প্রসঙ্গে বলেছেন ‘... আমি আমার আইডিয়ার কথা বলেছি। কী করতে হবে বলেছি। ... অনেক কাজ একা করতে হবে বলে হামিদকে বলি সাহায্যের জন্য। ... সে আমার কথা অনুসরণ করত। ... কারণ আইডিয়া আমার। সে বুঝত না আমি কী চাচ্ছি, সম্পূর্ণভাবে কী চাচ্ছি। তাই আমি যখন যা করতে বলতাম, তখন তাই করত।’ ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইটিতে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাবিদ যে নভেরা আহমেদ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যদিও বহুদিন ধরে এ স্বীকৃতি নানাভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নানাভাবে হয়েছে বিকৃত। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখন সময় এসেছে শহীদ মিনারের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার, সংরক্ষণ করার।
নভেরা আহমেদ কে? তিনি কি শুধু বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর? জীবনের একটা পর্যায় প্যারিসে অতিবাহিত করলেও যিনি কখনো বাংলাদেশের পাসপোর্ট ত্যাগ করেননি? সাদামাটা জীবন এবং ‘সরলতা’ ও ‘ন্যূনতমতা’ যার সৃষ্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য? বাংলাদেশের সুন্দরবনে (ক্যাটালগে উল্লিখিত) ২৯ মার্চ ১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া নভেরা আহমেদ শিল্পবিষয়ক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন লন্ডন ও ফ্লোরেন্সে। ১৯৫৭ সালে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাকার হিসেবে যুক্ত হলেও নভেরার মূল নকশা আজ পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হয় তার ‘ইনার গেজ’ শীর্ষক প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে প্রকাশিত ক্যাটালগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পচর্চায় এ প্রদর্শনীকে ছোটখাটো বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন। নভেরার সেসব সৃষ্টিকে তিনি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন শিল্পের নতুন ঐতিহ্যের সঙ্গে। দেশের প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী করে সেখানেই থেমে থাকেননি নভেরা। শাস্ত্রীয় নৃত্য শিখতে গিয়েছেন ভারতে। এশিয়ার নানা দেশে ভ্রমণ করেছেন। অর্জন করছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বুদ্ধের দর্শনে হয়েছেন সমৃদ্ধ। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের ভগ্নাংশ দিয়ে ভাস্কর্য গড়ে থাইল্যান্ডে করেছেন প্রদর্শনী। ১৯৭১ সাল থেকে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্যারিসে গ্রেগোয়ার সালঁ দ্য এক্সপোজিশিয়ঁ গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় নভেরার রেট্রোসপেকটিভ (১৯৬৯-২০১৪) প্রদর্শনী। নভেরা আহমেদের জীবনের নানাদিক, শিল্পকর্মের গভীর বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক আলোচনা ছড়িয়ে আছে কথাসাহিত্যিক আনা ইসলামের ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইতে। সঙ্গে রয়েছে নভেরার জীবন ও শিল্পকর্মের কালক্রমিক বিবরণ। নভেরা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আনা ইসলাম বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই, যে রয় মনে আমার মনে’ এই নিবিড় দর্শন ও ঐশ্বরিক বিশ্বাস ভাস্কর নভেরাকে বোঝার এক অন্যতম সূত্র। নিঃসন্দেহে এ বই নভেরা সম্পর্কে আমাদের জানার জগৎকে আরও প্রসারিত করে তুলবে।
নভেরার অনন্য সৃষ্টিশীল প্রয়াস ‘শহীদ মিনার’কে ঘিরে বাঙালির চেতনা জেগে উঠেছে বারবার। যদিও ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনারের সূচনা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া একটি মিনার নির্মাণ করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পরই এ মিনার ভেঙে দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অবশ্য শুধু ঢাকায় নয়, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার পর থেকে দেশের নানা স্থানে এমনসব শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল। ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের আগপর্যন্ত আমরা নানা আকারের শহীদ মিনারের ছবি দেখি বিভিন্ন বইপত্রে। কিন্তু ১৯৫৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে শত-সহস্র শহীদ মিনার। ১৯৫৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও সাময়িক স্থগিত থাকার পর ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর আবার শহীদ মিনারের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং আশির দশকের শুরুতে বর্তমান শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হয়। তবে উল্লেখ করার বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকা শহীদ মিনারের সংখ্যা কত? কারা কোন সময় কোন পরিস্থিতিতে দেশের নানা স্থানে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করছেন তার কোনো তথ্য কোথাও সংরক্ষিত হয়নি। এরই মধ্যেই বাঙালি যেখানে গেছে সেখানেই গড়ে তুলেছে এমন শহীদ মিনার। নিজেদের চিনতে ও চেনাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি।
সুত্র: আশফাকুর রহমান, দেশ রুপান্তর
No comments:
Post a Comment