একদিন পত্রিকায়
একটি ছবি দেখে অদ্ভুদ আত্মতুষ্টিতে আমার মন ভরে গেল।
একটি
নব দম্পতির ছবি। ছেলেটি সাদা সিল্কের পাঞ্জাবী পরে আছে। মেয়েটি নীল জামদানী শাড়ি ঘোমটা
দিয়ে নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে ; তা স্বত্বেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তার মুখ ভর্তি
এসিডের ঝলসানো দাগ !
আমি
বেশ সময় নিয়ে সেই দাগের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার কাছে এই দাগ গুলোকে সুন্দর মনে
হয়েছে। মনে হয়েছে এইগুলো ভালোবাসার মুক্তা !
আমরা
সবাই আগুনে পোড়া একটি মেয়েকে বিয়ে করার সাহস দেখাতে পারি না। আমরা সাধারণত
ভালোবাসার চেষ্টা করি কিংবা অভিনয় করি। ভালোবাসা করে
দেখাতে পারি না।
শরৎচন্দ্রের রাজলক্ষ্মীর কথা মনে পড়ে গেল। কপালের যেখানটায়
বসন্তের দাগ ছিল; সবাই চোখ ফিরিয়ে নিত ঘেন্নায় ! সেখানটায় চুমো খেয়ে বুঝিয়ে দিতে হয় – ভালোবাসা জিনিসটা সবার জন্য আসে নি।
সাভার ট্র্যাজেডির প্রায় এক বছর পর একটি ছবি দেখে আমার মন আরও একবার
আত্মতুষ্টিতে ভরে গেল। ভবনধসে চাপা পড়ে কারো প্রেমিকা পঙ্গু হয়ে গেল।
আগের মত তাকে পাশে নিয়ে হইহুল্লর করে ঘুরা না গেলেও প্রতিটি
বিকেল কাটিয়ে দিয়েছে অসুস্থ মেয়েটির পাশে।
এক বছর পর পঙ্গু মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলে। আমি সেই ছবিটি
সেইভ করে অনেক রাত কাটিয়ে দিলাম।
এই সাদাসিধে মানুষ গুলো প্রায় সময় আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয় !
আমাকে মনে করিয়ে দেয় ; ভালোবাসা জিনিসটা সবার জন্য আসে নি। সবাই ভালবাসতে পারে না। এত সৌভাগ্য সবার হয় না।
প্রায় সময় রাস্তায় বের হলে কিছু প্রেম প্রেমিকাকে দেখার পর আমার মন এরকম
আত্মতুষ্টিতে ভরে উঠে। খুব সুন্দর কোন ছেলেকে দেখা যায় একেবারেই দেখতে কুৎসিত টাইপ একটি মেয়েকে আগলে রেখেছে।
ভয়াবহ রূপবতী কাউকে দেখা যায় একদম যাচ্ছেতাই এক তরুণকে
ভালোবেসে ফুচকা খায় !
এদের বন্ধু বান্ধব অনেকেই হয়ত আড়ালে এদের নিয়ে হাসে। কেউ
হয়ত মুখ লজ্জা ভুলে বলেও ফেলে - এই মেয়েটাকে তোমার পাশে একেবারেই মানায় না। এরা কী জবাব দেয় আমি জানি না। আমার জানতে
ইচ্ছেও করে না।
আমি জানি এই মানুষ গুলো যখন একজন অন্যজনের চোখের দিকে
তাকিয়ে কথা বলে তখন পৃথিবীটা এক আশ্চর্য রকমের শিশু হয়ে যায় ! যোগ বিয়োগের
একঘেয়ামি লাইফে এরা দুজন যেন একটু খানি ছাতিম গাছের ছায়া !
একটা গ্লানিবোধ দুমড়ে মুচরে ধরে আমাকে। আহা ! এভাবে যদি
কাউকে ভালোবাসা যেত !
No comments:
Post a Comment