আমার ফেল করার
ইতিহাস অনেক পুরনো। মানুষ ম্যাট্রিক ফেল করে। আমি ক্লাস নাইনেই পাঁচ বিষয়ে ফেল।
সেই সময় আমি নিয়মিত
স্কুল পালিয়ে সিনেমাহলে গিয়ে বসে থাকতাম। পুরো এক বছর সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টা
পর্যন্ত কাটালাম সেখানেই।
রাজাপুর হাই স্কুলে
আমাদের ক্লাস শিক্ষক ছিলেন ইমারত সার। তিনি রসিক ছিলেন; মাল ক্রয় – বিক্রয়
পড়াতে গিয়ে তিনি মুচকি হেসে বলতেন – এই মাল সেই মাল না!
......সাথে
সাথে পুরো ক্লাস জুড়ে হাসি। আমি বুঝলাম এটা তার অনেক পুরনো টিপস। প্রতি বছরই একটা
পর্যায় মাল ক্রয় বিক্রয় পড়াতে গিয়ে এই রসিকতা তিনি করেন।
কথায় কথায় জালিবেত
দিয়ে মারার কারণে আমরা তার নাম দিলাম জালিবেত সার।
তার সাবজেক্ট গণিতে পেয়েছি ০২ ! তিনি আমাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন বলে সেদিন জালিবেত দিয়ে একাকার।
তার সাবজেক্ট গণিতে পেয়েছি ০২ ! তিনি আমাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন বলে সেদিন জালিবেত দিয়ে একাকার।
.....আমাদের
সেই সময়ে একটা পুরনো প্রবাদ ছিল - শিক্ষকের বেতের দাগ শরীরে যে অংশে লাগবে
কেয়ামতের দিন আগুনে সেই অংশ অক্ষত থাকবে।
প্রতি বার মার
খাবার আগে আমি সেই বিশেষ প্রবাদের কথা মনে করে সান্ত্বনা পেতাম।
আমার ফেল করার ইতিহাস অনেক পুরনো। আমি দ্বিতীয় বার ফেল করলাম ম্যাট্রিক দেয়ার আগে টেস্ট পরীক্ষায়। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে ম্যাট্রিক দেয়া যায় না।
আমার ফেল করার ইতিহাস অনেক পুরনো। আমি দ্বিতীয় বার ফেল করলাম ম্যাট্রিক দেয়ার আগে টেস্ট পরীক্ষায়। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে ম্যাট্রিক দেয়া যায় না।
আমি আজিজ স্যারের
সামনে মাথা নিচু করে মুরগীর মত বসে থাকলাম। সামসুল সার বললেন – তোকে দিয়ে
হবে না। সুকুমার স্যার মাথা নাড়লেন। শুধু জালিবেত স্যার আমাকে একটা সুযোগ দিলেন।
......আমি তৃতীয় বার ফেল মারলাম ইন্টার পরীক্ষায়।
......আমি তৃতীয় বার ফেল মারলাম ইন্টার পরীক্ষায়।
দিন রাত বিভিন্ন
কাজে ব্যস্ত। সারা রাত বাইরে বাইরে ঘুরা। হাসপাতালের বারান্দা... পুলিশের থানা...
স্টেশন...সরকারী অফিস...
সব কিছুর প্রতি
আমার আগ্রহ। রোজ রাতে বাসা থেকে লুকিয়ে বের হয়ে পড়তাম। ট্রেনের ছাদে করে ঘুরা...
রাতে ভ্যান গাড়ি ভাড়া করে ঘুরা... পোস্টার লাগানো...
বার বার অনেক বার
পুলিশের জেরার মুখে পরা... ট্যাক্সি করে থানায় নিয়ে যাওয়া... রাতে ইন্ডিয়ান গরু
আটকে মালিকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া... এর গাছে ওর গাছে নারিকেল চুরি কর... কী করি
নাই লাইফে।
এক এক সময় এক এক
মানুষ আমার সাথে ছিল। মাঝে মাঝে লিখতে গেলে সবার কথাই আলাদা ভাবে মনে পড়ে।
ইন্টারের ফেলের
রেজাল্ট প্রথমে দিলাম বাবাকে।তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিলেন – অসুবিধা
নেই।
.....সেই
অসুবিধা নেই বলার ভেতরেই মিশে ছিল অনেক অসুবিধা।
পরিবারের সব
সদস্যরা কারণে অকারণে সুখ বোধ করে।
তবুও সেদিন খুব
কষ্ট হয়েছিল আমার।বাবা মায়ের জন্য।
.....সময় সব
ক্ষত মুছে দেয়। পরের বছর ইন্টার পাশ করলাম। সেদিনের কষ্ট কোথায় হারিয়ে গেলো! বরং
লিখার মত একটা গল্প পেয়েছি বলে ভালই লাগছে।
আমি জানিনা আর
কতকাল এভাবে ছেলেমানুষি পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। কিসের পরীক্ষা? কার কাছে
পরীক্ষা? কেন পরীক্ষা?
.....বারো
বছর ইংরেজিতে পাশ করে ইন্টার দেয়ার পর ইংরেজি বলতে না জানা পরীক্ষা ? দশ বছর সমাজ কী শিখে অসামাজিক হওয়া? টোটাল
সিস্টেমে সমস্যা আছে।
আগে শিক্ষকদের
মানুষ হতে হবে তারপর ছাত্রদের... মাঝি দিয়ে বিমান চালানো যায় না।
হুমায়ূন আজাদের একটি কথা মনে পড়ছে - আগে কারো সাথে পরিচয় হলে জিজ্ঞাসা করতাম , আপনি কী পাশ করেছেন ? এখন জিজ্ঞাসা করি - আপনি কী ফেল করেছেন ?
হুমায়ূন আজাদের একটি কথা মনে পড়ছে - আগে কারো সাথে পরিচয় হলে জিজ্ঞাসা করতাম , আপনি কী পাশ করেছেন ? এখন জিজ্ঞাসা করি - আপনি কী ফেল করেছেন ?
No comments:
Post a Comment