Thursday 12 March 2020

একজন রোশনারা

মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতাদের সাক্ষ্য শুনেছেন কেউ! শুনলে জানতেন আমাদের মেয়েদের নিয়ে কিরকম খেলতো পাকিস্তানী পিশাচরা। না, সে খেলাতেও রাজনীতি ছিলো না। খেলার সঙ্গে রাজনীতি থাকে না। সে খেলায় ছিলো শুধুই হিংস্রতা, নির্মমতা, ক্রুঢ়তা এবং পাশবিকতা। হাসতে হাসতে কারো বুকের মাংস কেটে নেয়া কিংবা তলপেটের নীচে বেয়নেটের মোচড়। যাদের সঙ্গে এমন হতো, তারা আসলে ভাগ্যবতী। মরে বেঁচে যেতেন। আর বাকিরা বাঙালী নারী হওয়ার প্রায়শ্চিত্য করে যেতেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, সেপাই থেকে জেনারেলে।
রোশেনারা এদের কারো মতো হতে চায়নি। সে শুধু চেয়েছিলো রাণী পদ্মাবতীর মতো নিজের সম্মাণটুকু রাখতে, একতাল মাংসপিন্ড হয়ে যাওয়ার আগে সে শুধু একটা স্বপ্নই দেখেছিলো। যে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা সে ওড়াতে পারেনি, তা যেন হাতে ওঠে তার উত্তর প্রজন্মের নারীকুলে। বাঙালী মেয়েরা যাতে গর্বভরেই দোলায় ওই লাল-সবুজ। খিলখিলিয়ে তখন হাসবে আমাদের বোন সেই পতাকা হয়ে।
কে রোশেনারা? শুদ্ধ উচ্চারণে হয়তো রওশনআরা। গ্রাম-বাংলায় তা-ই রুশেনারা কিংবা রোশেনারা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালে এই রোশেনারাই ছিল ট্রেঞ্চে ট্রেঞ্চে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার এক অসম্ভব ভালোলাগা প্রত্যয়ের নাম। রোশেনারার মতো একজনকে বোন ভেবে গর্বে বুক ফুলে উঠত তাদের। শরণার্থী শিবিরগুলোতেও তাই, তারা উদ্দীপ্ত হতো তেজোদ্দীপ্ত এক বাঙালী মেয়ের দূরন্ত সাহসীপনায়। কে এই রোশেনারা? কি করেছিলো সে? রোশেনারা মুক্তিযুদ্ধকালে এই বাংলার প্রতিটি নারী। আমাদের সেই প্রিয় বোন, যে পেয়ারার ডাল থেকে নেমে এক ছুটে পেরিয়ে যেত সরিষা ক্ষেত ফেলে কাশবন। ফের এসে উঠোনে তার এক্কাদোক্কা, ছি-কুত-কুত। আড়চোখে চেয়ে দেখা বৈঠকখানায় মাদুরপেতে সার বেধে শুয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের কিছূ লাগবে?... মিয়াভাই, এইডা কি?... স্টেনগান?... ক্যামনে গুলি করে? ...বাবারে এত্তো ভার! ...এক গুলিতে অনেকডিরে মারবা ক্যামনে? এই চ্যাপ্টা লোহাডা কি? মাইন দিয়া কি করে? ক্যামনে! ক্যামনে! ও মিয়া ভাই কও না ক্যামনে।.... ওরে পাগলী তোর সব জানতে হইবো? বাহ, পাকিরা আইলে আমিও যুদ্ধ করুম না বুঝি! চারপাশে হাসির হুল্লোরে লাল হয়ে যায় গালদুটো, চোখে কি জলও জমে অভিমানী!
একদিন সত্যিই তারা আসে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা বড় আস্তানা আছে। ভারী অস্ত্রসস্ত্রের ডিপো। তাই তারা ট্যাংক নিয়ে আসে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা তো নেই। দূর গাঁয়ে, অন্য অপারেশনে। শুধু গুলির বাক্স, কিছু গ্রেনেড আর গোটা দুয়েক মাইন ফেলে গেছে তারা রোশেনারার জিম্মায়। দিশেহারা হয়ে সে সেগুলো আগলে চলে যায় দূরে, ঝোপের কোনে। সেখান থেকেই দেখে আগুন, গুলি, আর্তনাদ। দেখে আদবর কাকুকে কিভাবে লাশ বানিয়ে ফেললো ওরা। কিভাবে ওর খেলার সাথী ফুলিকে উঠোনে ফেলে…। ঘরঘর চাকার শব্দে এগোচ্ছে লৌহদানব। ওদের ভিটের দিকেই। নিশ্চিত হওয়া গেছে এটাই মুক্তিদের আস্তানা। রোশেনারাকে পেলে কি ফুলির মতো করবে ওরা? খুবলে খাবে?
… শোন, এই যে আংটা দেখতেছোস, এইডা ধইরা টান দিলেই এই লোহার বাডি বোমা হইয়া যাবে। তয় মাইনষের গায়ে মাইরা লাভ নাই। এই লোহা লোহা খায়। লোহার গায়ে লাগাইতে হবে।… মিয়া ভাইর কথাগুলো কানে বাজে রোশেনারার। আচলে ঢেকে নেয় একটা মাইন। আগুয়ান ট্যাংক এবং তার পাশে থাকা মিলিটারিরা দেখে ফুলের মতো সুন্দর এক কিশোরী তাদের দিকে ছুটে আসছে। শিকার নিজেই যখন শিকারীর দিকে আসে তখন সে একটু থমকায় বৈকি। এরপর তারা চোখ বড় বড় করে দেখে কিভাবে চপলা সে কিশোরী বাজপাখী হয়ে যায়, জ-অ-য় বাং-লাআআ আওয়াজে ঝাপিয়ে পড়ে ট্যাংকের গায়ে, টারেটের নীচে। প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ। এরপর সব সুনসান। পড়ে থাকে পোড়া ট্যাংক, ছিন্নবিচ্ছিন্ন কিছু পাক সেনা। দূরে আদবর কাকু, ফুলির নিথর দেহ। রোশেনারার রক্তমাখা সবুজ শাড়িটাই শুধু ট্যাংকের ব্যারেলে বাংলাদেশের পতাকা হয়ে যায়।
সে পতাকা দুলিয়ে তার খবর পৌছে দেয় বাতাস। তাকে নিয়ে গান বাঁধে মাঝি। নৌকা বাইতে বাইতে মুখে মুখে সে গান ছড়িয়ে যায় পদ্মা-মেঘনা-যমুনায়।
কাহার ঘরের ঘরণীগো ছিলে কন্যা কার…দেশের লোকে জানে তুমি মেয়ে যে বাংলার…
তাকে নিয়ে কবিতা লেখেন কবি। এ বাংলায়-ও বাংলায়। সে কবিতা মুখে মুখে ফেরে, ইথারে ভেসে আসে ট্রেঞ্চে ট্রেঞ্চে। চোখের পানি সামলে, ট্রিগার আঁকড়ে সামনে পানে চায় রোশেনারার মিয়াভাইরা। তারপর দেশ স্বাধীন হয়, জাতীয় পতাকা হয়ে দোলে রোশেনারার রক্তমাখা সবুজ শাড়ি। শুধু তার স্বপ্নটাই বোধহয় সত্যি হয় না। কিংবা রোশেনারা নিজেই হয়তো মিথ্যে, কোনো অলীক আখ্যান। তাই হয়তো এই ডিসেম্বরে বাঙালী মেয়েরা পাকিস্তানের পতাকা দোলাতে দুবার ভাবে না, উগ্রলালসায় বরং শয্যায় চায় পাঠান শরীর। দূরে সেই মিথ্যে সেই অলীক দেশে হয়তো ঘৃণায় কুকড়ে এতটুকু হয়ে যায় রোশেনারা।
একটি মেয়ের মৃত্যু / প্রীতীশ নন্দী
রোশেনারা মারা গেছে, মনে রেখো।
নদীর মেয়ে রোশেনারা, প্রতিহিংসার সূর্য আমাদের, রাত্রির স্তরের ওপর তুষারীভূত দুটো চোখ- রোশেনারার শান্ত চোখদুটোর কথা মনে করো- এরপরও যদি তুমি হিংসার প্রসঙ্গ তোল তবে আমি তোমাকে ওর চূর্ণ বিচূর্ণ বাহুদুটোর উচ্চারিত ভয়ঙ্কর প্রশ্নটির দিকেই দেখিয়ে দেব।
আর তারপর ইবলিস যদি তোমার পথ প্রদর্শক হয় তবে আমি সেই নীল নিঃস্তব্ধতার দিকেই তোমাকে এগিয়ে যেতে বলব যা রাত্রির কামনা নিয়ে জ্বলতে থাকে যখন লক্ষ লক্ষ কৃষ্ণাভ রক্তগোলাপ ওর চোখের সামনেই ঝরে যায়।
মনে রেখো আজ রাতে রোশেনারা মারা গেছে
আর নিজের মরা চোখ দুটোই ওর সেই নীরবতা পালন করছে।
দূরের গ্রামগুলো যখন বন্দুকের আওয়াজে শব্দিত হয়ে উঠবে, ওর খোঁপায় গোঁজা অঙ্গারীভূত লাইলাক ফুলটা রাতের জাফরিতে বুনে দেবে সাহস। সময়ের সেনানী-সবুজ রূপকথাগুলো রোশেনারার বরণ করা মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করবে না আর।
একটা ট্যাঙ্ক একটা জীবনের সমান : হ্যাঁ রোশেনারা ওই দাম ওর। গ্রীষ্মের মূল্য ও শতলক্ষ নিহতের, পর্বতপ্রমাণ ধর্ষণ আর শঙ্খ চিলের মৃত্যুর
আর যদিও সাতটি রাত্রির পৈশাচিক ভীষণতা জুড়ে প্রাচীনতম নদীটি জ্বলছে- ভস্মীভূত বৃক্ষ আর নাপাম বোমাহত পাখিটা নীরবে অপেক্ষামান, যদিও তোমার অন্তহীন প্রশ্নগুলো চুয়াডাঙার জনহীন পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পাবনা মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা, সিলেট প্রাণহীন আর চট্টগ্রাম হলুদ-নদীর অপরপারে অপেক্ষামান-
তবু মনে রেখো, রোশেনারা মারা গেছে
আর তার মৃত্যুই চূড়ান্ত।
রোশেনারা / সামসুল হক
তোমার বয়স কতো, আঠারো উনিশ?
মুখশ্রী কেমন? রঙ চোখ চুল কী রকম? চলার ভঙ্গিমা?
ছিল কি বাগান, আর তোমার মল্লিকা বনে ধরেছিল কলি?
ছিলে তুমি কারো প্রতিমা?
জানি না।
না, জানি।
পৃথিবীর সব মাস সব দিন তোমার হাতের মধ্যে এসে গিয়েছিল,
দুপুরের মতো মুখ, রৌদ্রদগ্ধ চোখ, পায়ে চৈত্রের বাতাস,
তোমার বাগানে-
কলোনি স্বদেশে- ধরেছিল সাড়ে সাত কোটি মল্লিকার কলি,
তুমি ছিলে মুক্তির প্রতিমা।
ওই বুকে মাইন বেঁধে বলেছিলে- জয় বাংলা-
মানুষের স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক,
ট্যাঙ্কের ওপর ঝাঁপ দিতে দিতে বলেছিলে-
বর্বরতা এইভাবে মুছে যাক, ধ্বংস হোক সভ্যতার কীট।
অন্তিমবারের মতো পথিকেরা পথে এসে দাঁড়িয়েছে, আকাশে উঠেছে ধ্রুবতারা-
ধ্রুবতারা হয়ে গেছে মুক্তির জননী রোশেনারা।
ব্লগার ত্রিশোংকুর তরফে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি:
১৯৭১ এ পাকির সাথে যুদ্ধরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম দুটি গোলন্দাজ উপদল (ব্যাটরি-একেকটিতে ছ'টি করে কামান থাকে) প্রথমটির নাম রাখা হয়েছিল মুজিব ব্যাটরি যা এখন ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি আর দ্বিতীয়টির নাম রাখা হয়েছিল রওশন আরা ব্যাটরি যা এখন ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি।.
কৃতজ্ঞতা: পোস্টটির জন্য আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা মাহবুবুর রহমান জালাল ভাইর কাছে। অমর পালের গাওয়া দূর্লভ গানটি এবং সৈয়দ শামসুল হক ও প্রীতিশ নন্দীর কবিতা (মূল কবিতাটা ইংরেজীতে যা অনুবাদ করেছেন শিশির ভট্টাচার্য্য, ’৭১ এ কলকাতায় ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’ নামের একটা সাময়ীকিতে প্রকাশিত হয়েছিলো) দুটো তার কাছ থেকেই উপহার পেয়েছিলাম।
প্রচ্ছদে অসাধারণ পেইন্টিংটি একেছেন তাপস সরকার। মন্তব্যে তার কাছে একটি ছবি চাওয়া হয়েছিলো, তিনি প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। সেটা ব্যবহার করছি অশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

খালেদা জিয়াকে মুক্তি

বিএনপি নেতৃবৃন্দ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এতিমের টাকা আত্নসাতের মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সেই আওয়ামী লীগ সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছেন যার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করবার জন্য ২১ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে ২২ জন নেতাকর্মী হত্যা করেছিল।হত্যা করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এ এস কিবরিয়া, সাংসদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মন্জুরুল ইমাম,সাবেক সাংসদ নাটোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দীন আহমেদ,লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুল ইসলাম, খুলনার জনপ্রিয় সাংবাদিক মানিক সাহা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো: ইউনূস , বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরীসহ আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে।অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরীর বেরিয়ে আসা মাথার খুলি আমাদের অনেক দিন ঘুমাতে দেয়নি। সেই বিএনপি বলছে মানবিকতার কথা!!! আর্থাইটিজের রুগী যাকে দেশের মানুষ বরাবরই অন্যের সাহায্যে হাটতে দেখতে অভ্যস্ত তাকে ৭৫ বছরে এসে চিকিৎসা বিজ্ঞান কীকরে দৌড়তে শেখাবেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। শুনতে খুবই নিষ্ঠুর শোনালেও প্রশ্নগুলো একবার নিজের দিকে ফিরিয়ে নিন।আপনার পিতা, মাতা বা সন্তানের খুনীর জন্য মানবিক হতে চেয়ে কতোটা বেআইনী পথে হাঁটবেন আপনি?

Wednesday 11 March 2020

পহেলা ফাল্গুন।

কেন একদিন পিছিয়ে গেল পহেলা ফাল্গুন?
প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালন করা হলেও ২০২০ সাল থেকে এই দিনটি পালন করা হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এখন থেকে বাংলাদেশে নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা বছরের প্রথম ছয় মাস হবে ৩১ দিন। এর আগে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র অর্থাৎ বছরের প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হতো। নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ফাল্গুন বাদে শেষ ভাগের বাকি পাঁচ মাস হবে ৩০ দিনের। ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনের। কেবল লিপইয়ারের বছর তা ৩০ দিনের হবে।
এই বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনের কাজটি করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ। এ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসসমূহ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই দিনে পালন করা হবে।
যেমন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইতিহাসের রক্তাক্ত এই দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। কিন্তু বছর ঘুরে অধিকাংশ সময়ই তা গিয়ে পড়ে ৯ ফাল্গুনে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেক লেখক, সাহিত্যিক আপত্তি জানিয়েছিলেন।
একইভাবে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের ঐ দিনটি ছিল পহেলা পৌষ, কিন্তু বাংলা পঞ্জিকায় দিনটি পড়ত দোসরা পৌষ।
বাংলাদেশে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হলো। ২০১৫ সালে নতুন করে পরিবর্তন আনার জন্য বাংলা একাডেমি সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে।
উল্লেখ্য, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ভারতে ১৯৫২ সালে। স্বনামধন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল।

বই মেলা

আরে ঐযে বই মেলা। সেই মেলাটা!! যেইখানে গিয়া আপনি আমি, চটপটি ফুচকা, ভেলপুরি, গার্লফ্রেন্ডের জন্য ফুলের মালা সহ সবকিছু কিনি, শুধু একটা জিনিস কিনি না- সেটা হলো বই।
মানুষজন মেলায় গিয়ে বই কিনছে না, বইয়ের নাকি অন্নেক দাম- একশো টাকা। তাই সে বই না কিনে মেলার বাইরে এসে মাত্র পাঁচশো টাকায় ফুচকা খেয়ে ছয়শ টাকায় উবার ভাড়া করে ফিরে যাচ্ছে। ব্যপারটা টেনশনের, অবশ্যই টেনশনের।
কিছু কিছু মানুষজন, আবার বলছি সবাই না- কিছু কিছু মানুষজন মেলায় গিয়ে বউ নিয়ে এত বেশী রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে যে আপনি দেখলে কনফিউজড হয়ে যাবেন, আপনি বই মেলায় আসছেন নাকি বউ মেলায় আসছেন। ব্যপারটা টেনশনের, অবশ্যই টেনশনের।
সেদিন দেখি একটা ষ্টলের সামনে হাজার হাজার মানুষের ভীড়, দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। এখনো মানুষ বই কিনছে। আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম কোম্পানীর প্রচারের জন্য ফ্রি কফি খাওয়াচ্ছে। ব্যপারটা টেনশনের, অবশ্যই টেনশনের।
আর একটু এগিয়ে দেখি হাজবেন্ড আর ওয়াইফের মাঝে তুমুল ঝগড়া। আমরাই নাকি পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যারা নাকি বই পড়তে কিনি না। বই কিনি ভাব ধরতে। ওয়াইফ বলে “না অসম্ভব” আমি বই কিনি নতুন বই হাতে নিয়ে একটা ছবি উঠিয়ে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার দিতে। ব্যপারটা টেনশনের, অবশ্যই টেনশনের।
কিছু কিছু ছেলে পেলে আছে, যারা ফেসবুকে বিভিন্ন লেখকদেরকে অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলে, এদেরকে আপনি মেলায় গিয়ে হারিকেন দিয়েও খুজে পাবেন না। এদেরকে আপনি পাবেন ফেসবুকে। এরা যাদেরকে গালাগাল করে, তাদের লিখাও পড়ে নাই আবার যাদেরকে গালাগাল করে নাই; তাদের লিখাও পড়ে নাই। এরা হচ্ছে তারা, যারা ছোট বেলা থেকে কোনদিন নিজের পাঠ্য বইটাও কিনে পড়ে নাই। বই কেনার জন্য টাকা চাহিয়া, পিতার কাছে পত্র লিখিয়া, পিতা হইতে টাকা আনিয়া এরা চাচাত ভাইয়ের কাছ হইতে বই ধার করিয়া পড়িয়াছে। ব্যপারটা টেনশনের, অবশ্যই টেনশনের।
আচ্ছা এই বই মেলা, বই এর মেলা নাকি বই নিয়ে মেলা?? এই বই জিনিসটা আসলে কী?? বই কি একটা ভিতীর নাম?? যেটা ছোট ছোট বাচ্চাদের কাধের ব্যাগে , তাদের নিজের ওজনের চেয়ে তিনগুন হয়ে ধরা দেয়। নাকি এই বই একটি বিক্রয়যোগ্য উপাদানের নাম, যেটা মাঝে মাঝে ১৮ টাকা কেজি দরে ভাঙ্গারীর দোকানদারের কাছে শোভা পায়। নাকি বই একটা চমৎকার জিনিস। যেটা লিখার স্বপ্ন নিয়ে কোন স্কুল কিংবা কলেজের একজন শিক্ষার্থী দিস্তা কাগজের ফাকে দু চার লাইন লিখে ধরা খেলেই আমরা তাদেরকে বলে উঠি “ এগুলা কি লিখিস?? কবি হবি?? সাহিত্যিক হবি?? বাউল হবি??? এগুলা বন্ধ কর। পড়া লেখা কর, ডাক্তার হ, ইঞ্জিনিয়ার হ।
আমি জানিনা । আমার জ্ঞান সীমিত। এই সীমিত জ্ঞান দিয়েই দুটি কথা বলার চেষ্টা করলাম। ভুল হলে মাফ করে দিয়েন। আর এই সীমিত জ্ঞান নিয়েই আরো দুটি কথা বলি ??
পৃথিবীটা বইয়ের হোক, বই মেলায় বিক্রি হোক হাজার হাজার, লাখ লাখ, কোটি কোটি বই। সমৃদ্ধ হোক আমাদের সাহিত্য। আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা আর অনুপ্রেরণায় বেঁচে থাকুক ভালো কথা আর ভালো গল্প লিখার চেষ্টা।

Thursday 5 March 2020

নভেরা আহমেদ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতির নাম হামিদুর রহমান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা আছে কিন্তু ভাস্কর নভেরা আহমেদের নাম কোথাও লেখা নেই, অথছ নভেরা আহমেদ'ই মুল পরিকল্পনায় ছিলেন।

শহীদ মিনার তৈরির এক ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান শহীদ মিনারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রধান স্থপতি ছিলেন একজন ইংরেজ। নাম তার লেকলেন। তিনি বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলনের সিম্বল; বাঙালি স্থপতির করা উচিত। স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে শহীদ মিনারের নকশার জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নকশা করতে রাজি হননি। এ সময় শিল্পী হামিদুর রহমানের তৎপরতায় তিনি ও ভাস্কর নভেরা আহমেদ মিলে একটা নকশা করেছিলেন। অবশ্য শহীদ মিনারের মূল নকশাটি নভেরা আহমেদের করা। কিন্তু নভেরা আহমেদের নাম কোথাও লেখা নাই, সেই কারনেই নভেরা আহমেদ অভিমানে দেশ থেকে চলে গেছেন ফ্রান্সে, এবং তাঁর বাঁকিটা জীবন প্যারিসে কাটিয়েছেন, ২০১৫ সালের ৫ মে তিনি প্যারিসের উত্তরে এক ছোট্ট শহর ভাল দ্য'ও তে মৃত্যুবরণ করেন ও সেখানেই সমাধীস্থ হন।

এই প্রসঙ্গে রুপান্তর পত্রিকা থেকে, বাঁকিটা এখানে প্রকাশ করলাম:

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা ১৯৫৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে পাস করা হয়। সেই সময় শহীদ মিনারের মূল নকশায় একটি অংশে লেখা ছিল ‘শহীদ মেমোরিয়াল : কম্পোজার হামিদুর রহমান মুর‌্যালিস্ট ইন কোলাবরেশন উইথ নভেরা আহমেদ স্কাল্পটর।’ এখানে নভেরাকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আনা ইসলামের বইটিতে ২০১৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাস্কর নভেরা আহমেদ শহীদ মিনার প্রসঙ্গে বলেছেন ‘... আমি আমার আইডিয়ার কথা বলেছি। কী করতে হবে বলেছি। ... অনেক কাজ একা করতে হবে বলে হামিদকে বলি সাহায্যের জন্য। ... সে আমার কথা অনুসরণ করত। ... কারণ আইডিয়া আমার। সে বুঝত না আমি কী চাচ্ছি, সম্পূর্ণভাবে কী চাচ্ছি। তাই আমি যখন যা করতে বলতাম, তখন তাই করত।’ ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইটিতে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাবিদ যে নভেরা আহমেদ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যদিও বহুদিন ধরে এ স্বীকৃতি নানাভাবে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নানাভাবে হয়েছে বিকৃত। ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিবাহিত হলেও এখন সময় এসেছে শহীদ মিনারের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার, সংরক্ষণ করার।

নভেরা আহমেদ কে? তিনি কি শুধু বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর? জীবনের একটা পর্যায় প্যারিসে অতিবাহিত করলেও যিনি কখনো বাংলাদেশের পাসপোর্ট ত্যাগ করেননি? সাদামাটা জীবন এবং ‘সরলতা’ ও ‘ন্যূনতমতা’ যার সৃষ্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য? বাংলাদেশের সুন্দরবনে (ক্যাটালগে উল্লিখিত) ২৯ মার্চ ১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া নভেরা আহমেদ শিল্পবিষয়ক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন লন্ডন ও ফ্লোরেন্সে। ১৯৫৭ সালে শহীদ মিনারের প্রধান নকশাকার হিসেবে যুক্ত হলেও নভেরার মূল নকশা আজ পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হয় তার ‘ইনার গেজ’ শীর্ষক প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে প্রকাশিত ক্যাটালগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পচর্চায় এ প্রদর্শনীকে ছোটখাটো বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন। নভেরার সেসব সৃষ্টিকে তিনি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন শিল্পের নতুন ঐতিহ্যের সঙ্গে। দেশের প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী করে সেখানেই থেমে থাকেননি নভেরা। শাস্ত্রীয় নৃত্য শিখতে গিয়েছেন ভারতে। এশিয়ার নানা দেশে ভ্রমণ করেছেন। অর্জন করছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বুদ্ধের দর্শনে হয়েছেন সমৃদ্ধ। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের ভগ্নাংশ দিয়ে ভাস্কর্য গড়ে থাইল্যান্ডে করেছেন প্রদর্শনী। ১৯৭১ সাল থেকে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্যারিসে গ্রেগোয়ার সালঁ দ্য এক্সপোজিশিয়ঁ গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় নভেরার রেট্রোসপেকটিভ (১৯৬৯-২০১৪) প্রদর্শনী। নভেরা আহমেদের জীবনের নানাদিক, শিল্পকর্মের গভীর বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক আলোচনা ছড়িয়ে আছে কথাসাহিত্যিক আনা ইসলামের ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ বইতে। সঙ্গে রয়েছে নভেরার জীবন ও শিল্পকর্মের কালক্রমিক বিবরণ। নভেরা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আনা ইসলাম বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের ‘আমি তারেই খুঁজে বেড়াই, যে রয় মনে আমার মনে’ এই নিবিড় দর্শন ও ঐশ্বরিক বিশ্বাস ভাস্কর নভেরাকে বোঝার এক অন্যতম সূত্র। নিঃসন্দেহে এ বই নভেরা সম্পর্কে আমাদের জানার জগৎকে আরও প্রসারিত করে তুলবে।
নভেরার অনন্য সৃষ্টিশীল প্রয়াস ‘শহীদ মিনার’কে ঘিরে বাঙালির চেতনা জেগে উঠেছে বারবার। যদিও ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনারের সূচনা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দারের নকশায় ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া একটি মিনার নির্মাণ করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পরই এ মিনার ভেঙে দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অবশ্য শুধু ঢাকায় নয়, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার পর থেকে দেশের নানা স্থানে এমনসব শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল। ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের আগপর্যন্ত আমরা নানা আকারের শহীদ মিনারের ছবি দেখি বিভিন্ন বইপত্রে। কিন্তু ১৯৫৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে শত-সহস্র শহীদ মিনার। ১৯৫৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও সাময়িক স্থগিত থাকার পর ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার পর আবার শহীদ মিনারের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং আশির দশকের শুরুতে বর্তমান শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হয়। তবে উল্লেখ করার বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকা শহীদ মিনারের সংখ্যা কত? কারা কোন সময় কোন পরিস্থিতিতে দেশের নানা স্থানে এসব শহীদ মিনার নির্মাণ করছেন তার কোনো তথ্য কোথাও সংরক্ষিত হয়নি। এরই মধ্যেই বাঙালি যেখানে গেছে সেখানেই গড়ে তুলেছে এমন শহীদ মিনার। নিজেদের চিনতে ও চেনাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি।
সুত্র: আশফাকুর রহমান, দেশ রুপান্তর

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...