Thursday 24 December 2020

নদী কথা- নরসুন্দা নদী বা নাগচিনি নদী

 


বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার একটি নদী। কিশোরগঞ্জ জেলা শহর এবং নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শহর এ নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক নরসুন্দা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৪২
ইতিহাসবিদদের মতে, এ নদীকে কেন্দ্র করেই কিশোরগঞ্জ শহর গড়ে ওঠে। এ নদী দিয়েই ঈশা খাঁ (১৫২৯-১৫৯৯) এগারসিন্ধুর থেকে জঙ্গলবাড়িতে নৌবিহারে এসেছিলেন।

নদীটির ইতিহাস হয়ে আছে ‘জীবন্ত’ আর নদীটি বর্তমান হয়ে গেছে ‘মৃত’। কোনোমতে অস্তিত্ব নিয়ে শুধুমাত্র টিকে আছে কঙ্কালসদৃশ নরসুন্দা নদীর নামটিই।

নদী কথা- ইছামতি নদী।

 


ইছামতি নদী বা ইচ্ছামতি বা ইছামতি-কালিন্দি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৩৭০ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক ইছামতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭।
নদীটি বর্তমানে সিলটেশন বা পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এর ফলশ্রুতিতে শীত মৌসুমে এটি কেবল সরু পথে প্রবাহিত এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট হচ্ছেন এবং সঙ্কট সমাধানে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইছামতি নদীটির এখন তিনটি অংশ রয়েছে - (১) দীর্ঘতর অংশটি পদ্মা নদীর একটি শাখানদী মাথাভাঙ্গা নদী থেকে প্রবাহিত হয় এবং ২০৮ কিমি প্রবাহিত হবার পর উত্তর ২৪ পরগণা জেলা‎র হাসনাবাদের কাছে এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কাছে কালিন্দী নদীর সাথে যুক্ত হয়। (২) একসময়ের পশ্চিম ঢাকার প্রধান নদী এবং (৩) দিনাজপুরের ইছামতি। ১৭৬৪-৬৬ সালের রেনেলের মানচিত্র অনুসারে শেষোক্ত নদী দুইটি একীভূত দেখা যায়। বেশকিছু জলানুসন্ধানবিদদের মতে, প্রাচীনকালে তিনটি ইছামতি নদীই অভিন্ন ছিল।
উপরোল্লিখিত দ্বিতীয় নদীটি যা হুরসাগরের অগ্রভাগের নাথপুর ফ্যাক্টরির বিপরীতে জাফরগঞ্জের দক্ষিণে উত্‌পত্তি লাভ করেছে এবং মুন্সীগঞ্জের মোহিনীঘাটের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। যোগিনীঘাট যমুনা ও ইছামতির নদীসঙ্গমে অবস্থিত। নদীটিতে পাঁচটি তীর্থযাত্রার ঘাট -তীর্থঘাট, আগলা, শোলপুর, বরুণীঘাট ও যোগিণীঘাট রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে পঞ্চতীর্থ ঘাট নামে পরিচিত।
মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মুন্সীগঞ্জে পদ্মার রাইটব্যাঙ্ক থেকে উত্পত্তি লাভ করেছে। এটি নদীয়া জেলার মাজদিয়ার কাছে দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুটি নদী ইছামতি ও চূর্ণী উৎ‌পন্ন করে। ভারতে ১৯.৫ কিলোমিটার তীর্যকভাবে অতিক্রম করে, ইছামতি মুবারকপুরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি বাংলাদেশে ৩৫.৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয় এবং আবারো ভারতে প্রবেশ করে নদীয়ার দুত্তাফুলিয়া দিয়ে। নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমারেখা তৈরি করে যা আংরাইল থেকে কালাঞ্চি এবং পুনরায় গোয়ালপাড়া থেকে কালিন্দী-রাইমঙ্গল আউটফল হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
ভৈরব এক সময় গঙ্গা থেকে প্রবাহিত হত, এটি তখন জলাঙ্গীর বর্তমান তীরের মধ্যদিয়ে আরো পূর্বদিকে ফরিদপুরের দিকে প্রবাহিত হত। ভৈরব এখন আর তেমন জীবন্ত নেই। মাথাভাঙা জলঙ্গীর একটি নতুন জলস্রোত এবং অতিসাম্প্রতিককালের আগ পর্যন্ত নদীটি হুগলীর সাথে যোগসূত্র ঘটায় চূর্ণী নদী গ্রহণের মাধ্যমে। আগেকালে মাথাভাঙার অধিকাংশ পানি পূর্বে কুমারা, চিত্রা, কবদুক (ভৈরব) ও ইছামতিতে প্রবাহিত হত। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আগে এই অঞ্চলের নদীগুলো দক্ষিণ-পূর্ব অভিমুখে প্রবাহিত হত, কিন্তু পরবর্তীকালে কোন শক্তি জলাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গাকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। এটি ঘটার কারণ হল একটি স্থানীয় সাবসিডেন্স যা ১৭৫০ এর আগে কিছু সময় ধরে সংঘটিত হয় এবং এটি তখন থেকে অকার্যকর অবস্থায় আছে।
যেহেতু ইছামতি নদীর গর্ভ মাথাভাঙ্গা থেকে ১৪ ফুট বেশি উঁচু, আবার চূর্ণী মাথাভাঙ্গা থেকে ছয় ইঞ্চি নিচু। শুষ্ক মৌসুমে মাথাভাঙ্গার পানির উচ্চতা পদ্মার থেকে বেশি থাকে এবং এর ফলে এ সময়ে ইছামতিতে কোন পানি প্রবেশ করে না। নদীতে পলি জমে যাবার একটি কারণ হল রেললাইনের জন্য তৈরি ওভারব্রীজের গার্ড ওয়াল নদীতে তৈরি করা। এলাকাটিতে নদীগর্ভের খনন কাজ জরুরি কেননা শুষ্ক মৌসুমেও পানির প্রবাহ রয়েছে। যেহেতু এই ভারত ও বাংলাদেশ উভযের জন্যই প্রয়োজন তাই এক্ষেত্রে উভয়ের একমত হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে এবং জরীপ করা স্থানগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সমস্যা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে নিকট ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
নদী সংশ্লিষ্ট এলাকাটি শিল্প বর্জ্য ও জনগণের নদীর জমি দখলের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পয়ঃপ্রণালীর অভাব, অবৈধ দখল, আর্সেনিকসহ অন্যন্য কারণে স্থলভাগের পানির দূষিতকরণ, জলচর উদ্ভিদ ও প্রাণী নিধনসহ অন্যান্য সমস্যার সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাধান প্রয়োজন।
ইছামতি নদী ও এর শাখাসমূহ উত্তর ২৪ পরগণার বণগাঁওয়ে ইংরেজি U বর্ণাকৃতির জলাধার তৈরি করেছে। কৃষি ও নৃতাত্ত্বিক চাপের পাশাপাশি আগাছার প্রাদুর্ভাব বিশেষত কচুরীপানার ব্যাপকতা একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ কেননা এটি লেকের পানি ঢেকে ফেলছে।
দূর্গাপূজার, বিজয়া দশমীতে ইছামতিতে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি অনন্য প্রদর্শনী। ইছামতি নদীটি যা দুই দেশের মাঝে নিরপেক্ষ সীমানা হিসেবে কাজ করে, তা উভয় দেশের নৌকা থেকে দেবদেবী বিসর্জনের সময় উচ্ছসিত প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। এসময় চোখের দূরতম সীমা পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির নৌকা দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রতিটি নৌকাগুলোতে সংশ্লিষ্ট দেশের পতাকা লাগানো থাকে। এটিই বছরের একমাত্র দিন যখন সীমান্ত টহল শীথিল করা হয় নদীর উভয় পাড়ের মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে নদীর অপর পাড়ে যেতে পারে। কিছুদিন আগে প্রতিমা বিসর্জনের পর মানুষজন এমনকি অপর পাড়েও নৌকা ভিড়াতে পারত। তবে বর্তমান কয়েক বছর ধরে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় এই অনুশীলনটির ব্যত্যয় ঘটছে।

নদী কথা- গোমতী নদী।

 


গোমতী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক গোমতী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ০৪।
গোমতি নদীটি তীব্র খরস্রোতা। কুমিল্লায় এর প্রবাহমাত্রা ১০০ থেকে ২০,০০০ কিউসেক পর্যন্ত উঠানামা করে।

গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে উৎপন্ন হয়ে পার্বত্যভূমির মধ্য দিয়ে সর্পিল পথ প্রায় ১৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করে কুমিল্লা সদর উপজেলারগোলাবাড়ি, টিক্কারচর, কাপ্তান বাজারের কাছদিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি আঁকাবাঁকা প্রবাহপথে কুমিল্লা শহরের উত্তর প্রান্ত এবং ময়নামতির পূর্ব প্রান্ত অতিক্রম করে দাউদকান্দিতে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে।

নদী কথা- কুমার নদ

 


চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটবোয়ালিয়ায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ভূত একটি নদী। জেমস রেনেল ১৭৬৪ সালে তাঁর অঙ্কিত মানচিত্রে এ নদীর উল্লেখ করেছেন। তখন এ নদী বিশেষ কার্যক্ষম ছিল না। বর্ষা মৌসুমে পানিতে পূর্ণ থাকলেও শুকনা মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যেত। আশপাশের বহু বিল থেকে পানি বয়ে আনত বলে এ নদীর পানির রঙ ছিল অনেকটা কালো। ফলে স্থানীয়ভাবে এ নদীকে বলা হতো কালোবিল।
উৎপত্তিস্থল থেকে কুমার নদী বর্তমানে নবগঙ্গার প্রায় সমান্তরালে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। মাগুরার কাছে নবগঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে মিলিত স্রোত নবগঙ্গা নামেই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। কুমার একসময় প্রবাহ পথে কালীগঙ্গা, ছাকু, হানু, মুচিখালী ইত্যাদি থেকে তার অধিকাংশ প্রবাহ পেত। উল্লিখিত সবকটি নদীই গড়াই-এর শাখা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি-কে প্রজেক্ট) বাস্তবায়নের ফলে মাথাভাঙ্গা থেকে কুমারের উৎসমুখ এবং অন্যান্য নদীনালাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উৎসমুখগুলি বন্ধ করে দেওয়ায় কুমার এখন ক্ষীণকায় একটি নদীতে পরিণত হয়েছে। কেবল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি এবং স্থানীয় বৃষ্টিপাতই এখন এ নদীর জলপ্রবাহের প্রধান উৎস। হাটবোয়ালিয়ায় উৎপন্ন হওয়ার পর কুমার প্রায় ২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে ঝিনাইদহ জেলার সীমানা বরাবর এসে শৈলকুপা উপজেলায় প্রবেশ করেছে এবং মাগুরা জেলা শহরের কাছে নবগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ কিমি।

নদীটির সমগ্র অববাহিকা জি-কে প্রজেক্টের আওতাভুক্ত। নিজস্ব কোনো পানির উৎস না থাকায় নদীটি নাব্য নয়; কেবল বর্ষা মৌসুমে তিন-চার মাস নৌ চলাচল সম্ভব। সার্বিকভাবে ভাঙন প্রবণতা নেই, তবে ফরিদপুর জেলা শহর এবং নগরকান্দা উপজেলা শহরের কাছে কিছুটা ভাঙন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয়ভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে শৈলকুপা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় এবং ফসলের ক্ষতি হয়। নদীটির উৎস থেকে গাড়াগঞ্জ পর্যন্ত গড় প্রস্থ ১০৭ মি এবং পরবর্তী অংশের (মাগুরা পর্যন্ত) গড় প্রস্থ ২৩০ মি। কুমার নদী তার সমগ্র গতিপথ এঁকে বেঁকে চলেছে।
ফরিদপুর, নগরকান্দা, আলমডাঙ্গা, হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, শ্রীপুর, মাগুরা প্রভৃতি কুমার নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান। এ নদীর তীরে শৈলকুপা উপজেলার অদূরে মনহরদীতে বাদশাহ আকবরের আমলের একটি প্রাচীন মসজিদ এবং কবিরপুরে একটি নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নগরকান্দা শহরের নিকট নদীটি স্থানীয়ভাবে শীতলক্ষ্যা নামে পরিচিত।

নদী কথা- কর্ণফুলী নদী




কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রধান নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৬১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৫৩ মিটার এবং এর প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক কর্ণফুলী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর হলো পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ০৩।

কর্ণফুলী নদী ভারতের মিজোরামের মমিত জেলার শৈতা গ্রাম (লুসাই পাহাড়) হতে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার থেগা নদীর মোহনা বা ঠেগামুখ হতে বড় হরিণার মুখ পর্যন্ত এই ৬ কিলোমিটার কর্ণফুলী ভারত বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে। এই ছয় কিলোমিটার নদীর ডান পাশে ভারত এবং বাম পাশে বাংলাদেশ।

১৮৮৩ সালে কর্ণফুলীর মোহনায় সৃষ্টি হয় লুকিয়া চর। ১৮৭৭ সালে জুলদিয়া চ্যানেল। জুলদিয়া চ্যানেলটি আড়াই মাইল দীর্ঘ এবং দেড় মাইল প্রশস্ত। ১৯০১ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে পতেঙ্গা চ্যানেলটি জুলদিয়া চ্যানেল থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট পশ্চিমে সরে যায়। হালদা নদীর সাথে কর্ণফুলীর সংযোগ স্থলে আছে বিশাল চর। যা হালদা চর হিসাবে পরিচিত। নদীর প্রবাহের কিছু অংশ নাজিরচর ঘেঁষে, কিছু অংশ বালু চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে এবং কিছু মুল স্রোত হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু নির্মাণের আগে নদীর মূল প্রবাহ প্রধানত কুলাগাঁও অভিমুখে বাম তীর ঘেষেই প্রবাহিত হত। কালুরঘাট সেতু হওয়ার পর সেতুর ডান দিকে আরও একটি প্রবাহের মুখ তৈরি হয়। ফলে নদীর মাঝ পথে সৃষ্টি হয় বিশাল একটি চর- যা কুলাগাঁও চর নামে পরিচিত।

কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কাপ্তাই বাঁধ তৈরি করা হয় ১৯৬৪ খ্রীস্টাব্দে। এই বাঁধে সঞ্চিত পানি ব্যবহার করে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।

কবি ওহীদুল আলম ১৯৪৬ সালে কর্ণফুলীর মাঝি নামে একটি কাহিনী-কাব্য রচনা করেন। ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৬২ সালে রচনা করেন তার উপন্যাস কর্ণফুলী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন,
“ ওগো ও কর্ণফুলী
তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি
তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী, কে জানে
সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার দয়িতের সন্ধানে। ”
এছাড়াও চট্টগ্রামী ভাষার গানে এবং লোক-সংস্কৃতিতে এই নদীর প্রভাব অনেক। চট্টগ্রামী ভাষার ক’টি জনপ্রিয় গান,

১. ছোড ছোড ঢেউ তুলি পানিত ছোড ছোড ঢেউ তুলি
লুসাই ফা-রত্তুন লামিয়ারে যারগই কর্ণফুলী’।

২. ‘ওরে সাম্পানওয়ালা,
তুই আমারে করলি দিওয়ানা’।

নদী কথা- যমুনা নদী।

 


যমুনা নদী ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের দীর্ঘতম নদীসমূহের মধ্যে অন্যতম। তিববত, চীন, ভারত এবং বাংলাদেশের ভূখন্ড জুড়ে রয়েছে এর অববাহিকা অঞ্চল। প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্ন প্রবাহ যমুনা নামে অভিহিত। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে সংঘটিত ভূমিকম্প ও ভয়াবহ বন্যার ফলে ব্রহ্মপুত্রের তৎকালীন গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান কালের যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদ তার পুরানো গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণাভিমুখী যমুনা নদী নামে প্রবাহিত হয়ে আরিচায় গঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রবাহ প্রত্যাহারের ফলে দক্ষিণপূর্বাভিমুখী ব্রহ্মপুত্রের পুরানো প্রবাহটি শীর্ণকায় হয়ে পড়ে এবং অদ্যবধি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহমান রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ ব্রহ্মপুত্রের বর্তমান সমগ্র প্রবাহকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নামে অভিহিত করে থাকে।

তিববতের মানস সরোবর এবং কৈলাস পর্বতের মধ্যবর্তী পার্খা নামক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র থেকে ১৪৫ কিমি অদূরে অবস্থিত চেমায়ুং-দুং নামক হিমবাহ (৩১°৩০´ উত্তর এবং ৮০°২০´ পূ) থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি। সুবিশাল বঙ্গীয় সমভূমিতে পতিত হওয়ার পূর্বে আসামে ব্রহ্মপুত্র নদ ডিহাং নামে অভিহিত। কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গঙ্গা নদীর সঙ্গে সঙ্গমের পূর্ব পর্যন্ত সাংপো-ব্রহ্মপুত্র-যমুনার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৭০০ কিমি। বাংলাদেশ ভূখন্ডে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার দৈর্ঘ্য ২৭৬ কিমি যার মধ্যে যমুনা নদীর দৈর্ঘ্য ২০৫ কিমি।
নদীটির প্রশস্ততা ৩ কিমি থেকে ২০ কিমি পর্যন্ত, তবে এর গড় প্রশস্ততা প্রায় ১০ কিমি। বর্ষা ঋতুতে যমুনার প্রশস্ততা কোন স্থানেই ৫ কিমি-এর কম হয় না। বাস্তবে যমুনা একটি চরোৎপাদী নদী। কয়েকশত মিটার থেকে কয়েক কিমি প্রশস্ততা বিশিষ্ট বিভিন্ন আকৃতির, এবং বিনুনি, সর্পিলাকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন প্যাটার্নের প্রবাহখাত নিয়ে যমুনা নদী গঠিত। বাংলাদেশে অবস্থিত যমুনার প্রবাহপথের অধিকাংশ স্থানেই অসংখ্য চর গড়ে উঠেছে যেগুলো বর্ষা ঋতুতে ডুবে যাওয়ার ফলে নদীটি একটি একক খাতে পরিণত হয়। এভাবে শুধুমাত্র প্রশস্ততার কারণে নদীটি বিশ্বের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীতে পরিণত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পৃথক পৃথক প্রবাহখাতগুলির প্রস্থ ও গভীরতার অনুপাত ৫০:১ থেকে ৫০০:১ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নদীটির নতিমাত্রা ০.০০০০৭৭, যা গঙ্গার সঙ্গে মিলনস্থানের নিকটবর্তী এলাকায় ০.০০০০৫-এ হ্রাস পায়।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী অববাহিকার আয়তন প্রায় ৫,৮৩,০০০ বর্গ কিমি যার মধ্যে ২,৯৩,০০০ বর্গ কিমি তিববতে, ২,৪১,০০০ বর্গ কিমি ভারতে এবং শুধুমাত্র ৪৭,০০০ বর্গ কিমি বাংলাদেশে অবস্থিত। বাহাদুরাবাদের উজানে ব্রহ্মপুত্র ৫,৩৬,০০০ বর্গ কিমি এলাকা নিষ্কাশিত করে থাকে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীপ্রণালী দেশে উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত সর্বাধিক প্রশস্ত নদীপ্রণালী। বাহাদুরাবাদে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের প্রবাহ রেকর্ড করা হয়ে থাকে। পরিমাপকৃত প্রবাহে বাংলাদেশে প্রবেশকৃত দুধকুমার, ধরলা এবং তিস্তা নদীর প্রবাহ যোগ করা হয় এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও বাঙ্গালী নদীর প্রবাহ বিয়োগ করা হয়ে থাকে। বর্ষা ঋতুতে যমুনা নদীর প্রবাহ থাকে বিশাল পরিমাণের এবং গড়ে প্রায় ৪০,০০০ কিউমেক। এই পরিমাণ প্রবাহের দ্বারা নদীটি আমাজন, কঙ্গো, লা প্লাটা, ইয়াংসি, মিসিসিপি এবং মেঘনার পরেই সপ্তম বৃহত্তম স্থানে অবস্থান করে নিয়েছে। ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে যমুনায় রেকর্ড পরিমাণ প্রবাহ পরিমাপ করা হয় যার পরিমাণ ছিল ৯৮,৬০০ কিউমেক। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার বার্ষিক গড় প্রবাহ প্রায় ৫০১ মিলিয়ন একর-ফুট।
আগস্ট মাসে প্রায়ই ব্যাপক বিস্তৃত বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সংঘটিত বন্যা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনা নদীতে প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। গঙ্গার তুলনায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর প্রবাহ অধিকতর গতিসম্পন্ন। যমুনার গড় নতিমাত্রা ১:১১,৮৫০, গঙ্গার নতিমাত্রার তুলনায় সামান্য বেশি। বিশাল আয়তনের জলরাশি প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে যমুনা প্রচুর পরিমাণে পলিরাশিও বহন করে থাকে। বর্ষা ঋতুতে যমুনা নদী দৈনিক প্রায় ১২ লক্ষ টন পলি বহন করে আনে এবং বাহাদুরাবাদে পরিমাপকৃত যমুনার বার্ষিক পলিবহন ক্ষমতা প্রায় ৭৩৫ মিলিয়ন টন।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার চারটি প্রধান উপনদী রয়েছে: দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা এবং করতোয়া-আত্রাই নদীপ্রণালী। এদের মধ্যে দুধকুমার, ধরলা এবং তিস্তা নদী তিনটি খরস্রোতা প্রকৃতির এবং ভারতের দার্জিলিং ও ভূটানের মধ্যবর্তী হিমালয়ের দক্ষিণপার্শ্বে অত্যধিক ঢালবিশিষ্ট অববাহিকা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। শাখানদীসমূহের মধ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র দীর্ঘতম এবং দুইশত বছর পূর্বে এটিই ছিল ব্রহ্মপুত্রের মূল গতিধারা।
যমুনা নদী দ্বারা বিভক্ত বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে যমুনা নদীর উপর সাম্প্রতিক কালে ৪.৮ কিমি দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু নামে অভিহিত এই সেতুর পূর্ব প্রান্ত টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলায় এবং পশ্চিম প্রান্ত সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত। সেতুতে বিদ্যমান সড়ক ও রেলপথে যাত্রী ও পণ্যের দ্রুত পরিবহণ ছাড়াও সেতুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সঞ্চালন এবং টেলিযোগাযোগ ত্বরান্বিত হয়েছে। সেতুটি ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অত্যধিক প্রচরণশীল যমুনা নদীকে সেতু দ্বারা নির্ধারিত খাতে প্রবাহমান রাখার জন্য ব্যাপক নদীশাসন কর্মকান্ড সম্পন্ন করা হয়।
প্রকৃতিগতভাবে যমুনা নদীটি বিনুনি অথবা চরোৎপাদী প্রকৃতির। এর বিনুনি বলয়ের মধ্যে বিভিন্ন আকৃতির অসংখ্য চর বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৯২ সালের শুষ্ক ঋতুতে তোলা ল্যান্ডস্যাট ইমেজ (Landsat image) থেকে দেখা যায় যমুনা নদীতে ৫৬টি বৃহদাকৃতির দ্বীপ বা চর বিদ্যমান রয়েছে যাদের প্রতিটি ৩.৫ কিমি-এর অধিক দীর্ঘ। বালুময় চর এবং উদ্ভিদ আচ্ছাদিত চরও এই হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র মুখের বিপরীত প্রবাহে, সিরাজগঞ্জের উত্তর ও পূর্ব পার্শ্বে এবং গঙ্গার সঙ্গে মিলনস্থলের উজানে যমুনার দক্ষিণতম প্রবাহে নিয়মিত চর গঠন প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়েছে। বিভিন্ন নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়ে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে প্রায় ৭,২৯,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল যমুনার তীর ভাঙনের শিকার।

নদী কথা- মগড়া নদী।

 



বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মগড়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৬৫। এই নদী নেত্রকোণাকে ঘিরে রেখেছে। মগড়ার বহমান পথ শহরটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
মগড়া নদী নেত্রকোণা জেলার পূর্ব ধলাইয়ের নিম্নাঞ্চল থেকে সৃষ্ট ধলাইখালে এই নদীর উৎপত্তি। এটি একই জেলার মদন উপজেলার ধনু নদীতে এসে মিলিত হয়েছে।
সেনেরচর থেকে খড়িয়া নদী বেয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বুড়বুড়িয়া বিল, ঐ বিল থেকে বেরিয়ে গজারিয়া ও রাংসা নদীর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফুলপুরের ঢাকুয়া-র ভেতর দিয়ে সরাসরি পূর্বদিকে ধলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে। পূর্বধলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদরের ভেতর দিয়ে ত্রিমোহনীতে এসে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। সে স্থান থেকে মগড়া নামে পরিচিত।
সেখান থেকে প্রথমে পাঁচ মাইল পর্যন্ত দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাট থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে আকাঁবাকা হয়ে নেত্রকোণা শহরের পাশ দিয়ে আটপাড়া হয়ে মদন হয়ে ধনু নদীতে পতিতহয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মগড়ায় মিলিত হয়েছে লাওয়ারী নদী, ধলাই, কংসের শাখা, সাইডুলি, পাটকুঁড়া নদী-শাখানদী। নেত্রকোণা জেলায় মগড়া নদীর গতিপথ সব চেয়ে বেশি। নদীটি কোথাও ধলাই নামে, কোথাও মগড়া নামে খ্যাত। এ জেলার চারশ বর্গমাইল এলাকা দিয়ে মগড়া নদীর প্রবাহ রয়েছে। মগড়া ও কংস নদী ৮/১০মাইল ব্যবধানে প্রায় ৪০ মাইল সমান্তরালভাবে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে।

নদী কথা- করতোয়া নদী

 



এটা বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক করতোয়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ১৩।
করতোয়া নদী বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলার ভোজনপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার সরকারপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে।
করতোয়া নদী প্রধানত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্তর্গত একটি ছোট নদী যা একসময় একটি বড় ও পবিত্র নদী ছিল। এর একটি গতিপথ, বর্তমানে যেটির নাম করতোয়া নিম্ন নদী, বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় দিয়ে (যা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ও প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর রাজধানী) প্রবহমান। করতোয়া মাহাত্ম্য এর অতীত ঐতিহ্যের প্রমাণ করে। মহাভারতে বলা আছে যে, তিনদিন উপবাসের পর করতোয়া নদীতে ভ্রমণ করা অশ্বমেধা (ঘোড়া বলিদান) এর সমান পূণ্যের সমান। আরেকটি প্রাচীন শহর শ্রাবস্তী, খুব সম্ভবত মহাস্থানগড়ের উত্তরে করতোয়ার পাড়ে অবস্থিত ছিল। অবশ্য শ্রাবস্তীর সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে।
নদীর নামটি দুটি বাংলা শব্দ কর বা হাত এবং তোয়া বা পানির সমন্বয়ে গঠিত। এই নামটি হিন্দু কিংবদন্তির প্রতিফলন করে, যার মতে এই নদীটি পার্বতীকে বিয়ে করার সময় শিবের হাতে ঢালা পানি থেকে তৈরি হয়েছিল।
বাংলা ও এর নিকটবর্তী এলাকার নদীপথের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। উপযুক্ত প্রমাণাদি না থাকলেও সূদুর অতীতেও এমন পরিবর্তন ঘটেছে। করতোয়া নদীর পরিবর্তন বহুবছর ধরে সংঘটিত হয়েছে।
টেকটোনিক অসহনশীলতার কারণে করতোয়া নদী চারটি আলাদা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরের অংশটি যার নাম দিনাজপুর-করতোয়া হল আত্রাই নদীর প্রধান উত্স। এটির উত্পন্ন হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার বৈকণ্ঠপুরের একটি জলাধার থেকে এবং মাটির নিচের স্ট্রিম থেকেও পানি গ্রহণ করে। খানসামা উপজেলাতে এটি নাম বদলে আত্রাই হয়ে যায়। দ্বিতীয় শাখার ক্ষেত্রে, দিনাজপুর-করতোয়া খানসামার উত্তরে রংপুর-করতোয়ার সাথে মিশে যায়, অবশ্য এই গতিপথে বর্তমানে খুব সামান্য পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়। রংপুর-করতোয়ার উপরের অংশ জলপাইগুড়ি জেলায় উত্পন্ন হয়েছে এবং এটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত দিওনাই-যমুনেশ্বরী নামে পরিচিত। তৃতীয় শাখা, যমুনেশ্বরী-করতোয়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বের দিকে প্রবাহিত হয় এবং প্রধান গতিপথটি কাটাখালি হয়ে বাঙালি নদীতে গিয়ে পড়ে। প্রাক্তন নদীর একটি অংশ শিবগঞ্জ উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর বেশির ভাগ অংশ বর্তমানে প্রায় সারাবছর শুষ্ক থাকে। এটি কার্যকরভাবে রংপুর-করতোয়াকে বগুড়া-করতোয়া থেকে পৃথক করে, এবং বগুড়ার দক্ষিণ দিকে থেকে প্রবাহিত হয়ে বাঙালির সাথে মিশে ফুলঝুর নদী নামে হুরাসাগরে গিয়ে পড়ে। চতুর্থ অংশ পাবনা-করতোয়া হান্দিয়াল নিকটবর্তী একটি মৃত নদীগর্ভ। অন্যান্য অনেক চ্যানেলও পুরাতন করতোয়ার অংশ হিসেবে বিবেচিত।

নদী কথা- মাতামুহুরী নদী।

 



মাতামুহুরীর সঠিক উৎপত্তিস্থল কোনটি তা বিতর্কিত। কারো মতে লামার মাইভার পর্বতে মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি৷ মগ ভাষায় এই নদীটির নাম মামুরি। মাতামুহুরী নদীর নামকরণেরও একটি ইতিহাস আছে। জনশ্রুতি আছে এই নদী নাকি কোন একটি (একক উৎস নির্দিষ্ট ঝরণা) হতে সৃষ্টি নয়। এতি মাতৃস্তন সদৃশ বিভিন্ন পর্বত গাত্র হতে জল চুয়ে চুয়ে পড়েই নদীর সৃষ্টি। তাই এর নাম মাতামুহুরী। মুহুরী শব্দের অর্থ অসংখ্য ছিদ্র দিয়ে জলপড়া ঝাজর অর্থাৎ ইংরেজিতে বলে শাওয়ার (Shower)। এই নদীটি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম পাশ ঘেষে বঙ্গোপসাগর-এ পতিত হয়েছে৷ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কি.মি.৷ বঙ্গোপসাগরে মাতামুহুরীর মোহনায় যে বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে তা ভোলাখাল থেকে খুটাখালি পর্যন্ত বিস্তৃত।
মাতামুহুরীর নদীর তীরে গড়ে উঠেছে চকরিয়া,লামা,আলীকদম উপজেলা শহর। পাশাপাশি পেকুয়া উপজেলার কিছু অংশের মধ্য দিয়েও এই নদী গেছে। যেমন নীল নদ মিশরের দান, ঠিক তেমনি লামা, আলীকদম ও চকরিয়া এই তিনটি উপজেলা মাতামহুরী নদীর দান বলা চলে। সুদীর্ঘ সময় এসব উপজেলার যোগাযোগ ও বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম মাতামুহুরী। এছাড়া উপজেলাসমূহের প্রধান গঞ্জগুলো মাতামুহুরীর তীরে অবস্থিত। নদী ধরেই লামা ও আলীকদমের মতো পার্বত্য এলাকায় মানব বসতি স্থাপন ও অভিবাসনের সূত্রপাত।

নদী কথা - বেতনা নদী বা বেত্রাবতী নদী

 


যশোরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে শার্শা উপজেলার নাভারনের কাছ দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলায় প্রবেশ করে। বেনারপোতা নামক স্থান থেকে ডলুয়া নামের একটি শাখা সৃষ্টি করে পরে কালিয়া নাম ধারণ করে কপোতাক্ষ নদে পতিত হয়েছে। বেনারপোতার কাছে বাঁধ নির্মাণের ফলে শাখাটি বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মূল নদীটি চাপড়ার কাছে মরিচাপ নদীতে মিশেছে। এই নদীর আংশিক প্রবাহ মরিচাপ-কপোতাক্ষ এবং মরিচাপ-খোলপেটুয়ার মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। যদিও বেতনার মূল স্রোতের অনেকটাই মরিচাপে প্রবাহিত হয় তবুও সাধারণভাবে এটি বেতনা-খোলপেটুয়া নামে পরিচিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৯১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বেতনা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৬৪।নদীটি জোয়ারভাটা প্রভাবিত।

এই নদীর উৎপত্তি ভৈরব নদের শাখা হিসেবে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে; কিন্তু এই উৎসমুখ এখন বিচ্ছিন্ন। মহেশপুরে কতগুলো বিল থেকে পানি নিয়ে এই নদী ভারতে প্রবেশ করেছে। আবার যশোর জেলার শারশা উপজেলায় পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাভারন হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই নদীর অপর নাম কোদালিয়া। এই নদী সাতক্ষীরা জেলায় মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলে খোলপেটুয়া নদী নাম ধারণ করেছে। এর পরে নদীটি কালিয়া নদী নামে পরিচিত। কালিয়া নদীর শাখা নদীর নাম দালুয়া নদী। বেতনা নদী সুন্দরবন অংশে অর্পণগাছিয়া নদী নামে পরিচিত। অতঃপর এই একই নদী মালঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।
বেতনার তীরে নাভারন, উলসী, শংকরপুর, কলারোয়া, বেনারপোতা, চাপড়া উল্লেখযোগ্য স্থান। নদীটির উপরের অংশে অর্থাৎ নাভারন থেকে কলারোয়া পর্যন্ত পাম্পের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নাংশের নদী নাব্য এবং সারা বছর ছোট ছোট নৌযান চলাচল করে। যদিও বর্ষা মৌসুমে বেতনা সর্বত্রই নাব্য, কিন্তু শুকনা মৌসুমে কোন স্থায়ী উৎস থাকে না। এ সময়ে নদীটি স্থানীয় বিল ও হাওড়ের চুয়ানো পানি দিয়ে কিছুটা সঞ্জীবিত থাকে। প্রবহমান কোন উৎসের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় শুকনা মৌসুমে নদীর যশোর থেকে শংকরপুর পর্যন্ত অংশের পানিতে অধিক লবণাক্ততা লক্ষ্য করা যায়। ফলে ঐ এলাকায় শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ বিঘ্নিত হয়। সাম্প্রতিক কালে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানির সমতল মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই নদী থেকে প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ একটি খাল কেটে সেচ ও কৃষি উন্নয়নের জন্য ‘উলসী প্রকল্প’ নামে একটি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য বেতনার উপর শংকরপুরে একটি বড় ধরনের জলকাঠামোও নির্মাণ করা হয়েছে।

নদী কথা- পাগলা নদী।

 


পাগলা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৩ কিলোমিটার, প্রস্থ ৯০ মিটার এবং গভীরতা ৪.৫ মিটার যা কানসাট এলাকায় পরিমাপকৃত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক পাগলা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৬৯।
ভারত হতে উৎপন্ন হয়ে নদীটি বাংলাদেশের উত্তরাংশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গঙ্গার পূর্ব দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার কালিয়াচক ও মহদিপুরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে মহানন্দা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

নদী কথা- ফকিরনী নদী (রাণী নদী)

 


ফকিরনী নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নওগাঁ এবং রাজশাহী জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫১ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক ফকিরনী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৪।

 

নদী কথা- বিষখালী নদী

 


বিষখালী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বিষখালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৬০।
বিষখালী নদীটি ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান সুগন্ধা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও বেতাগী উপজেলা অতিক্রম করে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিপতিত হয়েছে। নদীটির উজানের তুলনায় ভাটির দিক অধিক প্রশস্ত। নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ পরিদৃষ্ট হয় এবং ছোটবড় নৌযান চলাচল করে। তবে বর্ষাকালে নদীটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত।

বিষখালী নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা নদী। ঝালকাঠি জেলায় এসে নদীটি বড় বাঁক নিয়ে বরগুনা জেলার মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গতিপথের প্রথম ৩০ কিমি এর গড় প্রস্থ হল ১ কিমি। পরবর্তি ৬৬ কিমি এই নদীর গড় প্রস্থ প্রায় ২ কিমি। এর গড় গভীরতা ১৬ মিটার। কাউখালি এবং গাবখান খালের মাধ্যমে মধুমতি এবং কচা নদীর পানি বিষখালী নদীতে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারভাটা এই নদীতে সক্রিয়। সমুদ্রতটের খুব কাছে হওয়ায় এই নদীর পানিতে লবনাক্ততার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিষখালীর দুইটি শাখা নদী খাগদোন খাল ও বদনখালি খাল।

নদী কথা- বাঙালি নদী।

 


বাঙালি নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৮৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৪৩ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক পাথরাজ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৯। ২০০৭ সালে নদীটি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে যমুনা নদীর সঙ্গে নদীটির মিশে যাবার আশঙ্কায়। এর ফলে এলাকার ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তন হতে পারে।
বর্তমানের যমুনা ও তিস্তা নদীর গতিপথ ১৮৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে তৈরি হয়। এই বন্যা সমগ্র অঞ্চলের নদীভিত্তিক মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন করে দেয়। ১৭৮৭ সালের আগে ব্রহ্মপুত্র নদী ময়মনসিংহের ভিতর দিয়ে ভৈরব বাজারে এসে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হত। বন্যার পর, ব্রহ্মপুত্র গতি পরিবর্তন করে এবং যমুনা নামে পদ্মায় পতিত হতে থাকে। তিস্তা নদীও তার গতি পরিবর্তিত করে। ধারণা করা হয় বাঙালি নদীর জন্মও ১৭৮৭ সালের বন্যার পর কেননা বাঙালি নদীর প্রধান উৎস তিস্তা ও যমুনার বর্তমান গতিপথ ১৭৮৭ সালের আগে ছিল না।
বাঙালি নদীর উৎপত্তি নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী থেকে। উৎস থেকে নদীটি ঘাঘট নামে গাইবান্ধায় প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধায় এসে এটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়- একটি শাখা পশ্চিমে ঘাঘট নামে প্রবাহিত হয়ে শেরপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে পড়ে; অপর শাখা বাঙালি নামে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়ে বগুড়ায় আবারো দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। এই শাখা দুটি যথাক্রমে যমুনা ও করতোয়ায় গিয়ে পড়ে।
বাঙালি নদীর অনেক শাখা নদী আছে যথা: বেলাল, মানস, মধুখালি, ইছামতি, ভলকা এবং অন্যান্য। এই শাখাগুলো শীতের মৌসুমে শুকিয়ে যায়।
সাম্প্রতিককালে তিস্তা নদীর প্রবাহ দূর্বল হয়ে যাওয়ায়, যমুনা বাঙালি নদীর পানির প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওয়াজেদ মনে করেন "যমুনা নদী বাঙালির প্রাথমিক উৎস।" অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানী এ মতকে সমর্থন করেছেন।[
অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে, উত্তর বঙ্গে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত হতে থাকে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল বগুড়া ও রংপুর, যা বাঙালি নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত। তবে নদীর নামকরণ বাঙালি (বাংলার মানুষ) পিছনে এটিই কারণ কিনা তা পরিষ্কারভাবে জানা যায় নি।

বিজ্ঞানীরা বাঙালি নদীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, নদী-ভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছর যমুনা নদী, বাঙালি নদীর দিকে ৮০ মিটার এগিয়ে আসছে। ২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৩০০ মিটার দুরত্ব নদী দুটিকে পৃথক করে রেখেছে। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যদি দুটি নদী একসাথে মিশে যায় তবে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ১০০,০০০ হেক্টর এলাকা নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাবে। পানি বগুড়া-নগরবাড়ি সড়ক ধ্বংস করে দেবে এবং ফলশ্রুতিতে যমুনা নদীর উপর অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সেতু অকেজো হয়ে যাবে। এটি বাঙালি নদী সংলগ্ন সমভূমির বার্ষিক বন্যার হার বাড়িয়ে দেবে।

নদী কথা- চিত্রা নাদী

 

চিত্রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৩ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক চাটখালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৩৪। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রবাহিত গঙ্গা-পদ্মা সিস্টেমের একটি বিশাল উপকূলীয় নদী। ১৭০ কিঃমিঃ দীর্ঘ এ নদীটি চুয়াডাঙা ও দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কালিগঞ্জ, মাগুরার শালিখা ও কালিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাজীরহাটে নবগঙ্গা নদীর সাথে মিলেছে এবং এর মিলিত স্রোত খুলনার দৌলতপুরের কাছে ভৈরব নদীতে মিশেছে।
একসময় চিত্রা নদী অত্যন্ত খরস্রোতা থাকলেও বর্তমানে কতিপয় প্রাকৃতিক কারণ, কালভার্ট নির্মাণ ও মূলত দখলদারির কারণে তা মৃতপ্রায় হয়ে রয়েছে। অব্যবহারযোগ্য পানিধারণকারী এ নদী দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে বটে।

নদী কথা- হালদা নদী

 


বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক হালদা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৬।
নদীটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। এটি এর পর দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, ও অন্যান্য অংশ, হাটহাজারী, রাউজান, এবং চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও-বাকলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২৯ কিলোমিটার অংশ সারা বছর বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হালদার সাথে বাংলাদেশ এর অন্যান্য নদী যেমন পদ্মা নদী,মেঘনা নদী,যমুনা নদীর সংযোগ না থাকাতে রুই জাতীয় মাছের "জীনগত মজুদ" সম্পূর্ণ অবিকৃত রয়েছে। হালদা নদী কেবলমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ঐতিহ্য নয়, এটি ইউনেস্কোর শর্ত অনুযায়ী বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ও যোগ্যতা রাখে।
হালদা খালের উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়। সালদা নদী নামে বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
হালদা নদীতে পতিত দুপাশের উপনদীগুলো প্রশস্ততার বিচারে সাধারণত নদীর পর্য্যায়ে পড়েনা। বেশিরভাগ ঝোড়া, ছড়া, খাল কিংবা ঝর্ণা জাতীয়। তবে মানিকছড়ি, ধুরুং এবং সর্তা যথেষ্ট প্রশস্ত। পূর্বদিক হতে যেসব খাল হালদার সাথে মিলিত হয়েছে তার উৎপত্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে। পশ্চিম দিক হতে আসা খালগুলোর উতপত্তি স্থল সীতাকুণ্ড পাহাড়। দুই পাহাড়ের মাঝখানে হালদা নদী প্রবাহিত হয়েছে উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে উৎপন্ন খালগুলো হচ্ছে মানিকছড়ি, ধুরুং, তেলপারই, সর্তা, কাগতিয়া এবং ডোমখালী খাল। সীতাকুন্ড পাহাড়ী রেঞ্জ হতে উৎপন্ন হওয়া খালগুলোর মাঝে আছে গজারিয়া,ফটিকছড়ি,হারুয়ালছড়ি, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, বোয়ালিয়া এবং পোড়া কপালী খাল।
প্রতিবছর হালদা নদীতে একটি বিশেষ মূহুর্তে ও বিশেষ পরিবেশে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাতৃমাছ প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে "তিথি" বলা হয়ে থাকে। মা মাছেরা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত শুধু অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে অনুকূল পরিবেশে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার এই বিশেষ সময়কে স্থানীয়রা "জো" বলে। এই জো এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা হতে হবে, সেই সাথে প্রচণ্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে;- এই বৃষ্টিপাত শুধু স্থানীয় ভাবে হলে হবে না, তা নদীর উজানেও হতে হবে। ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়। এতে পানি অত্যন্ত ঘোলা ও খরস্রোতা হয়ে ফেনাকারে প্রবাহিত হয়। জো এর সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হল নদীর জোয়ার-ভাটার জন্য অপেক্ষা করা। পূর্ণ জোয়ারের শেষে অথবা পূর্ণ ভাটার শেষে পানি যখন স্থির হয় তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। মা মাছেরা ডিম ছাড়ার আগে পরীক্ষামূলক ভাবে অল্প ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেলে মা মাছ ডিম নিজের দেহের মধ্যে নষ্ট করে দেয়। ডিম সংগ্রহ করে জেলেরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন।

হালদা নদী এবং নদীর পানির কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে ভিন্নতর। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক। ভৌতিক কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর বাঁক, অনেকগুলো নিপাতিত পাহাড়ী ঝর্ণা বা ছড়া প্রতিটি পতিত ছড়ার উজানে এক বা একাধিক বিল, নদীর গভীরতা, কম তাপমাত্রা, তীব্র খরস্রোত এবং অতি ঘোলাত্ব। রাসায়নিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম কন্ডাক্টিভিটি, সহনশীল দ্রবীভুত অক্সিজেন ইত্যাদি। জৈবিক কারণগুলো হচ্ছে বর্ষার সময় প্রথম বর্ষণের পর বিল থাকার কারণে এবং দুকুলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীর পানিতে প্রচুর জৈব উপাদানের মিশ্রণের ফলে পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে যা প্রজনন পূর্ব গোনাডের পরিপক্কতায় সাহায্য করে। অনেকগুলো পাহাড়ী ঝর্ণা বিধৌত পানিতে প্রচুর ম্যাক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি উপাদান থাকার ফলে নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্যাণুর সৃষ্টি হয়, এই সব বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হালদা নদীতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছকে বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে আলাদা। হালদা নদীর বাঁকগুলোকে "অক্সবো" বাঁক বলে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পানির প্রচণ্ড ঘূর্ণন যার ফলে গভীর স্থানের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ভাবে গভীর স্থানগুলোকে "কুম" বা "কুয়া" বলা হয়। উজান হতে আসা বিভিন্ন পুষ্টি ও অন্যান্য পদার্থ কুমের মধ্যে এসে জমা হয়। ফলে পানি অতি ঘোলা হয়। মা মাছেরা কুমের মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং ডিম ছাড়ে।

নদী কথা- বংশী নদী।

 


বংশী নদী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৯ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক পুরনো বংশী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ৩৯।
বংশী নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী। এর দৈর্ঘ্য মোট ২৩৮ কিলোমিটার। নদীটি জামালপুর জেলার শরীফপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলা অতিক্রম করে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি সাভারের কর্ণপাড়া ও ব্যাংকটাউনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আমিনবাজারে এসে তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তুরাগ নদী আরো কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে মিশেছে বুড়িগঙ্গায়। বংশী নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার। এই নদী চারটি জেলা যথাক্রমে জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা এবং ১১টি উপজেলা যথাক্রমে জামালপুর সদর, মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতি, বাসাইল, মির্জাপুর, সখিপুর, কালিয়াকৈর, ধামরাই, সাভার ও মানিকগঞ্জ জিলার সিংগাইর উপজেলা এবং ৩২১টি মৌজার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এই নদীকে কেন্দ্র করে অনেক হাট-বাজার, গঞ্জ, স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় তৈরির ঢাকার ধামরাই এলাকা, টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চল ইত্যাদি। সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ এ নদীর তীরেই অবস্থিত। এখনো বর্ষা মৌসুমে ছোট ও মাঝারি নৌকায় মধুপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নৌপথে কলা, কাঁঠাল, আনারস ও নানা ধরনের তরকারি ভুয়াপুর, সরিষাবাড়ি, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এ নদী দিয়ে পরিবাহিত হয়ে থাকে। মধুপুর গড়াঞ্চলসহ মধ্যাঞ্চলের সভ্যতা ও জীববৈচিত্র্য টিকে রয়েছে বংশী নদীকে কেন্দ্র করেই।

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...