Thursday 24 December 2020

নদী কথা- ইছামতি নদী।

 


ইছামতি নদী বা ইচ্ছামতি বা ইছামতি-কালিন্দি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৩৭০ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক ইছামতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭।
নদীটি বর্তমানে সিলটেশন বা পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এর ফলশ্রুতিতে শীত মৌসুমে এটি কেবল সরু পথে প্রবাহিত এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট হচ্ছেন এবং সঙ্কট সমাধানে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইছামতি নদীটির এখন তিনটি অংশ রয়েছে - (১) দীর্ঘতর অংশটি পদ্মা নদীর একটি শাখানদী মাথাভাঙ্গা নদী থেকে প্রবাহিত হয় এবং ২০৮ কিমি প্রবাহিত হবার পর উত্তর ২৪ পরগণা জেলা‎র হাসনাবাদের কাছে এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কাছে কালিন্দী নদীর সাথে যুক্ত হয়। (২) একসময়ের পশ্চিম ঢাকার প্রধান নদী এবং (৩) দিনাজপুরের ইছামতি। ১৭৬৪-৬৬ সালের রেনেলের মানচিত্র অনুসারে শেষোক্ত নদী দুইটি একীভূত দেখা যায়। বেশকিছু জলানুসন্ধানবিদদের মতে, প্রাচীনকালে তিনটি ইছামতি নদীই অভিন্ন ছিল।
উপরোল্লিখিত দ্বিতীয় নদীটি যা হুরসাগরের অগ্রভাগের নাথপুর ফ্যাক্টরির বিপরীতে জাফরগঞ্জের দক্ষিণে উত্‌পত্তি লাভ করেছে এবং মুন্সীগঞ্জের মোহিনীঘাটের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। যোগিনীঘাট যমুনা ও ইছামতির নদীসঙ্গমে অবস্থিত। নদীটিতে পাঁচটি তীর্থযাত্রার ঘাট -তীর্থঘাট, আগলা, শোলপুর, বরুণীঘাট ও যোগিণীঘাট রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে পঞ্চতীর্থ ঘাট নামে পরিচিত।
মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মুন্সীগঞ্জে পদ্মার রাইটব্যাঙ্ক থেকে উত্পত্তি লাভ করেছে। এটি নদীয়া জেলার মাজদিয়ার কাছে দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুটি নদী ইছামতি ও চূর্ণী উৎ‌পন্ন করে। ভারতে ১৯.৫ কিলোমিটার তীর্যকভাবে অতিক্রম করে, ইছামতি মুবারকপুরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি বাংলাদেশে ৩৫.৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয় এবং আবারো ভারতে প্রবেশ করে নদীয়ার দুত্তাফুলিয়া দিয়ে। নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমারেখা তৈরি করে যা আংরাইল থেকে কালাঞ্চি এবং পুনরায় গোয়ালপাড়া থেকে কালিন্দী-রাইমঙ্গল আউটফল হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
ভৈরব এক সময় গঙ্গা থেকে প্রবাহিত হত, এটি তখন জলাঙ্গীর বর্তমান তীরের মধ্যদিয়ে আরো পূর্বদিকে ফরিদপুরের দিকে প্রবাহিত হত। ভৈরব এখন আর তেমন জীবন্ত নেই। মাথাভাঙা জলঙ্গীর একটি নতুন জলস্রোত এবং অতিসাম্প্রতিককালের আগ পর্যন্ত নদীটি হুগলীর সাথে যোগসূত্র ঘটায় চূর্ণী নদী গ্রহণের মাধ্যমে। আগেকালে মাথাভাঙার অধিকাংশ পানি পূর্বে কুমারা, চিত্রা, কবদুক (ভৈরব) ও ইছামতিতে প্রবাহিত হত। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আগে এই অঞ্চলের নদীগুলো দক্ষিণ-পূর্ব অভিমুখে প্রবাহিত হত, কিন্তু পরবর্তীকালে কোন শক্তি জলাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গাকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। এটি ঘটার কারণ হল একটি স্থানীয় সাবসিডেন্স যা ১৭৫০ এর আগে কিছু সময় ধরে সংঘটিত হয় এবং এটি তখন থেকে অকার্যকর অবস্থায় আছে।
যেহেতু ইছামতি নদীর গর্ভ মাথাভাঙ্গা থেকে ১৪ ফুট বেশি উঁচু, আবার চূর্ণী মাথাভাঙ্গা থেকে ছয় ইঞ্চি নিচু। শুষ্ক মৌসুমে মাথাভাঙ্গার পানির উচ্চতা পদ্মার থেকে বেশি থাকে এবং এর ফলে এ সময়ে ইছামতিতে কোন পানি প্রবেশ করে না। নদীতে পলি জমে যাবার একটি কারণ হল রেললাইনের জন্য তৈরি ওভারব্রীজের গার্ড ওয়াল নদীতে তৈরি করা। এলাকাটিতে নদীগর্ভের খনন কাজ জরুরি কেননা শুষ্ক মৌসুমেও পানির প্রবাহ রয়েছে। যেহেতু এই ভারত ও বাংলাদেশ উভযের জন্যই প্রয়োজন তাই এক্ষেত্রে উভয়ের একমত হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে এবং জরীপ করা স্থানগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সমস্যা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে নিকট ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
নদী সংশ্লিষ্ট এলাকাটি শিল্প বর্জ্য ও জনগণের নদীর জমি দখলের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পয়ঃপ্রণালীর অভাব, অবৈধ দখল, আর্সেনিকসহ অন্যন্য কারণে স্থলভাগের পানির দূষিতকরণ, জলচর উদ্ভিদ ও প্রাণী নিধনসহ অন্যান্য সমস্যার সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাধান প্রয়োজন।
ইছামতি নদী ও এর শাখাসমূহ উত্তর ২৪ পরগণার বণগাঁওয়ে ইংরেজি U বর্ণাকৃতির জলাধার তৈরি করেছে। কৃষি ও নৃতাত্ত্বিক চাপের পাশাপাশি আগাছার প্রাদুর্ভাব বিশেষত কচুরীপানার ব্যাপকতা একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ কেননা এটি লেকের পানি ঢেকে ফেলছে।
দূর্গাপূজার, বিজয়া দশমীতে ইছামতিতে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি অনন্য প্রদর্শনী। ইছামতি নদীটি যা দুই দেশের মাঝে নিরপেক্ষ সীমানা হিসেবে কাজ করে, তা উভয় দেশের নৌকা থেকে দেবদেবী বিসর্জনের সময় উচ্ছসিত প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। এসময় চোখের দূরতম সীমা পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির নৌকা দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রতিটি নৌকাগুলোতে সংশ্লিষ্ট দেশের পতাকা লাগানো থাকে। এটিই বছরের একমাত্র দিন যখন সীমান্ত টহল শীথিল করা হয় নদীর উভয় পাড়ের মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে নদীর অপর পাড়ে যেতে পারে। কিছুদিন আগে প্রতিমা বিসর্জনের পর মানুষজন এমনকি অপর পাড়েও নৌকা ভিড়াতে পারত। তবে বর্তমান কয়েক বছর ধরে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় এই অনুশীলনটির ব্যত্যয় ঘটছে।

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...