এই মাত্র তার বাবা মারা গেল।
মানুষটা মৃতদেহের চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মৃত্যু হলেও
চোখের কোন মৃত্যু নেই। তাকালেই দেখবে লাশটা তাকিয়ে আছে ! একদম চিরচেনা পরিচিত সেই
তাকানোর ভঙ্গিটা। সাইন্টিসদের বৃদ্ধ আঙুল দেখিয়ে চোখ দুটো কথা বলতে থাকে। কলিজা
শিনশিন করে ওঠে।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে। তিনি ফোন রিসিভ করলেন। তারপর উঠে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। কী এক জরুরী কাজ নাকি আছে!!
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে। তিনি ফোন রিসিভ করলেন। তারপর উঠে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। কী এক জরুরী কাজ নাকি আছে!!
বলছিলাম একজন ডাক্তারের কথা।
মানুষটা একজন আইসিউ তে থাকা রোগীর আত্মীয়ের ফোন পেয়ে ত্রিশ মিনিট আগে মরে যাওয়া
তার বাবার মরদেহকে পাশ কাটিয়ে হসপিটালে চলে গেলেন।
ডাঃ এড্রিক বেকারের কথা মনে
পড়ছে। নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী এই ডাক্তার তার জীবন কাটিয়ে দিলেন টাঙ্গাইলের মধুপুর
গ্রামে। পয়ত্রিশ বছর ধরে নীরবে একটা গ্রামে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবার কথা
তুমি , আমি স্কুলের রচনায় লিখতে পারব। কখনো করে দেখাতে পারব না।
এই মানুষ গুলো জানে না; বাংলাদেশের
অচেনা এক যুবক কতটা আবেগ এবং শ্রদ্ধা নিয়ে তাদের কথা লিখছে।
ডাক্তারদের নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যখন কসাই পর্যায়ে চলে গেছে তখন এরকম কিছু লোমহর্ষক ঘটনা আমাকে যথেষ্ট বিব্রত করে। আমি নিজেও এক সময় কিছু ডাক্তারদের অনিয়ম নিয়ে লিখেছি।
ডাক্তারদের নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যখন কসাই পর্যায়ে চলে গেছে তখন এরকম কিছু লোমহর্ষক ঘটনা আমাকে যথেষ্ট বিব্রত করে। আমি নিজেও এক সময় কিছু ডাক্তারদের অনিয়ম নিয়ে লিখেছি।
কিছু অনিয়ম সব সেক্টরেই আছে।
অবশ্যই এদের জিভ টেনে ছিড়ে ফেলতে হবে; তবে কিছু সংখ্যক ডাক্তারের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে তুমি যখন
সব ডাক্তারকে একই কাতারে নামিয়ে ফেলো তখন তোমার আর তাদের মাঝে কোন তফাৎ থাকে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ডাক্তারদের নিয়ে কিছু গ্রুপ আছে। আমি সেখানে প্রায় সময় তাদের লেখা গুলো পড়ি।
মানুষের প্রতি তাদের প্রতিনিয়ত ভালোবাসা, অভিমান এবং ত্যাগ দেখে বিব্রত, লজ্জিত এবং অপরাধ বোধ করি। কেননা আমি জানি এই মাত্র একজন রোগীকে বাঁচাতে না
পেরে যে ডাক্তার কেঁদে কেঁদে তার ইমোশনের কথা লিখছে সেই ডাক্তারটাকেও মানুষ '
কসাই' এর সাথে তুলনা করে।
ফারহানা জামান নামে এক
চিকিৎসকের স্ত্রী'কে দেখলাম অভিমান নিয়ে লিখেছে, মা যখন মৃত্যূ শয্যায়,
তিনি সেদিন হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ডিউটি করছেন। মায়ের মৃত্যূর ৫ ঘন্টা
পরে এসে পৌছেছেন। মায়ের মৃত্যূর কিছুদিন পরই নিজের সন্তানের শরীরে একটি
অস্ত্রপ্রচার করতে হয়েছিল। সেদিনও তার ইমার্জেন্সি ডিউটি শেষ করে তিনি যথাসময়ে
আসতে পারেননি।
তিনি আসলে তার জীবনে আদর্শ
চিকিৎসক হতে গিয়ে আদর্শ স্বামী হতে পারেননি, আদর্শ সন্তান হতে পারেননি, আদর্শ বাবাও হতে পারেননি।
অন্য একজন চিকিৎসকের একটা লেখা
আমার চোখ ভিজিয়ে দিল। হুবহু দিলাম।
'' আজ ইফতারি
নেয়ার জন্যে যখন প্রস্তুত তখনই আযানের ১/২ মিনিট আগে একটি ৮ বছরের মেয়ের ডেড বডি
আসে ইমার্জেন্সি তে। প্রথম হাত দিয়েই
বুঝতে পারি যে কিছু নাই। মেয়েটির বাবা বারান্দার এক কোনায় অচেতন হয়ে পরে আছে। বেশ
কিছুক্ষন চেষ্টা করার পর বডি নিয়ে যেতে বললাম। আমার হাতে মেয়েটির পাকস্থলী থেকে
বের হওয়া তরল লেগে রয়েছে। আমি বারান্দা দিয়ে আমার রুমের দিকে হেটে যাচ্ছি। মেয়েটির
বাবা আমার দিকে শবদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার রুম থেকে মরা কান্না শুনতে পাচ্ছি। এই
হাসপাতালে আসার পর এটই যে প্রথম ডেথ কেইস তা নয়। এই মাসে ৬/৭টি ডেথ কেইস হ্যান্ডেল
করেছি।
ইফতারি আর গলা দিয়ে নামে নি।
মাগরিব এর নামায এর পরপরই মা ফোন দিয়ে জানতে চাইলো ইফতারি করেছি কি না- বললাম হুম, করেছি।''
এরকম অসংখ্য উদাহারণ তুমি আশে
পাশে একটু খুঁজলেই খুঁজে পাবে। কিন্তু সাধারণত এই সব ঘটনা তোমার কান পর্যন্ত আসে
না; কেননা নেতিবাচক একটা ক্ষুদ্র কিছু দেখলেও আমাদের চোখ বড় বড় হয়ে যায় কিন্তু
ইতিবাচক বড় কিছু দেখার পরেও মনে হয়,... এ আর এমন কী!
প্রতিদিন শত শত ডাক্তার
অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাজার হাজার রোগীকে সুস্থ করছে এই ব্যাপারটি তোমার কাছে '..এ আর এমন কী' বেওয়ারিশ কোন রোগীকে
সারা রাত চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলছেন একজন চিকিৎসক, এই
ব্যাপারটি তোমার কাছে '..এ আর এমন কী' রোগী
মারা গেলে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা জাতীয় অভিযোগ এবং সুস্থ হলে কোনরকম আনুষ্ঠানিক
ধন্যবাদ দিয়ে কেটে পরি।
একজন ডাক্তারকে দেখলাম কোন এক
রোগীর নিকট আত্মীয় সামান্য চারটা আনারস দেবার পর তিনি খুশি হয়ে আনারসের চারটি ছবি
আপলোড করে ক্যাপশন দিয়েছেন- ' there is a story behind every picture'
পার্থক্যটা কোথায় জানো ? আমরা তাদের কসাই বলি। কসাই গুলো এই অভিযোগ মাথা পেতে নিয়েই আমাদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া।
পার্থক্যটা কোথায় জানো ? আমরা তাদের কসাই বলি। কসাই গুলো এই অভিযোগ মাথা পেতে নিয়েই আমাদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া।
No comments:
Post a Comment