মাদক
দ্রব্যের ইংরেজী প্রতিশব্দ ”Narcotics” এর উতপত্তি
গ্রীক ভাষা থেকে। সঙ্গাহীনতার
গ্রীক প্রতিশ থেকে উৎপন্ন
”Narcotics” বলতে
এক সময় বুঝানো হতো নিদ্রাকর্ষি
যে কোন ঔষধ। মাদক
দ্রব্য হলো এমন এক ভেষজ
দ্রব্য, যা প্রয়োগে দেহে মস্তিস্কজাত
সঙ্গাবহ সংবেদন হ্রাস পায় ও বেদনা
বোধ কমে যায়। মাদক দুই প্রকার- (১) প্রাকৃতিক মাদক দ্রব্য ও চেতনা
নাশক দ্রব্যাদি বা কৃত্তিম
রাশায়নিক দ্রব্যাদি। মাদক
দ্রব্যেও মধ্যে রয়েছে- মদ(এ্যালকোহল), তামাক ও মানুষের
চেতনা নাশক দ্রব্যাদি বা কৃত্তিম
রাশায়নিক দ্রব্যাদি। মাদকাশক্তি
শারিরীক (ধুমপান), মানষিক (ড্রাগ গ্রহণের আকাঙ্খা) বা উভয় প্রকার
হতে পারে। আফিম হলো ”Papaure Somniferum” নামক উদ্ভিদের পূর্ণতাপ্রাপ্ত অপক্ক
গুটি থেকে আরোহিত আঠালো
নির্যাস। আফিমজাত দ্রব্যের
মধ্যে রয়েছে মরফিন, কোডিন,সিবেন ও এসব থেকে
প্রাপ্ত রাসায়নিক যৌগ (হেরোইন)। ক্যানাবিস থেকে উৎপন্ন
মাদকের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ভাং, চরস ইত্যাদি, রাসায়নিক
যৌগ ও ধুতরা গোত্রিয়
প্রজাতি। কৃত্তিম
রাসায়নিক মাদকের মধ্যে রয়েছে
আমফিটামাইন ধরণের উদ্দীপক। কৃত্তিম
মাদকের মধ্যে রয়েছে পেথিডিন, বারবিচুরেটস,
আমফিটামাইন ইত্যাদি। সচরাচর
ব্যবহৃত অধিকাংশ মাদক দ্রব্যই আফিমজাত
। প্রাকৃতিক মাদকের মধ্যে রয়েছে
তামাক, সিদ্ধি, ওপিয়াম(আফিম), কোকেন ও ক্যানাবিস (গাঁজা)। প্রাচীন
সভ্য যুগে আফিমের চাষ হতো পারস্য, মিশর
ও মেসোপোটেমিয়ায়। তামাক উষ্মমন্ডলিয়
আমেরিকার বড় পাতা বিশিষ্ট
উদ্ভিদ। তামাকের নাম ”Narcotics” রাখা
হয় ফ্রান্সে তামাকের প্রচলক
জ্যা নিকোট এর নামানুষারে। আরব বণিকেরা সিন্ধু জয়ের
পর দক্ষিণ এশিয়ায় আফিমের
প্রবর্তণ করে। চুরুট
তৈরীতে বেশী উপযোগী জাতী
তামাক। তামাকের
পাতায় থাকে নিকোটিন নামক
বিষাক্ত উপাদান। আফিম
”Opium” তৈরী হয় ”Papavera ceae” গোত্রের ”Opium poppy, Papaure
Somniferum” নামক উদ্ভিদের রস থেকে। ”Opium” শব্দের উৎপত্তি গ্রীক
শব্দ ”Opos” (অর্থ-রস) থেকে। ১৫০৮
সালে ভারতে আফিম নিয়ে
আসে পর্তুগীজরা। সাধারণ
তামাকের তুলনায় অধীক নিকোটিন
সমৃদ্ধ (৪%-১০%) তামাক
নিকোটিন তামাক। বঙ্গদেশে
প্রথম আফিম চাষের উল্লেখ
লক্ষ্য করা যায় ১৫১৬
সালে পর্তুগীজ পর্যটক পাইরেসের
লেখায়। ইষ্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানীর অবৈধ আফিম
ব্যবসার কারণে উনবিংশ শতকের
মাঝামাঝি শুরু হয় চীন-বৃটেন
আফিম যুদ্ধ। ”Solanaceal” গোত্রযুক্ত
তামাকের ”Tobaco” বৈজ্ঞানিক নাম ”Nicotiana tabacum” । তামাকের শুকনো
পাতা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সিগারেট, বিড়ি, গুল ও পানের
জর্দ্দা হিসাবে। ক্যানাবিসের
(গাঁজা) মূল উপাদান হলো এর মধ্যেকার
ক্যানবিনোন নামক এক প্রকার
পদার্থ। ক্যানাবিসের
বিভিন্ন নাম রয়েছে- গাঁজা (ভারতীয়), মারিজুয়ানা (ইউরোপ), মারিহুয়ানা (আমেরিকা) ও হাশিশ (মধ্যপ্রাচ্য
ও আফ্রিকায়)। ক্যানাবিস কার্যকর চেতনা
নাশক, ব্যাথা নাশক, উত্তেজক ও ঘুমের
ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ইহা মারাত্তক মাদকাশক্তি দৃষ্টিভ্রম
স্মৃষ্টি করে। সরকারী
নিয়ন্ত্রনে গাঁজার চাষ হয় মধ্য
ও পশ্চিম এশিয়াসহ ভারত, পূর্ব দক্ষিণ
আফ্রিকার উষ্মাঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশেও অবৈধভাবে কিছু কিছু
গাঁজা চাষ করা হয় নওগা, জামালপুর
ও শেরপুর জেলায়। তবে বৈধভাবে
তামাকের চাষ করা হয় রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর
ও চট্টগ্রামে। উন্নতমানের তামাকের
নাম মতিহারি ও জাতী
তামাক। ইষ্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানী কতৃক তৎকালীন নদীয়া
ও রাজশাহী অঞ্চলে (বর্তমানে যশোর
ও কুষ্টিয়া) আফিম চাষ হতো। বাংলাদেশে
গাঁজা উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয় জাতীসংঘ
কনভেনশরেন স্বাক্ষর করার পর। গাঁজা ”Hemp” তৈরী হয় ”Cannabinaceae” গোত্রের ”Cannabis Sativa” প্রজাতীর উদ্ভিদ
থেকে। বিশ্বে নেশা
হিসাবে গাঁজা ধুমপানের সাথে
ব্যপকভাবে ব্যাবহার করা হয়।গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নামে
খ্যাত অঞ্চল গঠিত লাওস, মিয়ানমার
ও থাইল্যান্ড নিয়ে। এই এলাকাতে
গাঁজার ব্যাবহার সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশে বেশী ব্যাবহৃত মাদক
দ্রব্য হলো হেরোইন,গাঁজা, পেথিড্রিন এবং চেতনা
নাশক কিছু দ্রব্য (মেনডোক্স, ভেলিয়াম ইত্যাদি)। বাংলাদেশে মাদক প্রতিরোধে
নিবেদিত সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন
অধিদপ্তর, পুলিশ, কাষ্টমস, বর্ডার গার্ড এবং কোষ্ট
গার্ড। বাংলাদেশ সরকার
জাতীয় মাদকদ্রব্য প্রয়োগনীতি ব্যখ্যা
করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৯০
এ। এই আইন অনুষারে গঠিত হয় জাতীয়
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন বোর্ড ”NNCB” । উক্ত আইনে
মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ
পাচারের সর্বোচ্চ শাˉি— মৃত্যুদণ্ড। গাঁজা
ও কোন ভেষজ ক্যানাবিসের পরিমান
৫ কেজি বা তার বেশী
হলে অনুন্য ৩ বছর ও অনুর্ধ
১৫ বছর কারাদণ্ড। অপিয়াম বা অপিয়াম
উদ্ভুত মাদকের পরিমান ২ কেজির
কম হলে অনুন্য ২ বছর ও অনুর্ধ
১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২ কেজির
বেশী হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জিবন কারাদণ্ড । পেথিডিন বা মরফিন
জাতীয় মাদকের পরিমান ১০ গ্রামের
কম হলে অনুন্য ২ বছর ও অনুর্ধ
১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ গ্রামের
বেশী হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জিবন কারাদণ্ড। দেশী মদ, বিয়ার ইত্যাদিও
পরিমান ১০ লিটারের কম হলে অনুন্য
০৬ মাস ও অনুর্ধ
০৩ বছর কারাদণ্ড এবং বেশী
হলে অনুন্য ০৩ বছর ও অনুর্ধ
১৫ বছর কারাদণ্ড। বিশ্বে
প্রতিবছর ধুমপান বর্জন দিবস
পালিত হয় ৩১ মে (১৯৮৭
সাল হতে) এবং মাদক
বিরোধি দিবস পালিত হয় ২৬ জুন। বিশ্বে প্রতিবছর তামাক গ্রহণে
মারা যায় প্রায় ০৭ মিলিয়ন
লোক। বর্তমানে বিশ্বে ধুমপায়ীর সংখ্যা প্রায়
২ বিলিয়ন মানুষ। বর্তমানে
তামাক গ্রহণগত কারণে মৃত্যু
সবচেয়ে বেশী। তামাক গ্রহণগত কারণে
মৃত্যু হার বর্তমান হারে
চলতে থাকলে ২০২০ সাল থেকে
প্রতিবছর মারা যাবে প্রায়
১০ মিলিয়ন লোক। বিশ্বে
তামাক গ্রহণের হার আফ্রিকার
দেশ সমূহে সবচেয়ে বেশী। বিশ্বে মোট ধুমপায়ীর অর্ধেকই
মারা যায় তামাক গ্রহণের
কারণে। বিশ্বে
মানুষ মৃত্যুর কারণের দিক থেকে
তামাকের স্থান দ্বিতীয়। পৃথিবীতে তামাক গ্রহণ বৃদ্ধির
হার বছরে ৪.৩% এবং এর প্রধান
শিকার তরুণ ও যুব সমাজ। আসুন আজকের এই দিন থেকে
সকলেই মাদক কে না বলি।
No comments:
Post a Comment