Sunday 30 April 2017

999

১. রাস্তায় একা একা হাটছেন, সন্দেহভাজন কিছু লোক আপনার পিছু নিয়েছে। এক্ষুনি পুলিশের সহযোগিতা পেলে ভালো হত।
কিন্তু আপনার কাছে নিকটস্থ থানার কারো নম্বর নেই। পুলিশের অ্যান্ডয়েট অ্যাপস থেকে যে নম্বরটা বের করবেন তার উপায় নেই কারণ আপনার কাছে সাধারণ ফোন!
ডায়াল করুন 999 এ
শুধু আপনার অবস্থান বলে সহযোগিতা চান, বাকি কাজটা তারাই করবে।
দেখতে দেখতে পুলিশ এসে হাজির হয়ে যাবে।
২. মধ্যরাত। পরিবারের একজন হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জরুরী অ্যাম্বুলেন্স লাগবে। পরিচিত কেউ ফোন ধরছে না। খুব বিপদ!
নিশ্চিন্তে ডায়াল করুন 999 এ
অ্যাম্বুলেন্স বাসার গেট এ হাজির হয়ে যাবে।
৩. পাশের বাসায় আগুন লেগেছে? ফায়ার সার্ভিস এর ফোন নম্বর নাই? দ্রুত আগুন নেভানো দরকার। কি করবেন বুঝতে পারছেন না? নম্বর একটা জুটলো কিন্তু মোবাইলে ব্যালান্স শেষ!
ডায়াল করুন টোল ফ্রি 999 এ
পৌছেঁ যাবে ফায়ার সার্ভিস এর দল।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না? ইউরোপ আমেরিকার গল্প মনে হচ্ছে?
না ইউরোপ আমেরিকার গল্প নয়।
আমাদের বাংলাদেশের গল্প।
নতুন এক বাংলাদেশ।
আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি নতুন এক বাংলাদেশে।
যেখানে আপনার জরুরী প্রয়োজনে দিন রাত কান পেতে রয়েছে ন্যাশনাল হেল্প ডেস্কের সেচ্ছাসেবকরা।
শুধু আপনার বিপদে পাশে দাঁড়াতে, যে কোন সময়।
আসুন যাত্রা শুরু নতুন বাংলাদেশ এর পথে।
প্রবেশ করি ট্রিপল নাইন এর বাংলাদেশে।
বিপদে ডায়াল করুন 999
সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
#FAQ
# কিভাবে ব্যবহার করবেন?
জরুরী সেবা নিতে যেমন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি যে কোন #মোবাইল থেকে ৯৯৯ ডায়াল করুন।
# এইটাতে ফোন করলে কি ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটবে?
না। এই নম্বরটি টোল ফ্রি। বিনামূল্যে এই সেবা পাবেন।
# ল্যান্ডফোন থেকে করা যাবে?
না। শুধুমাত্র মোবাইল থেকে।
# রাতে কল করা যাবে?
দিন রাত যে কোন সময় কল করা যাবে।
# অ্যাম্বুলেন্স এর কি টাকা দিতে হবে?
হ্যা। দেশের কোন সংস্থা বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়না।
তাই এখানে কল করলে যে অ্যাম্বুলেন্স আসবে তাকে তার নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
# এটা কি সারা দেশের জন্য?
হ্যা।
# কেউ ভুল তথ্য দিলে?
সব কিছুর রেকর্ড থাকবে। যে ফোন থেকে কল আসবে সেটির বিরুদ্ধ প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# তথ্য দেয়া যাবে কিনা?
যেকোন প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া যাবে। রাস্তার পাশে জুয়ার আসর বসেছে? বস্তিতে আগুন লেগেছে? রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে? এমন অনেক জনহিতকর ঘটনার যেকোন তথ্য জানাতে পারবেন।
# সাবধানতা
১.ভুলেও অপ্রয়োজনে কল দিবেন না। আপনার যাবতীয় তথ্য থাকবে ডাটাবেজে। একবার "প্রাংক কলার" হিসেবে এনলিস্টেড হলে আসল বিপদে আর সাহায্য পাবেন না!!
২. তুচ্ছ তথ্যের জন্য ফোন দিয়ে লাইনে ব্যস্ত না রাখাই ভালো। কে জানে আপনার চেয়ে বিপদাপন্ন একজন হয়ত ওয়েটিং এ আছেন।
৩. শিশুরা যাতে ভুলে কল না করতে পারে এই জন্য ফোন লক করে রাখুন।
৪. কল সেন্টারের কর্মী কে প্রয়োজনীয় তথ্য চাহিদা মাফিক প্রদান করুন। আপনার সকল তথ্য খুবই " কনফিডেনসিয়াল" হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। মনে রাখবেন, সে আপনাকে সাহায্য করার জন্যই কাজ করছে।

1st টাইম এই ধরনের পোসট দিলাম।কেউ hurt হলে আন্তরিক ভাবে দু:খিত।😊😊


বিয়ে হইসে?
বাচ্চা নাও
পড়তেসো?
শেষ হইতে হইতে বাচ্চা নিয়ে নাও
পড়াশোনা শেষ?
চাকরী তে ঢোকার আগে বাচ্চা নাও
চাকরী করতেসো?
সাবাস শুরুতেই বাচ্চা নিয়ে নাও, প্রমোশনের আগে ঝামেলা মিটে গেল
প্রোমোশন পাইস?
যাক বাবা, এইবার বাচ্চা নাও।
হাসবেন্ড ভালো না?
বাচ্চা নাও, লাইনে চলে আসবে
হাজবেন্ড ভালো?
আলহামদুলিল্লাহ, পালতে সুবিধা হবে বাচ্চা নাও
হাজবেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়?
বাচ্চা নাও, সব ঠিক হয়ে যাবে
শাশুড়ির সাথে বনেনা?
বাচ্চা নাও, নাতির ওপর মায়া পড়ে যাবে
শাশুড়ি ভালো?
তাড়াতাড়ি বাচ্চা নাও, হেল্প করবেন
শাশুড়ি'র বয়স কম?
এখনই বাচ্চা নাও, শক্তি সামর্থ্য থাকতে থাকতে
শাশুড়ির বয়স বেশী?
আহারে এই বয়সে নাতীর মুখ দেখবে, বাচ্চা নাও
মোটা তুমি?
বাচ্চা নাও, পরে হবেনা
চিকন তুমি?
তাড়াতাড়ি বাচ্চা নাও পরে মোটা হয়ে গেলে সমস্যা
মন ঊড়ু ঊড়ু, সংসার ভাল্লাগেনা?
বাচ্চা নাও,স্থির হয়ে যাবা
গোছগাছ প্রিয়?
যাক বাবা, বাচ্চা নাও তোমার জন্য সুবিধা
বাচ্চা ভালো লাগে?
এখনো বসে আছো, বাচ্চা নাও
বাচ্চা ভালো লাগেনা?
নিজের বাচ্চা নাও, দেখবা
ভাইয়ের বাচ্চা এত আদর কর?
নিজে বাচ্চা নাও, দেখবা নিজেরটা কি
দাওয়াতে আসছো, বাচ্চা নাও
বেড়াতে গেছ, বাচ্চা নাও
অফিসে গেছ, বাচ্চা নাও
আড্ডা মারছ, বাচ্চা নাও
ভাত খাচ্ছ, বাচ্চা নাও
ঘুমাইতেসো, বাচ্চা নাও
একটা বাচ্চা আছে? আরেকটা নাও
ছেলে আছে? মেয়ে নাও
মেয়ে আছে? ছেলে নাও
বাচ্চা নিতে চাও না? নিয়ে নাও :)
একটি বাচ্চা হইতে পারে সর্বরোগের মহৌষধ, সকল মুশকিলে আসান। দলে দলে বাচ্চা নিন, সকল বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পান :P :P :P

Tuesday 25 April 2017

মাসে ১০ পাউন্ড কমানোর কথাই বলছি

হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। মাসে ১০ পাউন্ড কমানোর কথাই বলছি, তাও আবার পেট পুরে ভালো খাবার খেয়ে। কী করবেন? কিছুই না। বিনা ব্যায়ামে মাসে ১০ পাউন্ড কিংবা এর বেশী ওজন কমাতে চাইলে কেবল দিনে দুই বেলা খেতে হবে এই খাবারটি। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই এতে যোগ করতে পারবেন হরেক স্বাদের বাহার। শুধু তাই নয়, একে “রান্না” করার কোন প্রয়োজনই নেই। কয়েকটি উপাদান মেশাবেন আর তৈরি হয়ে যাবে আপনার ওজন কমানোর সিক্রেট ফর্মুলা। চলুন, জেনে নিই বিস্তারিত।

কী করবেন?

তেমন কিছুই নয়, কেবল দিনে দুই বেলা আপনার সাধারণ আহার বাদ দিয়ে খাবেন এই খাবারটি। যেটুকু পরিমাণে দেয়া হবে, ঠিক সেটুকুই। ডিনারে অবশ্যই খাবেন এটি, সাথে ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ যে কোন একবেলায় খাবেন যখন আপনার সুবিধা হয়। এবং অন্য যে বেলায় সাধারণ খাবার খাবেন, তখন কোন কার্বোহাইড্রেট, মিষ্টি বা ভাজা খাবার খাবেন না।
গ্রিল করে চিকেন বা মাছ, সাথে কাঁচা বা অল্প তেলের সবজি, ডাল ইত্যাদি রাখবেন খাবারের তালিকায়। খুব বেশী হলে একটি রুটি চলতে পারে। আর কাঁচা ফলমূল ও সালাদ খেতে পারেন ইচ্ছা মত। যে কদিন ডায়েট করবেন, কোন রকম কোমল পানীয় পান করবেন না এবং চিনির বদলে ডায়াবেটিক সুগার ব্যবহার করবেন।

কীভাবে কমাবে ওজন?

এই খাবারটি ওটস, টক দই এবং দুধের তৈরি একটি সুস্বাদু খাবার যার এক বাটিতে আছে মাত্র ৬০০ ক্যালোরি। কিন্তু খাবারটি দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরা রাখে, উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকে বিধায় শরীরের মেটাবোলিজম উন্নত করে ও ওজন কমাতে সহায়তা করে। ১ পাউন্ড কমানোর জন্য মোটামুটি ৩৫০০ ক্যালোরি ঝরাতে হয়। আপনি যদি দিনে দুইবেলা এই খাবারটি খান, তাহলে আপনি দুই বেলায় মোট গ্রহণ পড়বে মাত্র ৬০০ ক্যালোরি।
আর অন্য বেলায় যদি কার্বোহাইড্রেট, মিষ্টি ও ভাজা খাবার বাদ দিয়ে আহার করেন, তবে পেট পুরে খেলেও ৪০০/৫০০ ক্যালোরির বেশী গ্রহণ করা হবে না। সব মিলিয়ে আপনার পেট ভরা রেখেও দৈনিক ক্যালোরি গ্রহনের পরিমাণ কমে আসবে মোট ১০০০ ক্যালোরিতে। একজন মানুষের দৈহিক ক্যালোরির চাহিদা তার ওজন ও কাজের ভিত্তিতে মোটামুটি ১৫০০ থেকে ২৫০০ ক্যালোরি।
দিনে ১০০০ ক্যালোরির মাঝে খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারতে পারলে ব্যায়াম করা ছাড়াই মোটামুটি ৩ দিনে ৩৫০০ ক্যালোরি বাড়তি খরচ হবে, অর্থাৎ ১ পাউন্ড করে ঝরবে আপনার ওজন। এভাবে মাসে কমপক্ষে ১০ পাউন্ড এবং এর বেশিও ওজন কম করতে পারবেন। ভালো ফল পেতে দৈনিক ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ব্যায়ামের অভ্যাসও করতে পারেন। এতে ওজন কমবে দ্রুত।
জেনে নিন সেই দারুণ রেসিপিটি!

উপকরণ-

রোলড ওটস ১/২ কাপ,
১/৩ কাপ স্কিম মিল্ক বা নন ফ্যাট দুধ,
১/৩ কাপ লো ফ্যাট টক দই,
ডায়াবেটিক চিনি স্বাদ অনুযায়ী,
আপনার পছন্দের যে কোন একটি বা দুটি ফল
১/২ কাপ (আপনি চাইলে মিষ্টি বাদ দিয়ে ঝাল-মশলা যোগ করে খেতে পারেন।
সাথে দিতে পারেন কোন সবজি।
তবে অবশ্যই কোন তেল বা সস যোগ করবেন না)

প্রণালি-

ফল বাদে সমস্ত উপকরণ একত্রে মিশিয়ে রাখুন রাতের বেলাতেই। ঢাকনা দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। সকাল বেলায় উঠে দেখবেন তৈরি হয়ে গিয়েছে দারুণ সুস্বাদু খাবার। এটাকেই সারাদিন খেতে পারবেন আপনি। খেতে পারেন ঠাণ্ডা, চাইলে গরমও করে নিতে পারেন। পাতলা খেতে চাইলে পানি যোগ করবেন। তবে যেটুকু পরিমাণ দেয়া হয়েছে এর বেশী কিছু যোগ করবেন না।

২০১৪ সালের জুনের প্রথম দিকে মুন্সিগঞ্জে কী একটা মূর্তি পাওয়ার খবর বের হয়েছিল

২০১৪ সালের জুনের প্রথম দিকে মুন্সিগঞ্জে কী একটা মূর্তি পাওয়ার খবর বের হয়েছিল। সেই খবরের সূত্র ধরে মুন্সিগঞ্জে আগে-পরে আরো অনেক মূর্তি পাওয়ার কথা জানতে পারি। তখনই চোখে পড়ে এই মূর্তিটির ছবি। এটা নিয়ে একটা ছোটো পোষ্টও  দিয়েছিলাম--
মুন্সিগঞ্জে প্রাপ্ত একাদশ শতকের পাথরের মূর্তি--ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরী দেবীর পায়ের তলায় অবদলিত হয়েছেন গণপতি গণেশ। কিন্তু গণদেবতা এভাবে পায়ের তলায় কেনো?


পরে এই নিয়ে একটু বিশদ আকারে লেখার কথা ভাবছিলাম। ততদিনে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘লোকায়ত দর্শন’ পড়া হয়েছে। দেখলাম ‘লোকায়ত দর্শন’-এর বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ‘গণপতি—বস্তুবাদের উৎস-সন্ধানে’ নামে পুরো একটি অধ্যায় যেখানে এই গণেশের কাহিনী লেখা হয়েছে। ওটা পড়ে আর এই নিয়ে নতুন করে লেখার প্রয়োজন অনুভব করি নি।
তারপর অনলাইনে ‘বাম’-দের নিয়ে অনেক কাহিনী হয়েছে--নেতাদের ডিগবাজি খাওয়া, আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হওয়া--এরকম। এমনকি বাম শব্দটাকে ব্যঙ্গ করে ‘ভাম’ শব্দটা বেশ চালু হয়ে গেছে। এসব দেখে মনে হলো--দেখা যাক--গণপতির কাহিনীর সাথে এই বামদের ভাম হয়ে যাওয়ার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা। সেটা অনেকবার ভেবেছি, কিন্তু লিখি লিখি করেও লেখা হয় নি আরেকটা কারণে--তথ্যগুলো ‘ডবলচেক’ করার অবকাশ বা সুযোগ হয় নি। এত সব পুরানো বইপত্র/ধর্মগ্রন্থে গণেশের কাহিনী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যে সব জোগাড় করে যাচাই করা আসলেই কঠিন। আশা করি এসব বিবেচনা করে এই দিক দিয়ে একটু ছাড় দেবেন।
গণপতি শব্দের অর্থ দিয়ে শুরু করা যাক। আমরা এই কিছুদিন আগে শাহবাগে ‘গণজাগরণ’ দেখেছি। তাতে এই ‘গণ’ শব্দের অর্থ আর নতুন করে ভেঙে বলার দরকার দেখছি না। দেবীপ্রসাদ অনেক তথ্যপ্রমাণ হাজির করে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে ‘গণ’ শব্দের অর্থ--সাধারণ জনগণ। সেই অর্থে গণপতি হলো--জনগণের পতি, বা সমাজের মোড়ল, বা বর্তমানে সহজ অর্থ--নেতা; পৌরাণিক ভাষায়--জনসংঘের দেবতা।
গণপতি অর্থাৎ গণেশ অনেককাল ধরে হিন্দুদের পূজাপার্বণে সবার আগে পূজা পায়। অর্থাৎ আগে গণেশের পূজা করে তারপর আর সব পূজা বা শুভকাজে হাত দিতে হয়। অনেক হিন্দুদের ঘরের বাহির হওয়ার দরজার উপরে গণেশের ছবি বা মূর্তি থাকে--একে প্রণাম বা স্মরণ করে হিন্দুরা ঘর থেকে বের হয় এই বিশ্বাসে যে গণেশ সমস্ত বাধাবিঘ্ন দূর করে দেবে। এজন্য গণেশের অন্য নাম সর্ববিঘ্নহর ও সর্বসিদ্ধিদাতা। এখান থেকেই প্রশ্নের উদয় যে, এমন একজন দেবতা কেন পর্ণশবরী দেবীর পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাবে?
[উপরে দেয়া ছবিটি সম্পর্কে বাংলাপিডিয়া পর্ণশবরী দেবীর কথাই উল্লেখ করেছে--‘মূর্তিতত্ত্ব’ নামক রচনাটিতে ৪০ নং চিত্রে উপরের ছবিটি সম্পর্কে বলা আছে--“পর্ণশবরী নামে অনিন্দ্যসুন্দর বৌদ্ধ প্রতিমা শুধু পূর্ববঙ্গ থেকেই পাওয়া গেছে। পর্ণশবরী উপজাতীয় নারী, যিনি পরিধেয় হিসেবে বৃক্ষপত্রাদি পরিধান করেন। স্ফীত উদর বিশিষ্ট এ দেবী প্রত্যয়ালীঢ় ভঙ্গিতে রুগ্নতার প্রতীক দুজন পুরুষকে পদদলিত করছে। এ দেবী তিন মাথা ও আট বাহু বিশিষ্ট। মূতির্র ছয় হাতে ঘড়ির কাটা অনুযায়ী রয়েছে যথাক্রমে অঙ্কুশ, তীর, বজ্র, পর্ণগুচ্ছ, ধনুক ও তর্জনী মুদ্রা। তিনি দুজন পার্শতদেবীসহ উপস্থাপিত। এদের মধ্যে একজন গাধার উপরে উপবিষ্ট। এছাড়া বেদির নিচে গণেশ মূর্তি দেখা যাচ্ছে, যার এক হাতে তরবারি ও অন্য হাতে ঢাল। ভাস্কর্যটি বিঘ্ন বা বাঁধাকে প্রকাশ করছে। উপরে মাঝে অমোঘসিদ্ধিসহ পঞ্চবোধিসত্ত্ব দৃশ্যমান। বজ্রযোগিনী ও নয়নন্দাতে আবিষ্কৃত ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত ভাস্কর্য দুটি আনুমানিক এগারো শতকের।”]
দেবীপ্রসাদ বলেছেন--“অনেক মূর্তিতেই দেখতে পাওয়া যায় গণেশ কোনো-না-কোনো আভিজাতিক দেবদেবীর পায়ের তলায় অবদলিত হয়েছেন।”--অর্থাৎ এরকম মূর্তি আরো আছে। আর এটা যে বর্তমান গণপতিই পূর্বাবস্থা, সেটাও তিনি তুলে ধরেছেন--“বাংলা দেশেই পাথরের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে যেখানে দেখা যায় গণেশ অবদলিত হয়েছেন ভ্রুকুটিতারা বা পর্ণশবরীর পায়ের তলায়। তবু তাঁর হাতে ঢাল-তলোয়ার দেখে অনায়াসেই অনুমান করা যায় বিনা যুদ্ধে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। বিশেষ করে লক্ষ্য করা দরকার, এই মূর্তিতে গণেশের গজানন নেই—মুখটা কদাকার, কিন্তু মানুষেরই মুখ। তিব্বতে পাওয়া ব্রোঞ্জ-এর মূর্তিতে দেখি দেবতা মহাকাল গণেশকে পায়ের তলায় দলছে। মঞ্জুশ্রীর পায়ের তলায় অবদলিত অবস্থায় গণেশের মূর্তিও একান্ত দুর্লভ নয়। তার চেয়েও চিত্তাকর্ষক হলো আর এক রকম মূর্তি যেখানে গণেশকে দেখানো হয়েছে বিঘ্নহন্তা বলে এক দেবতার পায়ের তলায়। নামেই প্রমাণ, বিঘ্নকে জয় করবার কল্পনা থেকেই বিঘ্নহন্তার জন্ম—এই মূর্তিতে বিজিত গণেশ তাই সাক্ষাৎ বিঘ্নই। নেপালের উপকথায় এই বিঘ্নহন্তার যে বৃত্তান্ত পাওয়া যায় তা থেকেও প্রমাণিত হয় বিঘ্ন বলতে এখানে গণেশই।”
ওটা যে গণপতি-ই, সে নিয়ে আর সন্দেহ নেই। কিন্তু ওসব দেবতাদের ‘বিঘ্নহন্তা’ নাম দেখে প্রশ্ন জাগে তারা কেন এই গণপতিকেই ‘বিঘ্ন’ মনে করে ‘হন্তা’ করতে উদ্যত হলেন? গণেশের নাম অন্য নাম সর্ববিঘ্নহর ও সর্বসিদ্ধিদাতা হলেও অতুলচন্দ্র গুপ্ত সরাসরি বলছেন, “আদিতে গণেশ ছিলেন কর্মসিদ্ধির দেবতা নয়, কর্মবিঘ্নের দেবতা”। গণপতি আগে কিভাবে কাদের কর্মে বিঘ্ন দিতেন, সেসব দেবীপ্রসাদ সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এই গণপতি একক কেউ নয়, গণেশ বহু, তার নামও বহু--গণপতি কোনো নামবাচক শব্দ নয়, ওটা বিশেষণ, যেমন ইন্দ্র কোনো দেবতার নাম নয়, বরং একটা পদের নাম--পদবী--স্বর্গের রাজা।
দেবীপ্রসাদ এই গণপতির সূত্র ধরে বস্তুবাদের উৎস-সন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে গণপতির শুরুতে বসে আছেন দেবতাদের গুরু বৃহস্পতি। এই লেখায় আমরা অতদূর যাব না--গণপতি কী করে বিঘ্নরাজ থেকে বিঘ্নহর হলেন--এটুকু দেখলেই সাম্প্রতিক ‘বাম থেকে ভাম’ হওয়ার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব।
বৈদিক যুগ থেকে সংক্ষেপে--আর্যরা যখন ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল, তখন তারা যে অনেক যুদ্ধ করেছিল, লুটপাত করেছিল, অনেক বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, তার প্রমাণ ঋগ্বেদেই আছে। তো এই বাধাটা দিত কারা? স্থানীয়রা--যাদেরকে আমরা অনার্য বলি--নানা আদিবাসী কৌম সমাজ। এই সাধারণ মানুষগুলোই ‘গণ’--এদের গোত্র নেতাই ‘গণপতি’। আর্যরা অনায়াসে তখন ওসব বিঘ্ন পার হয়ে এসেছে। তবে সবচেয়ে বড় বিঘ্ন এসে হাজির হলো কখন?
যারা রাহুল সাংকৃত্যায়নের ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ পড়েছেন, তারা জানেন গল্পের মাধ্যমে রাহুল সহজ-সরল ভাবে দেখিয়েছেন যে, একটা পর্যায়ে এসে মানুষের আর ইন্দ্র-বরুণ দেবদেবতাদের প্রতি বিশ্বাস থাকছিল না, তারা ওসব দেবদেবতাদের প্রমাণ চাইত। আর তখন শাসকশ্রেণী ব্রাহ্মণদের শরণাপন্ন হলো জনগণের ওই বিদ্রোহ/অবিশ্বাসী মনোভাব দূর করে দেয়ার জন্য। কারণ মানুষ যখন অবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, সব কিছুতে তথ্য-প্রমাণ খোঁজে তখন তাদেরকে শাসন-শোষণ করা শাসকদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তখন ব্রাহ্মণেরা এমন এক দেবতার আইডিয়া প্রচার শুরু করল যাকে দেখা যায় না, ধরা যায় না--শুধু বিশ্বাসী মন নিয়ে অনুভব করা যায়। এই দেবতাই হলো--নিরাকার ব্রহ্ম।
নিরাকার দেবতা বা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের এই ধারণা দেন ব্রাহ্মণ্যযুগের যাজ্ঞবল্ক্য। সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’ প্রবন্ধমূলক গ্রন্থে তথ্যপ্রমাণসহ ওই কাহিনী তুলে ধরেছেন। যাজ্ঞবল্ক্য যখন নিরাকার ব্রহ্মের ধারণা উপস্থাপন করেন, তখন কেউই এটা মেনে নেয় নি। এ নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক হয়েছিল, অনেকেই যাজ্ঞবল্ক্যকে এই ব্রহ্ম আইডিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। যাজ্ঞবল্ক্য মোটামুটি সবাইকে পিছলামি টাইপের উত্তর দিয়ে পার পেয়ে গেলেও গার্গীর প্রশ্নে ধরা খান।
ছান্দ্যোগ্যোনিষদ থেকে সুকুমারীর তুলে ধরা সেই কথোপকথনের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি-- “...গার্গী প্রশ্ন করলেন... : --এ সমস্তই যখন জলে ওতপ্ৰোত, তখন জলের আধার কী? --বায়ু। --তার? —অন্তরিক্ষলোকসমূহ। --তাদের? --গন্ধৰ্ব্বলোক, সেটি আদিত্যলোকে, সেটি চন্দ্রলোকে, সেটি নক্ষত্রলোকে, সেটি দেবালোকে, সেটি ইন্দ্রলোকে, সেটি প্রজাপতিলোকে, সেটি ব্রহ্মলোকে। -সেটি? যাজ্ঞবল্ক্যের অসহিষ্ণু উত্তর ‘যে দেবতা প্রশ্নের অতীত আপনি তাঁর সম্বন্ধে প্রশ্ন করছেন।’ আরও অনেকে যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু একমাত্র গার্গীকেই যাজ্ঞবল্ক্য ধমকে বলেছিলেন, ‘তোমার মাথা খসে পড়বে। যদি আর বেশি প্রশ্ন করা’।”
অর্থাৎ ওই ব্রহ্মলোক হলো প্রশ্নের অতীত, ওটা শুধু বিশ্বাসের ব্যাপার। রাহুল সাংকৃত্যায়ন এই জায়গাটায় দেখিয়েছেন যে ব্রাহ্মণদের এহেন ভাওতাবাজির বিরুদ্ধে চার্বাকরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা কোনো ভাবেই এই নিরাকার ঈশ্বরের বিষয়টা মেনে নিচ্ছিলেন না। যাজ্ঞবল্ক্য-স্মৃতিতেও এই সময়কার কাহিনী বিবৃত আছে যেখানে ‘যাজ্ঞবল্ক সরাসরি বলছেন যে, বিঘ্নসাধন করবার জন্যেই বিনায়কেরা নিযুক্ত আছেন।’ বিনায়ক গণপতি গণেশেরই আরেক নাম। কিন্তু এখানে লক্ষ্যনীয়-- ‘বিনায়কেরা’ বলা হয়েছে, অর্থাত গণপতি একাধিক। দেবীপ্রসাদ তৎকালীন আরো অনেক ব্রাহ্মণ্যসাহিতে আরো অনেক নাম খুঁজে পেয়েছেন--‘বিঘ্নেশ, বিঘ্নকৃৎ, বিঘ্নেশ্বর, বিঘ্নরাজ, ইত্যাদি। চলতি কথায়, ‘যতো নষ্টের গোড়া’—ট্রাবল-মেকার। দুর্বৃত্তদের পাণ্ডাও বলতে পারেন।’ অর্থাৎ এসময় থেকেই বিশ্বাসীদের কাছে এই ‘অবিশ্বাসীরা’ ‘দুর্বৃত্ত’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
এবার এইসব সমাজপতিদেরকে শায়স্তা করতে হবে, না হলে তো ঐ নিরাকার ব্রহ্মকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যাচ্ছে না! খুব সম্ভবত ব্রাহ্মণদেরকে উদ্ধার করতে এইসময়েই পরশুরামের আবির্ভাব হয়। দেবীপ্রসাদ বলেন--‘হিংসার ভিত্তিতে ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যের এমন জঙ্গী প্রবর্তকের কথা শাস্ত্রগ্রন্থে নিশ্চয়ই অদ্বিতীয়।’ বলা হয়ে থাকে পরশুরাম নাকি শান্তি আনতে ধরিত্রিকে ২১ বার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন। ‘২১ বার ক্ষত্রিয়শূন্য’ কথাটা বাড়াবাড়ি--খুব সম্ভবত ২১ জন গণপতিকে পরাস্ত করেছিলেন। পৌরাণিক কাহিনীতে গণেশের সাথে পরশুরামের যুদ্ধের কাহিনীও আছে, তুলে দিচ্ছি-- “...লড়াই করতে করতে পরশুরাম তাঁর হাতের কুঠারটা ছুঁড়ে মারলেন গণেশের দিকে। তারই আঘাতে গণেশের একটা দাঁত উড়ে গেলো। অবশ্যই, তাই বলে গণেশকে পরশুরামের তুলনায় দুর্বল মনে করা চলবে না। কেননা, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বলা হয়েছে, ইচ্ছে করলে গণেশ ওই কুঠারাঘাতকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন। কিন্তু গণেশ দেখলেন, কুঠারটি তাঁর পিতার হাতের তৈরি, তাই কুঠারকে নিষ্ফল করলে পিতাকে অমর্যাদা দেখানো হয়। তাই পিতার মর্যাদা রক্ষা করবার জন্যেই গণেশ একটি দাঁত এগিয়ে দিয়ে কুঠারের আঘাতটা গ্রহণ করে নিলেন।”--এ কারণেই বর্তমানে গণেশের মূর্তিতে একটি দাঁত দেখা যায়, বা একটি দাঁর ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। তবে সাধারণ জ্ঞানের দিক দিয়ে হাতির মাথাটা একান্তই অবাস্তব। তবুও অনেক প্রাচীন দেবদেবতার মাথায় বিভিন্ন জন্তুজানোয়ারের মুখ দেখা যায়--যা মূলত টোটম বিশ্বাস থেকে আসছে। গণেশের হাতির মাথাটাও অনেকটাই তাই। এছাড়া হয়তো তাকে শক্তিশালী দেখাতে হাতির চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু পাওয়া যায় নি বলে হাতির মাথাটাই জুড়ে দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে আর্যরা ঘোড়া চিনত, কিন্তু হাতি চিনত না। তারা হাতি দেখে ভারতে এসে। আর অনেক যুদ্ধে অনার্যরা যে তাদেরকে হাতি দিয়ে পরাস্ত করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া হয়তো ব্রাহ্মণেরা গণেশকে প্রথমে কদাকার, ঘৃণিত কিছু হিসাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল বলে এই হাতির মাথা।
সে যাই হোক, মানুষের শরীরের সাথে হাতির মাথা যে অবাস্তব কল্পনা সেটা এই গণেশকে নিয়ে পৌরানিক কাহিনীর স্ববিরোধী একাধিক গল্প থেকেই প্রমাণিত। এই অংশটাও ‘ডবলচেক’ করে দেখার সুযোগ হয় নাই--এই নিয়ে ‘ঈসা নবী’ ফেসবুক আইডি থেকে একটা পোস্ট দেয়া হয়েছিল--সেটা তুলে দিচ্ছি--
================== শিব পুরানঃ পার্বতী একদিন নন্দীকে দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান। এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মান করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বসৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ তাঁকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুনর্জীবন দাবি করেন ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই পুত্র সকলের পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের মুণ্ডটি তখন আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্র রূপে স্বীকার করেন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যাত হন।
স্কন্দ পুরানঃ সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান। নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে।
বৃহদ্ধর্মপুরাণঃ পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন। পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু। উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন। দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়।
পদ্মপুরাণঃ হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন, তাঁদের সেই মিলনের ফলে গণেশের জন্ম হয়।
লিঙ্গপুরাণঃ দেবগণ শিবের নিকট উপস্থিত হন ও ব্রহ্মা অসুরদের হাত থেকে নিরাপত্তা চান। শিব তখন নিজ দেহ থেকে গণেশের জন্ম দেন।
দেবীপুরাণঃ শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত ঘামতে থাকে এবং সেই ঘাম থেকে গনেশের জন্ম হয়।
মৎসপুরাণঃ পার্বতী চূর্ণক বা বেসম দিয়ে নিজের গাত্রমার্জনা করছিলেন। সেই সময় এই চূর্ণক দিয়ে একটি হাতির মাথা ওয়ালা মূর্তি নির্মান করে তা গঙ্গাজলে ফেলে দেন। পুতুলটি বিরাট হয়ে পৃথিবী পূর্ণ করতে উদ্যত হলে পার্বতী ও গঙ্গা একে পুত্র সম্বোধন করেন ও ব্রহ্মা একে গণাধিপতি করে দেন।
বামনপুরাণঃ পার্বতী স্নানের সময় নিজের গাত্রমল দিয়ে চতুর্ভূজ গজানন মূর্তি নির্মান করলে মহাদেব তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। বলেন, যেহেতু আমাকে ছাড়াই পুত্রের জন্ম হয়েছে সেহেতু এ বিনায়ক নামে প্রসিদ্ধ হবে এবং বিঘ্ননাশকারী হবে। ===============
এগুলো যে বাড়াবাড়ি রকমের কাহিনী--সে আর বলার অপেক্ষায় রাখে না। মূল প্রসঙ্গে আসি--ওদিকে মনুস্মৃতিতেও স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে গণেশ শূদ্র অর্থাৎ অনার্যদের দেবতা: বিপ্রাণাং দৈবতং শম্ভুঃ ক্ষত্রিয়াণাং তু মাধবঃ। বৈশ্যানাং তু ভবেৎ ব্রহ্মা শূদ্রানাং গণনায়কঃ।। –অর্থাৎ, ব্রাহ্মণদের দেবতা হলেন শম্ভু, ক্ষত্রিয়দের মাধব, বৈশ্যদের ব্রহ্মা আর শূদ্রদের গণনায়ক।
এতক্ষণে বুঝতে আর বাকি থাকে না যে গণেশ বা গণপতি আসলে কে বা কারা, এবং ব্রাহ্মণদের সাথে এর কেন দ্বন্দ্ব। ব্রাহ্মণেরা অনার্য বা শূদ্রদের শাসন-শোষণের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে চায়, আর গণপতি মূলত ওই সাধারণ জনগণের হয়ে ব্রাহ্মণ আর শাসকশ্রেণীর সেই ইচ্ছাতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এজন্যই তারা নানা ভাবে গণপতিকে দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শেষে যখন দেখি সবাই মিলে একটা ‘হিন্দুসমাজ’ গঠন করেছে, তখন ধরে নিতে পারি একটা সময়ে গণপতির সাথে ব্রাহ্মণদের নিশ্চয়ই আপোষ হয়েছিল--সাম্যবাদী কৌমসমাজগুলো ভেঙে ভেঙে ব্রাহ্মণ্য পুঁজিবাদী সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার অংশ হয়ে যেতে শুরু করল।
সেই আপোষটা কিভাবে? গাছের পাতা পরিধান করা আদিবাসী দেবী পর্ণশবরীদের পায়ের তলায় যাওয়াটা হয়তো “নারীঘটিত কেলেঙ্কারী”। মুনিঋষিদের বশ করতে উর্বশীদের কাজে লাগানোর কাহিনী তো সবার জানা। আর পরশুরাম বা অন্যান্য দেবদেবীদের সহায়তায় মেরে-কেটে হয়তো সাময়িক দমন করা যাচ্ছিল, পরে আবার কোথাও না কোথাও দিয়ে গণপতির আবির্ভাব হত। এই কাহিনী অনেকদিন চলেছে। আর্য-ব্রাহ্মণ্য সমাজ ব্যবস্থা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগেছে। পুরাণে গণেশের নতুন রূপ দেখা যায় ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে ও স্কন্দপুরাণে। এখানে উল্লেখ্য যে এই ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ বাংলাদেশেই সেন আমলের শেষের দিকে রচিত। এসময়ই গণেশকে দেবতার আসন দেয়া হয়, এমনকি পরে রচিত অনেক গ্রন্থে গণেশকে উপনিষদের ব্রহ্ম হিসাবেও দেখানো হয়েছে। এর পর থেকেই গণেশের মূর্তির চেহারা বদলে যেতে শুরু করে। নতুন সর্ববিঘ্নহর ও সর্বসিদ্ধিদাতা রূপ দেখা যাক--



একাদশ শতকেও যে ‘ট্রাবল-মেকার’ গণেশের হাত ছিল দুটো, হাতে ছিল শুধু ঢাল-তরবারি, সেই গণেশ পরে হয়ে উঠল দুইয়ের অধিক হাতওয়ালা, হাতে উঠে এলো পর্ণশবরী দেবীর হাতে থাকা অঙ্কুশ যা দিয়ে হাতি বশে রাখা হয়, আরেক হাতে উঠে এলো পরশুরামের কুঠারের মত কুঠার, সর্বাঙ্গে ‘আধুনিক’ অলংকার-পোশাক, ভোগবিলাশে মত্ত, আরো অনেক কিছু নিয়ে হয়ে উঠল সর্ববিঘ্নহর ও সর্বসিদ্ধিদাতা দেবতা, যে কিনা আর সব দেবতার আগে পূজা পায়। অতুলচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ‘শিক্ষা ও সভ্যতা’ গ্রন্থের ‘গণেশ’ প্রবন্ধে বলেছেন, “গণেশের যে-পূজা তা ছিলো এই ভয়ঙ্কর দেবতাটিকে শান্ত রাখার জন্য; তিনি কাজকর্মের উপর দৃষ্টি না দেন, সে-জন্য ঘুষের ব্যবস্থা”।
====================
চাপে পড়ে, স্বার্থ বা লোভের কারণে, ঘুষ খেয়ে বা কামের ফাঁদে পড়ে নারীঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া, পতন বা পল্টিবাজির অনেক উদাহরণ আছে। শোষিত, নিপীড়িত, অবহেলিত সাধারণ জনগণের নেতা থেকে, বিঘ্নকারী থেকে, শাসকশ্রেণীর ‘সিদ্ধিদাতা’ হয়ে ওঠা গণপতি গণেশের এই বিচ্যুতি ‘বাম থেকে ভাম’ হয়ে একেবারে প্রথম দিকের অন্যতম প্রধান দৃষ্টান্ত। এই মিছিলে যুগে যুগে আরো অনেকেই নাম লিখিয়েছে। কিন্তু হায়, গোল্ডফিস মেমরির সাধারণ মূর্খ জনগণই এদেরকে আবার ‘পূজার আসনে’ বসিয়েছে।
==================















ঈশ্বর যুগে যুগে বিভিন্নরূপে পৃথিবীতে এসেছেন।

ঈশ্বর যুগে যুগে বিভিন্নরূপে পৃথিবীতে এসেছেন। মৎস্যাবতার, কূর্মাবতার বা কচ্ছপরূপে, বরাহাবতার বা শুয়োররূপে। আদ্যান্তিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হয় ঈশ্বরের আরো একটি প্রাণীর রূপ ধরে পৃথিবীতে আসা উচিত ছিলো। সেটি হলো গর্দভাবতার বা গর্দভরূপে। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি সর্বদা সর্বত্রই এই প্রাণিটির জয়জয়কার দেখছি আর বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি অবিনশ্বর বলে যদি কিছু থাকে তাহলে তা একমাত্র এই প্রাণিটিই

গ্রিক ভাস্কর্য

আমি বিরক্ত, লজ্জিত, ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। হাসিনার কাছ থেকে বৈপ্লবিক কিছু আশা করি না। তাই গ্রিক ভাস্কর্য বিষয়ে চুপ করে তামাশা দেখবেন বলেই ধরে নিয়েছিলাম। নাহ! তিনি তেঁতুল হুজুরের চেয়েও এক কাঠি বেশি অনুভূতিসম্পন্ন এই ইস্যুতে। তিনি পাক্কা পলিটিশিয়ান, চ্যাতনার আমটিও খাবেন আবার অনুভূতির তলারটাও কুড়াবেন।
তবে মহোদয়া, এই বাঁদরের জাতকে মাথায় তুলে কেউ শেষ রক্ষা পেয়েছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না। ডুবেন ডুবেন, আপনি দেশটাকে নিয়েই ডুবেন। ফি আমানিল্লাহ!

গনতন্ত্র ব্যাপারটা তো বাংলাদেশী না, এটা গ্রিক একটা ধারনা। এটা আমারও পছন্দ না। বাংলাদেশে গনতন্ত্র থাকবে কেন?

১। গনতন্ত্র ব্যাপারটা তো বাংলাদেশী না, এটা গ্রিক একটা ধারনা। এটা আমারও পছন্দ না। বাংলাদেশে গনতন্ত্র থাকবে কেন?
২। বাংলাদেশ নামটা বাংলাদেশী না। এটা তো মনুষ্যসৃস্ট নাম। ৯০% মুসলমানের দেশে মনুষ্যসৃস্ট কোন নামে দেশের নাম থাকতে পারে না। এটা আমারও পছন্দ না।

মোল্লার লিঙ্গ পুজিলে যদি ব্যালট বক্স ভরিত, তবে খালেদা জিয়া এখনো প্রধানমন্ত্রী থাকিত।

মোল্লার লিঙ্গ পুজিলে যদি ব্যালট বক্স ভরিত,
তবে খালেদা জিয়া এখনো প্রধানমন্ত্রী থাকিত।

স্যারের জন্য মনটা কেমন যেন করছে

সিদ্দিক স্যারের জন্য মনটা কেমন যেন করছে। চট্টগ্রামে কোথায় পাবো এমন জ্ঞানতাপস যাঁর অহংকার নেই, ছোট্ট ছোট্ট কথায় কে আর অমন করে শিখিয়ে যাবে অতশত কিছু? মনে আছে, ২০০২ সালে পরিচয়ের পর থেকে তাঁকে 'সিদ্দিক ভাই' কিংবা আংকেল বলতে পারি নি, মুখেই আসতো না। সমীহ আর পরম ভালোবাসাযোগে একটি সম্বোধনই মুখ দিয়ে বের হয়ে আসতো---'স্যার'।
স্যার, আপনাকে পায়ে ধরে একবার প্রণাম করতে ইচ্ছে হচ্ছে। খুব, খুব। জানি, সেটা আর সম্ভব হবে না কোনদিনই, দুঃখ নেই। আপনি বেঁচে থাকবেন এই শহরের অনেক অগ্রগণ্য, আমার মতো নিতান্ত নগণ্য অনেক মানুষের হৃদয়ে!

হায়রে বৈশাখ।

বছরের তুই বড় ছেলে।
তবু তোর এগারোটা ছোট ভাই পরপর
তোরে পিছে ফেলে
এসে ফের যাবে চ’লে কালের চাকায় খেয়ে পাক--
মহাকাল-রথচক্রে চক্রমান হায়রে বৈশাখ।

নিজেরা বাঁচার পথ মানুষকে নিজেদেরই সৃষ্টি করে নিতে হবে।

তেত্রিশ কোটি দেবদেবী কিংবা ঈশ্বরের সাধ্য ছিলো না এই ভূমিকম্পের কবল থেকে নেপালকে রক্ষা করার। তাহলে তারা অনর্থক এসব পূজা অর্চনা কেন করে? আজকে তাদের বিপদ দেখে মনে হচ্ছে এতোগুলো মন্দির তৈরি না করে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর সংস্কারের দিকে যথাসময়ে মনোযোগ দিলে আজ এই বিপদ তারা হয়তো অনেকটুকুই এড়াতে পারতো। মানুষ কখন বুঝবে যে ধর্মগুলোর ঈশ্বরদের কোন ক্ষমতা নেই মানুষকে বাঁচানোর। নিজেরা বাঁচার পথ মানুষকে নিজেদেরই সৃষ্টি করে নিতে হবে।

Saturday 8 April 2017

আমি সেইসব মানুষদের অপছন্দ করি যারা গাছের খায় তলারটাও কুড়ায়

আমি সেইসব মানুষদের অপছন্দ করি যারা গাছের খায় তলারটাও কুড়ায়, ধর্মেও আছে জিরাফেও আছে. যারা সবার কাছেই ভালো থাকতে চায়। লজবাব এই প্রজাতি সবসময় যে এমন চক্ষুকানা থাকে তাও না। আমার বন্ধু তালিকায় এমন কয়েকজন আছে এবং ছিলো যারা আসলে অন্যপক্ষের স্বার্থউদ্ধারের জন্য আমার সঙ্গে মিত্রতার ভান করছে ও করেছিলো। সিলি অ্যাজ ইফ আই ডোন্ট নো হোয়াট দে আর আপ টু!
মানুষের নোংরামির সীমাহীনতাও দেখেছি। এমনকি আমার মৃত বাবা এবং শশুরকেও রেহায় দেয়নি তারা, দেয় না। এদের অনেকে আমার এবং আমার পরিবারের কিছু ছবি ফেসবুক থেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছে, এবং অসহযোগিতা করছে আমার খুব কাছের দু একজন মানুষ শাওন শর্মা এবং নুরজাহান এদের মধ্যে অন্যতম। মনির হোসেন নিজের এবং তার বোন লাভলীর অসততা প্রতারণা ঢাকতে আমাকে অসৎ বানানো ছাড়া আর কোনো উপায় তাদের নেই, আর কোনো যোগ্যতা তাদের নেই, আর কোনো গুণ তাদের নেই। এমন ঘটনা এত বেশী ঘটেছে যে আমার অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে। তাই এখন নিজের বা হাতকে বিশ্বাস করতে দ্বিধায় ভুগি, শংকায় থাকি কারো সঙ্গে মনের কথা বিনিময়ে, মনে হতে থাকে আমি বোধহয় তার হাতে তথ্য তুলে দিচ্ছি যা সে একটু পরেই নিলামে তুলবে। এ কারণেই আমার কমফোর্ট জোন অত্যন্ত ছোট, একদম নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া আমি মন খুলি না বাক্য বিনিময়ে।
আমার বিরুদ্ধে চলা নোংরামীতে কারা আমার পক্ষে ছিলো তাদের আমি চিনি। কে কিভাবে প্রতিবাদ করেছে আমি জানি। কারো চুপ থাকায় কিংবা এতে না জড়ানোয় আমি অন্যায় হিসেবে দেখিনি, বরং ভালো লেগেছে। নিজের লড়াই নিজেই লড়ি, একলাই লড়ি বলি নির্ভরতা আমার কারো উপরেই নেই। একদম শুরুতে বলা লোকজনের মুখোশটা খুলে যায় যখন আমি প্রতিক্রিয়া জানাই। তুলে ধরি নোংরা মানুষগুলোর সত্য চেহারা। বৈঠক করে সমাধানের প্রস্তাব দেয়। আমার মন খারাপ হয়ে যায়।

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...