বিয়ে খুবই একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস তবে আমার কাছে এইটাকে ইন্টারেস্টিং এর থেকেও বেশি রহস্যময় মনে হয়!!
Tuesday, 17 November 2020
বিয়ে খুবই একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস তবে আমার কাছে এইটাকে ইন্টারেস্টিং এর থেকেও বেশি রহস্যময় মনে হয়!!
নোয়াখালীর ছেলে বাইডেন
সে নাকি নোয়াখালীর রত্ন
আপনি জানেন কী হাট্টিমাটিম’ আসলে ৫২ লাইনের একটি ছড়া, চার লাইনের নয় l
নদী কথা- রূপসা নদী
নদী কথা - মধুমতি নদী
গোপালগঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহমান মধুমতি নদী (কুষ্টিয়ার উত্তরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদীর উৎপত্তি। এই গড়াই নদী অনেক পথ অতিক্রম করে মধুমতি নাম নিয়ে মাগুরা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহমান। মধুমতি নদী পদ্মার একটি শাখা নদী এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীর একটি। মধুমতি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক জনপদ। এক সময় নদীতে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত এবং মাছ আহরণ করে এ অঞ্চলের মানুষ জীবীকা নির্বাহ করত তাই এই নদী তীরবর্তী অনেক জেলে পল্লী লক্ষ্য করা যায়। মধুমতি নদীর ইলিশ খুব সু-স্বাদু। ইলিশ মাছের পাশাপাশি বড়বড় রুই, কাতলা, আইড়, বাঘাইড়, চিতলসহ অনেক প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যেত। বর্তমানে নদীর নাব্যতা ও গভীরতা কমে যাওয়ায় মাছের পরিমাণ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। নদী তীরবর্তী মৎস্যজীবীরা অনেক কষ্টে জীবনধারণ করছে তারা মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যান্য পেশায় আত্মনিয়োগ করছে। মধুমতি তীরবর্তী অঞ্চল খুব উর্বর এবং ফসল উত্পাদনের জন্য অনকূল। এখানে ধান পাটসহ অর্থকরী ফসল প্রচুর পরিমাণ ফলে। মধুমতির দৈর্ঘ্য ১৩৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০০ কিলোমিটার এবং গভীরতা প্রায় ১০.৫ মিটার।একসময় সুন্দরবন অঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা এই নদী দিয়ে মধু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করত। এই নদীর নামকরণ নিয়ে কথিত আছে- এ নদীর সুমিষ্ট জল বা মধু বহনকারী নদী বলে এই নদীর নাম হয়েছে মধুমতি । একসময় এ নদীতে বিভিন্ন ধরনের রঙ বেরঙের পালতোলা নৌকা দেখা যেত। মাঝি-মাল্লারা ভটিয়ালি, ধূয়া গানসহ বিভিন্ন ধরণের গান গাইতে দেখা যেত। নদীটির প্রবাহপথে যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে সেগুলো মধ্যে মাগুরা জেলা মোহাম্মদপুর উপজেলা, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি, আলফাডাঙ্গা উপজেলা, নড়াইল জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলা শহর, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের গোবরা মালোপাড়া, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী, বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট, চিতলমারী ও কচুয়া উপজেলা। পূর্বে নড়াইল জেলার ইতনা, ধলুইতলা ও বড়দিয়া, গোপালগঞ্জ জেলার মানিকদাহ, গোপালগঞ্জ লঞ্চঘাট, গোবরা লঞ্চঘাট, বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট স্টিমার স্টেশন ও লঞ্চ ঘাট ছিল। আজ আর স্টিমার চলে না। লঞ্চ মাঝেমধ্যে দেখা যায় তবে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, পণ্যবহনকারী নৌযান সারা বছর চলে। প্রতিবছর কিছু কিছু পরিবারের ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি এই নদীগর্ভে বিলীন হয়। নড়াইল জেলার মহাজন গ্রাম সম্পূর্ণ বিলীন হয় নদী ভাঙনে। বর্তমান সে নাব্যতা দেখা যায় না। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন ও বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটকে মিলাতে নদীর উপর নির্মিত হয়েছে মোল্লাহাট সেতু।মধুমতি নদীকে নিয়ে বহু কবিতা, গান ও চলচিত্র নির্মিত হয়েছে।
নদী কথা- ডাকাতিয়া নদী
বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক ডাকাতিয়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ০৭।
ডাকাতিয়া নদী মেঘনার উপনদী। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। যা লক্ষ্মীপুরের হাজিমারা পর্যন্ত বিস্তৃত। দৈর্ঘ্য-২০৭ কিলোমিটার। মেঘনা নোয়াখালীতে প্রবেশের পর ডাকাতিয়া নাম ধারণ করেছে। যার দক্ষিণের অংশ নোয়াখালী খাল হিসেবে প্রবাহিত। চাঁদপুর থেকে এই ডাকাতিয়া নদী যোগ হয়েছে কুমিল্লার গোমতীর সঙ্গে ইহা ২৩০.২০ অক্ষাংশে এবং ৯১০.৩১ দ্রাঘিমা (২৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট অক্ষাংশে এবং ৯১ডিগ্রী৩১ মিনিট দ্রাঘিমা) বিস্তৃত। যা বামদিকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফেনী নদীতে মিশেছে।
সম্ভবত এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করতো। এই নদীতে তাদের মাধ্যমেই ডাকাতি হতো। ডাকাতির উপদ্রবের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তৎকালীন কলকাতাস্থ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাউন্সিলের পক্ষে কোর্ট অব ডিরেক্টর সভার কাছে ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি পেশকৃত একটি চিঠির মাধ্যমে জলদস্যুদের উপদ্রবের চিত্র পাওয়া যায়। সেখানে লেখা হয়:
“Being advised from Lakshmipur that the Maghs and other robbers are making depredations in their neighbourhood and that they are apprehensive that they attempt our factory itself which is in no state of defece we have ordered the gentlemen at Dacca to send part of their sepoys to Lakshmipur and shall supply them from hence with a few pieces of cannon and ammunition. Vide liong's selections from the unpublished records of the government. Letter No. 276, p.116.”
ডাকাতিয়া নদীর নামকরণ নিয়ে লোকমুখে আরেকটি মতামত শোনা যায়, একসময় ডাকাতিয়া নদী তীব্র খরস্রোতা ছিল। মেঘনার এই শাখা নদী ডাকাতিয়ায় মেঘনার উত্তাল রূপ ফুটে উঠত। ফলে ডাকাতিয়ার করালগ্রাসে নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিল সমাধিও ঘটেছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলেই এর নাম হয়েছে ডাকাতিয়া।
নদী কথা- গড়াই-মধুমতি
গড়াই-মধুমতি নদী (Gorai-Madhumati River)গঙ্গা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রধান শাখা। একই নদী উজানে গড়াই এবং ভাটিতে মধুমতি নামে পরিচিত। একসময় গড়াই-মধুমতি নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতু-এর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী গঙ্গা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি কুষ্টিয়া জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশপুর নামক স্থানে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে চাদর নামক গ্রাম দিয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী, মাগুরা-রাজবাড়ী এবং মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মধুমতি পরবর্তী সময়ে পিরোজপুর জেলার মধ্য দিয়ে বলেশ্বর নামে প্রবাহিত হয়েছে এবং মোহনার কাছাকাছি হরিণঘাটা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগর-এ পড়েছে।
গড়াই অত্যন্ত প্রাচীন একটি নদী। অতীতে এর নাম ছিল গৌরী। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ভূগোলবিদ টলেমি তদানীন্তন গঙ্গা প্রবাহের সাগর সঙ্গমে পাঁচটি মুখের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ‘কম্বরী খান’ নামক মুখটিই প্রকৃতপক্ষে গড়াই বলে কেউ কেউ মনে করেন। গড়াই-মধুমতি নদীর গতিপথ দীর্ঘ এবং বিস্তৃত। অধিকাংশ গতিপথেই নদীটি এঁকে বেঁকে প্রবাহিত। উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল করতে পারে, কিন্তু শুকনো মৌসুমে এ অংশ অনাব্য হয়ে পড়ে। কামারখালী থেকে নিম্নাংশ মোটামুটি নাব্য, প্রায় সারা বছর এখানে নৌপরিবহণ সম্ভব হয়। কামারখালীতে পানির প্রবাহ সর্বোচ্চ ৭,৯৩২ ঘন মিটার, তবে উৎসমুখ শুকিয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো সময় প্রবাহ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। উৎসমুখ থেকে বড়দিয়া পর্যন্ত গড় প্রস্থ ৪৫০ মিটার। এর পর নদীটির বিস্তার ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং নিম্নাঞ্চলে গড়ে ৩ কিমি। নদীটির মোহনা থেকে কামারখালী পর্যন্ত অংশ জোয়ারভাটা দ্বারা প্রভাবিত। কুষ্টিয়া শহরের সন্নিকটে গড়াইয়ের মুখ শীতকালে বন্ধ: হয়ে যায়।
গড়াই নদী ভাঙন প্রবণ। এর প্রবল ভাঙনের ফলে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত রেন-উইক কারখানা, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অফিস এবং কুষ্টিয়া শহরের বাণিজ্যিক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কুমারখালী বন্দর এবং জানিপুর বাজারও নদীভাঙন-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু গ্রোয়েন তৈরি করে উল্লিখিত শহর-বন্দরগুলি রক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
চলার পথে গড়াই-মধুমতি বহু শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে এবং অন্যান্য অনেক নদীর সংস্পর্শে এসেছে। কুমার, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই প্রভৃতি গড়াইয়ের শাখা নদী। চন্দনা গড়াই-এর উপনদী। নবগঙ্গা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, খুলনা-যমুনা, গলঘাসিয়া, এলেংখালী, আঠারোবাঁকী প্রভৃতি নদী কোনো না কোনো ভাবে গড়াই-মধুমতি নদীর সংস্পর্শে এসেছে।
গড়াই-মধুমতি বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী। এর অববাহিকাও বিস্তীর্ণ। নদীটি কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এইসব এলাকার সেচ ও কৃষির উন্নতি এ নদীর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কুমারখালি, জানিপুর, সেঁউরিয়া, গণেশপুর, কাতলাগাড়ী, খুলুমবাড়ী, লাংগলবন্দ, শচিলাপুর, নাকোল, লোহাগড়া, পাংশা, বালিয়াকান্দি, বোয়ালমারী, কাশিয়ানী, ভাটিয়াপাড়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর, শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা এবং মোরেলগঞ্জ প্রভৃতি গড়াই-মধুমতি নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান।
Monday, 16 November 2020
নদী কথা- খলিশাডাঙ্গা নদী
উল্লেখ্য, আমার নিজ বাড়ি এই নদীটির পাড়েই।
নদী কথা- বুড়ি নদী
বুড়ি নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বুড়ি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৪। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নূরনগর ও বরদাখাত পরগনার মাঝখান দিয়ে বিল-ঝিলের উপর দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে চলা মুরাদনগর-কসবা-নবীনগরের সম্মিলন পয়েন্ট এই বুড়িনদী। লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প অবস্থানে মোহনা সৃষ্টিকৌশলে বুড়ী নদীটি নবীনগরের লঞ্চঘাটের কাছে তিতাসের সাথে মিশেছে।
বুড়ি নদীর উৎস হল সালদা নদী। সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বুড়ি নদীতে পতিত হয়েছে।
এক সময় এ নদীর বুক চিরে বহু পণ্যবাহী নৌকা আসা যাওয়া করত। জনশ্রুতি রয়েছে যে কোন এক পূর্ণিমারাতে এই নদীতে পালতোলা নৌকার মাঝি টলটলে পানিতে চাদের বুড়ির ছবি দেখতে পায় এবং পরদিন অনেক চড়া দামে তাদের পণ্যসামগ্রী হাটে বিক্রি হয়। চাদের বুড়ির দর্শন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সহায়ক হয় বলে সেই থেকে নদীর নাম হয় বুড়িনদী।
বুড়িনদী তীব্র স্রোত সম্পন্ন একটি নদী ছিল। বর্ষাকালীন সময়ে নদীটি কানায় কানায় পূর্ণ থাকত। একসময় বুড়ি নদীতে চলতো জাহাজ ও সওদাগরদের বড় বড় নৌকা।
বর্তমানে নদীটি অদৃশ্যপ্রায়। নদীটি খাল, ডোবা, বসতভিটা ও কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। বুড়ি নদীটি নবীনগর উপজেলা থেকে কসবা উপজেলার কুটি হয়ে ধরখার পর্যন্ত প্রবহমান ছিল। বর্তমানে নদীর প্রায় ১৯ কি.মি. ভরাট হয়ে গেছে।
নদী কথা - কপোতাক্ষ নদ
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলা সাতক্ষীরা জেলা ও খুলনা জেলার একটি নদ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক কপোতাক্ষ নদের প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৯।
এই নদ এর উৎপত্তি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব নদী থেকে এবং এটি পরে খুলনা জেলার কয়রায় খোলপটুয়া নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১৮০ কিলোমিটার (১১০ মাইল), গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট), গভীরতা ৩.৫ থেকে ৫ মিটার (১১.৫ থেকে ১৬.৪ ফুট)। এই নদ ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত।
স্থানীয় মানুষের নদবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড এবং অসচেতনতা কাজ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা নদের তীরবর্তী জায়গা দখল, পলি জমে ভরাট ইত্যাদি কারণে বর্তমানে নদটি মৃতপ্রায়।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার শৈশব কাটিয়েছেন এই নদের তীরে। পরবর্তীতে তিনি যখন ফ্রান্সে ছিলেন, শৈশবের কথা স্মরণ করে প্রখ্যাত কপোতাক্ষ নদ নামের সনেট (চতুর্দশপদী কবিতা) রচনা করেছেন ।
নদী কথা- আড়িয়াল খাঁ
আড়িয়াল খাঁ পদ্মার একটি প্রধান শাখা নদ। আড়িয়াল খাঁ হচ্ছে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার একটি নদ। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩০০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক আড়িয়াল খাঁ নদের প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২
অতীতে নদটির নাম ছিল ভুবনেশ্বর। ১৮০১ সালে ঠগি দমনের জন্য আড়িয়াল খাঁ নামক একজন জমাদার গভর্ণমেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত হয়। ভুবনেশ্বর নদ থেকে একটি খাল খনন করিয়ে তা প্রাচীন পদ্মার দক্ষিণাংশের সঙ্গে সংযুক্ত করিয়ে দেওয়া হয়। এই খালটিই কালক্রমে প্রবল রুপ ধারণ করে প্রাচীন পদ্মা ও ভুবনেশ্বরের কতকাংশ গ্রাস করে এবং সাধারণ জনগণের কাছে আড়িয়াল খাঁ নামে পরিচিত হয়।বর্তমানে সমুদ্রগামী পদ্মার শাখাগুলোর মধ্যে মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁ নদ দুটি প্রধান। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে প্রায় ৫১.৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বের পদ্মা থেকে এই শাখা নদ (আড়িয়াল খাঁ) প্রবাহিত হয়ে ফরিদপুর ও মাদারিপুর জেলার মধ্য দিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্বভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া চ্যানেলে ঢুকেছে। আড়িয়াল খাঁ নদ চলার পথে নড়িয়ার খাল, পালং খাল, ভুবনেশ্বর, ময়নাকাটা, কুমার, কাইলা, নয়াভাঙনী প্রভৃতি নদ-নদীর মাধ্যমে পদ্মা নদীর সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে। নদের গতিপথ প্রায়ই আঁকাবাঁকা। নদটি ভাঙনপ্রবণ। এর ফলে অনেক জনপদ এর গর্ভে বিলীন হয়েছে। মাদারীপুর শহরও এই নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এই নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো পিঁয়াজখালী, চৌধুরীহাট, উৎরাইল, দত্তপাড়া, কবিরাজপুর, লতিখোলা, ছবিপুর, মাদারিপুর পৌরসভা, ঘসেরহাট বন্দর। উনিশ শতকের শেষ দিকে আড়িয়াল খাঁ ছিল প্রধান ধারা। বর্তমানে এর শেষ প্রান্ত পলি ভরাট হয়ে মাদারিপুরের কাছে আড়িয়াল খাঁ দুটি শখায় বিভক্ত হয়েছে। বাঁ দিকের প্রবাহিত অংশ আড়িয়াল খাঁ। আর ডান দিকে টরকি নামে প্রবাহিত হচ্ছে।
আড়িয়াল খাঁ নদটি সারা বছর নাব্য। মার্চ-এপ্রিলে পানির প্রবাহ কম থকে। তবে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেশি থাকে। তখন জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ঘনমিটার/সেকেন্ড। এ সময় নদে পানির গভীরতা ১২ মিটার পর্যন্ত থাকে। নদটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ কিমি। মাদারীপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পরিসর ০.৩২ মিটার। প্রস্থ ৩০০ মিটার। নদটির অববাহিকার আয়তন ১৪৩৮ বর্গ কিমি।
নদী কথা- কীর্তনখোলা নদী
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল এবং ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৬০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৯৭ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক কীর্তনখোলা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২১। এই নদীর তীরে বরিশাল শহর অবস্থিত।
কীর্তনখোলা নদীর শুরু হয়েছে বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদ হতে। গজালিয়ার কাছে গিয়ে এটি পতিত হয়েছে গাবখান খালে। কীর্তনখোলা মূলত আড়িয়াল খাঁ নদের একটি শাখা। আড়িয়াল খাঁর উৎপত্তি পদ্মা থেকে। বরিশাল ঘেঁষে কীর্তনখোলা নদী পশ্চিমে এগিয়ে নলছিটি থানার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচিতি পেয়েছে নাম। একটি অংশ ধানসিড়ি নাম নিয়ে কচা নদীতে গিয়ে মিশেছে। অপর অংশ মিলেছে বিষখালী নদীতে।
শায়েস্তাবাদ হতে নলছিটি অবধি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। এ জায়গায় নদীটির প্রস্থ প্রায় আধা কিলোমিটার। ব্রিটিশ আমলে এটি আরো বেশি প্রমত্তা ছিলো, সেসময়ে এর প্রস্থ ছিলো ১ কিলোমিটারের মতো। গত ১ শতাব্দী ধরে চর পড়ে কীর্তনখোলার প্রস্থ কমে গেছে। এর পাশাপাশি পলি পড়ে নদীটির নাব্যতাও হ্রাস পেয়েছে।
কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল নৌ বন্দর অবস্থিত, যা বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম নদী-বন্দর।
স্থানীয়ভাবে নদীর নামকরণ নিয়ে দু/তিনটি বক্তব্য শোনা যায়। নদীর পার ঘেঁষেই শহরের সবচেয়ে পুরনো হাট রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, সেখানে কীর্তনের উৎসব হতো। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়েছে কীর্তনখোলা। কেউ কেউ হাটখোলায় স্থায়ীভাবে কীর্তনের দল বসবাস করার কারণে এর নাম কীর্তনখোলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে নদীর নামকরণের সঙ্গে কীর্তনের কিংবা কীর্তনীয়দের যে একটা সম্পর্ক রয়েছে তা নিশ্চিত। কৃষ্ণলীলার কাহিনী নিয়ে কীর্তনীয়রা গানে মেতে থাকতেন। কৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে যমুনা নদীতে লীলায় মেতে উঠতেন। বরিশালে যমুনা না থাকলেও কীর্তনখোলা নদীই যেন রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের গাথা হয়ে আছে।
নদী কথা- সোমেশ্বরী নদী
সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা এবং বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায় প্রাবাহিত একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক সোমেশ্বরী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৮৫।ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। অবশ্য এক সময় সমগ্র নদীটি সিমসাং নামে পরিচিত ছিল। ৬৮৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ অত্রাঞ্চল দখল করে নেয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার (পূর্ব নাম বঙ বাজার) হয়ে বাংলাদেশের রাণীখং পাহাড়ের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
রাণীখং পাহাড়ের পাশ বেয়ে দক্ষিণ দিক বরাবর শিবগঞ্জ বাজারের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী বরাবর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পথে কুমুদগঞ্জ বাজার হয়ে কোনাপাড়া গ্রামের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাকলজোড়া, সিধলি, কলমাকান্দা, মধ্যনগর হয়ে ধনু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে না। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়ীয়া ঢলে সোমেশ্বরী বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে। যা স্থানীয় ভাবে শিবগঞ্জ ঢালা নামে খ্যাত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতধারা। এ স্রোতধারাটি চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে কংশ নদী সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পাহাড়ীয়া ঢলে আত্রাখালি নদী নামে সোমেশ্বরী নদীর একটি শাখা নদীটির সৃষ্টি হয়। সুসঙ্গ দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাখালী। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আত্রাখালি নদী এখন বেশ খরস্রোতা। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আত্রাখালি থেকে নয়া গাঙ নামের আর একটি স্রোত ধারা উত্তর দিকে সৃষ্টি হয়েছে। আরো ভাটিতে সোমেশ্বরীর শাখা নদীর সৃষ্টি হয়েছে গুনাই, বালিয়া ও খারপাই।
নদী কথা - কংস নদী।
কংস নদী বা কংশ নদী বা কংসবতী নদী বা কংসাই নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগে তুরার কাছে গারো পাহাড়ে এ নদীর উৎপত্তি। উৎস থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর শেরপুর জেলার উত্তর ভাগে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদরের প্রায় ১৬ কিমি উত্তর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীতে মিশেছে। কংস ও সোমেশ্বরীর মিলিত স্রোত বাউলাই নদী নামে পরিচিত।
প্রবাহ পথে নদীটি ফুলপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা, দুর্গাপুর, নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত। সাধারণত বর্ষায় বন্যা হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি রাবারডেম প্রকল্প রযেছে নদী অববাহিকায়।
বোগাই-কংস নদীর পানিপ্রবাহ বারোমাসী প্রকৃতির। মার্চ মাসে পানিপ্রবাহ কম থাকে। তখন প্রবাহের পরিমাণ থাকে ৯.৯৭ ঘন মিটার/সে.। জুলাই মাসে পানি প্রবাহ বেশি থাকে। এ সময় প্রবাহ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬৬ ঘনমিটার/সে.।
নদী কথা- খিরো নদী।
খিরো নদী (ভালুকা) বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৩ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক খিরো নদী (ভালুকা)র প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ১১।
খিরো নদীটি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা ইউনিয়নে প্রবহমান বানার নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার ত্রিশাল উপজেলার আমিরবাড়ি ইউনিয়নে পুনর্বার বানার নদীর সাথে মিলিত হয়ে খিরো নাম ধারণ করে গফরগাঁও উপজেলার যশোরা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে সুতিয়া নদীতে নিপতিত হয়েছে। এই নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে নদীটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। পলির প্রভাবে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় লোকজন কর্তৃক নদীর দুই পাশ ভরাট করায় এর প্রশস্ততা সংকুচিত হচ্ছে এবং নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে।
নদী কথা- গড়াই নদী ।
গড়াই নদী গঙ্গা তথা পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মধুমতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২৪।
গড়াই নদীটি কুষ্টিয়া জেলার হাটশহরিপুর ইউনিয়নে প্রবহমান পদ্মা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদীতে পতিত হয়েছে। একসময় গড়াই নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতুর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী পদ্মা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি কুষ্টিয়া জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশপুর নামক স্থানে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে চাদর নামক গ্রাম দিয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী জেলা, মাগুরা জেলা-রাজবাড়ী জেলা এবং মাগুরা জেলা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদী নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গড়াই নদী-মধুমতী নদীর গতিপথ আঁকাবাঁকা ও দীর্ঘ। গড়াই নামে ৮৯ কিমি, মধুমতী নামে ১৩৭ কিমি এবং বলেশ্বর নামে ১৪৬ কিমি অর্থাৎ মোট দৈর্ঘ্য ৩৭২ কিমি। গড়াইয়ের বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে- কুমার নদী, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই, বুড়িশাল ইত্যাদি গড়াইয়ের শাখা। তাছাড়া নবগঙ্গা নদী, চিত্রা, কপোতাক্ষ, সাতক্ষীরার যমুনা, গোলঘেসিয়া, এলেংখালী, আঠারোবাঁকি প্রভৃতি নদী এর সংস্পর্শে এসেছে। এছাড়াও বারাশিয়া, কুমার নদী, চন্দনা প্রভৃতি এই নদীর উপনদী। উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল করে, কিন্তু শুকনো মৌসুমে এ অংশ অনাব্য হয়ে পড়ে। কামারখালী থেকে ভাটির অংশ মোটামুটি নাব্য, সারা বছর এখানে নৌযান চলাচল করতে পারে। নদীটির উৎসমুখ থেকে নড়াইলের গড় প্রস্থ ৪৫০ মিটার। নদীটির মোহনা থেকে উজানে কামারখালী পর্যন্ত অংশ জোয়ার-ভাটা দ্বারা প্রভাবিত হয়। পদ্মার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় নৌপথে পণ্য আদান প্রদানে বিশেষ সহযোগী হিসাবে কাজ করে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক জনপদ। নদীতে প্রচুর পরিমাণ মত্স রয়েছে যা এ অঞ্চলের মানুষ আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। মধুমতি নদী তীরবর্তী অঞ্চল খুব উর্বর। তাই ফসল উত্পাদনের জন্য অনুকূল।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছেন গড়াই-পদ্মা নদীর তীরে । তার লেখায় বহুবার এ নদী দুটির প্রসঙ্গ এসেছে। গড়াই নদীকে কবি লিখতেন গৌরী নামে। আবার কখনো কখনো গোড়াই নামেও লিখেছেন তার কবিতায়। গড়াইয়ের নদীতীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা তার কবিতায় ফুটে উঠেছে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে:
“গোড়াই নদীর চর”
নূতন ধানের আঁচল জড়ায়ে ভাসিছে জলের পর
একখানা যেন সবুজ স্বপন একখানা যেন মেঘ
আকাশ হইতে ধরায় নামিয়া ভুলিয়াছে গতিবেগ
দুপুরের রোদে আগুন জ্বালিয়া খেলায় নদীর চর
দমকা বাতাসে বালুর ধূম্র উড়িছে নিরন্তর
রাতের বেলায় আঁধারের কোলে ঘুমায় নদীর চর
জোনাকি মেয়েরা স্বপনের দীপ দোলায় বুকের পর।
নদী কথা- লোহালিয়া নদী
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩২৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক লোহালিয়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮৪।
লোহালিয়া নদীটি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুরগাপাশা ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান তেঁতুলিয়া নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার দুধাল, কবাই, কাঞ্চিপাড়া, হানুয়া, মুরাদিয়া, লোহালিয়া, আমখোলা, গজালিয়া, গোলখালি ও ডাকুয়া ইউনিয়ন পেরিয়ে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে রাবনাবাদ নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির উজানের তুলনায় ভাটির দিক অধিক প্রশস্ত। নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ পরিদৃষ্ট হয় এবং ছোটবড় নৌযান চলাচল করে। তবে বর্ষাকালে নদীটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। এই নদী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৃতীয় শ্রেণির নৌপথ হিসেবে স্বীকৃত।
লোহালিয়ার শাখা নদী হলো রাবনাবাদ নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৮৪০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক রাবনাবাদ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮২।রাবনাবাদ নদীটি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান লোহালিয়া নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এই নদীর জলধারা একই জেলার একই উপজেলার বড় বাইশদিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিপতিত হয়েছে। নদীটির উজানের তুলনায় ভাটির দিক অধিক প্রশস্ত। নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ পরিদৃষ্ট হয় এবং ছোটবড় নৌযান চলাচল করে। তবে বর্ষাকালে নদীটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় নদীর তীরবর্তী অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এই নদীটিও জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত।
নদী কথা- বুড়িতিস্তা নদী।
বুড়িতিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের কোচবিহার জেলা ও বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৯ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বুড়িতিস্তা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮৬। নদীটি তিস্তা নদীর একটি শাখা নদী।
বুড়ি তিস্তা নদীটি আগে তিস্তা নদীর মূল ধারা ছিল কিন্তু কালক্রমে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হলে এটি শাখা নদীতে পরিণত হয় এবং নাম হয় বুড়ি তিস্তা নদী। নদীটি ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গঙ্গাছড়া উপজেলায় গিয়ে পুনরায় তিস্তা নদীতে মিলিত হয়েছে। জলঢাকা উপজেলায় কালীগঞ্জ নামক স্থানে এই নদীতে একটি সেচ প্রকল্প রয়েছে।
নদী কথা- আগুনমুখা নদী
পটুয়াখালী অঞ্চলে আগুনমুখা খুব ভয়ংকর নদী নামে পরিচিত। নামটি শুনলেই ভয় লাগে। তবে এই নদীর নাম যেমন ভয়ঙ্কর তার আচরণ ও চলার পথ তেমন ভয়ঙ্কর নয়। এটি বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আগুন ও মুখা শব্দের মিলনে আগুনমুখা নামের উদ্ভব। আগুন শব্দটির অপর নাম অগ্নি, আর মুখা শব্দটার আরেক নাম রূপ/চেহারা বা অবয়ব। সুতরাং আগুনের মত চেহারা হলো আগুনমুখার।চরকাজল ও রতনদি-তালতলি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে তেতুলিয়া নদী গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রবেশ করে।
তেতুলিয়ার নিম্নাংশ কাজল নদী এবং চর কাজলের পশ্চিম অংশ থেকে তেতুলিয়া নদীর একটি শাখা আগুনমুখা নাম ধারণ করে। আগুনমুখ ও চরকলমী খালের সম্মিলিত প্রবাহ বঙ্গপোসাগরে মিলেছে। বঙ্গপোসাগরে পতিত এই মোহনার উত্তরে ঢেউ গুলো আগুনের শিখার রুপ ধারণ করে। তাই এর নাম হয় আগুনমুখা। এ অঞ্চলের অন্যান্য নদীর মধ্যে দাড়ছিড়া নদী, বুড়িগৌড়াঙ্গ নদী, রামনাবাদ নদী ও গলাচিপা নদী উল্লেখযোগ্য। দাড়ছিড়া নদীটি ছিলো প্রবল স্রোত সম্পন্ন। একবার এক বিশাল সওদাগরি বজরার দাড় ছিড়ে যাওয়ার পর হতে নদীটি দাড়ছিড়া নামে খ্যাত হয়ে উঠে।
নদী কথা- মাথাভাঙ্গা নদী।
বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৯ মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা ১০ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না। নদীটি জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মাথাভাঙ্গা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৬। মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে। মাথাভাঙ্গা নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দী নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটি জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত।
অভিশপ্ত রজনী
মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...
-
একবার সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলি একটি স্টেশনারী দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'ডায়মন্ড বল পেন আছে?' সেলসম্যান মুখের উপ...
-
জন্মদিনে কেকের উপর মোমবাতি জ্বালানো একটি পুরোনো রীতি , যেটা শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে প্রাচীন গ্রীকে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ,...