বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল এবং ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৬০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৯৭ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক কীর্তনখোলা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২১। এই নদীর তীরে বরিশাল শহর অবস্থিত।
কীর্তনখোলা নদীর শুরু হয়েছে বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদ হতে। গজালিয়ার কাছে গিয়ে এটি পতিত হয়েছে গাবখান খালে। কীর্তনখোলা মূলত আড়িয়াল খাঁ নদের একটি শাখা। আড়িয়াল খাঁর উৎপত্তি পদ্মা থেকে। বরিশাল ঘেঁষে কীর্তনখোলা নদী পশ্চিমে এগিয়ে নলছিটি থানার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচিতি পেয়েছে নাম। একটি অংশ ধানসিড়ি নাম নিয়ে কচা নদীতে গিয়ে মিশেছে। অপর অংশ মিলেছে বিষখালী নদীতে।
শায়েস্তাবাদ হতে নলছিটি অবধি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। এ জায়গায় নদীটির প্রস্থ প্রায় আধা কিলোমিটার। ব্রিটিশ আমলে এটি আরো বেশি প্রমত্তা ছিলো, সেসময়ে এর প্রস্থ ছিলো ১ কিলোমিটারের মতো। গত ১ শতাব্দী ধরে চর পড়ে কীর্তনখোলার প্রস্থ কমে গেছে। এর পাশাপাশি পলি পড়ে নদীটির নাব্যতাও হ্রাস পেয়েছে।
কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল নৌ বন্দর অবস্থিত, যা বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম নদী-বন্দর।
স্থানীয়ভাবে নদীর নামকরণ নিয়ে দু/তিনটি বক্তব্য শোনা যায়। নদীর পার ঘেঁষেই শহরের সবচেয়ে পুরনো হাট রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, সেখানে কীর্তনের উৎসব হতো। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়েছে কীর্তনখোলা। কেউ কেউ হাটখোলায় স্থায়ীভাবে কীর্তনের দল বসবাস করার কারণে এর নাম কীর্তনখোলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে নদীর নামকরণের সঙ্গে কীর্তনের কিংবা কীর্তনীয়দের যে একটা সম্পর্ক রয়েছে তা নিশ্চিত। কৃষ্ণলীলার কাহিনী নিয়ে কীর্তনীয়রা গানে মেতে থাকতেন। কৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে যমুনা নদীতে লীলায় মেতে উঠতেন। বরিশালে যমুনা না থাকলেও কীর্তনখোলা নদীই যেন রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের গাথা হয়ে আছে।
No comments:
Post a Comment