-আব্বাজান শুনছেন আমার একটা বউ দরকার?
আব্বা পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে চশমার ফাঁকে আঁড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কি লাগবে তোর?
-বউ শুনছি আমি?
-না আব্বা, ভুল শুনছেন। আপনার কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
-কান তোর থেকে ভালো আছে আমার। তোর বই লাগবে তো টাকা নিয়ে কিনে নিয়ে আয়। আর তুই আব্বা ডাকছিস ভালো কথা শেষে আবার জান লাগাইছিস ক্যান বলতো?
-এমনি ডাকছি আব্বাজান।
-তোর মায়ের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আয়।
-আব্বাজান এই বই সে-ই বই না। এটা অন্যরকম বই। বইটা ছাড়া নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে, জীবনে খুব কষ্ট হচ্ছে। বইটা লাগবে?
আব্বা পত্রিকাটা ভাঁজ করে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
-কি বলতে চাচ্ছিস তুই বাপ বলতো? কি বই চাচ্ছিস?
-এটা সে-ই বই, যে বই এখনো পুরুষ মানুষ ঠিকটাক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। যে বইয়ের ভাষা অনেক কঠিন। পড়তে হয়না। তবে বুঝে নিতে হয়। ঠিকমতো না বুঝলে সমস্যা হয়।
-আরে বাপ বইয়ের নাম টা বল, কি বই এটা? ভাষণ দিচ্ছিস ক্যান? আমি কি এসব শুনতে চাইছি?
-এই বইয়ের নাম মানুষের মতো হয় আব্বাজান। তাই অগ্রিম নাম জানিনা। তবে এতটুকু জানি, ববই।
-মাথাটা খাচ্ছিস ক্যান আমার? টাকা নিয়ে কিনে নিয়ে আয় যা। বকবক ভালো লাগছে না।
মোচড়ামুচড়ি শুরু করলাম আব্বার সামনে। আব্বা আবার জিজ্ঞেস করলো,
-কি হইছে তোর? এরকম করতেছিস ক্যান?
-এই বই আপনি আর আম্মা দেখে শুনে এনে দিবেন। সাথে আমি থাকবো। আপনারা ছাড়া এই বই আনা যাবে না। লোকে খারাপ বলবে। আপনারা মারবেন আমাকে।
আব্বা কপাল কুচকে বললো,
-বুঝলাম না কিছু, মারবো কেনো? আর এতদিন বই কিনে আসলি আমাদের লাগেনি। এখন কেনো আমাদের লাগবে কি এমন বই কিনবি তুই? কি মহামূল্যবান বই এটা?
-এই বইয়ের প্রাণ আছে। এই বই কথা বলতে পারে। এই বই মানুষ বই। এই বইয়ের পেছনে টাকা খরচ হয়।
আব্বা এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলো,
-গায়ে তো জ্বর নাই। তোরে তো স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। কিন্তু এসব উল্টা পাল্টা কি বলা শুরু করছিস বই লাগবে বলে? আগা মাথা কিছু বুঝতে পারছি না?
-আমার কিছু হয়নি তো। এই বই মেয়ে বই আব্বা এখনো বুঝেন নাই, কোন বই চাচ্ছি?
-মেয়ে বই মানে? বই আবার মেয়ে আর ছেলে আছে নাকি? এই করোনা কালীন কলেজ বন্ধ থাকায় মাথা টাতা গেছে না তো তোর? নাকি পাগল হয়ে গেছিস?
--জ্বি আব্বাজান এটা মেয়ে বই। এই বইয়ে কোনো ভাষা লেখা নাই, মন দিয়ে বুঝতে হয় এই বইয়ের ভাষা। এটা মনের ভাষার বই।
-এই রায়হানের মা। কই তুমি? দেখো তো ছেলে পাগল হয়েছে কিনা। নাকি জ্বীনে ধরেছে। এসব কি বলতেছে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
এতক্ষণ ধরে সাহস নিয়ে এসব বলে যাচ্ছি, সাহস ধরে রাখছি এটাই অনেক কিছু। শরীরে ঘাম ছুটে গেছে। নিজেকে সাময়িকের এই সাহসিকতার জন্য হিটলার, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী মনে হচ্ছে। আম্মা রান্নাঘর থেকে আসতেছে,
-কি হয়েছে? ছেলের কি হয়েছে হা?
-জিজ্ঞেস করো। এতক্ষণ কি বলছে আমার মাথায় ঢুকেনি। কি বই জানি চাচ্ছে, জান আছে, প্রাণ আছে, মানুষ, গরু বই। এই বই সে কিনতে পারবে না। আমাদেরও যাওয়া লাগবে। মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
-কিরে কি বই লাগবে কিনে নিয়ে আয়।
-এই বই তো এভাবে কিনা যায়না আম্মা। এটা আগে ফ্যামিলি গিয়ে দেখে শুনে আসতে হয়, তারপর পছন্দ করা হয়, তারপর কথাবার্তা ঠিক করা হয়। তারপর আনার জন্য অনুষ্ঠান করতে হয়। এভাবে এই বই আনতে হয়। বইয়ের সাধারণ নাম ববই।
আম্মা জিজ্ঞেস করলো,
-ববই মানে কি আবার? ফ্যামিলি গিয়ে দেখে শুনে আনতে হয়, কেমন বই আবার এটা? চল গিয়ে কিনে আসি।
-এই বই লাইব্রেরিতে থাকে না তো আম্মা। মানুষের ঘরে থাকে।
-কি বুঝাইতেছিস? লাইব্রেরিতে থাকে না তাহলে কিসের বই?
-মানে বউ বই।
বলেই আব্বার সামনে থেকে এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। আব্বা খপ করে ধরতে চেয়েও পারেনি। বারান্দায় এসে চিৎকার করে বললো,
-এই বুঝাইছিস এতক্ষণ। তোর মতি গতি খারাপ শুরুতেই টের পাইছি। এতদিন তোর ঘরে জায়গা যেটা ছিলো সেটাও নাই। আজকে থেকে বাইরে থাকবি। কামাই করে না এক টাকা। আসছে বিয়ে করতে। সাহস কতো। তোর জায়গায় একটা কুত্তা পালবো। তোর বিছানায় ঘুমাবে নে।
No comments:
Post a Comment