Saturday 12 August 2017

২য় বিবাহ




বেড টি?

ঘুম থেকে উঠেই ল্যাপটপে বসেছিলাম। নিবেদিতার আওয়াজে চোখ তুললাম। কেবল গোসল সেরে বেড়িয়েছে। একটা হালকা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে। বেশ সুন্দর লাগছে। এরমধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রথম যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা হচ্ছে, উই বিকেম ফ্রেন্ডস এগেইন। কথাবার্তায় এখন আর জড়তা নেই। দুষ্টামি, খুনসুটি, প্রেম সবই চলছে।
এই শোন টাইপ টোনে আলাপচারিতা হচ্ছে।
সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে আমার পুরনো সব গল্প ওকে শুনিয়েছি। তেমন নতুন কিছু না। ঐ ইশিতার সাথে প্রেম আর বিয়ে নিয়ে যা যা ঘটেছিল, সেটাই একটু রিওয়াইন্ড করে শোনানো। যেহেতু তথ্যগুলো নিজের স্ত্রীকেই জানাচ্ছি, তাই ব্যাপারটা যতটা সম্ভব আবেগহীন ভাবে আর খুব শর্টে বলছিলাম। হয়তো মনের কোনে কেউ একজন বসে গাইড করছিল, বলছিল,
অতো ডিটেলস বলার দরকার কি?

সো, হেয়ার স্টার্টস মাই প্রেমকাহিনী। ছাত্র ভাল ছিলাম বলে একটু অহংকারীও ছিলাম। অপূর্ব সুন্দরী ছাড়া কারো ব্যাপারে ইন্টেরেস্ট দেখাইনি। বেশ কনফিডেন্ট ছিলাম, দারুণ একটা কিছু জুটে যাবে। পছন্দসই একটা মেয়ে পেলাম আমি যখন ফাইনাল ইয়ারে। আমার এক বান্ধবীর বিয়েতে ঈশিতাকে দেখি। অপূর্ব সুন্দরী, প্রথম দর্শনে মাথা ঘুরিয়ে দেয়া টাইপ। বান্ধবীকে যখন জানালাম, তখন পরিচয় করিয়ে দিল। ঐ
হ্যালো, হাও আর ইউ টাইপ আর কি। সেই পরিচয়ে ইশিতাকে কিছুটা ইমপ্রেস হয়তো করতে পেরেছিলাম। মনে হল আমার তরফ থেকে প্রস্তাব গেলে, না বলবে না। বান্ধবীর মাধ্যমে জানবার চেষ্টা হল। প্রস্তাব পাস হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে, এমন রিপোর্ট দিল। বান্ধবীও হেল্প করল, ইশিতাকে জানানো হল, দারুণ ব্রাইট স্টুডেন্ট, দেখতেও খারাপ না। দেন, অচিরেই সম্মতি প্রস্তাব পেয়ে গেলাম। এরপরে? ঐ টিন এজ প্রেম যেমনটা হয়, তারই ছোটখাট জেরক্স কপি।
আমাদের সম্পর্কে ঝামেলাটা ঘটল আমেরিকা যাওয়ার পরে। ইশিতাকে নিয়ে যাই স্টুডেন্ট থাকতেই। অনার্স শেষ করতে পারেনি। এমএসয়ের স্টুডেন্ট হলেও আমেরিকায় আমার কোর্স তখন শেষের দিকে। মাস ছয়েকের ভেতর কোর্স শেষে চাকরীও জুটিয়ে ফেলি। এরপরের কাজ ছিল ইশিতার জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করা। ও সংসারী টাইপ ছিল। কাজ করার তেমন কোন ইচ্ছে ছিল না। বাট, আমিই জোর করি। ওখানে একাকী সারাদিন বাসায় থাকা সবচেয়ে বোরিং একটা ব্যাপার।
এখানে ছোটখাট কিছু কোর্স থাকে। সেসব করলে একটু ভাল জব পাওয়া যায়। আর নয়তো অড জব করতে হয়। আমি কোর্স থাকাকালীন ও তেমনই একটা অড জব করত। এরপরে আমার ভাল একটা চাকরি হয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা চেঞ্জ হল। ওকে একটা কোর্সে ঢোকালাম। দেখতে দেখতে সেই কোর্স শেষ হল। মোটামুটি গোছের একটা চাকরীও জোগাড় হল। আমিও এক্সট্রা কিছু আয়ের আশায় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলাম। আসলে ততোদিনে আমাকে
ভবিষ্যতের ভুতে পেয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাই দরকার। সো লোন নিয়ে একটা বাড়ি কেনার প্ল্যান শুরু করে দিয়েছি। দুজনেই যথাসাধ্য আয়ের চেষ্টা করছি।

ফলে যা হয়। দুজনে দুজনকে সময় আর দিতে পারতাম না। একাকীত্ব ব্যাপারটা আমি তেমনভাবে ফিল না করলেও ইশিতা করছিল। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, ওর একাকীত্ব ব্যাপারটা আমি টের পাইনি। সকালে একসাথে ব্রেকফাস্ট আর রাতে খাবার টেবিলে টুকটাক আলাপ। আর হয়তো সপ্তাহে দুএকবার ওসব। ব্যাস। শুরু হল এটা ওটা নিয়ে খিটমিট দিয়ে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শুরু হল নিয়মিত ঝগড়া। আর তিন বছরের মাথায় একদিন জানতে পারলাম, ইশিতা ওয়ান্টস ডিভোর্স।
এবার টনক নড়ল। ক্ষমা টমা চেয়ে ব্যাপারটা সেটল করার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। বন্ধু বান্ধবরাও এগিয়ে আসল। দে অলসো ট্রাইড দেয়ার বেস্ট। সম্পর্ক হয়তো আইকা লাগিয়ে জোড়া দেয়াও যেত, বাট বাধ সাধল ইশিতার প্রেম। ইন্ডিয়ান এক কলিগের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ততদিনে প্রেমে গড়িয়ে গেছে। আর ইশিতাও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

কোথায় ছিলাম যেন? বেড টি। ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে নিবেদিতার দিকে তাকালাম। বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মনে হল ও নিজেও চাইছে, আমি হ্যাঁ বলি। সেটাই জানালাম। বললাম
--তা এক কাপ হলে মন্দ হয় না।

সকাল সকাল ল্যাপটপ খুলেছিলাম মেইল চেক করতে। এতোক্ষণ সেটাই সারলাম। আসলে গতকাল রাতে আমি লিভ অ্যাপ্লিকেশান পাঠিয়েছি। আরও দিন দশেক ছুটি চেয়ে। তার রিপ্লাই এলো কি না সেটা চেক করতে। রিপ্লাই এসেছে। লিভ এক্সটেনশান হয়েছে। সো, আমাদের দাম্পত্য জীবন আপাততঃ আরও দশদিন বাড়ল। খারাপ চলছে না। লাস্ট নাইট, উই ডিড ইট।
ইশিতা সমাচার পুরোটা জানানোর পরে, আর এই তিন বছর কি একাকী জীবন কেটেছে সেসব বিস্তারিত বলার পরে, মনটা অনেক হালকা হয়ে গিয়েছিল। ওকে যখন জানালাম, এই বিয়ে নিয়ে কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, তখন দেখলাম নিবেদিতাও আমার প্রতি অনেকটা সফট হয়ে গেছে। সে ও বুঝতে পেরেছে, কি সমস্যায় আমি পড়েছি। জানাল, বিয়ের আগেই একবার কথা বলে নিলে ভাল হত।
এরপরে মজার যে ঘটনাটা ঘটল, তা হচ্ছে, উই বিকেম ফ্রেন্ড। ও যেমন নিজের পুরনো সব গল্প আমার সাথে করতে শুরু করল, আমিও। আমার কি পছন্দ, কি অপছন্দ, লাস্ট কোন সিনেমা দেখেছি, কোন বন্ধু কেমন, টিপিক্যাল আড্ডা টাইপ আলাপ। কখন যেন নিজের অজান্তেই ঠিক করে ফেললাম, লেটস টেক অ্যা চান্স। ওকে জানালাম, নিজেদের সব অতীত ভুলে আরেকবার শুরু করতে চাই। স্মিত একটা হাসি দিল। হ্যাঁ টাইপ হাসি। সো, এই বিয়ে কন্টিনিউ করার ডিশিসান নিয়ে ফেললাম। এরপর থেকে আই স্টার্টেড এঞ্জয়িং দ্যা রিলেশানশিপ। নিবেদিতা যা করছে, সবই কেন যেন ভাল লাগছে। সেই টিন এজ প্রেমের দিনগুলোর মত।

--আজ কোন কাজ আছে?

নিবেদিতা চা নিয়ে এসেছে। চুমুক দিলাম। ভালোই লাগল। ও নিজে বানিয়েছে মনে হচ্ছে। এটা মায়ের হাতের বানানো না। সিগারেটের প্যাকেটটা টেবিলের ওপর ছিল। চোখের ইশারায় জানালাম ওটা এগিয়ে দিতে। আবার কি খেতে চাইবে? সেদিনের পর আর চায়নি। কেন যেন ইচ্ছে করছে ও চাইবে। চাইল না। সিগারেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল। সিগারেট ধরাতে ধরাতে জানতে চাইলাম
--তেমন কিছু না। তোমার কোন প্রোগ্রাম?

--একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিব।

--আমাকে যেতে হবে?

--না। বিয়ে উপলক্ষে ওদেরকে একটা ট্রিট দিচ্ছি আর কি।

--ইন দ্যাট কেস, আমারও তো একটা দেয়া উচিত। মোবাইলটা কোথায়?

--চার্জে দিয়েছি। ওয়েট।

নিবেদিতা উঠে গেল। এব্যাপারটাও ভাল লাগল। টিপিক্যাল বাঙালি বউয়ের মতোই তো বিহেভ করছে। চা বানিয়ে খাওয়ানো, স্বামীর ছোটখাট ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা। চলবে। মোবাইলটা নিয়ে ফেরত আসছে নিবেদিতা। চেহারা কি একটু গম্ভীর লাগছে? না আমার চোখের ভুল? এই কয় সেকেন্ড কি বা এমন হতে পারে?

--এনিথিং রং?

কিছু বলল না। ওর হাত থেকে নিলাম। ও ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরতে যাচ্ছিল। হাত ধরলাম। বেশ আলতো করে জানতে চাইলাম

--কি হয়েছে?

ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। চোখে সেই পুরনো শীতল চাহনি। অবাক হয়ে একবার ওর দিকে একবার মোবাইলটার দিকে তাকালাম। স্ক্রিনে চোখ পড়ার সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম, আমার চোখ ভুল করেনি। ওর চেহারা আসলেই গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল। স্ক্রিনে তখন ছোট্ট একটা চৌকনা বক্সে সদ্য আসা ফেসবুক ম্যাসেজটা জ্বলে আছে। আমার আমেরিকা প্রবাসী বন্ধু শিশির ম্যাসেজটা পাঠিয়েছে। একটা লাইন লেখা।

'ইশিতা ব্রোক আপ।'

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...