দিনলিপি জুড়ে শুধু ঝরা পাতার হাহাকার। বুকে নিয়ে বসে থাকি শূন্যতার পৃথিবী এক। অবচেতনায় কলম হয়ে যায় আঙুল। শূন্যে লিখি জটিল মনস্তত্ত্ব, স্মৃতির কবিতা। কে জানত,স্মৃতির কথা ভেবে ভেবে সারা হব একদিন- শেষ হব অর-ধ্বনিতে! অজস্র স্মৃতির মুহূর্ত ত হয়ে কবি’র অন্তরে, কবিতার পংক্তি হয়ে কাগজের পৃষ্ঠায়!
একদিন স্মৃতি বিস্মৃতি হলে স্বপ্ন ভেঙে যায়, কবিতা হয়ে যায় নির্জন দুপুর, হারানো দিনের গান ।
আত্মপ্রতারণা
ক.
স্বপ্ন সত্যি হবে না জেনেও অনেক সত্যি গোপন করেছি, অনেক নদীর গল্পে মগ্ন পাঠক হয়ে জেগে থেকেছি গভীর রাত। অজস্র মিথ্যের মনভোলানো রূপ বিশ্বাস করেছি বলে উৎসবের আমেজে এই রাত ঘুঙুর পায়ে নেচে যাচ্ছি উন্মাদ-মাতাল। বিশেষ কোন বৃষ্টির দৃশ্য ছাড়াই দিন শেষ- সন্ধ্যেটা তাই নিরামিষ! সমকাল আলোচনায় ছিলাম শুধুই শ্রোতা। কবিতা যদি জানতো অর্থহীন ক্যালিগ্রাফিতে ভরে যাচ্ছে সাদা পৃষ্ঠার ক্যানভাস...। ইস্! এখন যদি লোডশেডিং হতো, অন্ধকারে ভরে যেত ঘর...
ইতি টেনে দিতে পারতাম যদি কালি ও কলমের সম্পর্ক, হয়তো রাত্রির ঘুমে খুঁজে পেতাম স্বর্গের সুখ।
খ.
হয়তো অনেক কিছু লুকাই-গোপন করি অজস্র সত্যি- প্রতারণা করি জেনে-শুনে। তবুও দ্যাখ, ফিরে আসি তোমার কাছেই। অবচেতনায় হয়তো কালো রূপটাকেই ভালবাস- হয়তো জানো, নষ্ট’র আড়ালে আছে ভাল’র একটি মুদ্রা।
বারবার জ্বলে যাও- পুড়ে যাও বুকের মধ্যে। তবুও...
গ.
মরে যেতে যেতে ঠিকই বেঁচে উঠছি আবার- ঘুমোতে ঘুমোতে যেমন জেগে উঠি। স্মৃতি-বিস্মৃতির ভর বহন করতে করতে কখন যে ভীষণ কান্ত হয়ে উঠি...। আগামীর অভিমুখ যাত্রায় অজস্র লোভ ও আকর্ষণ কাছে ডাকে যেন রমণীয় সম্মোহন...। মাতালের মত টলতে টলতে একবার আমি পাহাড়ের উপর ভেঙে পড়ি আর একবার সমুদ্রের কাছে এসে প্রতারণার শিকার হই!
সেই যে একদিন মধ্যরাতের কথাকাটিতে কেটে গেল হৃদয়- মারাত্মক আহত হল প্রাণ, সেই থেকে ভেসে বেড়াচ্ছি শূন্য হয়ে মহাশূন্যে, অনন্তকাল।
ফেরে না কেউ
অলস দুপুর হেঁটে চলে গেছে নিরুদ্দেশ। সন্ধ্যে হলেও ফেরেনি ঘরে। দুপুরের মতো বেড়াল পায়ে বিকেলগুলোও চলে গেছে শহর ছেড়ে। কোনদিন কি দেখা হবে মুখোমুখি আর ? কী ভীষণ নস্টালজিক এই রাত্রির গহন অরণ্য! ফসলের তে থেকে কত যে উঠে আসে সকরুণ দীর্ঘশ্বাস। ঘাসের উপর খোলস বদলানো একটি গোখরো কী বীভৎস সুন্দর! ধোঁয়ার মতো ধূসর শূন্যতায় ভরা নির্জনা এই রাত্রির কালোমাটির ভূ-খণ্ড। অদূর অদৃশ্য থেকে ভেসে আসে মরে ভূত হয়ে যাওয়া শেয়ালের অতৃপ্তি- তুমুল কোরাস। অপঘাতে যারা মারা পড়ে তারা কেন ফিরে আসে রাত নামলে পৃথিবীর অন্ধকার-অভ্যন্তরে ?
স্মৃতি ভুলে যাওয়া অলস দুপুর, নীলাকাশ বিকেল- ফেরে না কেউ আমি শুধু অমাবস্যার রাত জেগে ডায়রির পাতায় লিখে রাখি হলুদ হরফে প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্ক বিকৃতি।
বোঝ না মীন-প্রজাতি
প্রচণ্ড ঝড় শেষে পড়ে আছে বিধ্বস্ত রূপ- মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাটিতে যেন রতিকান্ত সাপ। কোন কারণ নেই, অকারণেই এই রাত গহন অন্ধকার। কুয়াশার কাফন হয়ে সাদা এক বিষাদ-ঢেউ ঝুলে আছে চোখের আলোতে। দেখি না হাতের কাছে...। বহুদূর অজ্ঞাত ! খোঁজ নেই বহুদিন-কেমন আছ মৎস্যগন্ধা সমুদ্রের তলায় ? চর হয়ে পড়ে আছি অপেক্ষায়। জান না প্রতীক্ষা জান না বালির এই বুক- বুকের উপর সারারাত জ্বলে ফসফরাস।
বোঝ না মীন-প্রজাতি রোদে পুড়ে মরি না- শুধু মারাত্মক আহত হই বুকের গভীরে, স্রোত হারিয়ে লালজলের।
পোড়া রাত
দৃশ্যত: স্বপ্ন ভেঙে যায় ধুলো হয়ে- রাতের গভীরে তীব্র যন্ত্রণা হাড়ের ভেতর। নিষিদ্ধ এক গল্প পাঠ ছায়াছবি হয়ে চলতে থাকে শূন্যতাপথে...। নৈ:শব্দের নীল আগুন ছড়িয়ে পড়ে শরীরের কোষে কোষে- চেতনার আকাশ জুড়ে ধুলোর মেঘ- গহীন অরণ্য-পোড়া ছাই।
হাতের মুঠোয় যখন গোলাকার চাঁদ, তীব্রতর হয়ে ওঠে তলপেটের ব্যথা। আর কোন শব্দ নেই- অর-বর্ণের ছোঁয়া নেই মরা মাছের মতো ভেসে থাকি জলের উপর- শুয়ে থাকি অন্ধকারে অতৃপ্ত আত্মা।
নোনা কবিতা
এক.
সবাইকে কি বলা যায় কোথায় আমার মন উড়ে উড়ে আকাশ, কান্ত পড়ে থাকে
কোন আধারে- রাতে কার বুকে মাথা রেখে...। এইসব সরল আলাপ গান হয়ে গুনগুন করে যখন-তখন ঠোঁট, ঠোঁটে...। গোপন-প্রকাশ্যে কল্পনার পৃথিবীতে কত যে দৃশ্য ও ছবি’র সাদা-কালো, রঙিন রাত্রির প্রেম-উৎসব...
কাউকে বলিনি, মনে মনে কার সাথে দুষ্টুমি আমার- মান-অভিমানের নোনা কবিতা,
কাউকে বলিনি কার সাথে আমার ‘বউ কথা কও’ পাখির ডাক।
দুই.
ভয় আর দ্বিধায় কতবার যে মরেছি ঘাট থেকে ঘাটে...। পথে পথে কী ভীষণ বিব্রতকর এই অস্তিত্ব- কী ভীষণ বিকট অসহায় দর্শন ! রূপ নেই- রস নেই; গন্ধহীন- রঙ নেই। অর্থহীন বোধ! দিনগুলো দূরে রেখে কুয়াশার মেঘ- উড়ে যাচ্ছি হারানো সুর, রাত্রির অন্ধকার প্রদেশে যেখানে মরে পড়ে থাকে অনুভূতির অজস্র দুর্লভ- যেখানে ঝরে ঝরে শুকিয়ে যায় বকুলের ভেষজ গন্ধ- উড়ে যাচ্ছি বিষণ্ণ ছায়া এক, ফিরে যাচ্ছি অদৃশ্য রেখার পথ বেয়ে...
বহুদিন ছায়া হয়ে, ছবি হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি- আয়ুরেখায় য় করেছি অজস্র বিনিদ্র রাত।
যা মনে আসে তাই...
বন্ধু ভাবি যারে সে তো ভাবে শত্রু- এইতো প্রেমের স্বাদ! তারপর আর কিছু নেই- নেই কোন তৎসম অথবা তদ্ভব শব্দের মুহূর্মূহু করতালি। প্রগলভ: স্বভাবে তবুও যা মনে আসে তাই বলি আশা আর লতাকে- নদী-পাহাড়-অরণ্যের কথাও বলি- বলি, মেঘলা আকাশ থেকে বৃষ্টির তুমুল বর্ষণ ! একদিন কথায় কথায় লজ্জার কথাও বলেছিলাম সুমিকে- উত্তরে বলেছিল, ‘আপনিতো ভীষণ ছোটলোক।’
আক্কেল হয়নি। বেয়াক্কেল স্বভাবে আজও তাই নদীর প্রেমে হাবুডুবু খাই।
আমার শুধু আমিই আছি
মাটির স্পর্শ বুঝি- বুঝি না আকাশ ছোঁয়ার অনুভব। দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের মতো কাঁটা নেই প্রাণের ভাষায়, বন্ধু বলে নেই কোন অভিনয়ের মতো সহাস্য কৌতুক! ঐশ্বর্যের মতো প্রিয় কোন শত্রু নেই-আছে শুধু প্রেম-প্রীতি ও মমতার মতো স্বাধীন কিছু শব্দের উপমা। ফুলের ফাগুন নেই- ভুলের মাসুল নেই- আছে অচল মুদ্রা কতক- অনর্থক। সরল পঙক্তির মতো আশ্চর্য অথচ কিছু সুন্দর উচ্চারণ ছাড়া বুঝি না আর কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কীটতত্ত্ব!
এইতো আমি- আমার দাঁড়িয়ে থাক ! দূরে যাবার দরকার নেই- কাছে থাকার অধিকার নেই, আমার শুধু আমিই আছি, সুলভ ভাবসম্প্রসারণ !
অন্ধকারে আমি আজন্ম সাঁতারু
নীরবতা ভেঙে সেলফোনটা জেগে ওঠে হঠাৎ সুরেলা কণ্ঠে- কে যেন ডাকে আমায়। সাড়া দিতে ইচ্ছে করে না- সেলফোনটা ডেকে ডেকে থেমে যায়। সেলফোন ভুলে...। চোখ বন্ধ করলে যে অন্ধকার সেই অন্ধকারে সাঁতরাতে সাঁতরাতে খুঁজতে থাকি ডাঙা।
অন্ধকারে আমি আজন্ম সাঁতারু- ডাঙা খুঁজে না পাওয়া।
অদ্ভুত এক নদী-নদীর ঘাট
জোয়ার-ভাটা না বুঝেও ঘাটে বসবাস- ঘাটে বেলা
ওঠে বেলা ডোবে। ঘাট পার হয়েই যেতে হয় ওপারে...
ঘাটে বাস অথচ ঘাট চেনে না হরিদাস !
ভালবাসা
ডানা মেলে উড়ছি
যেন ফড়িং!
নৃত্যের তুমুলে লালপাখায়
বেঁধে রেখে মৃত্যু।
দৃশ্যের এক টুকরো কাঁচ
(অটোমেটিক ডেভ্লপ করতে শুরু করেছে সাবকনসাস-মাইন্ড, অতর্কিত মস্তিষ্কে নৃত্য করতে শুরু করেছে রোবোটিক বাটারফ্লাই!)
চোখের মণি ঘোরাফেরা করে আয়নায়, দ্যাখে প্রাণের প্রতিবিম্ব! টের পাই রাত ঢুকে যাচ্ছে রাতের গভীরে, যেন নিঃশব্দ আততায়ী...। অবচেতনে মুখোশ খুলে বেরিয়ে পড়ে কংকাল সদৃশ হাড়ের কাঠামো- এই পর্যন্ত প্রকাশ্যে হেঁটে বাঁকবদল হয় দৃশ্যের; হাতবদল হয় চিত্রনাট্যের! অবসাদের নীলে ভরে যায় চোখ, বিদ্যুৎ চমকায় না, কেবল তুমুল বৃষ্টিতে ভেজে প্রকৃতির আঁধার।
গল্পপাঠ আধ্যাত্মের নতুন মাত্রা যুক্ত হয় কালের কণ্ঠে! ঘোরের মধ্যে মধ্যরাত সিগারেটের আগুনে পুড়ে অ্যাশ্ হয়- অ্যাশ্ হয়ে অ্যাস্ট্রেতে পড়ে থাকে পোড়া স্বপ্নগন্ধ্যা ফুল!
বৃষ্টি অথবা বিষাদের আকাশ-নীল
বৃদ্ধ বিশদ বুঝি এখনও জেগে আছেন কবিতার খাতায়- লিখে রাখছেন শ্রমক্রুশ, শ্রমপদ্ম, শ্রমপল্লব...। ঋতু তুমি জেনে রেখ পণ্ডশ্রম ছাড়া আমার কখনও হবে না বসন্ত! অনধিকার চর্চা অথবা সমালোচনা ছাড়া কখনও হয়নি কিছুই- আশা অথবা আকাঙ্ক্ষা। এরই মধ্যে যখন দম নিচ্ছি ঝমঝমিয়ে তখনই নামল বৃষ্টির রিমঝিম- ঋতু এখন কি বর্ষা ? বৃষ্টির শব্দে শুনছি নৈশব্দের রাত! কত সনাতন এই শব্দ অথচ কত সুসভ্য এই স্বর- প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও কী ভীষণ শীতল স্পর্শ!
নীরবতার ভেতরে প্রকাশিত হবো বৃষ্টি অথবা বিষাদের আকাশ-নীল, অনেক দহন জমে আছে হৃদপত্রে-অজস্র নিষিদ্ধ গোপন হয়ে আছে আত্মপ্রতারণায়।
যন্ত্রণার নীল থেকে
ক.
পাখির ডানায় ভেসে উড়ে উড়ে দেখেছি আকাশ-অসীম!
মধুর এক যন্ত্রণার অনুরণন অনুভবে-
হায়! প্রেম যদি হারিয়ে যেত-
সারাদিন-রাত বৃষ্টি হয়ে ঝরে যেত চোখ থেকে জলের মেঘ...
হয়তো আর কিছু পাবার নেই
যা কিছু পাওনা, পেয়ে গেছি সব
স্বপ্ন থেকে কল্পনা পর্যন্ত!
নিঃস্পৃহ দৃষ্টি, বহুদূর পর্যন্ত এই আমি উদাসীন,
উদ্দেশ্যহীন...
খ.
অসময়, বসে আছি নিস্তব্ধ
যেন প্রাণের চিহ্ন নেই অস্তিত্বে-
যেন বহুদিন ঘুমিয়ে আছি!
শুধু অচেনা কণ্ঠ এক গলে যাচ্ছে বাতাসের সংস্পর্শে এসে-
পৃথিবীর বাতাসে মিশে আছে শত-সহস্র বুকের দীর্ঘশ্বাস।
কবে থেকে যে এমন শূন্যতার বুক
অন্তরে অসহায় বোধ...
আর কত রাত জলের গ্লাসে পান করে যাব
তরল নিভৃতি!?
পতনকাব্যে
শত শত কিলো পেরিয়ে এসে যে বাসটা এখন ঘর্ষণের শব্দ হয়ে চাকায় চলে গেল ছুঁয়ে দিয়ে সেও জানে কোন খাদে গিয়ে সে পড়বে যাত্রীসমেত!? ‘খাদে পড়াও’ তো পতন! উঁচু-নিচু; উত্থান-পতন - এর মধ্য দিয়ে কোথায় যাচ্ছি- কোন সে দূর?
পতনকাব্যে আহত তারুণ্য সারারাত সাঁতরায় শূন্যতার নীল।
নির্জনতা থেকে পাঠ
অনেক সত্য লুকিয়ে থাকে প্রতারণায়। পথ ভুলে যে পথে হাঁটি সে পথও মিথ্যে নয়। যে অধিকারে কবিতা আমাকে টেনে নিয়ে আসে গভীর অন্ধকারে- বসিযে রাখে লোভাতুর আকর্ষণে আর হাসে রহস্যময় আমার কাছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই।
কেউ কি জানি কেন কখনও কখনও আহত হই দ্বন্দ্ব ও দ্বিধার মতো অদৃশ্য কাঁটায় ? নিশাচর পাখির মতো রাত-নদী সাঁতরেও কখনও খুঁজে পাইনি শান্তির সুবর্ণদ্বীপ।
No comments:
Post a Comment