Thursday 10 August 2023

মুখোশ

 একটা যুবতী মেয়ে উপুড় হয়ে ঝোপঝাড়ের নির্জন জায়গায় পড়ে আছে। রতন ভোরবেলায় গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছিল, গোঙানি শোনে এদিকটায় উঁকি দিয়ে দেখলো একটা মেয়ে পড়ে আছে। মেয়েটার চুল এলোমেলো, শরীরের কাপড় ঠিকঠাক নেই।

.
রতন মেয়েটাকে তুলতে গিয়ে বেশ অবাক হয়! বিস্মিত হয়ে খানিক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
এই মেয়েটাকে সে চিনে, পাশের গ্রামে বিলের পাড়ে বাড়ি। হাটে যেতে হলে এদের বাড়ির দিকেই নৌকা নিয়ে যেতে হয়।
রতন সেবার হাটে যাবার সময় মেয়েটাকে দেখেছে বিলের পাড়ে গোসল করতে। এই ঘাটে পাড়ার সবাই গোসল করে, কয়েকটা ইট দিয়ে বাধা ঘাটে এরা গোসল সেরে নেয়। মেয়েটাকে ভেজা কাপড়ে দেখে রতনের ভেতরে ভেতরে এক অজানা রব উঠেছিল, মেয়েটার মোমের মতো শরীরের ভাজে ভাজে ফুলেফেঁপে উপচে পড়া যৌবন।
.
রতন লোভাতুর চোখে খানিক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
সাথে সাথে আবার নিজেকে সামলে আপন মনে বৈটার ছলাৎ ছলাৎ টানে বাজারে চলে যায়।
এর পর থেকে হাটে গেলেই রতন এই ঘাটের দিকে তাকিয়ে থাকে, কেন তাকায় সে আলাদা করে জানেনা।
.
কিন্তু এই মেয়েটা এখানে পড়ে আছে কেন ! রতন মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঐদিনের মতো চেহারায় সেই যৌবনা ভাব আর নেই।
মরা মাছের মতো মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে। রতন আসেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। অনেকদূরে কেউ জমিতে কাজ করছে, কেউ গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে।
.
রতন চিৎকার করে ডাকতে শুরু করল, 'এই যে মিয়া ভাই এইদিকে একটা মেয়ে পড়ে আছে, ও কাকা শুনছেন এইদিকে একটা মেয়ে পড়ে আছে তাড়াতাড়ি আসেন।'
খানিক্ষণ পড়ে অনেক মানুষের ভীড় হল। সবাই যার যার প্রাথমিক ধারণা নিয়ে একজন আরকজনের সাথে বলাবলি করছে, কেউ বলছে গ্রামগঞ্জে আজকাল ডাকাতরা জিনিসপত্র হাতিয়ে আনার সময় যুবতী মেয়েদের পেলেও নিয়ে আসে।
কেউ বলছে, 'শালী মনে লয় মাগী, রাতে খদ্দের লগে এহানে আইছিল'..
.
হঠাৎ সবাই লক্ষ করলো মেয়েটার শুকনো ঠোঁট নড়ছে, আর বিড়বিড় করে বলছে, 'পানি, পানি।'
পাশের ডুবা থেকে মুখে পানি দেওয়া হল।
সবাই বুঝতে পারল জীবিত আছে, কিন্তু মেয়েটাকে কেউ চিনে না।
রতন আমতা আমতা করে বলল, 'আমি চিনি এই মেয়েকে।'
সবাই রতনের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইল। রতন আবার বলল মেয়েটার বাড়ি পাশের গ্রামের বিলের পাড়ে।
কেউ আসেন আমার সাথে, নৌকায় করে মেয়েটাকে বাড়িতে দিয়ে আই।
রতন মেয়েটাকে কাধে নিলো, সে বিলের পাড়ের সেই ভাজে ভাজে যৌবন ফুলেফেঁপে পড়া রূপবতী মেয়ের মোমের মতো শরীরে স্পর্শ করছে তার মনেই হচ্ছে না।
মেয়েটার প্রতি লোভ এখন আর কাজ করছে না।
এসব অনুভুতি বোধ হয় আপেক্ষিক, পরিবেশ পরিস্থিতির উপরও অনেকটা ডিফেন্ড করে।
নৌকা গিয়ে মেয়েটার বাড়ির সামনে লাগলো, রতন নৌকা থেকে ওঠে বাড়িতে খবর দেবার জন্য নামলো। গিয়ে দেখলো বাড়িতে একজন মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই।
বোধহয় পুরুষরা মেয়ের খুজ - খবর করতে বেরিয়ে পড়েছে। মহিলাটা মুখ কঠিন করে খাটের পায়ার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন, রতনকে দেখে তিনি জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন।
- আপনাদের বাড়ির একটা মেয়েকে আমাদের গ্রামের বনে পাওয়া গেছে।
গুমোট ভাবটা কেটে মহিলার চেহারায় অস্থিরতা ফুটে উঠলো, খানিকক্ষণ পর মহিলা হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বলল, 'কই আমার মুনিয়া মামণি।'
.
রতন আবার মেয়েটাকে কাধে করে বাড়িতে নিয়ে এলো, বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই দেখে রতন নিজেই ডাক্তার আনতে হল।
.
কিছুক্ষণ পর মুনিয়া চোখ খোলে তাকাল, দূর্বল চোখের চাহনি। মায়ের দিকে তাকিয়েই চোখ ভিজে গেল। মুনিয়ার সাথে যা হয়েছে তাতে মায়ের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। শুধু মা না, এই সুন্দর পৃথিবীর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াও যায় না।
.
আমি এবার যাচ্ছি বলে রতন দাড়ালো। মুনিয়া বিড়বিড় করে বলল, 'আপনি আবার আইসেন।'
গভীর মমতায় যেন রতনের বুকটা ভরে গেল, 'জ্বী আইমু নে।'
.
মুনিয়ার মা উঠানে বসে নিজের কপালে থাবা দিয়ে কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন, পাড়ার মহিলারা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছে, অতি উৎসুক বাচ্চারা এসে ভীড় জমিয়েছে।
মুনিয়ার কোনো অনুভুতি প্রকাশ পাচ্ছে না, সে দু'পা ছড়িয়ে খাটের পায়ার সাথে হেলান দিয়ে স্থির চোখে বসে আছে।
তার বিয়ে ঠিক ছিল। আগামী শুক্রবার ধনবান গৃহস্থ পিতা রইসু মিয়ার একমাত্র পুত্র রউফ মিয়ার সাথে মুনিয়ার বিয়ে হবার কথা।
কিন্তু একটু আগেই রইসু মিয়া এসে জানিয়েছেন বিয়েটা হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না সেটা সোজাসুজি না বলে ভদ্রতা করে বলেছেন উনার ছেলেকে এখন বিয়ে দেবেন না। তোমরা মুনিয়ার জন্য অন্য জায়গায় পাত্র দেখতে পারো। এর পর থেকে মুনিয়ার মা কান্নাকাটি করেই যাচ্ছেন।
.
এলাকায় বেশ কানাঘুষো হচ্ছে মুনিয়াকে নিয়ে। কি নির্লজ্জ মেয়ে, সারারাত একটা বনের নির্জন জায়গায় পড়ে থেকে অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে অথচ মেয়েটা কতো সহজ - স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা শুরু করেছে। ধর্ষিত হলে মেয়েরা আত্মহত্যা করে ফেলে, কিন্তু এই মেয়ের যেনো কিছুই হয় নি।
.
সন্ধ্যা বেলায় রতন বাঁশি হাতে মুনিয়াকে দেখতে এসেছে। রতনকে দেখেই সে কেমন যেনো হাসিখুশি মুখে এগিয়ে এলো। মনে হচ্ছে রতনের জন্যই অপেক্ষা করছিল।
- 'বন আপনি, হাতে কি এইটা ?'
- 'সন্ধার সময় বিলে বাঁশি বাজাই, যাওনের সময় বাজামু তাই হাতে নিয়ে আইলাম।'
- 'বাপজান হাটে গেছে, আপনি এহানে বাঁশি বাজান শুনি।'
মুনিয়ার এমন স্বাভাবিক কথাবার্তায় রতনের অস্বস্তি লাগছে। শুধু রতনের না, বিপর্যয়ে মানুষকে স্বাভাবিক দেখলে অস্বাভাবিক লাগে, মনে হয় লোকটা পাগল হয়ে গেছে।
- 'আরে বাঁশি বাজান শুনি।'
রতন বিব্রত হলেও চোখবুঁজে বাঁশি বাজাতে লাগল, মুনিয়া এই ফাঁকে অনেক্ষণ বাহির থেকে এসে আবার রতনের সামনে বসেছে।
রতন একমনে বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে, মুনিয়ে সামনে বসে শুনছে।
- 'পরান জুরিয়ে গেল আপনের বাঁশির সুর শুনে, বিলে আপনার সাথে আমাকে নিবেন ? আপনের বাঁশি সুর বাজানো শুনুম।'
রতন অবাক দারুণ অবাক হয়! এই মেয়ে কি বলছে এসব, এই আন্ধকারে তার সাথে বিলে নৌকায় বসে বাঁশি বাজানো শুনতে চায়, লোকে কি বলবে!
- 'আরে নিবেন না, বাপজান হাটে গাছে মায়ে কিছু কইবো না চলেন।'
রতন আমতা আমতা করে কিছু বলতে যেয়েও বলল না। দু'জন নায়ে গিয়ে উঠলো,
রতন মাঝ বিলে গিয়ে নৌকা বেধে ফেলল। নৌকার চাউনির ভেতরে গিয়ে বাঁশি বাজাতে লাগলো, মুনিয়া একমনে শুনেই যাচ্ছে।
খানিক পরে বাশির সুরে মজে গিয়ে রতনের কাধে মাথা রেখে সে হেলে পড়লো।
রতন আঁতকে উঠলেও নিজেকে সামলে আবার বাঁশি বাজাতে মনযোগ দিলো।
মুনিয়ে হঠাৎ কাদতে কাদতে গভীর মমতায় রতনকে জড়িয়ে ধরলো।
এই অবস্থায় রতন অপ্রস্তুত হয়ে যায়, কি করবে ভেবে পায় না। মেয়েটার কি মাথা ঠিক নেই ?
- 'আপনি কি করবার লাগছেন ?'
- 'আপনিই তো আমারে বাচাইলেন, আমি নিজেকে আপনার কাছে সপে দিবার চাই।'
- 'কি কইবার লাগছেন এইগুলা ?'
- 'আমার তো সব শেষ। সারা অঞ্চলের লোক জানে আমি এহন নষ্টা মাইয়া। একবার ধরেন না আমায় জড়িয়ে ।
.
রতন কিছু না ভেবে জড়িয়ে ধরে, জড়িয়ে ধরার পর রতনের ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। মুনিয়া গভীর মমতায় তাকে চুমু খাচ্ছে, রতন দারুণ অবাক হয়।
কিন্তু ধীরে ধীরে তার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়, সেও একপর্যায়ে মুনিয়ার মমতায় মোমের মতো গলে গিয়ে চুমু খেতে লাগলো। রতনের গায়ের কাপড় খোলে মুনিয়া গভীর মনযোগে একবার তার গায়ের গন্ধ নিলো, তারপর গভীর মমতায় পিঠে হাত বুলাচ্ছে।
মুনিয়া হঠাৎ নিজেকে সামলে রতনকে ছেড়ে দিলো।
রতন বাঁশি বাজানোর সময় বাহিরে এসে নায়ে একটা জিনিস রেখে গিয়েছিল, সেটা একটা মাংস কাটার দারালো দা।
মুনিয়া ধীরে ধীরে দা বের করেই রতনের বুক বরাবর একের পর কুব বসিয়ে দিলো। রতনের চিৎকারে সন্ধ্যার সুনশান নীরবতার অন্ধকারে সারা এলাকায় হৈচৈ শুরু হয়ে গেল।
চারদিক থেকে এলাকার মানুষ লাইট হাতে একেকজন একেকদিকে বের হচ্ছে।
রক্তে নৌকা ভেসে যাচ্ছে, কিন্তু মুনিয়া থেমে নেই, সে একের এক কুব দিতে দিতে হা - হা - হা করে ভয়ংকর ভুতুড়ে হাসি দিয়েই যাচ্ছে।
২.
মুনিয়ার গভীর মমতায় রতন মোমের মতো গলে যায়, তার হিতাহিত জ্ঞান ধীরে ধীরে লোপ পায়। বাঁশি বাজানো বন্ধ করে মুনিয়াকে সায় দিয়ে নৌকার চাউনির ভেতর দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরে। মুনিয়া রতনের গায়ের গন্ধ নেয়, পিঠ হাতড়ে বেড়ায় তার হাত।
আচমকা মুনিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। রতন বাঁশি বাজানোর সময় মুনিয়া বাহিরে এসে নায়ে একটা জিনিস রেখে গিয়েছিল, সেটা একটা মাংস কাটার দারালো দা।
মুনিয়া ধীরে ধীরে দা বের করেই রতনের বুক বরাবর একের পর কুব বসিয়ে দেয়। রতনের চিৎকারে সন্ধ্যার সুনশান নীরবতার অন্ধকারে সারা এলাকায় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
চারদিক থেকে এলাকার মানুষ লাইট হাতে একেকজন একেকদিকে বের হচ্ছে।
রক্তে নৌকা ভেসে যাচ্ছে, কিন্তু মুনিয়া থেমে নেই, সে একের পর এক কুব দিতে দিতে হা - হা - হা করে ভয়ংকর ভুতুড়ে হাসি দিয়েই যাচ্ছে।
.
গতকাল গভীর রাতে রতন মুনিয়াদের বাড়ির পাশের ঝোপে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। তার ধারণা রাতে শৌচাগারে যাবার জন্য মুনিয়া বের হবেই ।
গ্রামে ঘর থেকে খানিকটা দূরেই শৌচাগার থাকে।
শেষ রাতের দিকে আলো বাড়িয়ে হারিকেন দরজার সামনে রেখে মুনিয়া শৌচাগারে যায়।সেখান থেকে বের হবার সময় হঠাৎ কেউ একজন তার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে। গভীর অন্ধকার রাতে হাত মেললে হাত দেখা যায় না।
মুখ চেপে ধরে বিলের পাড়ে নিয়ে মুখ শক্ত করে বেধে ফেলেছে। বাধার সময় সে দু'একটা চিৎকার দিলেও কেউ শুনতে পায় নি।
মুখ বাধার পর চোখ, হাত - পা সব বাধে। মুনিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না, শুধু গলাকাটা মুরগীর মতো শরীর নাড়াচাড়া করছে৷ কেউ একজন নায়ে করে তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। কে সে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
অনেক্ষণ পর তাকে নৌকা থেকে নামিয়ে হাত - পায়ের বাধ খোলে দিলো লোকটা, কিন্তু মুখ আর চোখ বাধা।
ধীরে ধীরে কাপড় - চোপড় খোলে সে উপরে উঠলো, নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে বারবার পিঠে থাপড়াচ্ছিল মুনিয়া।
তখন লোকটার পিঠের মাঝখানে টিউমারের মতো ছোট মাংসপিন্ড মুনিয়ার হাতে লাগে।
খানিক্ষণ পর অসহ্য যন্ত্রণায় ধীরে ধীরে মুনিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়।
ভোরবেলা দিনের আলোয় মুনিয়ার জ্ঞান ফেরে।
কিন্তু দূর্বল শরীর নিয়ে চোখ - মুখ বাধা অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকে।
.
মেয়েটাকে অজ্ঞান অবস্থায় রেখে রতন নৌকা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷ কিন্তু বাড়িতে এসে তার ভয় বাড়তে থাকে৷ কয়েক বছর আগে এই এলাকায় একটা মানুষ খুন হয়েছিল, খুনীর ডেড বডি বিলে ভেসে যায়। এই নিখুঁত খুন থানা - পুলিশ হবার পর আসামী সনাক্ত হয়। এলাকার মানুষ এটা নিয়ে দারুণ অবাক! কিভাবে একটা অজানা খুনীকে পুলিশ তদন্ত করে সব বের করতে পারলো।
মেয়েটা যদি মরে যায় তাহলে থানা - পুলিশ হবে। এটা ভাবতেই রতনের ভয় লাগে। তার ধারণা মেয়েটা না মরলে সে থানা - পুলিশের ঝামেলায় পড়বে না। কে ধর্ষন করছে এই মেয়েটা নিজেও জানে না। ভাবতে ভাবতে রতনের ঘুমে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে।
.
ভোরবেলায় গরু নিয়ে মাঠে যাবার সময় রতন উঁকি - টুকি মেরে দেখে মেয়েটা জীবিত আছে। জীবিত দেখে যেনো তার মাথায় বুদ্ধি খুলে গেল। ততক্ষণে সে মেয়েটাকে বাচানোর জন্য পথচারীর মুখোশ নিজের মাঝে ধারণ করে নেয়। সে ডাকাডাকি করে মানুষ জড়ো করে।
.
যখন লোকজনের ভীড় হল, তখন মুনিয়ার চোখ মুখের বাধ খোলে দেবার পর সে "পানি পানি" করে। পাশের ডুবা থেকে তার মুখে পানি দেয় একজন। তারপর মুনিয়া অনুভব করলো কেউ একজন তাকে কাধে করে নিয়ে যাচ্ছে।
চোখ খোলে সে তাকিয়ে আবার বন্ধ করল। নৌকা থেকে রতন যখন বাড়িতে খবর দিয়ে আবার তাকে কাধে করে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন মুনিয়ার হঠাৎ হাত লাগলো পিঠের সেই টিউমারের মতো মাংসপিন্ডে। গায়ের গন্ধও খানিকটা কাল রাতের সেই অদেখা পশুর মতো লাগছিল। ডাক্তার আনার পর যখন ধীরে ধীরে সে একটু স্বাভাবিক হয়, তখন চোখ মেলে সবার সাথে রতনকে দেখে। মুনিয়া তখন দ্বিধায় ভুগছিল সে রতনের পিঠে একটা উঁচু মাংশপিন্ড আর গন্ধ ঠিকই পেয়েছিল নাকি মনের ভুল, তাই সে বিড়বিড় করে রতনকে আবার আসতে বলে।
.
এলাকার মানুষ মুনিয়াকে সহজ - স্বাভাবিক দেখে কানাঘুষা করলেও মুনিয়া মোটেও স্বাভাবিক ছিলো না। ভেতরে ভেতরে একেবারে ভেঙে পড়ে, বিশেষ করে যখন বরের পক্ষ থেকে বিয়ে হবে না বলে জানিয়েছে। মুনিয়ার তখন ইচ্ছে করছিল গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে।
কিন্তু সে অপেক্ষা করে রতনের, কারণ যে ছেলে তাকে বাঁচাল। তার পিঠে কি আসলেই সেই মাংসপিন্ড, তার শরীরে কি আসলেই সেই অদেখা পুরুষের গন্ধ, পরিক্ষা করা দেখে নিশ্চিত হওয়া দরকার। যার জন্য এলাকার সবার কাছে নষ্টা মেয়ে হয়েছে, বিয়ে ভেঙে গেছে, পরিবার মান - সম্মান নষ্ট হয়েছে, সুন্দর পৃথিবীতে বেচে থাকার আগ্রহ কমে গেছে৷ তাকে হাতের কাছে পেয়েও শেষ না করে মুনিয়া মরতে চায় না।
.
রতন নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবতে শুরু করে, তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় রতন বাঁশি হাতে মুনিয়াদের বাড়িতে আসে। নিজের সম্ভাব্য ধর্ষককে সামনে দেখে মুনিয়ার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সে কথা চালিয়ে যায়। মুনিয়া বাঁশি বাজানোর অনুরোধ করে, বাঁশির স্বরে মজে যাবার অভিনয় করে। রতনের বাঁশি বাজানোর ফাঁকে সে মাংস কাটার দারালো দা নায়ে রেখে আসে, রতন তা বোঝতে পারে নি। বাঁশি বাজানো শেষে মুনিয়া এবার বাচ্চাদের মতো আবদার করে বিলে যেয়ে সে বাঁশি বাজানো শুনবে।
এই অন্ধকারে এমন আবদার শুনে রতন দারুণ অবাক হয়, কিন্তু প্রতিশোধের জন্য মুনিয়ার ছলনা সে ধরতে পারে নি ।
.
নৌকার চাউনির ভেতর যেয়ে মুনিয়া প্লান মতো এগিয়ে যায়।
রতন নৌকার চাউনির ভেতরে গিয়ে বাঁশি বাজাতে লাগলো, মুনিয়া একমনে শুনেই যাচ্ছে।
খানিক পরে বাশির সুরে মজে গিয়ে রতনের কাধে মাথা রেখে সে হেলে পড়লো।
রতন আঁতকে উঠলেও নিজেকে সামলে আবার বাঁশি বাজাতে মনযোগ দেয়।
মুনিয়ে হঠাৎ কাদতে কাদতে গভীর মমতায় রতনকে জড়িয়ে ধরে।
এই অবস্থায় রতন অপ্রস্তুত হয়ে যায়, কি করবে ভেবে পায় না। মেয়েটার কি মাথা ঠিক নেই ?
- 'আপনি কি করবার লাগছেন ?'
মুনিয়া এই কথার উত্তর এমনভাবে দেয়, রতন যাতে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের না পায়।
মুনিয়া তখন বলল, 'আপনিই তো আমারে বাচাইলেন, আমি নিজেকে আপনার কাছে সপে দিবার চাই।'
- 'কি কইবার লাগছেন এইগুলা ?'
- 'আমার তো সব শেষ। সারা অঞ্চলের লোক জানে আমি এহন নষ্টা মাইয়া। একবার ধরেন না আমায় জড়িয়ে ।'
রতন জড়িয়ে ধরার পর মুনিয়া তার গায়ের গন্ধ নেয়, গভীর মমতায় পিঠে হাত বুলিয়ে দেবার ছলে সেই টিউমারের মতো ছোট মাংসপিন্ড আছে সেটা নিশ্চিত হয়। তারপর ধীরে ধীরে নায়ে রাখা সেই দারালো দা বের করে রতনের বুক বরাবার কুব দিতে শুরু করে।
.
চিৎকারে এলাকার মানুষ লাইট হাতে দৌড়ে বের হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর সেই চিৎকার থেমে যায়। মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়ে লাইট হাতে আন্দাজ করে বিলের দিকে আসে। বিলে লাইট মেরে সবাই একটা নৌকা দেখতে পেল। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে কয়েকজন সেদিকে এগিয়ে গেল। নৌকায় ওঠে লাইট মেরে সবাই আঁতকে উঠে।
কি ভয়ংকর দৃশ্য! সারা নৌকা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
রতনের সারাটা শরীর ক্ষত - বিক্ষত। পাশে গলা কাটা অবস্থায় মুনিয়া পড়ে আছে। রতনকে মেরে সে নিজেই দারালো দা গলায় চালিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে।

1 share

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...