Tuesday 5 November 2019

আসিয়া বিবি এবং এক বালতি পানি


লেখার শিরোনামটি বেশ অদ্ভুত শোনাচ্ছে, তাই না? কিন্তু আজকের এই দিনটিতে এটাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় খবর। যা নিয়ে পাকিস্তান কার্যত দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
আসিয়া বিবি ৪৭ বছর বয়সী একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মহিলা। যার ২০১০ সালে ধর্ম অবমাননার দায়ে পাকিস্তান লোয়ার কোর্টে ফাঁসির রায় হয়ে যায়। অভিযোগ ছিল যে, তিনি গ্রামের একজন প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে এক বালতি পানি নিয়ে। জানা যায়, অমুসলিম হয়ে সে কেনও মুসলমানদের বালতির পানি পান করে তা নোংরা করল, এমন একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের মহিলাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। পরবর্তীতে আসিয়াকে দল বেঁধে মেরে গ্রামের মহিলারা জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত মুসলমান হতে বলে; কিন্তু তাকে রাজি করাতে না পেরে ধর্মের অবমাননা এবং নবী মোহাম্মদকে কটুক্তি করার অভিযোগ এনে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেয়। লক্ষ্য করবেন, সময়কাল কিন্তু ২০০৯, অর্থাৎ মাত্রই ৯ বছর আগের ঘটনা, ৯০ বছর আগের নয়।
আসিয়া বিবি প্রথম থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছে। গত ৮ বছর ধরে তাকে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়। যার ধারাবাহিকতায় আজ আসিয়া বিবি নির্দোষ প্রমাণিত হলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার্ম তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কট্টরপন্থীরা এরই মধ্যে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করেছে। পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগের জন্য কঠোর সাজার পক্ষে। তারা কোনও অবস্থাতেই আসিয়ার মুক্তি মেনে নিতে পারছে না।
এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য পাকিস্তানের করাচী, লাহোর এবং পেশাওয়ার শহরে কট্টরপন্থীদের জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে। যার একটি খণ্ডিত ভিডিও চিত্র এই লেখার সাথে সংযুক্ত করলাম।
বিগত ৯ বছরে আসিয়া বিবির এই ঘটানটিকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে যায়, যেকারণে পাঞ্জাব রাজ্যের গভর্নর সালমান তাসিরকেও প্রাণ দিতে হয়। তিনি ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে গুলি করে হত্যা করে তারই দেহরক্ষী মুমতাজ কাদরি। হত্যাকারী দেহরক্ষী মুমতাজ কাদিরকে এই হত্যার দায়ে ফাঁসি দেয়া হলেও তিনি পরবর্তীতে কট্টরপন্থীদের নেতাতে পরিণত হন। এমনকি মুমতাজ কাদরির সমর্থকরা একটি রাজনৈতিক দল পর্যন্ত গঠন করে ফেলে। যারা গত নির্বাচনে প্রায় বিশ লাখ ভোট পেয়েছে।
আসিয়ার বিষয়টি নিয়ে ইমরান খানের সরকার অন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, আসিয়াকে হয়তো রাষ্ট্রীয় সহায়তায় অন্যকোনো দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে অনেক দেশই তাকে আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিধর্মী আসিয়ার এক বালতি পানি ছুঁয়ে নোংরা করে দেয়ার 'অপরাধে' এই ২০১৮ সালে এসেও ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়, ভাগ্যক্রমে তা বাতিল হলেও মৌলবাদীদের তাণ্ডবে হয়তো এবার তাকে চার সন্তান সহ পরিবার সমেত দেশত্যাগ করতে হবে।
৪৭ বছর হল আমাদের দেশের নাম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়েছে। এই প্রায় অর্ধশত বছরে আমরা পাকিস্তান থেকে কতটা বাংলাদেশ হতে পেরেছি? কতটা আলাদা হতে পেরেছি পাকিস্তান থেকে? কতটা মানবিক হতে পেরেছি? অনেকে বলবেন, হয়তো অনেকটাই পেরেছি। তাহলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আমাদের দেশেও কি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নির্বিচারে মানুষ কোপানো হয় না? এখানেও কি নারীদের ধর্মের নামে অপয়া কুলটা বলে ফতোয়া জারি করে গাছে ঝুলিয়ে পেটানো হয় না? এখানেও কি ব্লাসফেমি বা শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ লক্ষ মুসলমান রাস্তায় নেমে আসে না? শুধুমাত্র লেখালেখির জন্য এদেশেও কি ফাঁসি বা মাথার দাম ধার্য করা হয় না? দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় না? -- সবই হয়, আমাদের দেশেও হয়।
আসিয়া বালতির পানি ছুঁয়ে দিয়ে পাকিস্তানের মুসলমানদের যেমন বালতি ভরা ঈমান নষ্ট করে দেয়। তেমনি আমাদের দেশের মুসলমানদেরও ধর্মের মন্দ দিকগুলোর সমালোচনা করে দু'এক লাইন লিখলেই ঈমানের কলকব্জা উড়ে যায়, ধসে পড়ে সব। কোথায় কোথায় আর আলাদা হলাম আমরা? আমি তো দেখি না!

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...