Tuesday, 5 November 2019

কাশেম চাচার মোমবাতি

পূর্ব রাজাবাজারে একাটা মুদি দোকানের মালিক কাশেম চাচা, গত ৩০ বছরের দোকানি তার। কেউ কোন দিন তাকে তার দোকান ছাড়া অন্য কোথাও দেখেনি। বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই । আজ ও ভোর হতেই সবার আগে দোকান খুলে বসেছেন তিনি। কিন্তু অবাক ব্যপার হল সাত সকালেই পাশের বাসার ছোট ৯/১০ বছরের অর্চি আজ তার প্রথম খরিদ্দার। এসেই বলল নানা মোমবাতি দেও, না না একটা না এক প্যকেট। কাশেম চাচা বুঝে পান না যে এত সকালে এই মেয়ে মোমবাতি দিয়ে কি করবে? তাছাড়া গত মাসেই তো তার জন্মদিন গেল।
এত মোমবাতি দিয়ে কি করবে?
ও তুমি বুঝবেনা।
কিছুক্ষণ পরেই এলেন রাহেলা বেগম, মহিলা অঙ্গন নামে তার একটা ছোট দর্জি দোকান আছে রাজাবাজারে। সেও এসেছে মোমবাতি নিতে। চাচা ভাবলেন রাত জেগে হয়তো সেলাই এর কাজ করতে হবে, কারেন্ট চলে গেলে যেন বসে থাকতে না হয় হয়তো তার পূর্ব প্রস্তুতি।
কিন্তু তার ঘণ্টা খানেক পরে যখন অপর্ণা বউদি গেলেন মোমবাতি আনতে তখন কাশেম চাচার অবাক হবার ই কথা। সবাই কেন মোমবাতি কিনছে আজ? আজ তো হিন্দুদের দীপাবলি ও না । এবার কিন্তু সে বুদ্ধি খাটিয়ে বেশ চড়া দামেই বিক্রি করলেন। কারনটা না বুঝলেও সহজেই বুঝে ফেললেন আজ মোমবাতির ব্যপক চাহিদা আছে ।
সকাল ১০ টায় সেখানে লাঠিতে ভর দিয়ে ঠুকঠুক করে হাতড়ে হাতড়ে পৌঁছালেন জন্মান্ধ আজিজ সাহেব। মেইন রোডেই তার ৬ তলা বিল্ডিং। সবার খুব শ্রদ্ধেয় তিনি। তিনিও যখন মোমবাতি চাইলেন তখন দোকানি কাশেমের মুখ থেকে বেফাঁস কথা বেরিয়ে যায়-
আপনি তো চোখে দেখেন না, মোমবাতি জ্বালিয়ে কি করবেন?
মুহূর্তেই বুঝে গেলেন কি ভুল তিনি করেছেন। কারন ততক্ষণ এ আজিজ সাহেবের অন্ধ দু চোখে থেকে জল গড়িয়ে পরেছে।
তিনি বলতে লাগলেন অন্ধ বলে আজ তুমিও আমাকে অবহেলা করলে? আমি যে তোমাদের ই একজন। আমারোতো ইচ্ছে হয় সবার মত আজ আমিও মোমবাতি জ্বালি। আমি জানি এ শুধু মোমবাতি নয় এ আমাদের চেতনার প্রজ্জলন। আর চেতনা মানেই ৫২, চেতনা মানেই ৬৯, চেতনা মানেই ৭১। নব প্রজন্ম আজ নব চেতনার ডাক দিয়েছে। আজ বাংলার মাটিতে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। এ চেতনার একবিংশের ,২০১৩ আজ তেমনই ইতিহাস হতে চলেছে কাশেম। আমি আমার বড় ছেলে কে হারিয়েছি ৭১ এ।
কাল যেন ও আমার সুপ্নে এসে ও বলে গেল-- আমার সোনার বাংলা আজ খাঁটি সোনা হতে চলেছে বাবা। বল কাশেম শহীদের পিতা হয়ে আমি কিভাবে চুপ থাকি? তাই তো শাহাবাগের ডাকে প্রতিটি শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ আমিও মোমবাতি জ্বালাবো সন্ধ্যা ৭ টায়।
কাশেম চাচার চোখ দুটিও ভিজে এলো, সহসাই মনে পরে গেল গ্রামের বাড়ির বন্ধু কমলেশের কথা । সেও যুদ্ধে যাবার আগে কাশেমকে বলেছিল স্বাধীনতা না নিয়ে সে আর ফিরবেনা। কিন্তু কথা রাখেনি কমলেশ, সে আর ফিরে আসেনি। স্বাধীনতা পেলেও প্রিয় বন্ধুকে ফিরে পাওয়া হয়নি তার।
এবার কিন্তু মোমবাতির বাড়তি দাম আর তিনি রাখলেন না।
প্রতিদিনের মত ভিক্ষুক রমিজের মা দোকানের সামনে দাড়াতেই তিনি ১ টাকার একটি কয়েন বের করে দিলেন। কিন্তু রমিজের মা আজ তার কয়েন না নিয়ে বরং হাতে ২ টাকার ৩ টা নোট দিয়ে বললেন-
আইজ ভিক্ষা চাইতে আহিনাই ভাইজান, সকাল থেক্কা ফার্মগেট এর মোড়ে দাঁড়াইয়া এই কডা টাহা পাইছি। ক্ষিদায় টিকবার না পাইরা ৫ টাহার অ্যাটটা রুডি কিনা খাইছি। দেহেন তো এই টাহায় মোমবাতি হইব কিনা। আমিও মোমবাতি জালামু।
কাশেম চাচার কমলেশের স্মৃতি আর চোখের জল তখনো মুছে যায়নি। তিনি এবার রমিজের মায়ের কাছ থেকে কোন টাকাই আর নিলেন না। দুটো মোমবাতি এমনিতেই দিয়ে বললেন-
এর জন্য তোমায় টাকা দিতে হবেনা । টাকা ফিরিয়ে দিয়ে তিনি রমিজের মাকে আজ আদর করে দোকানের কলা রুটি খাওয়ালেন। বললেন সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোর সময় শহিদদের কথামনে করো॥॥

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...