Tuesday 5 November 2019

কৌতুকময় জীবন


গতকাল এক বন্ধুকে বলছিলাম, হাসির কথা আর হাস্যকর কথা এক নয়। তারপর এল কৌতুক আর কৌতুকাভিনেতাদের কথা। তবে বন্ধুর সাথে কথা বলে অবাক হয়েছিলাম এমনটা জেনে, কৌতুকাভিনেতাদের দিকপাল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ও চিনে না।
আজ আপনাদেরকে আমার পছন্দের কৌতুকাভিনেতা সম্পর্কে একটু বলব।
বাংলা ভাষাভাষী কৌতুক অভিনেতাদের মধ্যে আমার প্রথম পছন্দ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর জহর রায়, তুলশি চক্রবর্তী, টেলি সামাদ, দিলদার, কাঞ্চন মল্লিকসহ আরো অনেকে। অবশ্য কিছু জাত অভিনেতার অনিয়মিত কৌতুক অভিনয়ও আমার বেশ ভালো লেগেছে। তাদের মধ্যে উৎপল দত্ত, হুমায়ুন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান, শঙ্কর চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ অন্যতম।
এখনকার চিত্র অবশ্য পাল্টে গেছে। আফজাল শরীফ, কাবিলা, এজাজুল, হারুন কিসিঞ্জার, চিকন আলীদের কৌতুকাভিনয়ে আমার মধ্যে কোনো চমক জাগে না। সত্যি বলতে এপার বাংলার বর্তমান কৌতুক অভিনেতাদের অভিনয় দেখলে রীতিমতো রাগ হয়। একি অভিনয়, নাকি অ-বিনয়? ওদের অশিক্ষা, অপেশাদার আচরণ আর ভাঁড়ামি দেখে হাসির বদলে ভেতরে ভেতরে বিরক্তি কাজ করে।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটু বলি—
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় [২৭ আগস্ট, ১৯২০-৪ মার্চ, ১৯৮৩] ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা। বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হাস্যকৌতুকময় অভিনয়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। চলচ্চিত্রে আসার আগে ছিলেন সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে পরিচিত। ঢাকা, পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই উনাকে ‘ঢাকার ভানু’ বলা হতো।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুইটা কথোপকথনময় কৌতুক শেয়ার করছি আপনাদের সাথে।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরির জন্য তার গুরুদেবের কাছে যায়—
কৌতুক- ১
ভানু : গুরুদেব পেন্নাম।
গুরুদেব : পেন্নাম নয়, কথাটা প্রণাম। একটা র-ফলা দাও।
ভানু : ভেম হইয়া গেছে।
গুরুদেব : ভেম নয়, ভ্রম। এটাতেও র-ফলা লাগবে।
ভানু : বাহ বাহ। পেত্তেক কথায় র-ফলা লাগবে?
গুরুদেব : পেত্তেক নয়, প্রত্যেক। এটাতেও র-ফলা দাও।
ভানু : ব্রেশ ব্রেশ।
গুরুদেব : এটাতে আর র-ফলা দিও না।
ভানু : না, দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রবট্রাটেই দ্রিমু।
গুরুদেব : বেশ তাই দিও। এখন বলো তোমার দিদি কেমন আছে?
ভানু : আপনার আশীর্বাদে সকলেই ভালো আছে।
গুরুদেব : তোমার হাতে ওটা কী?
ভানু : এটা, এটা এক জোড়া স্যান্ডেল। আসনের সময় দিদি কিনা দিছিল।
গুরুদেব : বাহ্‌, বাহ্‌ চমৎকার পাদুকা তো। বেশ দেখতে কিন্তু।
ভানু : গুরুদেব আপনি নিবেন? যখন আপনার পছন্দ হইছে। নেন না।
গুরুদেব : না না, সে কী, তোমার পাদুকা আমি নেব কেন? লোকে বলবে কী?
ভানু : আরে না, কেউ জানতেই পারব না। আপনারে দিয়া আমি ধন্য হই।
গুরুদেব : না না। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে তোমার পাদুকা কোথায়? তখন কী বলবে?
ভানু : না না। কেউ জিজ্ঞাসা করব না। আর একান্তই যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, তখন কমু, কুত্তায় লইয়া গেছে।
গুরুদেব : অ্যা?................ সে হোক, শোনো তোমার দিদি আমাকে তোমার চাকরির কথা লিখেছিলেন। যাও ওই উল্টো দিকের ঘরে কর্নেল চ্যাটার্জি আছেন। গিয়ে দেখা করো।
ভানু : ইংরেজিতে কথা কইবো না তো?
গুরুদেব : না না। বাঙালি। ইংরেজি কথা বলবেন কেন?
ভানু : মাইরদর করব না তো?
গুরুদেব : না না। তুমি নির্ভয়ে যাও।
কৌতুক- ২
কর্নেল চ্যাটার্জি : কে? হুজ দেয়ার?
ভানু : কাম সারছে। আইজ্ঞা আমি ঢাকার ভানু।
কর্নেল চ্যাটার্জি : ও হা, গুরুদেব তোমার কথা বলেছিলেন বটে। তা তুমি যুদ্ধে যেতে রাজি আছো তো?
ভানু : আইজ্ঞা হ।
কর্নেল চ্যাটার্জি : বাংলাদেশের বাইরে পাঠালে যেতে রাজি আছো তো?
ভানু : আইজ্ঞা হ।
কর্নেল চ্যাটার্জি : ভারতবর্ষের বাইরে পাঠালে যেতে রাজি আছো তো?
ভানু : চাকরির লাইগা দেখেন, আমি সৌরজগতের যেকোনো জায়গায় যাইতে রাজি আছি।
কর্নেল চ্যাটার্জি : বেশ বেশ বেশ। তাহলে তোমাকে মিলিটারিতে ভর্তির ব্যবস্থাই করে দেবো।
ভানু : তবে যুদ্ধে যাইতে হলে আমার দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : কী কথা?
ভানু : যুদ্ধে যদি আমি মরি। বিদেশে মরলে কোনো কথা নাই। কিন্তু যদি নিজের দেশে মরি তবে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : নিজের দেশেই মরবে।
ভানু : আইজ্ঞা নিজের দেশে যদি মরি, আমার দেহ থাকব কই? মাটির উপরে নাকি মাটির তলে? মাটির উপরে থাকলে কোনো কথা নাই। যদি তলে থাকে তবে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : মাটির তলাতেই থাকবে।
ভানু : সেই মাটি যে চাষ হইব, লাঙল দিয়া হইব নাকি ট্রাক্টর দিয়া হইব? যদি লাঙল দিয়া হয় তবে কোনো কথা নাই, ট্রাক্টর দিয়া হইলে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : ট্রাক্টর দিয়াই হবে।
ভানু : আইচ্ছা। ট্রাক্টর দিয়া হইলে আমার দেহ, অর্থাৎ কঙ্কাল তো ওইঠা আইব। সেই কঙ্কাল পাঠান হইব কই? ফার্টিলাইজারে নাকি কাগজের কলে? যদি ফার্টিলাইজারে পাঠান হয় তবে কোনো কথা নাই, আর যদি কাগজের কলে পাঠানো হয় তবে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : কাজগের কলেই পাঠান হবে।
ভানু : বেশ। সেই কাগজ দিয়া, অর্থাৎ আমার হাড়ের গুড়া দিয়া কী কাগজ তৈরি হইব? রাইটিং পেপার নাকি টিস্যু পেপার। যদি রাইটিং পেপার হয়, কোনো কথা নাই। আর যদি টিস্যু পেপাপ হয় তবে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : টিস্যু পেপারই হবে।
ভানু : বেশ কথা। সেই টিস্যু পেপার পুরুষে ব্যবহার করব নাকি স্ত্রীলোক ব্যবহার করব? যদি পুরুষে ব্যবহার করে কোনো কথা নাই আর যদি স্ত্রীলোক ব্যবহার করে তবে দুইখান কথা আছে।
কর্নেল চ্যাটার্জি : স্ত্রীলোকই ব্যবহার করবে।
ভানু : তেইলে হালায় যুদ্ধেই যামু না।
* ছবিতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর রায়

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...