Thursday, 1 December 2016

আল্লাহকে জানেন



এই মানুষটির বাবা অনেক সম্পত্তি রেখে যাবার পরও তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। এত বেশি সাধারণ যে প্রায় দিন শুধু বাদাম খেয়ে কাটিয়েছেন। বছরের পর বছর তরকারী ছাড়া রুটি খেয়ে এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মানুষটি রমযান মাসে পুরো তারাবীতে এক খতম, প্রতিদিন এক খতম এবং প্রতি তিন রাতে এক খতম তিলাওয়াত করতেন। একবার নফল নামাজ পড়ার সময় তাকে এক বিচ্ছু অনেক বার দংশন করে, প্রচণ্ড যন্ত্রণার ভেতরেও তিনি সুরা পাঠ করে গিয়েছেন এবং যথাযথ ভাবে নামাজ শেষ করেছেন।
একদিন এক ব্যবসায়ি তার কাছ থেকে কোন একটি জিনিস কিনতে চাইলেন পাঁচ হাজার দিরহাম দিয়ে। তিনি জবাব দিলেন ' তুমি আজ চলে যাও, আমি রাতে চিন্তা করে দেখি'
পর দিন সকালে আরেক দল ব্যাবসায়ী এসে জিনিসটি দশ হাজার দিরহাম দিয়ে কিনতে চাইলে তিনি বলেন, গতরাতে আমি এক ব্যাবসায়ীকে জিনিসটি দেবার নিয়ত করে ফেলেছি; কাজেই আমি আমার নিয়তের খেলাফ করতে চাই না।
এই মানুষটির নাম ইমাম বুখারী। এত বড় মাপের একজন মানুষকে নিয়ে আমি লিখছি যে আমার মনে হচ্ছে প্রতিটি লাইনে আমার একটি সঞ্চিত পাপ মোচন হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আমি যদি কোন শুদ্ধতম কাজ করে থাকি তবে সেটি এখন করছি।
সারা পৃথিবীর মানুষ কুরআনের পর যে গ্রন্থকে স্বীকৃতি দিয়েছে সেই গ্রন্থটি লিখেছেন যে মানুষটি তাকে নিয়ে আমি দুটা লাইন লিখছি; এর চেয়ে সুন্দর ঘটনা আমার জীবনে আর কী হতে পারে ?
আমাদের প্রায় অনেকের বাসাতেই একটা বুখারী শরীফ আছে যেটা অনেক বছর ধরে পড়া হয় নারোজ পত্রিকা পড়ি। পাঠ্য বই মুকস্থ করি। সপ্তাহে একদিন ম্যাগাজিন। মাসে একদিন গল্প উপন্যাস । বুখারী শরীফ আমাদের পড়া হয় না। বুখারীকে কাপড়ে মুড়িয়ে আসবাবপত্রের মত ঘরের এক কোণে রেখে দিয়েছি। ধুলা জমে গেলে হঠাৎ একদিন কাজের মানুষ দিয়ে মুছিয়ে ভাবি - পবিত্র কাজ সম্পন্ন করেছি।
গ্রন্থটি লিখতে তিনি ১৬ বছর সময় নিয়েছেন। আই রিপিট ১৬ বছর ! এই ১৬ বছর তিনি প্রায় সময় রোজা রেখে কাটিয়েছেন। প্রতিটি হাদীস লেখার আগে গোসল করে দু' রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছেন। হাদীস সংগ্রহের জন্য তন্ন তন্ন করে ছুটে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর অনেক দেশ।
প্রায় তিন লাখ হাদীস তার মুখস্ত ছিল। তাকে নিয়ে একটা প্রচলিত কথা হল , যে হাদীস ইমাম বুখারী জানেন না , সেটি আসলে কোন হাদীস না।
ইমাম বুখারীর কাছে একদিন সেই সময়কার গভর্নরের বাসায় গিয়ে হাদীছ শিক্ষা দেবার প্রস্তাব আসে। সাধারণ মানুষকে ফেলে রাজদরবারে গিয়ে আলাদাভাবে গভর্নরের সন্তানদের হাদিস পড়াতে তিনি রাজি হননি। তিনি গভর্নরকে জানালেন, ইসলামকে ভালোবেসে থাকলে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই তার কাছে এসে হাদীছ শিক্ষা নিতে হবে। অন্যথায় এটি হাদীছের জন্য অবমাননাকর।
হাদীছের জন্য অবমাননাকর হবে ভেবে তিনি গভর্নরকে ফিরিয়ে দিলেন। তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হল। তিনি তার প্রিয় জন্মভূমি বুখারা ছেড়ে চলে গেলেন।
অসুস্থ হয়ে এক সময় মারা গেলেন। তবুও কাউকে কোনদিন কুর্নিশ করে চলেন নি। এর চেয়ে সুন্দর জীবন আর কিভাবে হতে পারে ? 
তার মৃত্যুর পর কবর থেকে সারাক্ষণ সুগন্ধি বের হত; যার ঘ্রাণ নেবার জন্য দূর দূর থেকে মানুষ এসে ভিড় করেছে। এর চেয়ে সুন্দর মৃত্যু আর কীভাবে হতে পারে ?
আমাদের দেশের একটা সুন্দর নিয়ম হল আমরা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলে টুকটাক গল্প করি। একজন অন্যজনের খোঁজ খবর নেই। আমারা কী এই পারিবারিক টেবিলে নতুন একটা চর্চা শুরু করতে পারি ?
প্রতিদিন টেবিলে অন্তত দুটি করে হাদিস যদি পড়া হয় এবং ফ্যামিলির বাকি মেম্বাররা তা মন দিয়ে শুনে তাহলে বছর শেষে প্রত্যেকের প্রায় সাতশো হাদীস জানা হয়ে যাবে ! জীবনের এত গুলো বছর পার করে দিলেন, কটা হাদিস আপনার জানা আছে ? একটু কী দুঃখ বোধ হয় না ?
আমি শুরু করেছি। আপনিও শুরু করুন। একটি পরিবারে যদি এভারেজ পাঁচজন মানুষ থাকে তাহলে শুধু মাত্র আপনার কারণে বছর শেষে পাঁচটা মানুষের সাতশোর বেশি হাদিস জানা হয়ে যাবে।
আমি কাউকে কখনো কোন লেখা শেয়ার করার অনুরোধ করিনি। আজ করছি। শেয়ার করে আপনার কাছের মানুষদের কাছে পৌঁছে দিন এই দাওয়াতটি। আমিন।

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...