Monday 6 November 2017

গনপিটুনি





মৃত্যুর একটাই রুপ হলেও এর নানা ধরন আছে যে কেউ একটা ইদুর মেরে ফেলতে পারে একটা লাঠির আঘাতে, সেটা মানুষ সহ্য করে নেবে কিন্তু একটা ইদুরকে ঘরের চালায় ঝ্যলিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মারলে সেটা হবে নিষ্ঠুরতা, বীভৎসতা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনারা ঢাকাসহ  দেশের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনকেন্দ্র খুলেছিলো সেখানে তারা নিরপরাধ বাঙালিদের বন্দী করে নানা কায়দায় নির্যাতন করে মেরে ফেলতো এই নির্যাতনের কাহিনীর কথা যতই জানা যাচ্ছে, ততই আমরা কেপে উঠছি পাকিস্তানী সেনাদের বীভৎসতায় আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের উগ্র বর্ণবাদী সংস্থা কু ক্লাক্স ক্ল্যান দলের নিগ্রো বা কৃষনকায় লোক হত্যা বা হিটলারের গ্যাস চেম্বারে ইহুদি নিধন বা বাংলা ভাইয়ের জেএমবির  গাছের ডালে মানুষ ঝুলিয়ে মানুষ ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হলো নিষ্ঠুর মৃত্যুর উদাহরণ বীভৎস নারকীয় হত্যালীলা যুগে যুগে সব সমাজে সব অবস্থায় ঘটে থাকে বাংলাদেশেও ঘটছে এখন যেটার হিরিক পড়েছে, সেটা হলো গনপিটুনিতে মানুষ হত্যা কিছুদিন আগে আমিন বাজারের ট্রাক টার্মিনালের পিছনে তুরাগের চরে শব--বরাতের রাতে দারুস সালাম এলাকার ছয়জন ছাত্র/যুবককে ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী নির্মমভাবে খুন করে এলাকাবাসী ০৮ জুলাই ২০১৫ তারিখে সিলেটের রাজন হত্যাকান্ড গনপিটুনির মধ্যে পড়ে না, কিন্তু গত ২৭ জুলাই ২০১৫ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মিলন নামের এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রামবাসী   এই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ০৭ আগষ্টে সময় চ্যানেলে দেখানো হয় যারা এটি দেখেছেন তারা হয়তো কল্পনা করতে পারেননি, মানুষ এত নির্মম হতে পারে ফুটবলকে যেভাবে লাথি মারে, ছেলেটাকেও সেভাবে লাথি মারছিলো জনতা সেই ভিডিও ক্লিপের লিঙ্ক দেয়া হলো (https://www.youtube.com/watch?v=R-Ja4aSIQZM) তার শরীরটা  ফুটবলের মত এদিক থেকে সেদিক ছিটকে যাচ্ছিলো একটি লাথি তার গোপনাঙ্গের যায়গায় পড়তে দেখলাম যখন মার সহ্য করতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলো, তখন চললো পদাঘাত ওহ , সে কী নৃশংস দৃশ্য!! পরের দিন এক পত্রিকার প্রতিবেদনে পড়লাম, একই ভিডিও চিত্রের শেষের দিকে দেখা গিয়েছিলো একজন সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরিহিত লোক মিলনের মাথা ইট মেরে থেতলে দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে কিন্তু মিলনের হত্যাকান্ডে কিছুটা বিচিত্রিতা আছে বলা হচ্ছে, প্রথমে গ্রামবাসী থানার এসি আকরাম নামের একজন পুলিশের কাছে ছেলেটিকে ডাকাত সন্দেহে পুলিশের ভ্যানে তুলে দিয়েছিলো কিছুক্ষন পর পুলিশ নাকি আবার ছেলেটিকে টেকের মোড়ে জনতার মধ্যে এনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়, আর জনতাকে বলে ছেলেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে তার মা কোহিনুরের দায়ের করা মামলায় জানা যায় পুলিশের উপস্থিতিতে এবং উস্কানীতেই গ্রামবাসী নাকি এই হত্যা লীলা চালায় পুলিশ কেন আক্রান্তকে জনতার নারকীয় হাত থেকে উদ্ধার করলো না? ঘটনা বিশ্লেশন করলে সমাজের নানা গোষ্ঠির নানা অস্থির চেহারা ফুটে উঠে এর মধ্যে পুলিশ, জনতা এবং সরকার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক প্রথমেই বলি পুলিশের দিকঃ পুলিশের হতাশার কথাটা আমাদের বুঝতে হবে পুলিশ যে, চোর-ডাকাত ধরেনা, তা নয়  দাগী আসামী ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ যে যথেষ্ট পারদর্শী, তা আমরা সবাই জানি কিন্তু পুলিশের চাকুরীটা একটা ঝুকিপুর্ণ চাকুরী তারা আসামী ধরা আদালতে চালান দেয়, সেখানে আইনের ফাকফোকরে দাগি আসামিকে বের হয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। পুলিশ আসামি ধরে থানায় আনে, তারপর সরকারদলীয় বা এলাকার প্রভাবশালী নেতা, উপনেতা, বড়কর্তা, এমনকি মন্ত্রী পর্যায়ের লোকজনের তবদিরে তাদের পক্ষে নিরপক্ষ ভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠে। আবার পুলিশের বেতন ভাতাদিও সুবিধাজনক নয়। তারা নানা দুর্নিতিতে জড়িয়ে পড়ে অন্য অনেক সরকারী সংস্থার ব্যক্তিদের মত। আবার দুর্নিতির রোগটি যেমন চাকরীর পরিবেশ থেকে জন্ম নেয়, তেমনই জন্ম নেয় পরিবারের পরিবেশ থেকে। আর বৈজ্ঞানিকভাবে বললে জিনগত বৈশিষ্ট থেকে। একটি দেশের জনসংখ্যা বাড়লে যেমন ভালো লোকের সংখ্যা বাড়ে, তেমনই অপরাধির সংখ্যাও বড়ে। সম্ভবত লোকের সংখ্যা বাড়ে গানিতিক হারে ১,২,৩,৪ এই ধারায়। আর খারাপ লোকের সংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে ২,৪,৮,১৬ ধারায়। এই বর্ধমান অপরাধী জনগোষ্ঠীর তুলনায় পুলিশের জনবল, অস্ত্র, প্রশিক্ষনের মান, যন্ত্র এবং সাংগঠনিক দক্ষতা নিতান্তই অপ্রতুল। এতগুলো চাপের মাঝে থাকলে যা হবার তাই হয়েছে, সাধারণ ভাবে পুলিশের পক্ষে তার নৈতিকবল ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। পুলিশের পক্ষে যে সমস্যাটা তৈরী হয়, সেটা হলো নিরপরাধ ও অপরাধীর মাঝে বিভেদ তৈরী করতে না পারা। সাধারনত মানুষ বলে আসে যে, অপরাধীর চরিত্র তার চেহারায় ফুটে উঠে। তবে সমাজের উপরের শ্রেণীর তেল চকচকে চেহারার লোকদের মধ্য থেকে অপরাধী চেনা কঠিন। তাই চেহারা দিয়ে চরিত্র বিচার করার পদ্ধতি চালু হলেও শতভাগ সঠিক নয়। সন্দেহ করা যায় মাত্র, কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যায় না। এই নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশকে আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। আদালত থেকে নিরপরাধী বের হচ্ছে কিনা, সেটা পরের কথা, কিন্তু অপরাধী বের হয়ে আসার একটা রেওয়াজ দেশে তৈরী হয়েছে। এদিকটা পুলিশকে নিতান্তভাবে হতাশাগ্রস্থ করে বলে ধারনা। মিলনকে যে পুলিশ বা পুলিশের দল জনতার বোষের মাঝে ছেড়ে দিলো, তাদের এই ন্যাক্কারজনক নৈতিক দায়িত্ববোধ হীনতা শুধু একটা ওপরের ব্যবহার মাত্র। এর পেছনে যে গোষ্ঠীগত হতাশা কাজ করছে না, সেটা নিশ্চিতকরে বলা যাচ্ছে না। পুলিশ হয়তো ভুলভাবে মিলনকে ডাকাত বলে সন্দেহ করেছে, কিন্তু এখানেই কথাটার শেষ হচ্ছে না। কথাটার শেষ হচ্ছে  এখানে ভুলভাবে সন্দেহ করলেও পুলিশের মনে হয়েছে অপরাধীকে নিয়ে থানা, আদালত, মামলা, জামিন, মুক্তি এসব নিয়ে ঝামেলা না করে বরং জনতার হাতে দিয়ে দেওয়া হোক। জনতার আদালতই ঠিক করবে ছেলেটিকে মেরে ফেলবে নাকি বাচিয়ে রাখবে। অর্থাৎ পুলিশের আচরনের মধ্যে যে নৈরাজ্য লক্ষ্য করা গেলো, সেটার জন্য পুলিশ বাহিনী কোনক্রমেই দায়ী নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুলিশের আচরনের মধ্যে একধরনের গভীর অবসাদগ্রস্থতা নিয়ে এসেছে। জনতার নৃশংস অভিব্যক্তিমূলক আচরণের সঙ্গে পুলিশের অবসাদগ্রস্থতার সুক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে। আমিনবাজারের হত্যাকান্ডের উৎস ছিলো, ঐ এলাকায় এত পরিমাণ ডাকাতি হচ্ছিলো যে, এলাকাবাসি পুলিশকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছিলো না। তারা নিজেরাই নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছিলো। ফলে যখন অপরিচিত সাতজন যুবক ঐ এলাকায় রাতে নামলো, তাদের ধারনা হয়েছিলো যে নিশ্চয়ই তারা ডাকাতি করতে এসেছিলো। ব্যস, ওখানেই চরের উপর গনসঙ্ঘার সমাপ্ত হলো। সমাজের আইন শৃংখলার অবনতি হলে সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় বেড়ে যায়। তখন সাধুকে চোর মনে হয়। আবার গনপিটুনির ঘটনাগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, সাধারনত যারা গনপিটুনিতে অংশ নেয়; তারা নিজেরাই কমবেশী অপরাধপ্রবণ লোক হয়ে থাকে। কারণ এমন দেখা যায় না যে, সচ্চরিত্রের বোধ সম্পন্ন ও অনুকম্পাসম্পন্ন মানুষ এরকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নেবে। যদি সম্ভব হয় একটা শুমারী করার, তবে দেখা যাবে যে গনপিটুনিতে অংশ নেওয়া লোকগুলোর কোন না কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার ইতিহাস আছে। আর কিছু লোক আছে, যাদের মাঝে চাপা হিংস্রতা বিরাজ করে; কিন্তু তারা মারামারিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় না। এদের অনেকেই উষ্কানিদাতা হিসেবে থাকে। মেরে ফেল, মেরে ফেল, পুলিশ বলেছে মেরে ফেলার জন্য, মারিস না ক্যান? এ কথা বলে যারা অন্যদেরকে মিলনের মৃত্যু ঘটাতে উসকানি দিয়েছিলো, দেখা যাবে পুলিশ যখন তদন্তে আসবে, তখন বলবে কিছুই জানতো না তারা, তারা গনপিটুনিতে অংশ নেয় নি, তারা বাধা দিয়েছিলো ইত্যাদী ইত্যাদী। গনপিটুনির ঘটনায় একটি দুঃখজনক সুবিধা হলো যে, এর মধ্যে থেকে যে কোন ধরনের প্রহেলিকা সৃষ্টি করা যায়।  যেমন- মিলন কি আসলেই ডাকাত ছিলো?, ডাকাত না হলে কি কারণে সে ভিন্ন যায়গা থেকে কোম্পানীগঞ্জের স্কুলটিতে গেলো? পুলিশই বা তাকে জনতার রোষের মধ্যে ছেড়ে দিলো কেন? কেনই বা লোকগুলো এমন নির্মমতার সাথে মিলনকে হত্যা করলো? কারাই বা নেতৃত্ব দিয়েছিলো পিটুনিতে?  এতসব প্রহেলিকা ভেদ করা তদন্ত কমিটির পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের জন্য গনপিটুনি শাখের করাত। কারণ, জনগন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া মানেই সরকারের নিরাপত্থা ব্যবস্থার ওপর তাদের আস্থা কমে যাওয়ার প্রকাশ। এতে সরকারের জনপ্রিয়তাও খর্ব হয়। কিন্তু পুলিশ গিয়ে গ্রামের সব লোককে গ্রেপ্তার করলে তখন নিরিহ লোকও ধরা পড়ে বলে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আবার পুলিশকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য বরখাস্ত করলে পুলিশ এর প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত আগ্রাসী ভুমিকা পালন করে ফেলে। গনপিটুনির ধারাটা সংক্রামক। একবার মানুষের মনে যদি ঐ মনোবৃত্তি উস্কে উঠে এবং রাস্তা খুজে পায় যে, মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়। তাহলে টেকের মোড়ের ঘটনা শেষ ঘটনা হয়ে থাকবে না। দ্রব্যমূল্য, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। যে কোন ছুতায়নলোকজন রাস্তায় নেমে আসছে। এগুলো ভালো লক্ষন নয়। এর সাথে গনপিটুনি যোগ হলে--------------------------

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...