রাস্তায় অচেনা কোন মানুষের সাথে পরিচয় হলে আমরা জিজ্ঞাসা করে জানতে চাই, মানুষটা কী করেন, কোথায় থাকেন, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, পরিবারে কে কে আছেন ইত্যাদি। আপনি কী হিন্দু , বৌদ্ধ, নাকি মুসলমান এই সব প্রশ্ন সচারচর আমরা করিনা কেননা মানুষটা যে ধর্মেই বিশ্বাস করুক না কেন এ নিয়ে আমাদের কিছুই আসে যায় না। আমরা সব ধর্মের মানুষেরা একসাথে একই শহরে একই এলাকায় একই বিল্ডিং এ থাকি।
আমাদের অনেক সমস্যা থাকতে পারে তবে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আদৌ কোন সমস্যা নেই।এই সমস্যা গুলো সব চাইতে বেশি আছে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র গুলোর ভেতরেই। কিছুদিন আগে ইসরাইল আইন করে সেখানকার মসজিদ গুলোতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ করেছে। কেন এরকমটা করেছেন , তাদের যখন প্রশ্ন করা হল; তাদের উত্তর শুনে আমার মনে হল আমি হয়ত ভুলে টিভিতে মিরাক্কেলের কোন জোকস্ শুনছি ! তারা বলেছে, তারা ইসলাম ধর্মের পাশা পাশি সব ধর্মের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু যেহেতু আযানের শব্দে তাদের ঘুমের অসুবিধা হয় তাই আযান নিষিদ্ধ করা হয়েছে- অন্য কিছু না !!
ফ্রান্সে আইন করে বোরকা পড়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে কেউ বোরখা পড়লে ৩২ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানার বিধান আছে আইনে। প্রথমে ফ্রান্স শুরু করলেও পরবর্তীতে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড , স্পেনেও ' বোরখা ' নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ তালিকায় স্পেনের নাম দেখে আমি সব চাইতে বেশি অবাক হয়েছি কেননা স্পেন এমন একটা দেশ যেখানের মানুষ আইন করে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রকাশ্যে উলঙ্গ থাকাকে বৈধতা করেছে ; এই জাতি যেসময়ে ন্যুডিস্ট আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল তখন তাদের যুক্তি ছিল - নগ্ন থাকাটা তাদের ব্যাক্তিগত অধিকার ! তারাই কিনা আবার বোরখা নিষিদ্ধ করে !
ক্ষমতায় এসেই বিশ্বের সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সাথে ট্রাম্পের পুত্র সিরীয় শরণার্থীদের 'ক্যান্ডি'র সাথে তুলনা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন সে তার অপদার্থ বাবার যোগ্য সন্তান। আমরা কিন্তু নাইন ইলেভেনে পশ্চিমাদের লাশের ছবি দেখে কেঁদেছিলাম।
জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসবাস সমস্যা সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর একটাও মুসলিম রাষ্ট্র এই জঙ্গিবাদকে স্বীকৃতি দেয় নি। কিন্তু কোথাও একটা জঙ্গি হামলা হলেই পশ্চিমা বিশ্বের ইমিগ্রেশন গুলোতে সাধারণ মুলসমানদের হয়রানী করা হচ্ছে। দাড়ি কিংবা টুপি পরিহিত কাউকে দেখা মাত্রই এমন আচরণ করছে- যেন মাফিয়ার কোন ছদ্মবেশী ডন তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে !
গত কয়েকদিনে যখন আমাদের দেশের সিলেটে কিংবা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জঙ্গি হামলা হয়েছে তখন আরও কয়েকটি বড় বড় সন্ত্রাসী হামলাও হয়েছে। যেমন আজই যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির একটি নৈশক্লাবে আততায়ী বন্দুকধারীদের গুলিতে একজন নিহত ও অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছে। গতকালের প্রথম আলোতে দেখলাম, আততায়ী বন্দুকধারীদের গুলিতে সুইজারল্যান্ডের একটি ক্যাফেতে দুইজন নিহত হয়েছে।
এখন সেই সব বন্দুকধারীরা কিন্তু মুসলমান না।
তারা যে অপকর্ম করেছে এজন্য যদি তারা যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ধর্মের সমস্ত মানুষ কিংবা দেশের উপর জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয় সেটা যেমন একটা হাস্যকর সিদ্ধান্ত হবে; একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের সাথে ঠিক সেটাই করা হচ্ছে !! সন্ত্রাসের কোন ধর্ম নেই কেননা কোন ধর্মেই মানুষকে হত্যা করার ফতোয়া দেয়া হয়নি।
পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে শেষ করছি।
'আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। ’ [সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২]
'আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। ’ [সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২]