পরকীয়া..
কঠিন একটা শব্দ।
কাজটা কি কঠিন.. নাকি সোজা!?
সে যাই হোক না কেন, দুঃসাহসিক বটে.. সেই সাথে
ভয়ংকর, বিপজ্জনক এবং লজ্জাজনক। এটা একটা বিবেকবর্জিত, অনৈতিক কাজ। খুব সাধারণভাবে বলা যায়, এটা অন্যের স্ত্রী বা স্বামীর
সাথে শারীরিক ও মানসিক দখলদারিত্ব বা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক। স্বার্থপরের মত কেবল
নিজে আনন্দ লাভের জন্য নিজের পরিবার, সন্তান, স্বামী বা
স্ত্রীকে প্রতারিত করা বা ঠকানো ছাড়া আর কিছুই না। এটা স্রেফ ঠকানোর
একটা কৌশল।
প্রতিটা সম্পর্কেই এক একটা দায়বদ্ধতার (commitment) জায়গা থাকে.. বিশেষ
করে স্বামী বা স্ত্রীর ভেতর তা আরও বেশী। কেননা, এই যুগলের
মাধ্যমেই সৃষ্টি, তৈরী কিংবা সূচনা হয় একটা ঘরের, একটা সংসারের। যেখানে আবেগের ওঠানামা থাকে, মান
অভিমান, বিশ্বাস (trust,
loyalty, sincerity)
এবং ভালোবাসার বিচরণ ঘটে সর্বত্র। প্রতিটা দায়বদ্ধতার পেছনে
ভালোবাসা, ভালো লাগা কাজ করে.. এখানে
বিবেকও বিশাল একটা ভূমিকা পালন করে থাকে।
স্বামী বা স্ত্রীর সম্পর্কের ভেতর আবেগ আর দায়িত্ব যেন একসাথে
সামন্তরাল পথে চলে। মাঝে মাঝে আবেগে ভাটা পড়ে.. দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা
এসে আবেগকে দূরে সরিয়ে দেয় নিজের অজান্তে। যারা শুধুমাত্র অতি আবেগে ভেসে বেড়াতে
চান, সব সময় নিজের এবং সংসারের দায়িত্বটাকে পাশ কাটাতে চান,
রংবেরং এর মাংসাশী প্রাণীদের মত কেবল স্বাদ নিতে চান এবং নিজে সুখ
রচনা করতে না পেরে অন্যের তৈরী করা সুখের রাজত্বে বিচরণ করতে চান, তারাই পরকীয়ার দিকে ধাবিত হন বেশী। এটা চরিত্রের একটা অন্ধকার দিকও বটে।
আমরা সবসময় নিজের জীবনসঙ্গী ছাড়া অন্য কাউকে যখন বাইরে থেকে দেখি, তখন তার
পরিপাটি বেশভূষাটাই চোখে পড়ে। তখন থাকে না একে অপরের প্রতি কোন দায়দায়িত্ব বা
চিন্তাভাবনা। থাকে না কোন শাসন বারণ। সবসময় নিজেকে ভালোভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপনে
মত্ত থাকা। এখানে নেই কোন চাল, ডাল, তেল,
নুনের হিসাব নিকাশ। নেই কোন সন্তানের ভবিষ্যৎ কিংবা বেড়ে ওঠা,
পেশা কিংবা অর্থনৈতিক গল্প কথা। নেই কোন সাংসারিক দায়িত্ব বা
দায়বদ্ধতার চাপ। অথচ, নিজের সঙ্গীকে আমরা বেশীরভাগই দেখি
বেশভুষা আর চেহারায় কৃত্রিমতার বাইরের এক মানুষ, অনেক সময়
সাংসারিক খুঁটিনাটি চিন্তায় নিমজ্জিত দায়িত্ব পালনের এক রোবাট হিসাবে। আর বাইরের
মানুষটি যে কেবল চমৎকার শব্দচয়নে আবেগের গানই শোনায় না, নতুন
করে স্বপ্নে বিভোর রাখে বা বিভোর করে রাখতে চায়। নানা রকম মিথ্যা এসে ভর করে। দুজন
মানুষ রঙ্গিন ফানুসের মতই উড়তে থাকে। পরিণাম পরকীয়া নামক এক মরিচীকার পেছনে ছোটা!
ভেঙ্গে যায় ঘরের মানুষের বিশ্বাস, ভেঙ্গে যায়
নিজেদের এবং সন্তানদের স্বপ্ন, ছিন্ন হয় ভালোবাসার। মৃত্যু
ঘটে একটা সংসারের, একটা ঘরের।
অথচ কোন এক সময়ে যে সংসারটার পথচলায় বন্ধু ছিলেন দুজন মানব মানবী। এ
সেই একই মানুষ, যিনি জীবনের শুরুতে বিপত্তিগুলো নিজের করে নিয়েছিলেন, সঙ্গীকে আগলে রেখেছিলেন সবকিছু থেকে শত কষ্টের বিনিময়েও। হয়ত বা কখনও
নিজের দিকে তাকাবারও সময় বা বিশ্রাম পাননি... একাই সামলেছেন
শত ঝড় ঝাপ্টা। অথচ, আরেকজনের জন্য, কোন
এক বিবেকবর্জিত, অমানুষ, ঠক, প্রতারকের জন্য একটা সংসারের সবাই কষ্ট ভোগ করেন। ভোগ করেন নানা সামাজিক
চাপ, অর্থনৈতিক চাপ। সন্তানরা হারায় তাদের এক সময়ের প্রিয়
বাবা অথবা মাকে। অথচ এটা তাদের প্রাপ্য ছিল না, তাদের কোন
দোষও ছিল না...কারণ প্রতিটা শিশুই নিষ্পাপ। তাদেরও রয়েছে
সুস্থ সুন্দরভাবে ভালোবাসায় বেড়ে ওঠার অধিকার। প্রতিটা মানুষেরই কম বেশী কিছু
সীমাবদ্ধতা থাকে। একজনের একটা জিনিসের ঘাটতি হলেই আরেকজনের কাছ থেকে প্রত্যাশার
প্রাপ্তি খোঁজা অপরিপক্কতারই নামান্তর। বরংচ, স্বামী বা
স্ত্রীর যার যা নেই, সেটার জায়গায় যার যা গুণাবলী সেটার
মূল্যায়ন করলে আর তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাব ঘটে না।
দেখুন,
জীবনের এই পথচলায় আমাদের কখনো না কখনো কাউকে ভাল লাগতেই পারে। এটা
দোষের কিছু না। দোষের হল আপনার সঙ্গীটিকে ঠকানো, তার জায়গাটিতে
অন্যকে স্থান করে দেয়া। তাকে এবং তার ভালোবাসা, বিশ্বাসটাকে
অসম্মান করা। নিজের সন্তানদের সুন্দর, চমৎকার ভবিষ্যৎটাকে
অন্ধকারে ঠেলে দেয়া.. সেই সাথে প্রিয় বর্তমানকে অস্বীকার
করা। মনে রাখবেন, নিজের সুখের জন্য, নিজের
কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য আরেকজনকে সরিয়ে দিলে আপনিও একদিন ঠিক একইভাবে
নিক্ষিপ্ত হবেন। প্রকৃতির এটাই নিয়ম।
তাই সব সময় স্বামী স্ত্রী একজন অরেকজনকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিন।
নিজেদের ভালো লাগা,
ভালোবাসার জায়গাগুলি ধরে রাখুন। কোন বিষয়ে খটকা লাগলে বিস্তারিত
আলোচনা করুন। কথায়, কাজে সঙ্গীকে সম্মান দিন। মনে রাখবেন
আপনারা কেউ কাউকে কিনে আনেননি বা আগেকার দিনের কৃতদাস নন যে, সঙ্গী আপনার বশ্যতা স্বীকার করবেন। মনে রাখবেন, প্রথমে
বন্ধু হোন তারপর স্বামী বা স্ত্রী। একজন ভালো বন্ধুই পারে আরেকজনের হাতটি শক্তভাবে
ধরে রাখতে।
ও হ্যা.. সেই সাথে একে
অপরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, অনুভব করুন আপনার সঙ্গীটি
কি চাচ্ছেন? কেন তিনি এত ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত?
কেন তার অাবেগের মৃত্যু ঘটেছে...?! অন্যের
কাছে কেবল মিথ্যা সুখ না খুঁজে বরং নিজেই নিজের ঘরকে সুখে দুঃখে সমৃদ্ধিশালী করুন,
আর তাহলে তৃতীয় কোন পক্ষ বা শক্তি চাইলেও জায়গা করে নিতে পারবে না।
আর যে কোন পরিস্থিতি দুজনই হাসতে হাসতেই একসাথে মোকাবেলা করতে পারবেন অনায়াসে।
No comments:
Post a Comment