Wednesday, 11 January 2017

জীবনের লক্ষ্য কী? ছেলেবেলায় চোর হতে চেয়েছিলাম।

জীবনের লক্ষ্য কী?
ছেলেবেলায় চোর হতে চেয়েছিলাম। থিউরি খুব সহজ। সবাই উপার্জন করে কিছু অর্জন করে; চোরদের সেই ঝামেলা নেই। চোর হতে হলে প্রথম দিকে ছোট ছোট জিনিস চুরি করতে হয়। এগুলো নেট প্র্যাকটিসের মত কাজ দেয়। আমি চুরি করতে শুরু করলাম।
আমার বড় মামার তখন মাত্র বিয়ে। শ্বশুর বাড়ি থেকে দাওয়াত আসল। সেখানে গিয়ে একটা ছোট আয়না চুরি করে নিয়ে আসলাম। যতটুকু মনে আছে আয়নাটা একটি ছোট কাঠের বাক্সের সাথে লাগানো। বাক্সের ভেতরে রাখলাম ছক্কা খেলার গুটি। সেই সময়ে এই খেলা খুব হিট ছিল। প্রায় রাতে দেখতাম ফার্মগেটে মেঝো মামা, খালারা, টাকা দিয়ে লুডূ খেলত। সারারাত হৈচৈ...
বড় নস্টালজিক ছিল আমাদের ফার্মগেটের বাসাটা...
ক্লাস নাইনের রচনায় লিখেছিলাম ডাক্তার হতে চাই। সেটা পরীক্ষা পাশের জন্য লিখা। তবে আমার ধারণা পদ্ধতিতে ভুল আছে। যেহেতু খাতা কাটবেন শিক্ষকরা কাজেই কেউ যদি লিখে আমি বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাই। ‘আদর্শ শিক্ষক’ নামে একটি পয়েন্ট দিয়ে যিনি খাতা কাটবেন সেখানে তার ব্যাপারে কিছু লিখে দিলেই ফুল মার্ক নিশ্চিত।
কেন জানি আমাদের জীবনের লক্ষ্য গুলো একি রকম থাকে। আমরা কেউ প্লেটো কিংবা তলস্তয় হতে চাই না। আমরা সবাই দল বেঁধে বড় হতে থাকি... চা দোকানে তর্ক জমাই.. সব বয়সেই একটা সময় সমাজ বদলে দেবার একটা জিদ কাজ করে...
একটা বয়সে অন্যরকম কিছু করে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতলব আসে... কেউ গীটার কেউ ক্যামেরা হাতে নিয়ে আবার একটা বয়সে সব ছেড়ে রওনা দিতে হয় মতিঝিলে...
শুধু মাঝে মাঝে একান্ত অবসরে সমুদ্রের কোন সস্তা হোটেলে বসে আকাশ দেখলে সব কিছু বড় অপার্থিব মনে হয়।
কত শখ ছিল...
আর্জেন্টিনার এপিকিউয়ন শহরটা একবার দেখে আসা। এক বন্যায় সমুদ্রের নিচে চলে যাবার অনেক বছর পর আবার জেগে উঠে এপিকিউন। হাজার হাজার পর্যটক নিয়ে আবার চলে গেল সমুদ্রের ভেতরে...
পুরনো মিথ আছে – ঈশ্বর তার প্রেমিকার জন্য খুব কেঁদেছিল বলে এই শহরটা ডুবে আছে !
একদিন খুব আগ্রহ নিয়ে লিস্ট করেছি। পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সমুদ্রের লিস্ট। একসময় টাকা হলে ঘুরে বেড়াতে হবে। খুব সুন্দর জায়গায় আর রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে একা যাওয়া যায় না...
কেউ একজন থাকতে হয়। হেড ফোন লাগিয়ে ডেনভারের গান শুনে তার চাহিদা মেটানো যায় না।
আপাতত গুগলে সার্চ দিয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি... প্যারিসের এত বই পড়েছি ; সেখানে আমাকে ছেড়ে দিলেও আমি ঠিক কিছু একটা করে খেতে পারব।
এক ফাঁকে জলপাইগুড়ি গেলেই হয়। যেখানটায় সমরেশ বড় হয়েছে এবং এখন মাঝে মাঝে বুড়ো হচ্ছে... সেখানটায় যাব। সমরেশের আকাশের দিকে তাকালে হয়ত দেখতে পাব অনিন্দ আর মাধুবিলতা কে... কেমন আছে তারা? বইয়ের চরিত্র গুলোর একটি সমস্যা কী জানেন? সব মানুষের বয়স বাড়ে... এদের বাড়ে না...
মেক্সিকোর নীল সিবীচে জীবনের শেষ দশ বছর কাটিয়ে দেয়া... বীচের কাছা কাছি একটি ঘর... মধ্য রাতে জানালা খুলে দিলেই সমুদ্র ঢুকে পড়বে। ঘর ভর্তি বই। রাশিয়ার বই। প্যারিসের বই। হাল্কা লাইট সিগারেট খেতে খেতে লিখা যাবে নস্টালজিক ফার্মগেটের কথা।

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...