বাঁকখালী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বাঁকখালী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ৯। কক্সবাজার এই নদীর তীরে অবস্থিত।
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু স্রোতধারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে সম্মিলিত ধারায় বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে। নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে। এই নদী খরস্রোতা ও প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে ৬০ কিমি উত্তরে মাতামুহুরী মোহনা এবং মাতামুহুরী মোহনা থেকে আরো ৬০ কিমি উত্তরে শঙ্খ নদীর মোহনা। এখান থেকে আবার ২০ কিমি উত্তরে কর্ণফুলী নদীর মোহনা। আরাকান মহাসড়কের উপর কর্ণফুলী সেতু, শঙ্খ সেতু, মাতামুহুরী সেতু ও বাঁশখলী সেতু রয়েছে।
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে
বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) আরাকান
দখল করে উৎপীড়ন-নির্যাতন
শুরু করলে হাজার হাজার শরনার্থী বাঁকখালী নদী তীরবর্তী রামু ও কাক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন
হিরাম কক্স এদের পুনর্বাসন করেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সমাধী
বাঁকখালী নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই নদী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী
হয়ে আছে। নদীপথে এখানে এসেছে বহু আরব বণিক, পর্তুগিজ ও হার্মাদ-আরাকান
জলদস্যু। পরে এসেছে ব্রিটিশ বণিক শাসকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কক্সবাজারে ব্রিটিশ-মার্কিন সৈন্যসহ মিত্র সৈন্যরা এসে
বাঁকখালী নদীতে কাঠের তৈরী জেটি নির্মাণ করে। এখানে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য জেটিতে জাহাজ
ভিড়ত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়
১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ 'বিক্রান্ত'সহ অন্যান্য জাহাজ থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা জলযানযোগে বাঁকখালী নদী হয়ে
কক্সবাজারে অবতরণ করেন। নদীপাড়ে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীসহ স্থানীয় মানুষ তাদের স্বাগত জানায়।
No comments:
Post a Comment