যশোরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে শার্শা উপজেলার নাভারনের কাছ দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলায় প্রবেশ করে। বেনারপোতা নামক স্থান থেকে ডলুয়া নামের একটি শাখা সৃষ্টি করে পরে কালিয়া নাম ধারণ করে কপোতাক্ষ নদে পতিত হয়েছে। বেনারপোতার কাছে বাঁধ নির্মাণের ফলে শাখাটি বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মূল নদীটি চাপড়ার কাছে মরিচাপ নদীতে মিশেছে। এই নদীর আংশিক প্রবাহ মরিচাপ-কপোতাক্ষ এবং মরিচাপ-খোলপেটুয়ার মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। যদিও বেতনার মূল স্রোতের অনেকটাই মরিচাপে প্রবাহিত হয় তবুও সাধারণভাবে এটি বেতনা-খোলপেটুয়া নামে পরিচিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৯১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক বেতনা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৬৪। নদীটি জোয়ারভাটা প্রভাবিত।
এই নদীর উৎপত্তি ভৈরব নদের শাখা হিসেবে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে; কিন্তু এই উৎসমুখ এখন বিচ্ছিন্ন। মহেশপুরে কতগুলো বিল থেকে পানি নিয়ে এই নদী ভারতে প্রবেশ করেছে। আবার যশোর জেলার শারশা উপজেলায় পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাভারন হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই নদীর অপর নাম কোদালিয়া। এই নদী সাতক্ষীরা জেলায় মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলে খোলপেটুয়া নদী নাম ধারণ করেছে। এর পরে নদীটি কালিয়া নদী নামে পরিচিত। কালিয়া নদীর শাখা নদীর নাম দালুয়া নদী। বেতনা নদী সুন্দরবন অংশে অর্পণগাছিয়া নদী নামে পরিচিত। অতঃপর এই একই নদী মালঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।
বেতনার তীরে নাভারন, উলসী, শংকরপুর, কলারোয়া, বেনারপোতা, চাপড়া উল্লেখযোগ্য স্থান। নদীটির উপরের অংশে অর্থাৎ নাভারন থেকে কলারোয়া পর্যন্ত পাম্পের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নাংশের নদী নাব্য এবং সারা বছর ছোট ছোট নৌযান চলাচল করে। যদিও বর্ষা মৌসুমে বেতনা সর্বত্রই নাব্য, কিন্তু শুকনা মৌসুমে কোন স্থায়ী উৎস থাকে না। এ সময়ে নদীটি স্থানীয় বিল ও হাওড়ের চুয়ানো পানি দিয়ে কিছুটা সঞ্জীবিত থাকে। প্রবহমান কোন উৎসের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় শুকনা মৌসুমে নদীর যশোর থেকে শংকরপুর পর্যন্ত অংশের পানিতে অধিক লবণাক্ততা লক্ষ্য করা যায়। ফলে ঐ এলাকায় শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ বিঘ্নিত হয়। সাম্প্রতিক কালে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানির সমতল মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই নদী থেকে প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ একটি খাল কেটে সেচ ও কৃষি উন্নয়নের জন্য ‘উলসী প্রকল্প’ নামে একটি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য বেতনার উপর শংকরপুরে একটি বড় ধরনের জলকাঠামোও নির্মাণ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment