তুরাগ নদী বাংলাদেশের ঢাকা ও গাজীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক তুরাগ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ২৫। এটি ঢাকা শহরের সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া ৪টি নদীর মধ্যে ১টি। এই নদীর গভীরতা ১৩.৫ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ১ হাজার ২১ বর্গ কিমি। সারা বছরই এর প্রবাহ থাকে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পানিপ্রবাহ কম থাকে। তখন মিরপুরে পরিমাপ ১২৪ ঘনমিটার/সেকেন্ড এবং গভীরতা হয় ৪.৫ মিটার। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আগস্টে এই প্রবাহ বেড়ে ১১৩৬ ঘনমিটার/সেকেন্ডে দাঁড়ায়। তুরাগ নদের নিম্নাংশে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে।
তুরাগ নামের নদীটি গাজীপুর
জেলাধীন কালিয়াকৈর উপজেলার প্রবহমান বংশী নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নে এসে দুটি ধারায়
বিভাজিত হয়েছে। এর একটি শাখা সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়নে বংশী নদীতে এবং
মূল শাখাটি আমিনবাজার ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে।
অর্থাৎ এটি বংশী নদীর শাখা। সে হিসেবে এটি কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, মির্জাপুর, গাজীপুর, সাভার, মিরপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় বুড়িগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। তুরাগ নদ সর্পিলভাবে প্রবেশ
করে প্রথমে কিছুটা পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে তারপর বুড়িগঙ্গায় পড়েছে। টঙ্গীখাল তুরাগ
নদে মিলিত হয়েছে মিরপুরের উত্তরে। তুরাগের ছোট একটি শাখা কালিয়াকৈরের কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে কড্ডা এলাকার মধ্য
দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে টঙ্গী খালে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে এই শাখাকেও তুরাগ নদ
বলে। সম্প্রতি নদীটিকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সারা বছরই নদটি নৌকা
চলাচলের উপযোগী। গ্রীষ্মে ক্ষীণকায় হয়ে পড়লেও তুরাগ একটি সক্রিয় নদ। যমুনা নদীর অবক্ষেপ প্রায় সুদূর টঙ্গী খাল পর্যন্ত
তুরাগের উপত্যকা জুড়ে রয়েছে। ১৯৫০ সালের আসাম ভূমিকম্পের পর এমন ঘটেছে। এই নদীতীরে মির্জাপুর, কাশিমপুর, ধীতপুর, বিরুলিয়া, উয়ালিয়া, বনগাঁ প্রভৃতি স্থান অবস্থিত।
সম্প্রতি নদীটিকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার নদীমাতৃক বৈশিষ্ট্য দেখে বলা যায়, তুরাগে প্রচুর মাছ ছিল কিন্তু বর্তমানে তীব্র পানি দূষণে ভুগছে। যখন নদীকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অধিকাংশ কারখানা পরিবেশ আইনের খুব সামান্য অংশই মেনে চলতে চেষ্টা করেছে এবং পানির দৃশ্যমান রং পাল্টে গিয়ে নোংরা হয়েছে।
তুরাগ নদীর তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা প্রতি বছর পালিত হয়।
No comments:
Post a Comment