আমি তখন বড় হচ্ছিলাম প্রতিদিন। তাপ আর গন্ধ আবিষ্কারের নেশা আমাকে তাড়া করত সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা রাইত । গ্রামের পোলা,
গ্রাম্য জীবন আমার।
আহা শৈশব!
আহা শিশুকাল!
সেইসব শিশুকালে আমি আখায় খড়ি দিতে দিতে
তাপ আর গন্ধ আবিষ্কারে মেতে যেতাম নবান্নের প্রথম ধানসিদ্ধ পার্বণে। হাঁড়ি ভর্তি ধান সিদ্ধ হত, ধোঁয়ার মত বাতাস উঠত।
তপ্ত বাতাস!
আহা তাপ উৎগারী বাতাস!
আমি নাক মুখ চুবিয়ে গরম বাষ্প অনুভবের চেষ্টা করতাম। সিদ্ধ ধানের তপ্তবাতাসে নবান্নের ঘ্রানে আমার নেশা ধরত সেই শৈশবেই।
আমার নাসারন্ধ্র শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে, তারা আবিষ্কারে মেতে উঠে নতুন নতুন ঘ্রানে। আমার মুখের উপর ছড়ানো বিলিয়ন বিলিয়ন তাপ সেন্সর শক্তিশালী হয়ে উঠে নিত্য নতুন তাপে,
জলজ তাপে। ভাপে।
আহা ভাপ!
ধান সিদ্ধের সেইসব পার্বণেই আমার তাপ সেন্সরগুলো নেশাতুর হত ভাপে, জলজ তাপে।
সেই নেশা আজও কাটেনি আমার।
চোখ মুখ নাসারন্ধ্রের মতই আঙুলগুলোও নেশাগ্রস্ত হতে চাইত। আমার মত আমার আঙুলগুলো কৌতুহলী শিশুকাল থেকেই। সিদ্ধ ধানের হাঁড়িতে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখতাম, ধানভেদ করে চলে যেত আরো ভেতরে বাড়তে থাকত তাপ। আমার আঙুল পুড়ে পুড়ে যেত তাপে, ভাপে। সেই তাপে নবান্নের প্রথম ধানের ভাপে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আমার আঙুলেরা। আমি বড় হতে থাকি, তাপাশ্রয়ী স্নায়ুরা ছড়িয়ে পড়তে থাকে শইলে শইলে।
তারপর একদিন
বহুদিন পর এক সন্ধ্যা রাইতে।
আমার কোমল হাতের নরম আঙুল ধরে এক রমণী।
বহুদিনের উপবাসে থাকা সেই গ্রাম্য রমণী।
সদ্য কৈশোর পেরোনো তাপে কাতর, ঘ্রাণে পাগল তরুণ আমি। ছাদবিহীন কোন এক গ্রাম্য ঘরে খড়ের বিছানায় লুটোপুটিতে মাতে সান্ধ্যকালীন চাঁদ।
রমণী প্যান্ট ধরে হিংস্রভাবে টান মারে
আমি মরে মরে যাই
রমণী আমার রাজদণ্ড চেপে ধরে প্রবল আক্রোশে
আমি মরে মরে যাই।
তার হাত থেকে তাপ বেরোয়, প্রবল তাপ। জেগে ওঠে আমার তাপাশ্রয়ী শইল, তাপকাতর রাজদণ্ড। বিদ্রোহ করে রমণীর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের বিরুদ্ধে, প্রবল আক্রোশে গর্জে ওঠে। আমি আবিষ্কার করি এই শইল আমার না, আমার বড্ড অচেনা। আমি শুধু টের পাই আমার শইলজুড়ে রমণীর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ।
তারপর কেটে গেল কত
দিন রাইত
অমাবস্যা পূর্ণিমা
পাহাড় উপত্যকা
জলজ-স্থলজ শৈল, গিরিখাত।
নবান্নের প্রথম সিদ্ধ ধানের
মতো তাপ-তাপ
ভাপ-ভাপ, ত্রিবেণীর ঘাট;
খুঁজে পায়নি শইল আমার।
শইলজুড়ে শোলমাছ !
No comments:
Post a Comment