Sunday, 15 October 2017

হে অন্ধ জাতি এ লজ্জা কোথায় রাখি!!


হে অন্ধ জাতি এ লজ্জা কোথায় রাখি!!
সাল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এর পরপরই খুনি বজলুল হুদা উল্লাসে ফেটে পড়ে অপর খুনী কর্নেল ফারুকের উদ্দেশে হাঁক ছেড়ে বলেছিলো, অল ফিনিস!
১৯৯১ এর এক জনসভায় যে আত্মদাম্ভিকতায় নিজের মুখে বলে, শেখ মুজিবকে আমি নিজের হাতে গুলি করে মেরেছি। কার সাধ্য আছে আমার বিচার করার? এদেশে শেখ মুজিব হত্যার বিচার কোনো দিনই হবে না। সেদিনই এদেশে মুজিব হত্যার বিচার হবে যেদিন আমার হাতের তালুতে চুল গজাবে।
বজলুল হুদার হাতের তালুতে চুল গজিয়েছিল কি না আমি জানি না, কিন্তু তার বিচার এদেশে ই হয়েছে। ২০১০ এর ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদাসহ আরো কয়েকজন খুনির ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। খুনি নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তার অবশেষ।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় হাটবোয়ালিয়া গ্রামে বজলুল হুদার কবর শোভিত হয়েছিলো মস্ত শ্বেতপ্রস্তর ফলকে। সেখানে তাকে সম্বোধন করা হয়েছিলো জাতীয় বীর বলে।
আত্মস্বীকৃত সেই নর পিশাচের কবরে শোভা পেয়েছিলো জাতীয় বীরের পদবী! হ্যা মানছি ঐ পিশাচ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল, কিন্তু সেই মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে নরপিশাচ হয়েছে সেটাও জেনেছি। এবং সে কারণেই ওকে আর বীর মুক্তিযোদ্ধা বললে অরিজিনাল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হবে। আর সে কারণেই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়ার সত্যিকারের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান সহ অত্র এলাকার প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনারা কি সবাই মরে গিয়েছিলেন নাকি? যদি না মরে থাকেন তবে, এই স্পর্ধাযুক্ত নিকৃষ্টতা সহ্য করেছেন কিভাবে !! কেন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেননি তখনি ঐ পিশাচের কবরে লেখা নাম ফলক ?
এবার আসছি আরেক পিশাচ কসাই কাদের মোল্লার কবরের শহীদ খেতাবে ভুসিত নাম ফলক প্রসঙ্গে।
২০১৩ সালের শুরুতে বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন তার নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের চির শত্রুদের বিচারের কার্য্য সম্পন্ন করছিলেন, তখন বিশ্বের মোড়ল দেশ গুলোর সাথে চক্রান্ত করে, জামাতের নেতা কসাই কাদের এর ফাসির পরিবর্তে কারাদন্ডের রায় করিয়েছিল কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামাতে ইসলাম।
তার ই ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে রাজপথে প্রথমেই আমরা নেমে কাদের মোল্লার ফাসির দাবীতে সারা বাংলার দেশপ্রেমী জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেই। তখন আমাদের সাথে এসে যোগ হন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এরপর গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ক্ষোভের প্রায় ১১ মাস পর ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে।
এরপর সেই ফাসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর কবরেও শহীদ তকমা দিয়ে লেখা কবরের নামফলকটি।
তারপর এলাকাবাসীর অভিযোগের পর গত দুই বছর আগে কবর থেকে নামফলক সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু এখনও সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন আদৌ হয়েছে কিনা আমি শিওর নই।
ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ অবশ্য বলেছিলেন যারা কাদের মোল্লার কবরে শহীদ নামফলক ব্যবহার করেছেন, তাদেরও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে বিচার হওয়া উচিত।
এক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কবরের নামফলকে শহীদ লেখা যায় না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের কসাই খ্যাত মুক্তিযুদ্ধকালীন কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর সদস্য কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ঐ রাতেই তার মরদেহ দাফন করা হয় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।
এলাকাবাসী জানান, দাফনের কিছুদিনের মধ্যেই কবরটি সাদা টাইলসে ঘিরে দিয়ে
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা লেখা নামফলক লাগানো হয়।
কাদের মোল্লার বাড়ি যাওয়ার জন্য আরজ খাঁর তিন রাস্তার মোড়ে একটি টিনের বেড়াতেও পথ নির্দেশনা দেওয়া সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়, যাতে লেখা ছিল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কবর এই দিকে
কাদের মোল্লার ছোট ভাই ও ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মোল্লা বলেন, কবরের ফলক জামায়াতের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সেটা লাগানো হয়নি।
অন্যদিকে ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির আবদুল তাওয়াব জানিয়েছিল, জেলা জামায়াতের সিদ্ধান্তে নয়, দলের স্থানীয় নেতাদের পরামর্শেই নামফলক লাগানো হয়েছে।
যদিও আমি এখনো জানিনা যে, যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের কবরের শহীদ লেখা নাম ফলকটা আদৌ ভেঙেছিল কিনা !
কয়েক মাস আগেও আমি ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রলীগের বর্তমানে উচ্চপদে থাকা নেতাদের বলেছিলাম, এই শকুনদের কবরে শহীদ লেখা নামফলক ভেঙে আমাকে জানাতে। তখন সেই ছোট ভাইতুল্য নেতা আমায় আশ্বাস দিয়ে বলেছিল " চিন্তা করবেন না, ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই ভেঙে ফেলে আপনাকে জানাবো "। কিন্তু সেই শিঘ্রই আশ্বাসের খবরটিও প্রায় ৬ হয়ে গেছে তবু শিঘ্রইর দিনটি আজো অজানা কারণে দেয়নি ছাত্রলীগের সেই নেতা ছোট ভাইটি।
আমি আসলে অনেক কিছুই জানিনা। যেমন জানিনা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,মহিলা আওয়ামীলীগ এবং ছাত্রলীগ সহ প্রতিটি সংগঠনে জামাত শিবির এবং তাদের দোসর শকুনেরা ভরে গেছে। জানিনা ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামাতে ইসলাম ৭৩ টি আসনে গোপনে প্রার্থী তৈরি করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এটুকু জানি এ বড় অপমান ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা - বোনের সম্ভ্রম আর লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময় অর্জিত বাংলাদেশের সেই বীর সেনাদের জন্য।
আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে কি পারিণা দেশদ্রোহী প্রেতাত্মাদের এই ধৃষ্টতা গুলো রুখে দিতে। নাকি এখনো আমরা অন্ধ সেজে চুপ করে বসে শুধু দেখবো আর মুখে বলবো লজ্জা পাচ্ছি, তবে ধিক্কার দেই এই আমাদের যারা দেশপ্রমের নামে বড় বড় বুলি আওরাই আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় শকুনদের কবরে শহীদ আর জাতীয় বীর লিখে দেই !!

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...