বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর বিল্ডিং কোনটা?? আমার মতে 'সংসদ ভবন'। স্থপতি আমেরিকান লুই আই কান। এখন প্রশ্ন হল, ধরুন সংসদ ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আমি আত্মহত্যা করলাম। আপনারা কী সবাই মিলে লুই আই কানের ফাসির দাবী জানাবেন?? "কেন এই লোক সংসদ ভবনের উপরে ছাদ দিয়েছেন। ছাদ না থাকলে আজ কেউ আত্মহত্যা করার সুযোগ পেতো না"। আপনাদের চিন্তাভাবনা কী এমন??
ডিনামাইট আবিষ্কার কর্তার টাকায়, ডিনামাইটের পেটেন্ট রয়ালিটি দিয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ভুলে গেলে চলবে না যে এই ডিনামাইট দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আবার এই ডিনামাইটের টাকা দিয়েই পৃথিবীর সকল শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বা আইডিয়া গুলোকে সাপোর্ট দেওয়া হয় প্রতি বছর। শুধু শান্তিতে নয়, চিকিৎসা, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, সাহিত্য, অর্থনীতির উতকর্ষেও এই মানুষ হত্যাকারি মৌলিক পদার্থটির ভূমিকা আছে।
টেকনাফে ১৫ লক্ষ মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যাকে 'মাদার অব হিউম্যানিটি' ডাকা হচ্ছে, সেই মানুষটিই কিন্তু আবার ১৬ কোটি মানুষকে ঝুঁকির ভেতরে ঠেলে দিয়েছেন।
প্রতিটি ঘটনারই বিপরীত দিক থাকে যেমন কয়েনের দুইপাশ। প্রশ্ন হল আপনি কোনদিকটি দেখেন??
১. নিন্দুকেরা শুধু খারাপ দেখেন।
২. অন্ধ ভক্তরা কেবল শুধু ভালোই দেখে।
৩. সমালোচকরা উভয় সাইড দেখে।
এদেশের কিছু মানুষ ড. ইউনুসের সব কিছুর মাঝে কেবল সুদ'ই খোঁজে।
*ভাই ইউনুস নোবেল পাইছে। আরে ও তো সুদ খায়। *ইউনুস ফ্রিডম এওয়ার্ড পাইছে। আরে ও তো সুদ খায়। *ইউনুস অলিম্পিক উদ্বোধন করেছে। আরে ও তো সুদ খায়। *ইউনুস গ্লাসগো ভার্সিটির চ্যান্সেলর হয়েছে। আরে ও তো শুধু সুদই খায়।
মজার ঘটনা হল, ইউনুস শুধু সুদই খায়। আর কেউ খায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ খায় না, ইসলামিক ব্যাংক সুদ খায় না, জনতা-পূবালী-ডাসবাংলা-ব্রাক- আল আরাফা, কেউ সুদ খায় না। এদেশে শুধু সুদ খায় ইউনুস আর তার গ্রামীণ ব্যাংক। ইনফ্যান্ট যে বিশ্বব্যাংকের টাকার জন্য পুরো দেশ হা করে তাকিয়ে থাকে সেই ব্যাংকও সুদ খায় না। মসজিদ ফান্ডের যে টাকা ব্যাংকে থাকে সেই টাকা থেকে মসজিদ সুদ খায় না। আপনি যে টাকা ব্যাংকে জমান, সেই টাকার সাথেও আপনি সুদ খান না। শুধু ইউনুস সুদ খায়। ওকে??
৮০ র দশকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক জন্ম নিয়েছিলো, তখন কোথায় ছিলো এই সব সুদ না খাওয়া ব্যাংক গুলো। কোই ছিলেন আপনারা আর আপনাদের সতীত্ব যখন মুক্তিযোদ্ধারা বেকার থাকতে থাকতে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে আত্মহত্যা করছিল??
একজন মানুষ যে সোশ্যাল বিজনেসের মত ইউনিক আইডিয়া দিয়েছে, যে মাইক্রো ক্রেডিট সিস্টেমের মধ্য দিয়ে সম্পদ এবং কার্যক্ষমতার উতকর্ষ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন, যিনি গ্রামের অশিক্ষিত নারীদের দেশের অর্থনীতিতে সামিল করেছেন, তাদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন, দেশে বিদেশে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে গেছেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে ভুমিকা রেখেছেন, গ্রামে গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামীণ ফোন এগিয়ে দিয়েছেন, মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। তার সব কিছু ছাপিয়ে আপনি কেবলই দেখতে পান সুদ।
মাইক্রোক্রেডিট একটি পলিসি। নারীর ক্ষমতায়নের পলিসি, অর্থের সর্বোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করার পলিসি, নারী মুক্তির পলিসি, দারিদ্র্যতা নির্মূলের পলিসি, অর্থনীতিকে নতুনভাবে যাচাই করার পলিসি। ঠিক যেমন সংসদ ভবনের ছাদ যা ঝড়ঝাপটা রোদ বৃষ্টি থেকে সংসদ ভবনকে রক্ষাকরে। এখন সেই পলিসি আপনি কী নারীর উন্নয়নে ইউজ করবেন? নাকী নারীর শাড়ি খুলে নেওয়ার কাজে ইউজ করবেন? সেই সিদ্ধান্ত আপনার।
গ্রামীণ ব্যাংক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়জন? ৫% ১০% ২০%?? কিন্তু আর যে ৮০% ঋণগ্রহীতা লাভবান হয়েছে তাদের নিয়ে আলাপ কে করবে??
গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭% মালিক গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা মহিলারা। ৩% এর মালিক সরকার। এর মাঝে ইউনুসের মালিকানা কোই? যে মানুষটা মাত্র ৩৫-৩৬ ডলার থেকে শুরু করে হাজার কোটি ডলারের ব্যাংক বানিয়ে ফেলতে পারল। আমরা কেবল তাকে সুদই খাইতে দেখলাম। তার মেধা নয়।
কথায় আছে "যেদেশে গুণীর কদর হয় না সেই দেশে গুণী জন্মে না"। অদ্ভুত হল, এদেশে গুণীর কদর তো হয়ই না, উল্টো তাকে অপমান অপদস্থ করা হয়। অদ্ভুত এ দেশ আর দেশের মানুষ।
বলুন একজনের নাম। কে আছে যাকে নিয়ে আপনি গর্ব করবেন? একজনের নাম বলেছেন তো সর্বনাশ। অন্যরা লেগে যাবে আতশকাচ দিয়ে খুটে খুটে তার দোষ বের করার জন্য।
বুঝতে পেরেছেন যে কেন এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না?? কারণ এটাই যে আমরা মানুষ হয়ে মানুষকে সম্মান দিতে পারি না। চারিদিকে কেবল অসম্মানের ছড়াছড়ি। চোখে অসম্মান, মুখে অসম্মান। কেউকে সম্মান না করতে পারেন, ভালো কথা, অসম্মান কেন করেন??
একটা কথা বলেন তো। একজন নোবেল লরিয়েটকে অসম্মান করে সত্যিই কি অনেক বেশি মানসিক তৃপ্তি পান?
No comments:
Post a Comment