Wednesday, 15 February 2017

১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। 2



১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।
১৯৮৩ সাল। বছর খানেক আগে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ লে জে হুসাইন মো: এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। সেসময়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন প্রতিবাদ জারী রাখতে না পারলেও ছাত্রসমাজ তা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। স্বৈরশাসক বিরোধী ক্ষোভ শুরু থেকেই দানা বাধতে থাকে ছাত্র সমাজে। ইতিমধ্যে প্রনীত হয় কুখ্যাত মজিদ খানের শিক্ষানীতি। ছাত্রসমাজ তা প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৪ ফেব্রুয়রি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাক দেয় ছাত্র জমায়েতের। যার প্রধান দাবী ছিল মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয় শিক্ষাভবনের দিকে।মিছিলের সামনে ছিল শতাধিক ছাত্রী। মিছিল হাইকোর্ট এলাকায় পৌছালে পুলিশ বিশাল বেরিকেড তৈরি করে। ছাত্রীরা বেরিকেডের সামনে বসে পড়ে, শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় হাইকোর্ট ও কার্জন হল সংলগ্ন এলাকা। ছাত্রনেতারা বেরিকেডের ওপরে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। আকস্মিকভাবে পুলিশ বেরিকেডের কিছু অংশ সরিয়ে রায়টকার ঢুকিয়ে লাল রঙের গরমপানি ছিটানো শুরু করে। একই সাথে শুরু হয় অবিরাম লাঠিচার্জ। এর কিছুপরেই পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে মিছিলে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। আহত জয়নালকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে পুলিশ। এরপর একে একে জাফর, কাঞ্চন, দীপালী সাহা সহ ১০ জন শহীদ হন। যাদের লাশ গুম করে ফেলে পুলিশ।
এরপর বিকালে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকে ছাত্র শিক্ষক নির্বিচারে লাঠিপেটা ও গ্রেফতার করে ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। স্বৈরাচারী সরকারের ভাষ্যমতেই এই গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল ১১৩৩ জন। বস্তুত তা ছিল আরোও অনেক বেশী। স্বৈরাচার এরশাদের পেটোয়া পুলিশের গুলিতে সেদিন ঝরে পড়েছিল বিপ্লবের সাথী, মিছিলের উজ্জল মুখ- জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, কাঞ্চনসহ দশজন। তাদের সে আত্মদান বিফলে যায়নি। গণরোষে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল মজিদ খানের ছাত্র স্বার্থবিরোধী শিক্ষানীতি।
শহীদের আত্মদানের এই দিনটিকে ভুলিয়ে দিতে স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ্য পোষ্য কিছু কুলাঙ্গার সেসময়ে এদেশে আমদানি করে ভ্যালেন্টাইনস্ ডে। এবং নানা উছিলায় ছাত্র সমাজের কাছে তা জনপ্রিয় করে তুলতে প্রানান্ত চেষ্টা করে। এই উদ্ভট প্রাণীগুলোকে সেসময়ে দেখেছি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাল গোলাপ বিলাতে। আবার দেখেছি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে উদ্ধর্শ্বাসে দৌড়াতে। তখন আমাদের আন্দোলনের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছিল সদ্য রক্তে কেনা আরেকটি অর্জন। ছাত্রসমাজ সে আত্মদানের কাছে মাথা নুইয়ে উর্দ্ধে তুলে রেখেছিল সংগ্রামের পতাকা।ছাত্রসমাজসহ সকল শুভবুদ্ধির মানুষকে বলি, এই অপ -হাওয়ায় গা ভাসাবেন না। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে'র একদিন নয় আমাদের ভালোবাসার দিন। ভলোবাসার জন্যে আমাদের আছে অনন্ত দিনরাত্রি। যাদের আছে পয়লা ফাগুন, কি দরকার তাদের ভ্যালেন্টাইনস্ ডে? বাঙ্গালী ভালোবাসতে জানে। সে ভালোবাসায় যতোনা জাহিরি, তার চেয়ে ঢের বেশি সমর্পণ।
আমরা জীবনকে ভালোবাসতে শিখেছি সমূহ সংগ্রাম থেকে। সে সংগ্রামের সাথীদের ভুলে যাওয়া আত্মবিস্মরণের নামান্তর, আত্মহত্যার শামিল। আমরা তা করতে পারিনা। আমরা ভালোবাসি বলেই তা পারিনা।
তাই বলি- বন্ধু, সময় তাকিয়ে আছে তোমার দিকে, সময়ের হাত ধরে ভবিষ্যতে যাবেনা?

No comments:

Post a Comment

অভিশপ্ত রজনী

  মৃত মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় মেয়েটি যে জীবিত হয়ে ওঠে সেটা খেয়াল করেনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কাব্য।ধবধবে সাদা চামড়ার মেয়েটিকে ভোগ করার...