বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি প্রাপ্তির ইতিহাস
=======================================
কিছুদিন আগে বহু বিতর্কিত মইনুল রোডের বাড়ি নিয়ে দেশের উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের (সরকারী ভাষ্য মতে তিনি স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার পর) পর ‘বাড়ি’ সংক্রান্ত ঘটনাটি দেশে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়েছিল। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অভিভাত ক্লাব, পাড়া-মহল্লা সর্বত্রই আলোচনার বিষয়বস্ত্ত ছিল খালেদা জিয়ার বাড়ি ও উচ্ছেদ কার্যক্রম। এ নিয়ে বেগম জিয়া সরাসরি তার গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেকে ‘বাস্ত্তহারা’ এবং তার দীর্ঘদিনের অর্জিত ‘আপোষহীন লৌহ নেত্রী’র ‘গুড উইল’ বিসর্জন দিয়ে ‘ব্যাপক কান্নাকাটি’ করে নিজেকে অত্যন্ত ‘সাধারণ পর্যায়ের মহিলা’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। দেশের মানুষ যখন বিষয়টির একটি পরিসমাপ্তি মোটামুটি টানছিল, ঠিক তখনই বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব মরহুম খন্দকার দেলোয়ার সাহেব বর্ণিত বিতর্কিত বাড়িটির প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে, বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার ‘সুধা সদন’ বানানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং বঙ্গবন্ধুর পবিরারের ‘শ্রেণি বিন্যাস’ করতে গিয়ে আরেকটি ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণ’ ঘনিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে ৪০-বছরে পা দেয়া বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যবেক্ষণকারী একজন সচেতন বাঙালি হিসেবে এ বিষয়ে ৩টি বাড়ির তুলনামূলক তথ্যচিত্র পাঠকের অবগতির জন্যে তুলে ধরার তীব্র তাগিদ অনুভব করছি নিজের বিবেক থেকেই।
প্রাক্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়িটি বরাদ্দের ইতিহাস, জমির পরিমাণ, বাড়ির ভেতরের সাজসজ্জা ও অলঙ্করণ মিডিয়ায় প্রকাশ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নোটিশ, বেগম জিয়ার পক্ষে দেশের উচ্চ আদালতে নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টের রায় এবং সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক আপিল খারিজ ইত্যাদি ইতিহাস দেশের প্রায় সকল মানুষের এখন প্রায় ‘মুখস্ত’ বিধায়, বর্ণিত বাড়ির ঘটনাগুলো আর পুন. আলোচনা করা হলনা। দেখা যাক বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার ‘সুধা সদন’ প্রাপ্তির ধারাবাহিক ঘটনাক্রম।
ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়তেন। অজপাড়াগঁা টুঙ্গীপাড়ার অধিবাসী বঙ্গবন্ধুর পরিবার একদম ‘নিঃস্ব’ হলে তাকে নিজ খরচে ‘বেকার হোস্টেলে’ রেখে কোলকাতা পড়াতে পারতেন না। সে ক্ষেত্রে তার পিতা নিয়মিত তাকে পড়ালেখার খরচ পাঠাতেন বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তা ছাড়া যারা টুঙ্গীপাড়ার বঙ্গবন্ধুর পুরনো বাড়ি দেখেছেন, তারা জানেন গ্রামের মধ্যেও তাদের পাকা ভবন ছিল। সুতরাং বলা যেতে পারে, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিঃস্ব পরিবারে ঐ সময়ে গ্রামে পাকা বাড়ি থাকার কথা নয়। গ্রামীণ জীবনে তখন কেবল জমিদার শ্রেণির লোকজনের পাকা দালান বা বাড়ি ছিল।
৩২ নম্বরের বাড়ি বিষয়ক জানা প্রকৃত তথ্যটি হচ্ছে, ১৯৫৬ সনে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রীসভায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৫৭ সনে ‘গণপূর্ত বিভাগে’ একটি পস্নটের জন্যে আবেদন করলে, তাকে ৩২ নম্বরের ১-বিঘার পস্নটটি বরাদ্দ প্রদান করা হয় (বর্তমানে রাজউকের মত যেখানে মন্ত্রী, সাংসদ ও বিচারপতিদের জন্যে বিনা লটারীতে এখনো পস্নট বরাদ্দের আইন বিদ্যমান), যার সরকারি দাম নির্ধারিত হয় ঐ সময়ে ৬,০০০/- টাকা। মূল্য পরিশোধে প্রথমে তিনি ২,০০০/- টাকা ও পরবর্তীতে বিধি অনুসারে কিস্তিতে বাকি ৪.০০০/- টাকা পরিশোধ করেন। এরপর মন্ত্রীত্ব চলে গেলে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ঢাকার অনেক যায়গায় ‘ভাড়া বাড়ি’তে থাকতেন। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্সুরেন্সে ৩,০০০/- টাকা বেতন উচ্চপদে চাকুরী পান। উচ্চ বেতনের টাকা থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সনে বর্ণিত পস্নটে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এরপর হাউস বিল্ডিং থেকেও লোন নেন। ১৯৬১ সনে মাত্র ১-রুমের এই বাড়িটি নির্মাণের পর বঙ্গবন্ধু তাতে ওঠেন। বাড়িটি নির্মাণে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পাকিস্তান আমলে নেয়া ১২,০০০/- টাকা তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, লোন বকেয়া থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাড়িটি নিলামে ওঠে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮২ সনে ঐ লোন পরিশোধ করার পর বাড়িটি তিনি ফিরে পান পৈত্রিক সূত্রে।
মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার সততা নিয়ে এদেশে এখনো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তিনি এদেশের একজন নামকরা পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন এ কথাও এদেশের অনেক মানুষই জানে। ড. ওয়াজেদ ১৯৬৩ সনে চাকুরীতে যোগ দিলেও তিনি শেখ হাসিনাকে বিয়ে করেন ১৯৬৭ সনে। বঙ্গবন্ধুর মত ড. ওয়াজেদ মিয়ারও ঢাকায় কোন বাড়ি ছিলনা। ঢাকায় বাড়ি বা পস্নট না থাকার কারণে ড. ওয়াজেদ ১৯৭৩ সনে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে পস্নট বরাদ্দের জন্যে আবেদন করলে, তাকে ১৯৭৪ সনে ‘সুধা সদন’ এর বর্তমান ১৪-কাঠার পস্নটটি ৭০,০০০/- টাকা সরকারী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারী বিধি মোতাবেক তিনি কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করেন। ১৯৮২ সনে তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে মহাখালীতে সরকারী বাসায় বসবাস করে সূধা সদনের বর্তমান বাড়িটি নির্মাণ শুরু করেন। বাড়ি নির্মাণে তিনি প্রথমে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ হিসেবে ৬-লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে বাড়ির কাজ শেষ না হলে তিনি যথাক্রমে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে মোট প্রায় ৪০-লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। লোনের টাকা পরিশোধের জন্যে তিনি বাড়িটি নির্মাণের পর পরই ভাড়া দেন। এ নিয়ে মৃত খন্দকার দেলোয়ার ছাড়া বাংলাদেশের আর কেউ অদ্যাবধি যৌক্তিক কারণেই কোন প্রশ্ন তোলেনি।
এদেশের লক্ষ-কোটি মানুষ জানে যে, ক্ষমতায় থেকেও বঙ্গবন্ধু তার বর্ণিত পাকিস্তান আমলে নির্মিত ৩২ নম্বরের প্রায় অসমাপ্ত অতি সাধারণ বাড়িটির কোন ‘উন্নয়ন’ তথা ‘হাইরাইজ’ বানাননি। এদেশের গরিব মানুষের ‘হক’ তিনি কখনো নষ্ট করার কথা চিন্তা মাথায় আনেননি। আমার প্রবাসে থাকা ১২-বছরের ছোট মেয়ে ‘নাবিলা’-কে নিয়ে একবার বর্ণিত বাড়িতে ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ দেখতে গেলে এক পর্যায়ে ঐ বাড়ির ‘সোফা’ ‘আচারের বৈয়াম’ ইত্যাদি দেখে আমার ছোট মেয়ের প্রশ্ন ছিল, ‘‘আববু, বঙ্গবন্ধু কি আমাদের চেয়েও গরিব ছিলেন? কারণ তার বাড়ির জিনিসপত্রতো খুবই কমদামী’’। মৃত্যুর পর নাকি বঙ্গবন্ধুর ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৫১,০০০/- টাকা পাওয়া যায়, যা ঐ সময়ের বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী সামরিক শাসকদের দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছিল। ড. ওয়াজেদ মিয়া কোনরূপ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ কথা এদেশের কোন মানুষই বিশ্বাস করে না।
এদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করবো, বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী হিসেবে আপনার সততার বিষয়েও এদেশের অনেক মানুষ নিঃসন্দেহ কিন্তু তারপরও বিরোধীরা নানা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে আপনার আর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে। তারপরও যদি আপনি বর্ণিত শত্রম্নদের কথার সমুচিৎ জবাব দেয়ার জন্যে আপনার নিজের, আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু ও আপনার দাদা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার বর্তমান ও অতীত সম্পত্তির সমুদয় বিবরণ এদেশের কোটি মানুষের সামনে প্রকাশ করেন পত্রিকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে, তবে আপনার মর্যাদা বাড়বে বৈ কমবে না। বরং আপনার এই উদারতা এ জাতির সামনে চমৎকার দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে, আর জেঁাকের মুখে ‘লবণ আর হুকোর পানি’ পড়ার মত, তারাও রক্তপান ছাড়াই গড়িয়ে পড়বে নিচে পরাজিত জেঁাকের মত! আপনার একজন শুভাকাংখী হিসেবে যা প্রত্যাশা করি।
=======================================
কিছুদিন আগে বহু বিতর্কিত মইনুল রোডের বাড়ি নিয়ে দেশের উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের (সরকারী ভাষ্য মতে তিনি স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার পর) পর ‘বাড়ি’ সংক্রান্ত ঘটনাটি দেশে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’-তে পরিণত হয়েছিল। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অভিভাত ক্লাব, পাড়া-মহল্লা সর্বত্রই আলোচনার বিষয়বস্ত্ত ছিল খালেদা জিয়ার বাড়ি ও উচ্ছেদ কার্যক্রম। এ নিয়ে বেগম জিয়া সরাসরি তার গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেকে ‘বাস্ত্তহারা’ এবং তার দীর্ঘদিনের অর্জিত ‘আপোষহীন লৌহ নেত্রী’র ‘গুড উইল’ বিসর্জন দিয়ে ‘ব্যাপক কান্নাকাটি’ করে নিজেকে অত্যন্ত ‘সাধারণ পর্যায়ের মহিলা’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। দেশের মানুষ যখন বিষয়টির একটি পরিসমাপ্তি মোটামুটি টানছিল, ঠিক তখনই বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব মরহুম খন্দকার দেলোয়ার সাহেব বর্ণিত বিতর্কিত বাড়িটির প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে, বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার ‘সুধা সদন’ বানানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং বঙ্গবন্ধুর পবিরারের ‘শ্রেণি বিন্যাস’ করতে গিয়ে আরেকটি ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণ’ ঘনিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে ৪০-বছরে পা দেয়া বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যবেক্ষণকারী একজন সচেতন বাঙালি হিসেবে এ বিষয়ে ৩টি বাড়ির তুলনামূলক তথ্যচিত্র পাঠকের অবগতির জন্যে তুলে ধরার তীব্র তাগিদ অনুভব করছি নিজের বিবেক থেকেই।
প্রাক্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়িটি বরাদ্দের ইতিহাস, জমির পরিমাণ, বাড়ির ভেতরের সাজসজ্জা ও অলঙ্করণ মিডিয়ায় প্রকাশ, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নোটিশ, বেগম জিয়ার পক্ষে দেশের উচ্চ আদালতে নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টের রায় এবং সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক আপিল খারিজ ইত্যাদি ইতিহাস দেশের প্রায় সকল মানুষের এখন প্রায় ‘মুখস্ত’ বিধায়, বর্ণিত বাড়ির ঘটনাগুলো আর পুন. আলোচনা করা হলনা। দেখা যাক বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার ‘সুধা সদন’ প্রাপ্তির ধারাবাহিক ঘটনাক্রম।
ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধু কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়তেন। অজপাড়াগঁা টুঙ্গীপাড়ার অধিবাসী বঙ্গবন্ধুর পরিবার একদম ‘নিঃস্ব’ হলে তাকে নিজ খরচে ‘বেকার হোস্টেলে’ রেখে কোলকাতা পড়াতে পারতেন না। সে ক্ষেত্রে তার পিতা নিয়মিত তাকে পড়ালেখার খরচ পাঠাতেন বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তা ছাড়া যারা টুঙ্গীপাড়ার বঙ্গবন্ধুর পুরনো বাড়ি দেখেছেন, তারা জানেন গ্রামের মধ্যেও তাদের পাকা ভবন ছিল। সুতরাং বলা যেতে পারে, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিঃস্ব পরিবারে ঐ সময়ে গ্রামে পাকা বাড়ি থাকার কথা নয়। গ্রামীণ জীবনে তখন কেবল জমিদার শ্রেণির লোকজনের পাকা দালান বা বাড়ি ছিল।
৩২ নম্বরের বাড়ি বিষয়ক জানা প্রকৃত তথ্যটি হচ্ছে, ১৯৫৬ সনে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রীসভায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৫৭ সনে ‘গণপূর্ত বিভাগে’ একটি পস্নটের জন্যে আবেদন করলে, তাকে ৩২ নম্বরের ১-বিঘার পস্নটটি বরাদ্দ প্রদান করা হয় (বর্তমানে রাজউকের মত যেখানে মন্ত্রী, সাংসদ ও বিচারপতিদের জন্যে বিনা লটারীতে এখনো পস্নট বরাদ্দের আইন বিদ্যমান), যার সরকারি দাম নির্ধারিত হয় ঐ সময়ে ৬,০০০/- টাকা। মূল্য পরিশোধে প্রথমে তিনি ২,০০০/- টাকা ও পরবর্তীতে বিধি অনুসারে কিস্তিতে বাকি ৪.০০০/- টাকা পরিশোধ করেন। এরপর মন্ত্রীত্ব চলে গেলে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ঢাকার অনেক যায়গায় ‘ভাড়া বাড়ি’তে থাকতেন। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু আলফা ইন্সুরেন্সে ৩,০০০/- টাকা বেতন উচ্চপদে চাকুরী পান। উচ্চ বেতনের টাকা থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সনে বর্ণিত পস্নটে বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। এরপর হাউস বিল্ডিং থেকেও লোন নেন। ১৯৬১ সনে মাত্র ১-রুমের এই বাড়িটি নির্মাণের পর বঙ্গবন্ধু তাতে ওঠেন। বাড়িটি নির্মাণে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পাকিস্তান আমলে নেয়া ১২,০০০/- টাকা তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, লোন বকেয়া থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাড়িটি নিলামে ওঠে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮২ সনে ঐ লোন পরিশোধ করার পর বাড়িটি তিনি ফিরে পান পৈত্রিক সূত্রে।
মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার সততা নিয়ে এদেশে এখনো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তিনি এদেশের একজন নামকরা পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন এ কথাও এদেশের অনেক মানুষই জানে। ড. ওয়াজেদ ১৯৬৩ সনে চাকুরীতে যোগ দিলেও তিনি শেখ হাসিনাকে বিয়ে করেন ১৯৬৭ সনে। বঙ্গবন্ধুর মত ড. ওয়াজেদ মিয়ারও ঢাকায় কোন বাড়ি ছিলনা। ঢাকায় বাড়ি বা পস্নট না থাকার কারণে ড. ওয়াজেদ ১৯৭৩ সনে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে পস্নট বরাদ্দের জন্যে আবেদন করলে, তাকে ১৯৭৪ সনে ‘সুধা সদন’ এর বর্তমান ১৪-কাঠার পস্নটটি ৭০,০০০/- টাকা সরকারী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারী বিধি মোতাবেক তিনি কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করেন। ১৯৮২ সনে তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে মহাখালীতে সরকারী বাসায় বসবাস করে সূধা সদনের বর্তমান বাড়িটি নির্মাণ শুরু করেন। বাড়ি নির্মাণে তিনি প্রথমে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ হিসেবে ৬-লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে বাড়ির কাজ শেষ না হলে তিনি যথাক্রমে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে মোট প্রায় ৪০-লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। লোনের টাকা পরিশোধের জন্যে তিনি বাড়িটি নির্মাণের পর পরই ভাড়া দেন। এ নিয়ে মৃত খন্দকার দেলোয়ার ছাড়া বাংলাদেশের আর কেউ অদ্যাবধি যৌক্তিক কারণেই কোন প্রশ্ন তোলেনি।
এদেশের লক্ষ-কোটি মানুষ জানে যে, ক্ষমতায় থেকেও বঙ্গবন্ধু তার বর্ণিত পাকিস্তান আমলে নির্মিত ৩২ নম্বরের প্রায় অসমাপ্ত অতি সাধারণ বাড়িটির কোন ‘উন্নয়ন’ তথা ‘হাইরাইজ’ বানাননি। এদেশের গরিব মানুষের ‘হক’ তিনি কখনো নষ্ট করার কথা চিন্তা মাথায় আনেননি। আমার প্রবাসে থাকা ১২-বছরের ছোট মেয়ে ‘নাবিলা’-কে নিয়ে একবার বর্ণিত বাড়িতে ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’ দেখতে গেলে এক পর্যায়ে ঐ বাড়ির ‘সোফা’ ‘আচারের বৈয়াম’ ইত্যাদি দেখে আমার ছোট মেয়ের প্রশ্ন ছিল, ‘‘আববু, বঙ্গবন্ধু কি আমাদের চেয়েও গরিব ছিলেন? কারণ তার বাড়ির জিনিসপত্রতো খুবই কমদামী’’। মৃত্যুর পর নাকি বঙ্গবন্ধুর ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৫১,০০০/- টাকা পাওয়া যায়, যা ঐ সময়ের বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী সামরিক শাসকদের দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছিল। ড. ওয়াজেদ মিয়া কোনরূপ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ কথা এদেশের কোন মানুষই বিশ্বাস করে না।
এদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করবো, বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী হিসেবে আপনার সততার বিষয়েও এদেশের অনেক মানুষ নিঃসন্দেহ কিন্তু তারপরও বিরোধীরা নানা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে আপনার আর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে। তারপরও যদি আপনি বর্ণিত শত্রম্নদের কথার সমুচিৎ জবাব দেয়ার জন্যে আপনার নিজের, আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু ও আপনার দাদা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার বর্তমান ও অতীত সম্পত্তির সমুদয় বিবরণ এদেশের কোটি মানুষের সামনে প্রকাশ করেন পত্রিকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে, তবে আপনার মর্যাদা বাড়বে বৈ কমবে না। বরং আপনার এই উদারতা এ জাতির সামনে চমৎকার দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে, আর জেঁাকের মুখে ‘লবণ আর হুকোর পানি’ পড়ার মত, তারাও রক্তপান ছাড়াই গড়িয়ে পড়বে নিচে পরাজিত জেঁাকের মত! আপনার একজন শুভাকাংখী হিসেবে যা প্রত্যাশা করি।
No comments:
Post a Comment